রমেশ চন্দ্র পরীদা

ভারতীয় রসায়নবিদ

রমেশ চন্দ্র পরীদা ভুবনেশ্বরের ওড়িশা কৃষি ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেসিক সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ কলেজের রসায়ন বিভাগের একজন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। তিনি ওড়িয়া সাহিত্যের একজন প্রসিদ্ধ ও জনপ্রিয় বিজ্ঞান লেখক।

প্রাথমিক জীবন এবং শিক্ষা সম্পাদনা

রমেশ চন্দ্র পরীদা ১৯৪৭ সালের ৪ জানুয়ারি ভারতের ওড়িশা রাজ্যের কেন্দ্রপাড়া জেলার পাতাকুরা পুলিশ স্টেশনর (থানার সমতুল্য) জামাপাড়া নামে একটি প্রত্যন্ত গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার বাবা ভ্রমরবর পরীদা ছিলেন প্রাথমিক বিদ্যালয় একজন শিক্ষক এবং তার মা সত্যভামা পরীদা ছিলেন গৃহকর্মী। তার তিন ভাই এবং দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড় ছিলেন। পরীদা শৈশব থেকেই তার পিতার গান্ধীবাদী মতাদর্শ দ্বারা প্রবলভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন, যা তার মধ্যে লেখালেখিতে কর্মজীবন শুরু করার স্পৃহা এবং আত্মবিশ্বাস তৈরি করেছিল। ফলস্বরূপ বিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালেই অর্থাৎ ছাত্রজীবনেই তিনি বিভিন্ন শিশু সাময়িকীতে এবং শিশু পত্রিকার শিশুতোষ পাতায় ছোট গল্প এবং কবিতা লিখেছিলেন ও প্রকাশ করেছিলেন। প্রতিবেশী কারিলোপাটনা গ্রামের একটি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬২ সালে তিনি মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেছিলেন। মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করার পরে ১৯৬৬ সালে তিনি বিজ্ঞানে সম্মানসহ স্নাতক (বি.এসসি. অনার্স) ডিগ্রি অর্জন করেন। এর দুবছর পর ১৯৬৮ সালে কটকের তৎকালীন রাবেনশ্বা কলেজ (বর্তমানে এটি একটি একক বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে রসায়ন বিষয়ে বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর (এম.এসসি) ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন তিনি।

পেশাগত জীবন সম্পাদনা

পরীদা ১৯৬৮ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত বনপুরের গোদাবরীশ কলেজে এবং ১৯৭০ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত দামান কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সরকারি কলা ও বিজ্ঞান কলেজে রসায়ন বিভাগের প্রভাষক হিসেবে কাজ করেছিলেন। ১৯৭৬ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ভুবনেশ্বরের ওড়িশা কৃষি ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেসিক সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যানিটিস কলেজের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক হিসাবে যুক্ত ছিলেন। এর মধ্যে ১৯৯৬-১৯৯৯ সালে সহযোগী অধ্যাপক এবং ১৯৯৯-২০০৭ সালে অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কাজ করেছিলেন। সবশেষে ২০০৭ সালে তিনি সেখান থেকে অবসর গ্রহণ করেছিলেন।

এতসবের পাশাপাশি তিনি জোড়াহাটের আঞ্চলিক পরীক্ষণ গবেষণাগারের একজন বিজ্ঞানী (১৯৮৩) এবং ওড়িশার সুনাবেদা এরোনটিক্স কলেজের অধ্যক্ষ (১৯৮৮-১৯৯৯) হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

গবেষণাকর্ম সম্পাদনা

পরীদার গবেষণার মূল ক্ষেত্রটি ছিল চালের প্রোটিন সংক্রান্ত অধ্যয়ন, যার জন্য ১৯৯০ সালে তিনি উৎকল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি এই বিষয়ে প্রায় ২০ টি গবেষণা পত্র প্রকাশ করেছেন।

লেখকজীবন সম্পাদনা

পরীদা ওড়িয়া ভাষার পাশাপাশি ইংরেজিতেও একজন প্রসিদ্ধ জনপ্রিয় বিজ্ঞান লেখক। তিনি উভয় ভাষায় বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করার জন্য প্রচুর নিবন্ধ এবং বই লিখেছেন। এর মধ্যে উড়িয়াতে প্রায় ৮০টি বই ও ৩০০টি নিবন্ধ এবং ইংরেজিতে প্রায় ৩০০ টি নিবন্ধ ও ১১টি বই রয়েছে।

বই সম্পাদনা

পরীদা ওড়িয়া সাহিত্যে ৮০টির বেশি জনপ্রিয় বিজ্ঞানবই লিখেছেন এবং বেশ কয়েকটি বিজ্ঞান সাময়িকী এবং সংবাদ বুলেটিন সম্পাদনা করেছেন। পরীদার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বই হলো-

  1. বিজ্ঞানিক
  2. বিজ্ঞানের নতুন দিগন্ত
  3. লিপিরা কম্পিউটার শিক্ষা,
  4. লেজার সুপরিবাহিতা,
  5. ডিএনএ এবং পরবর্তী,
  6. ক্লোনিং।

তিনি একাধিক বিজ্ঞান সাময়িকী সম্পাদনা করেছেন যার মধ্যে রয়েছে বিজ্ঞান ও পরিবেশ বার্তা, বিজ্ঞান ও পরিবেশ বুলেটিন, বিজ্ঞান প্রভা এবং বিজ্ঞান দিগন্ত (ওড়িশা বিজ্ঞান একাডেমি থেকে প্রকাশিত)। বেশ কয়েকটি ওড়িয়া এবং ইংরেজি পত্রিকা ও খবরের কাগজে তিনি শিশু এবং সাধারণ পাঠকদের জন্য নিয়মিত বিজ্ঞান নিবন্ধ লিখেছেন। তিনি ওড়িশা সাহিত্য একাডেমিরও সদস্য ছিলেন।

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা