রাবেয়া বসরী

মুসলিম সাধক এবং সুফী

হযরত রাবেয়া বসরী (আরবি: رابعة العدوية القيسية) ছিলেন একজন মহিলা মুসলিম সাধক এবং সুফী ব্যক্তিত্ব।[][]

মুসলিম তপস্বী
হযরত রাবেয়া বসরী
উপাধিআল-বসরী
জন্ম৭১৩ খ্রিঃ বা ৭১৭ খ্রিঃ
মৃত্যু৮০১ খ্রিঃ
জাতিভুক্তআরব
মূল আগ্রহসুফিবাদ, Asceticism, ঐশ্বরিক প্রেম
উল্লেখযোগ্য ধারণাঐশ্বরিক প্রেম

ইরাকের বসরা নগরীতে এক দরিদ্র পল্লীতে জন্ম হয়েছিল এই ধর্মভীরু রাবেয়া বসরীর। তাঁর জন্ম তারিখ নিয়ে বহু মতভেদ রয়েছে। তিনি ৯৫ হিজরী, মতান্তরে ৯৯ হিজরির ৭১৯ খ্রিষ্টাব্দের কাছাকাছি সময়ে ইরাকের বসরা নগরীতে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ইসমাঈল এবং মাতার নাম মায়ফুল। তারা দরিদ্র এবং পরম ধার্মিক ছিলেন। রাবেয়া বসরী ছিলেন ভদ্র, নম্র ও সংযমী। সেই সাথে প্রখর বুদ্ধিমত্তার অধিকারিনী। সব সময় গভীর চিন্তায় ধ্যানমগ্ন হয়ে যেতেন। রাগ, হিংসা, অহংকার তার চরিত্রকে কখনো কলুষিত করতে পারেনি। মোট কথা আল্লাহর একজন প্রকৃত ওলী হবার জন্য যা যা গুণাবলি থাকা প্রয়োজন সকল গুণের অধিকারিনী ছিলেন হযরত রাবেয়া বসরী (রহ.)। রাবেয়া বসরী সকল বিপদ-আপদকে পরীক্ষা হিসেবে গ্রহণ করতেন। রাবেয়া বসরী দাসত্ব জীবনও অতিবাহিত করেছেন। তার মনিব ছিল অত্যন্ত নিষ্ঠুর প্রকৃতির লোক। বিরামহীন সে কাজ সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলতে থাকতো। মনিবের নির্ধারিত কাজ শেষ করার পর মহান রবের ইবাদতে মশগুল হয়ে যেতেন। মূলত রাবেয়া বসরীর উদ্দেশ্য ছিল আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি লাভ করা। আল্লামা ফরিদ উদ্দীন সাত্তারের মতে, এক রাতে রাবেয়া যখন আরাধনায় লিপ্ত ছিলেন, তখন তার মাথার ওপর কোনো শিকল দিয়ে বাঁধা ছাড়াই একটি ঝাড়বাতি জ্বলছিল। যার আলো বিচ্ছুতি হয়ে ঘরের চারপাশ আলোকিত হয়ে গেল। এ ঘটনা দেখে মনিবের পাষান হৃদয় গলে গেল। মনে মনে বললো, হায়! এ আমি কাকে আমার ঘরে দাসী বানিয়ে রেখেছি। সে তো সামান্য নারী হতে পারে না। সে আল্লাহর প্রিয়জন। পরদিন সকালে মনিব রাবেয়া বসরীকে দাসত্ব জীবন থেকে মুক্ত করলেন। রাবেয়া বসরী একাডেমিকভাবে লেখাপড়া করার সুযোগ পাননি। তবে খুব অল্প বয়সেই মা-বাবার কাছ থেকে কুরআন, হাদীস, ফিকহ্ শাস্ত্রের জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। শিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে তার কখনো কোনো সংকোচ ছিল না। মা-বাবাকে খুব অল্প বয়সেই তিনি হারান। জীবনে চলার পথে বহু কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছেন তিনি। তারপরও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কখনো পিছপা হননি। সে সময়ের একজন মহান সাধক ছিলেন ইমাম হাসান বসরী (রহ.)। রাবেয়া তার কাছে গিয়ে ইলমে তাসাউফ ও মারেফাতের সুক্ষ্মজ্ঞান অর্জন করেন। পরবর্তী জীবনে রাবেয়া একজন কবি হিসেবেও প্রসিদ্ধ লাভ করেন। রাবেয়া বসরীর জীবন থেকে অনেক কারামত প্রকাশিত হয়েছে। এরকম তিনি ১৮৫ মতান্তরে ১৮০ হিজরী মোতাবেক ৮০১ /৭৯৬ খ্রিষ্টাব্দে শেষ নিঃস্বাস ত্যাগ করেন।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Smith, Margaret (২০১০)। Rabi'a The Mystic and Her Fellow-Saints in Islam। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। পৃষ্ঠা ২৫২। আইএসবিএন 9781108015912 
  2. Smith, Margaret (২০১০-১০-৩১)। Rabi'a The Mystic and Her Fellow-Saints in Islam (ইংরেজি ভাষায়)। Cambridge University Press। আইএসবিএন 978-1-108-01591-2 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা

একদা তার দরজায় এক ক্ষুধার্ত ভিক্ষুক এসেছিলো।তো তার কাছে তেমন কোনো খাবার ছিলো না অতিরিক্ত যে সে ভিক্ষুককে দিবে তার খাবারের দুটি রুটি ব্যাতীত। তিনি ভিক্ষুককে তাই দিয়ে বিদায় দিলেন। পরক্ষণেই প্রতিবেশী এক মালকিন তার দাসীকে দিয়ে তার জন্য কিছু খাবার পাঠালো। ঢাকনা খুলেই দেখে সেখানে কিছু রুটি রয়েছে। রাবেয়া বসরী (রাঃ) তা গুনে দেখলেন আঠারোটি রুটি রয়েছে। তিনি দাসীকে ফেরত দিয়ে বললেন দুটি রুটি কম রয়েছে। বস্তুত তিনি জানতেন এই হাদীসটি যেখানে বলা হয়েছে এমন তুমি যা দান করবে তার দশগুণ হয়ে তোমার কাছে ফিরে আসবে।