রামজী লন্ডনওয়ালে

হিন্দি ভাষার চলচ্চিত্র

রামজী লন্ডনওয়ালে (হিন্দি: रामजी लंदनवाले, অনুবাদ'রামজী লন্ডনবাসী') হচ্ছে ২০০৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি হিন্দি চলচ্চিত্র যেটি পরিচালনা করেছিলেন সঞ্জয় দাইমা এবং প্রযোজনা করেছিলেন সুনন্দা মুরালী মনোহর। চলচ্চিত্রটি ২০০৩ সালের তামিল চলচ্চিত্র নালা দমায়ন্তী এর পুনঃনির্মাণ ছিলো যেখানে এক সহজ-সরল গ্রাম্য ছেলে বিদেশে যেয়ে ঝামেলায় পড়ে। রামজী লন্ডনওয়ালের প্রথম নাম বাবুর্চি রাখা হবে বলে ভাবা হয়েছিলো কিন্তু পরে রামজী লন্ডনওয়ালে রাখা হয়।[১] চলচ্চিত্রটিতে মাধবন নালা দমায়ন্তীর রামজী নারায়ণস্বামী আইয়ার চরিত্রের মতই রামায়ণ তিওয়ারী নামের এক গ্রাম্য পাকা রাধক চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন।[২] চলচ্চিত্রটির একটি বিশেষ চরিত্রে বলিউড কিংবদন্তি অমিতাভ বচ্চন ছিলেন।

রামজী লন্ডনওয়ালে
পোস্টার
পরিচালকসঞ্জয় দায়মা
প্রযোজকসুনন্দা মুরালী মনোহর
চিত্রনাট্যকারমাধবন
অবন্তিকা হরি
কাহিনিকারকামাল হাসান
শ্রেষ্ঠাংশেমাধবন
সমিতা বাঙ্গার্গী
সুরকারবিশাল ভরদ্বাজ
প্রবীণ মণি
চিত্রগ্রাহকরবি বর্মণ
মুক্তি২ সেপ্টেম্বর ২০০৫
দেশভারত
ভাষাহিন্দি

কাহিনী সম্পাদনা

রামজী (মাধবন) হচ্ছে একজন সহজ সরল গ্রামীণ রাধক যে তার একমাত্র বোনের ভালো পরিবারে বিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছে, তাদের বাবামা নেই। তার বোনের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার জন্য একটি ছেলেকে পেয়ে যায় রামজী এবং পরে তাকে তার বোনের বিয়ের জন্য তার বরের পরিবারকে যৌতুক প্রদান করতে হবে - এটা ভেবে সে দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়। রামজী লন্ডন যাওয়ার পরিকল্পনা করে এবং লন্ডন চলে যায়, এবং ওখানে সে যায় রাধক হিসেবে একটি উচ্চবিত্ত ভারতীয় ব্যবসায়ী পরিবারে রান্না করার জন্য। রাধক হিসেবে আয় করার পর সে তার এই আয় দিয়ে তার বোনের বিয়ের যৌতুকের টাকা পরিশোধ করে দেবে। রামজী যেদিন লন্ডন পৌঁছায় ঐদিন তার যেই বাসায় কাজ করার কথা ছিলো ঐ বাসার মালিক অর্থাৎ তাকে যে ব্যক্তি কাজ দেবে সে মারা যায়। এরপর রামজী অবৈধভাবে কাজ করার সুযোগ পায় একটি রেস্তোরাঁয় পাচক হিসেবে, রেস্তোরাঁটির মালিক একজন ভারতীয় যার নাম বদরী, তার স্ত্রী আছে এবং একটি ছেলে আছে যারা লন্ডনেই থাকে। রামজীকে বদরীর স্ত্রীসহ বদরী নিজেও পছন্দ করা শুরু করে। রেস্তোরাঁটি ভারতীয়দের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, একদা এক পুলিশ রেস্তোরাঁটিতে আসে। পুলিশ রামজীর বৈধ কাগজপত্র দেখতে চায় যা রামজীর কাছে নেই।

বদরীর জয় কাপুর নামে একজন আইনজীবী বন্ধু আছে যে বদরীকে বুদ্ধি দেয় যে রামজীকে একটা ব্রিটিশ নাগরিককে বিয়ে করতে হবে যাতে করে পুলিশ তাকে এ দেশ থেকে তাড়িয়ে না দেয়। জয়ের নিজেরই প্রেমিকা সামিরাকে বিয়ে করার কথা বলে সে, বদরী রামজীকে এই কথা বলে যে তাকে এক ব্রিটিশ নাগরিককে বিয়ে করতে হবে যাতে পুলিশ কিছু করতে না পারে, তাছাড়া বদরী তার রেস্তোরাঁয় বহু অবৈধ ভারতীয় নাগরিককে কাজ দিয়েছে যার কারণে পুলিশ তার রেস্তোরাঁর ব্যবসা বন্ধ করে দিতে পারে। রামজী সামিরাকে বিয়ে করতে রাজী হয়ে যায়, এবং তারা একটি চার্চে বিয়ে করে।

পুলিশের সন্দেহ হয় যে এই বিয়েটা ভুয়া। ভারতীয় দূতাবাস রামজী এবং সামিরাকে ডাক দেয়। এই সময়ের মধ্যে রামজী জয় সম্বন্ধে জানতে পারে যে তার আগে একটি পত্নী ছিলো। জয়ের প্রাক্তন পত্নী রামজীকে বলে যে জয় প্রতারক, জয় তাকে ধোঁকা দিয়ে ত্যাগ করেছে, তাদের একটি ছেলেও হয়েছে, সে জানায় সে জয়কে শাস্তি দেবে। রামজী এইসব কথা সামিরাকে বললে সামিরাও জয়ের প্রাক্তন পত্নীর সঙ্গে কথা বলে। পুলিশ যাতে সামিরা এবং রামজীর বিয়েকে ধোঁকা মনে না করে সেইজন্যে সামিরা এবং রামজী একই সঙ্গে থাকা শুরু করে দেয়। সামিরা রামজীর গ্রাম্য আচরণ পছন্দ করেনা। রামজীর ভালো রান্না সামিরার পছন্দ হয়ে যায় এবং সে রামজীকে পছন্দ করা শুরু করে। ধীরে ধীরে সামিরা বুঝতে পারে যে জয় তাকে ভালোবাসেনা আসলে।

রামজী তার বোনের যৌতুকের টাকা ভারতে পাঠাতে পারেনা, তার বোনকে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন বের করে দেয়। রামজীর বোন রামজীকে টেলিফোনে পাওয়ার চেষ্টা করে, সামিরা ফোন ধরে এবং সব কথা শোনার পর সামিরা ভারতে টাকা পাঠিয়ে দেয়। রামজী ভারতীয় দূতাবাসে ভুল কথা বলার কারণে ঝামেলায় পড়ে, ভারতীয় দূতাবাস তার বৈধ কাগজপত্র না থাকার কারণে তাকে ভারতে ফেরত পাঠিয়ে দেবার নির্দেশ দেয়। রামজী যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় একটি খবর আসে যে সে একটি রান্না প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়েছে এবং একটি বিলাসবহুল রেস্তোরাঁয় রান্না করার সুযোগ পেয়েছে।

রামজী সামিরাকে বলে যে তার ভারতে যাওয়াই লাগবে। এক বছর পর সামিরা রামজীর গ্রামে আসে, সামিরা তাকে ভারতীয় সংস্কৃতি অনুযায়ী আবার বিয়ে করবে বলে সিদ্ধান্ত নেয় কারণ সে তাকে ভালোবাসে। রামজী এবং সামিরা ভারতেই নতুন একটি রেস্তোরাঁর ব্যবসা নিজেরাই শুরু করে এবং অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন সেটি উদ্বোধন করতে আসেন।

অভিনয়ে সম্পাদনা

  • আর. মাধবন - -রামনারায়ণ তিওয়ারী (রামজী)
  • সমিতা বাঙ্গার্গী - সামিরা (সামি)
  • সতিশ শাহ - বিশ্বম্ভর মেহরা
  • রাজ জ্যোতিষী - জয় কাপুর
  • অখিলেন্দ্র মিশ্র - মিশ্র
  • আভা পারমার - রামজীর মাতা
  • আদিত্য লাখিয়া - পাপ্পু
  • অমিতাভ বচ্চন - অতিথি চরিত্র (স্বভূমিকায়)

প্রযোজনা সম্পাদনা

রামজী লন্ডনওয়ালে চলচ্চিত্রটি হচ্ছে ২০০৩ সালের তামিল চলচ্চিত্র নালা দমায়ন্তী চলচ্চিত্রের পুনর্নির্মাণ, নালা দমায়ন্তী'র কাহিনী তামিল চলচ্চিত্র শিল্পের কিংবদন্তি অভিনেতা কমল হাসন লিখেছিলেন, এখানেও মাধবন মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন।[১] রামজী লন্ডনওয়ালে চলচ্চিত্রটির নাম প্রথমে বাবুর্চি রাখা হবে বলে ভাবা হচ্ছিলো, মাধবনকে নায়ক হিসেবে নেওয়ার কথা প্রথমেই ভাবা হয়েছিলো, মাধবন এই চলচ্চিত্রটির সংলাপও লিখেছিলেন, ২০০১ সালের চলচ্চিত্র লগান এর সহকারী পরিচালক সঞ্জয় দায়মা চলচ্চিত্রটির পরিচালক হিসেবে নির্ধারিত হয়েছিলেন। মাধবন তামিল চলচ্চিত্রটির মত পুরোপুরি কাহিনী লিখেননি, কিছুটা পরিবর্তন করে কাহিনী লিখেছিলেন। মাধবনের পত্নী সারিতা নায়িকা হিসেবে সামিতা ব্যাঙ্গার্গি নিতে বলেছিলেন, সামিতার অভিনয় করা ২০০২ সালের চলচ্চিত্র ইয়ে কিয়া হো রাহা হে এবং শাদী কা লাড্ডু (২০০৪) এর প্রচারণা সারিতার ভালো লেগেছিলো।[২]

চলচ্চিত্রটি ২০০৪ সাল জুড়ে প্রাথমিকভাবে লন্ডনে শুটিং হয়েছিলো।[৩]

গানের তালিকা সম্পাদনা

চলচ্চিত্রটির সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেন বিশাল ভরদ্বাজ এবং প্রবীণ মণি।

গান গায়ক-গায়িকা
রামজী কে পাস হ্যায় সব কে লিয়ে মাসালা রঘুবীর যাদব
লন্ডন লন্ডন সুখবিন্দর সিং
ডু ডু ডু ডু সুরেশ ওয়াড়কার, আলিশা চিনয়
ধুঁয়া ধুঁয়া সনু নিগম
ভুল না জায়েঙ্গে দেলোয়ার মেহেদী, রাকেশ পণ্ডিত
রামজী ভাঙ্গা প্রবীণ মণি, অর্জুন
হোয়েন কালচার মিটস প্রবীণ মণি
হোয়েন সউল স্পীকস প্রবীণ মণি
রামজী ইন ক্লাব প্রবীণ মণি

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Ramji Londonwaley"Sify (ইংরেজি ভাষায়)। ১৮ এপ্রিল ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ এপ্রিল ২০১৮ 
  2. Adarsh, Taran (২ সেপ্টেম্বর ২০০৫)। "Ramji Londonwaley"Sify। ১৮ নভেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ এপ্রিল ২০১৮ 
  3. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১১ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০১৯ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা