যমপুকুর ব্রত
যমপুকুর ব্রত বাংলার হিন্দুসমাজের অশাস্ত্রীয় বা মেয়েলি ব্ৰতগুলির অন্তর্গত একটি কুমারীব্রত। গ্রামীণ বাংলার বাঙালি হিন্দুঘরের মেয়েরা আশ্বিন মাসের সংক্রান্তি থেকে কার্তিক মাসের শেষদিন পর্যন্ত একমাসব্যাপী এই ব্রত পালন করে। এটি চার বছর পালন করতে হয়। ব্রতের উদ্দেশ্য হল মৃত্যুর পর যেন প্রতিবেশী-আত্মীয়স্বজনদের পরলোকে কোনপ্রকার যন্ত্রণা ভোগ করতে না হয়।[১][২]
ব্রতের নিয়ম
সম্পাদনাগ্রাম-বাংলার বসতবাড়ির মেঠো আঙিনা বা শানের মেঝেতে আল দিয়ে অথবা পুকুরপাড়ে বা বাগানে এই ব্রত করা হয়। মেয়েলি ব্রত হওয়ার দরুন ব্রতপালনে কোন মন্ত্র বা পুরোহিতের প্রয়োজন হয় না।
যমপুকুর ব্রত পালনের প্রথম পর্যায়ে প্রয়োজনীয় উপকরণ অর্থাৎ ধান, মানকচু, কলা, হলুদ, কলমী, শুশনি, ও হিঞ্চের চারাগাছ, সুপুরি, কয়েকটি কড়ি এবং কয়েকটি মাটির মূর্তি সংগ্রহ করতে হয়।
দ্বিতীয় পর্যায়ে চারদিকে চারটি ঘাটসহ চৌকো একটি পুকুর (এক বর্গহাত পরিমিত মাটিতে) খনন করে পুকুরটি জলপূর্ণ করে দক্ষিণদিকের ঘাটে পিটুলির আলপনার উপর মাটির যমরাজ, যমরাণী ও যমের পিসিকে বসাতে হয়। উত্তরদিকের ঘাটে মেছো ও মেছুনী, পূর্বদিকস্থ ঘাটে ধোপা ও ধোপানী, পশ্চিমদিকের ঘাটে মাটির কাক, বক, চিল, কুমির, কচ্ছপ, হাঙর ইত্যাদির মাটির মূর্তি রাখতে হয়। পুকুরের মাঝখানে একগোছা ধান, কলমী, শুশনি ও হিঞ্চে গাছ পুঁততে হয়; কচু, হলুদ প্রভৃতি গাছ পাড়ে থাকে।
তৃতীয় পর্যায়ে পূজার সময় পুকুরের চারকোণে চার কড়া কড়ি, চারটি হলুদ ও সুপারি পুঁতে দিয়ে একটি প্রদীপ জ্বালতে হয়; তারপর পূর্ব মুখ করে ফুল সহযোগে যমের পূজা করতে হয়। পুকুরে জল দেওয়ার, গাছে জল ঢালার এবং মূর্তিগুলি পূজা করার আলাদা আলাদা মন্ত্র আছে। পূজা শেষে বলা হয়ঃ
"সাত ভাইয়ের বোন আমি ভাগ্যবতী।
যমপুকুর পূজি আমি, সাক্ষী জগৎপতি।।"
পূজার শেষে যমপুকুর ব্রতের মাহাত্ম্যকথা শুনে ব্রত শেষ হয়।
চারবছর পরপর ব্রতপালন করে ব্রতটি উদযাপনের সময় এক কাহন (৮০টি) কড়ি ও দক্ষিণা দান এবং চারজন ব্রাহ্মণকে ভোজন করানো হয়।[১][২]