রাহেল স্ট্রাউস

জার্মান-ইহুদি চিকিৎসক, নারীবাদী এবং লেখক

রাহেল স্ট্রাউস নে গোইটিইন (১৮৮০–১৯৬৩) ছিলেন একজন জার্মান-ইহুদি চিকিৎসক, নারীবাদী এবং লেখক। তিনি ছিলেন হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাশাস্ত্রে প্রথম সাধারণ মহিলা ছাত্রী এবং তিনি ১৯০৫ সালের জানুয়ারিতে স্নাতক হন। তার শৈশবের বন্ধু, আইনজীবী ইলিয়াস স্ট্রাউসকে (১৮৭৮–১৯৩৩) বিয়ে করার পর, তিনি তার সাথে মিউনিখে চলে যান যেখানে তিনি একটি চিকিৎসাবিদ্যা চর্চা চালু করেন এবং জায়নবাদ এবং মহিলা ইহুদি লীগের সমর্থনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠেন। ১৯৩৩ সালে তার স্বামীর মৃত্যুর পর, তিনি তার চার কিশোর বাচ্চাদের সাথে ফিলিস্তিনে চলে যান। সেখানে, তিনি ১৯৪০ অবধি অবসর গ্রহণের আগ পর্যন্ত চিকিৎসাশাস্ত্রে চর্চা অব্যাহত রাখেন। অবসর গ্রহণের পর তিনি মহিলাদের, বিশেষ করে তরুণ অভিবাসীদের সমর্থনের কর্মকাণ্ডে সময় ব্যয় করেন। ১৯৫২ সালে, তিনি উইমেনস ইন্টারন্যাশনাল লীগ ফর পিস অ্যান্ড ফ্রিডমের ইসরায়েলি শাখার সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং সক্রিয় সদস্য ছিলেন।[১][২][৩]

রাহেল স্ট্রাউস (১৯০৫)

জীবনী সম্পাদনা

কার্লস্রুহে ১৮০০ সালের ২১ মার্চ জন্মগ্রহণকারী রাহেল গোইটিইন ছিলেন হাঙ্গেরির একজন নিষ্ঠাবান রাবি গ্যাবর গোইটিইন (১৮৪৮-১৮৮৩) এবং ইডা লোভেনফেল্ড (১৮৪৮-১৯৩১)-এর কন্য, যিনি একজন স্কুল শিক্ষক ছিলেন। তিন বছর বয়সে তার বাবা মারা যাওয়ার পর, তাকে তার মা লালন-পালন করেন। মেয়েদের জন্য জার্মানির প্রথম জিমনেশিয়াম থেকে ১৮৯৯ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করার পর, তিনি হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নিয়মিত মহিলা ছাত্রী হয়েছিলেন। তিনি ১৯০৫ সালের জানুয়ারিতে চিকিৎসা অনুষদ থেকে স্নাতক হন, তার ডিগ্রি তাকে জার্মানির যে কোন জায়গায় অনুশীলন করতে সক্ষম করে তুলে।[১][২]

স্নাতক হওয়ার পরপরই, তিনি তার শৈশবের বন্ধু, আইনজীবী ইলিয়াস স্ট্রাউসকে বিয়ে করেন এবং তার সাথে মিউনিখে চলে যান। একসাথে তাদের পাঁচটি সন্তান ছিল। যথাঃ ইসা (১৯০৯), হান্নাহ (১৯১২), ফ্রেডেরিক (১৯১৪), গ্যাব্রিয়েল (১৯১৫) এবং আর্নস্ট (১৯২২), যাদের সবাইকে তিনি একটি ঐতিহ্যগতভাবে ইহুদি পরিবারে লালন-পালন করেছিলেন। একজন সাধারণ অনুশীলনকারী এবং একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ হিসাবে, ১৯০৮ সাল থেকে তিনি প্রায় ২৫ বছর ধরে প্রধানত মহিলা এবং শিশুদের জন্য নিজের চিকিৎসা চর্চা চালান।[১][২]

মিউনিখে, স্ট্রাউস মহিলা ইহুদি লীগ এবং মহিলা আন্তর্জাতিক জায়নবাদী সংগঠন সহ বিভিন্ন জায়নবাদী এবং মহিলাদের সংগঠনে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। তিনি ইহুদি সাময়িক পত্রিকাগুলিতে নিবন্ধ অবদান রেখেছিলেন এবং ইহুদি মহিলা সমিতি ও মহিলাদের আন্দোলনের লিফলেট সম্পাদনা করেছিলেন। তাদের মিউনিখের বাড়িটি আলবার্ট আইনস্টাইন, মার্টিন বুবার এবং জুডা লিওন ম্যাগনেস সহ ইহুদি অভিজাতদের মিলনস্থল হয়ে ওঠে।[৪]

১৯৩৩ সালের জুন মাসে ক্যান্সারে আক্রান্ত তার স্বামীর মৃত্যুর পর, স্ট্রাউস বুঝতে পেরেছিলেন যে তিনি আর জার্মানিতে থাকতে পারবেন না যেখানে তাকে নাৎসিদের দ্বারা ক্রমবর্ধমান হুমকি দেওয়া হয়েছিল। পরের নভেম্বর, তিনি তার সন্তানদের নিয়ে ফিলিস্তিনে চলে আসেন।[৪] সেখানে তিনি একটি চিকিৎসা চর্চা প্রতিষ্ঠা করেন কিন্তু ১৯৪০ সালে সামাজিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণের জন্য তিনি এটি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর, তরুণ মহিলা অভিবাসীদের প্রশিক্ষণ, অভাবীদের পোশাক বিতরণ এবং প্রতিবন্ধী মহিলাদের পুনর্বাসনের জন্য একটি কর্মশালা তৈরির জন্য তার প্রচেষ্টা চলমান ছিল। তিনি জেরুসালেমে প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য আকিম প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন, যা বর্তমানে বেইট রাহেল স্ট্রাউস নামে পরিচিত। ১৯৫২ সালে তিনি উইমেনস ইন্টারন্যাশনাল লীগ ফর পিস অ্যান্ড ফ্রিডমের ইসরাইলি শাখা প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেন, সেখানে তিনি একজন আজীবন সক্রিয় সম্মানসূচক সদস্য ছিলেন।[২]

পরবর্তী জীবনে তিনি নাৎসিদের ক্ষমতায় আসার আগে জার্মানির জীবনকে কেন্দ্র করে তার স্মৃতিকথা লিখেছিলেন। তিনি হিব্রুতে শিশুদের রূপকথাও প্রকাশ করেছিলেন। রাহেল স্ট্রাউস ১৫ই মে ১৯৬৩ সালে জেরুসালেমে ৮৩ বছর বয়সে মারা যান।[২]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Dr. Elias and Dr. Rahel Straus, née Goitein, Munich" (পিডিএফ) 
  2. "Rahel Straus"Jewish Women's Archive (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-০৪ 
  3. "Rahel Straus (née Goitein) | Jüdische Ärzte aus Deutschland und ihr Anteil am Aufbau des israelischen Gesundheitswesens" (জার্মান ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-০৪ 
  4. Biographie, Deutsche। "Straus, Rahel (verheiratete) - Deutsche Biographie"www.deutsche-biographie.de (জার্মান ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-০৪