মেয়ে শক্তি
নারী শক্তি একটি স্লোগান যা নারীর ক্ষমতায়ন, স্বাধীনতা, এবং ভরসাকে প্রোৎসাহন ও সম্মান দেয় এবং উদ্যাপন করে। স্লোগানটির উদ্ভাবন মার্কিন পঙ্ক ব্যান্ড বিকিনি কিলের যিনি ১৯৯১ সালে গার্ল পাওয়ার নামে একটি সাময়িক প্রত্রিকা প্রকাশ করেছিলেন।
প্রাথমিক ব্যবহার এবং উৎস
সম্পাদনা১৯৯১ সালে, মার্কিন পাঙ্ক ব্যান্ড বিকিনি কিল গার্ল পাওয়ার নামে একটি নারীবাদী সাময়িকী প্রকাশ করেছিলেন। [১] ব্যান্ড এর প্রধান গায়ক, ক্যাথলি হানা, ব্ল্যাক পাওয়ার স্লোগান দ্বারা অনুপ্রাণিত ছিলেন। [২] শব্দটি বিংশ শতাব্দীর ৯০ এর প্রথম দিকে এবং মধ্যভাগে পাঙ্ক সংস্কৃতিতে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। রক এন্ড রোলের রোলিং স্টোন বিশ্বকোষ এই স্লোগানটি উদ্ভাবনে সাময়িকীটিকে স্বত্ব প্রদান করে। "বিকিনি কিল, নারীবাদী ফ্যানজিনেতে ( গুণগ্রাহীদের জন্য সাময়িকী) তারা সঙ্গীত জগতে যুক্ত বা বাইরে্র তরুণীদের জন্য একটি বিষয়সূচী স্পষ্টভাবে স্থির করেছিল; ব্যান্ড তাদের ধারণাগুলি দৈনিন্দিন জীবনের অভ্যাসের মধ্যে এনেছিল। (বিস্ময়করভাবে, জিন প্রথমে "নারী শক্তি" স্লোগান তৈরি করলেও, পরে ইংল্যান্ডের বাবেলগাম পপ ব্যান্ড স্পাইস গার্লও স্লোগানটি বেছে নিয়েছিল )। বিকিনি কিল এই রীতির নির্দিষ্ট মানগুলি চালু রাখার জন্য পাঙ্ক জগতে একটি খ্যাতি অর্জন করেছিল; উদাহরণস্বরূপ, স্টেজের ধারে ভীড়কে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে বলা, যাতে মহিলারা স্টেজের সামনে থেকে ধাক্কা না খান এবং নারীরা সহজে এগিয়ে এসে মাইক নিতে পারেন এবং যৌন নির্যাতনের কথা বলার আমন্ত্রণে যোগ দেন। " [৩]
রায়ট গ্রররল এর বানানের উপর ভিত্তি করে শব্দটি কখনও কখনও চমকপ্রদভাবে গ্রররল নামে উচ্চারিত হয়। [৪][৫]
অন্য কিছু বাদ্যযন্ত্র শিল্পী যারা তাদের সঙ্গীতে স্লোগান ব্যবহার করেছিলেন তাদের মধ্যে হল ওয়েলশ ব্যান্ড- হেলেন লভ, তারা তাদের ১৯৯২ সালের সমবেত গান "ফরমুলা ওয়ান রেসিং গার্লস" এ স্লোগানটির ব্যবহার করেছিলেন। [৬] এবং পপ-পাঙ্ক জুটি শ্যাম্পু,[৭] যারা ১৯৯৫ সালে অ্যালবাম এবং একক শিরোনাম গার্ল পাওয়ার (নারী শক্তি) প্রকাশ করেছিলেন।
স্পাইস গার্লস এবং বৃত্তি
সম্পাদনাব্রিটিশ পপ সঙ্গীত ব্যান্ড স্পাইস গার্লস ১৯৯০ এর মাঝামাঝি স্লোগানটিকে জনপ্রিয় করে তুলেছিল। [৮][৯][১০] অধ্যাপক সুসান হপকিন্স, তার ২০০২ এর বই গার্ল হিরোস: দ্য নিউ ফোর্স ইন পপুলার কালচার এ, নারী শক্তি, স্পাইস গার্লস এবং বিংশ শতাব্দীর শেষের মহিলা একশান হিরোদের একটি পারস্পরিক সম্পর্কের উল্লেখ করেন। [১১] স্পাইস গার্লস-এর সদস্য গ্যারি হ্যালিওয়েল, একজন নেতৃস্থানীয় রক্ষণশীল নেতা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ম্যাগারেট থ্যাচারকে গার্ল পাওয়ার বিষয়ে তাদের মতাদর্শের অগ্রগামী হিসাবে স্বীকার করেন। [১২][১৩]
এছাড়াও স্লোগানটি শিক্ষা ক্ষেত্রের প্রেক্ষাপটে পরীক্ষা করা হয়েছে, উদাহরণস্বরূপ বাফি গবেষণা।[১৪] প্রচার মাধ্যম বিশেষজ্ঞ ক্যাথলিন রো কের্লিন, তার প্রবন্ধে "স্ক্রীম, পপুলার, কালচার এন্ড ফ্যামিনিজমস থার্ড ওয়েভ: আই আম নট মাই মাদার" [১৫] এবং আইরিন কর্রাস "দ্য থার্ড ওয়েভ'স ফাইনাল গার্ল: বাফি দ্য ভ্যাম্পায়ার স্লেয়ার" -এ নারীবাদের তৃতীয় তরঙ্গর সঙ্গে একটি সংযোগের কথা উল্লেখ করেছেন । ফ্রান্সেস আর্লি এবং ক্যাথলিন কেনেডি টেলিভিশনের (কল্প বিজ্ঞানের) নতুন নারী যোদ্ধা- এথেনার কন্যাদের মুখবন্ধে: তারা কীভাবে নারী শক্তি এবং জনপ্রিয় সংস্কৃতির নারী যোদ্ধাদের একটি "নতুন" চরিত্রের মধ্যে সংযোগের কথা বর্ণনা করেন। [১৬]
সমালোচনা
সম্পাদনাডকটর ডেবি গিং, ডাবলিন সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিকেশন স্টাডিতে বিএ-এর সভাপতি, "গার্ল পাওয়ার" আদর্শের সমালোচনা করেছিলেন এবং ছোটো শিশুদের বিশেষ করে মেয়েদের যৌনতার সাথে যুক্ত করেছিলেন। [১৭] উত্তর ক্যারোলিনা স্টেট ইউনিভার্সিটির এমি ম্যাকক্লুরে ক্ষমতায়নের ধারণা হিসাবে নারী শক্তির উপর অনেক আশা রাখার বিরুদ্ধে সতর্কবার্তা দেন। তিনি বলেন, " ভোক্তাদের উপর ভিত্তি করে একটি মতাদর্শ কখনোই বৈপ্লবিক সামাজিক আন্দোলন হতে পারে না। এটি একটি বিপ্লবী আন্দোলন বলে মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে একটি বিপজ্জনক মিথ্যা যা শুধুমাত্র বিপণনকারীরাই আমাদের কাছে বিক্রি করে না কিন্তু আমরা প্রায়ই আনন্দসহকারে নিজেদের বিক্রি করি। " [১৮] আজকের নারী কিরূপ প্রচার মাধ্যম কখন তার একটা সঙ্কীর্ন সংজ্ঞা উপস্থাপন করতে পারে।। যেমন একটি সাধারণ উদাহরণ হল জনপ্রিয় খেলনা ম্যাটেল বার্বি। সাম্প্রতিক "আমি হতে পারি" বার্বি [১৯] "নারী শক্তির" এই ধারণাটি উত্থাপন করে: ছোট মেয়েরা যখন বড় হবে তখন তাদের ইচ্ছামত কিছুই হওতে পারে। যুক্তিযুক্তভাবে, বার্বি ছবিটি মেয়েদের বড় হয়ে ওঠার খুব সংকীর্ণ বিকল্পগুলি উপস্থাপন করতে পারে যার সাথে মেয়েরা নিজেদের সনাক্ত করতে পারে। [২০] দ্য গার্ডিয়ানের হান্না জেন পার্কিনসন এই শব্দটির সমালোচনা করে বলেন যে "অল্পবয়সী মহিলারা [নারীরা] নিজেদেরকে নারীবাদী বলে অভিহিত করে "মেয়ে" শব্দটি অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আরো আত্মবিশ্বাসী বোধ করছে এবং সমতা নীতি" অস্বীকার করে পিছনে সরিয়ে রাখছে, এই দাবি করে যে এটি প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের মেয়ে হিসাবে উন্নীত করার আহ্বান প্রচার । [২১]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Coscarelli, Joe (জুলাই ১১, ২০১৬)। "Kathleen Hanna on Hit Reset, Her Recovery and Her Feminist Path"। The New York Times। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৬-১৩।
- ↑ Marcus, Sara (২০১০)। Girls to the Front। Harper Perennial।
- ↑ "Bikini Kill Bio"। RollingStone.com। ২০১৫-১২-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৬-১৩।
- ↑ Gonick, Marnina (২০০৮)। "Girl Power"। Girl Culture। Greenwood Press। পৃষ্ঠা 310–314। আইএসবিএন 978-0-313-33909-7।
- ↑ Leonard, Marion (১৯৯৭)। "'Rebel Girl, You Are the Queen of My World': Feminism, 'Subculture' and Grrrl Power"। Sexing The Groove: Popular Music and Gender। Routledge। পৃষ্ঠা 230–55। আইএসবিএন 978-0-415-14670-8।
- ↑ "Helen Love - Gabba Gabba We Accept You"। Homepage.ntlworld.com। ২০১২-১০-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৯-৩০।
- ↑ "Shampoo - Interview by Alexander Laurence"। Free Williamsburg। এপ্রিল ২০০১। ২০১৯-০৬-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৯-৩০।
- ↑ "From Title IX to Riot Grrrls"। Harvard Magazine। জানুয়ারি–ফেব্রুয়ারি ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৯-৩০।
- ↑ "Girl power | You've come a long way baby"। BBC News। ডিসেম্বর ৩০, ১৯৯৭। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৯-৩০।
- ↑ Sarler, Carol (২১ জুলাই ২০০৬)। "Girl Power: how it betrayed us"। Daily Mail। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৯-৩০।
- ↑ Costi, Angela (অক্টোবর ৪, ২০০২)। "Super Slick Power Chicks: The New Force or Elaborate Parody?"। Senses of Cinema। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৯-৩০।
- ↑ Amanda Evans and Tara Brabazon, "I'll never be your woman: the Spice Girls and new flavours of feminism." Social Alternatives 17#2 (1998): 39.
- ↑ "Spice Girls: Too Hot to Handle"। Rolling Stone। ১০ জুলাই ১৯৯৭। ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ মার্চ ২০১৭।
- ↑ ""The Third Wave's Final girl: Buffy the Vampire Slayer""। জুন ২০, ২০০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মে ১৪, ২০১৯।
- ↑ Karlyn, Kathleen Rowe (২০০৩)। "Scream, Popular Culture, and Feminism's Third Wave: I'm Not My Mother"। Genders। ২০১২-০৬-১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৯-৩০।
- ↑ Riley, Robin (মে ২০০৪)। "Review of Early, Frances; Kennedy, Kathleen, eds., Athena's Daughters: Television's New Women Warriors"। H-Net Reviews। ২০০৭-০৬-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৯-৩০।
- ↑ Ging, Debbie. "Girl Power" doesn’t empower: why it’s time for an honest debate about the sexualisation of children in Ireland ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৪ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে July 2007.
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। জানুয়ারি ৩১, ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মে ১৪, ২০১৯।
- ↑ http://icanbe.barbie.com
- ↑ Lamb, Sharon; Brown, Lyn Mikel (২০০৭)। Packaging Girlhood: rescuing our daughters from marketers' schemes। St. Martin's Griffin। আইএসবিএন 9780312370053।
- ↑ Hannah Jane Parkinson (৮ জুলাই ২০১৫)। "Stop calling women 'girls'. It's either patronising or sexually suggestive"। The Guardian। সংগ্রহের তারিখ ২৫ নভেম্বর ২০১৬।