যুগোস্লাভ অভ্যুত্থান

১৯৪১ সালের ২৭ এপ্রিল তৎকালীন যুগোস্লাভিয়ার বেলগ্রেডে যুগোস্লাভ অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। এর মাধ্যমে যুবরাজ পলের যৌবরাজ্যকে উৎখাত করে রাজা দ্বিতীয় পিটারের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা হয়। জেনারেল দুসান সিমোভিচ-এর অধীনে পশ্চিমাপন্থি সার্বীয় জাতীয়তাবাদী রাজকীয় যুগোস্লাভ বিমানবাহিনীর কর্মকর্তারা এর নেতৃত্ব প্রদান করেন। ১৯৩৮ সাল থেকেই সিমোভিচ সফল অভ্যুত্থান পরিচালনার পরিকল্পনা করেছিলেন। এর অন্যান্য প্রধান সংগঠক ছিলেন সামরিক উড্ডয়নের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বরিভোজে মার্কোভিচ, যুগোস্লাভ রাজকীয় বাহিনীর মেজর জিভান নেজেভিচ ও তার ভাই রাদোজে নেজেভিচ। বেসামরিক নেতৃত্ব সম্ভবত এই পরিকল্পনা সম্বন্ধে অবগত ছিলেন। অভ্যুত্থান সংঘটিত হওয়ামাত্রই তারা একে সমর্থন করতে এগিয়ে আসেন। কিন্তু বেসামরিক নেতৃবৃন্দ এর সংঘটনে অংশগ্রহণ করেননি।

যুগোস্লাভ অভ্যুত্থান
a black and white photograph of two older men alongside a young man in uniform
তারিখ২৭ মার্চ ১৯৪১
অবস্থানবেলগ্রেড, যুগোস্লাভিয়া রাজতন্ত্র
মৃত১ (দুর্ঘটনাবশত)[১]

যুগোস্লাভ সাম্যবাদী দল এতে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেনি । কিন্তু অভ্যুত্থান সংঘটিত হওয়ামাত্রই সাম্যবাদী দল এর সমর্থনে বিরাট জনসমাবেশের আয়োজন করে। অভ্যুত্থানপ্রচেষ্টা সাফল্যে পর্যবসিত হয়। যুবরাজ পল, রাদেনকো স্তানকোভিচআইভো পেরোভিচের সমন্বয়ে গঠিত তিন সদস্যের যৌবরাজ্যকে এটি দ্রুত উৎখাত করে। প্রধানমন্ত্রী দ্রাগিসা ভেতকোভিচেরও পতন ঘটে। দুই দিন পূর্বে ভেতকোভিচ সরকার ভিয়েনায় ত্রিপক্ষীয় চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। কয়েক মাস ধরেই অভ্যুত্থান সংঘটনের পরিকল্পনা করা হলেও ভেতকোভিচ সরকারের ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর একে ত্বরান্বিত করে। ব্রিটিশ স্পেশাল অপারেশনস এক্সিকিউটিভ এর অন্যতম মদদদাতা ছিলো।

১৭ বছর বয়সী রাজা দ্বিতীয় পিটারকে অভ্যুত্থানকারীরা সিংহাসনে আরোহণের উপযুক্ত ঘোষণা করা হয়। সিমোভিচকে প্রধানমন্ত্রী করে ভ্লাদকো মাচেকস্লোবোদান জোভানোভিচ-কে উপপ্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করা হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে জার্মানরা যুগোস্লাভিয়া আক্রমণ করে। জার্মানদের সোভিয়েত আক্রমণের পরিকল্পনা (অপারেশন বারবারোসা) বিলম্বিত করায় এ অভ্যুত্থানের তাৎপর্য আজও বিতর্কিত। তবে অনেক ঐতিহাসিক বলেছেন, প্রকৃতপক্ষে অক্ষশক্তির অভিযানে এটি প্রভাব ফেলেনি।

পটভূমি সম্পাদনা

যুগোস্লাভ রাজতন্ত্র ১৯১৮ সালে সার্ব, ক্রোয়াট ও স্লোভেনদের রাজতন্ত্র নামে প্রতিষ্ঠিত হয়। বৈচিত্র্যপূর্ণ ঐতিহাসিক পটভূমির জাতিসত্তা এর প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল। সার্ব, ক্রোয়াট, স্লোভেন, মন্টেনেগ্রিন, বসনীয় মুসলিম, মেসিডোনীয় ও আলবেনীয়রা এই রাজতন্ত্রের অধীনে বসবাস করত। সার্বীয় অর্থোডক্স চার্চ, ক্যাথলিক চার্চ এবং ইসলামী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সাথে জনগণ ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত ছিল। এই ধর্মীয় বৈচিত্র্য যুগোস্লাভ সমাজকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। বাসিন্দাদের ৩৮.৮% সার্ব ও মন্টেনেগ্রিন, ২৩.৯% ক্রোয়াট, ৮.৫% স্লোভেন, ৫.৩% মেসিডোনীয় এবং ৪% আলবেনীয়।

অর্থনীতি বিষয়ের অধ্যাপক ও ইতিহাসবিদ জোজো টমাসেভিচের মতে, সৃষ্টির সূচনালগ্ন হতেই যুগোস্লাভিয়া রাজনৈতিকভাবে দুর্বল ছিল। সার্বিয়া-বান্ধব ভিদোভান সংবিধান বিকেন্দ্রীকরণের সব সম্ভাবনা রুদ্ধ করে দেয়। সার্বীয় অর্থোডক্স চার্চের রাজনৈতিক বিষয়ে অযাচিত হস্তক্ষেপ ও কর্মসংস্থানে সার্বদের প্রাধান্য অ-সার্বদের নিজ ভূমিতে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করে। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা অচিরেই রাজনৈতিক দুর্নীতির আখড়ায় রূপান্তরিত হয়। সার্বীয় শাসকগোষ্ঠীর আধিপত্য আর্থ-সামাজিক সমস্যাবলি মোকাবিলার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

১৯২৯ সালে রাজা আলেকজান্ডার গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা উৎখাত করে একনায়কতন্ত্র প্রবর্তন করেন। ১৯৩৪ সালে মার্সেই-এ ক্রোয়াট শ্রেষ্ঠত্ববাদী এক গুপ্তঘাতক তাকে হত্যা করে। দ্রুতই যুবরাজ পল সমস্ত ক্ষমতা লাভ করেন। পলের শাসনে পররাষ্ট্রনীতিতে স্থিতিশীলতা আসলেও যুগোস্লাভিয়ার অভ্যন্তরে অশান্তির বাতাবরণ অব্যাহত থাকে।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Tomasevich 1969, পৃ. 67।

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা