মেমোরি অব ডিপার্চার

মেমোরি অব ডিপার্চার (অর্থ প্রস্থানের স্মৃতি) নোবেল বিজয়ী কথাসাহিত্যিক আবদুলরাজাক গুরনাহ’র লেখা প্রথম উপন্যাস। এ উপন্যাসটি ১৯৮৭ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। গুরনাহর উপন্যাসের সংখ্যা ১০।[১][২]

মেমোরি অব ডিপার্চার
লেখকআবদুলরাজাক গুরনাহ
দেশযুক্তরাজ্য
ভাষাইংরেজি
প্রকাশকজোনাথন কেপ
প্রকাশনার তারিখ
১৯৮৭
পৃষ্ঠাসংখ্যা১৬০
পরবর্তী বইপিলগ্রিমস ওয়ে 

ইতিহাস সম্পাদনা

জন্মসূত্রে আবদুলরাজাক গুরনাহ একজন তাঞ্জানীয়। ১৯৬০-এর দশকের শেষ থেকে তিনি ইংল্যাণ্ডের অধিবাসী। এখানেই লেখাপড়া করেছেন ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা জীবিকা হিসাবে বেছে নিয়েছেন। আফ্রিকী সাহিত্য নিয়ে তার ব্যাপক পড়াশুনা। ১৯৮৪ সালে বাবা যখন মৃত্যু শয্যায় তখন তিনি বহু দিন পরে জাঞ্জিবার যান। এরকম অবস্থায় ১৯৮৫ সালে তাঁর প্রথম উপন্যাস লিখতে শুরু করেন। এ সময় তিনি কেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। কিছুদিন আগেই নাইজেরিয়ার বেয়ারিও বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন বছর অধ্যাপনা করে ইংল্যান্ডে ফিরেছেন কৈশোরের কৃষ্ণ-আফ্রিকার স্মৃতি পুনরুদ্ধার করে। লণ্ডনের প্রকাশনা সংস্থা জোনাথন কেইপ ১৯৮৭ সালের ১ মার্চ তারিখে “মেমোরি অব ডিপারচার” গ্রন্থাকারে প্রকাশ করে। নাতিদীর্ঘ এ উপন্যাসের পৃষ্ঠা সংখ্যা ১৫৯। এর মূল্য রাখা হয়েছিল ২৬ মার্কিন ডলার। আইএসবিন 978-0-8021-1018-3। সোয়াহিলি মাতৃভাষা হলেও গুরনাহ ইংরেজিকেই সাহিত্যের ভাষা হিসেবে অবলম্বন করেন।[৩]

পটভূমি সম্পাদনা

“মেমোরি অব ডিপারচার”-এর পটভূমি পূর্ব আফ্রিকার সমুদ্রোপকূলীয় অঞ্চল। ১৯৪৮-এ জাঞ্জিবারের এ রকম একটি এলাকা কেঙ্গেতে তাঁর জন্ম হয়েছিল। উপন্যাসের কেন্দ্রবিন্দু ১৫ বছরের কিশোর হাসান ওমর। সে এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র, উত্তম পুরুষের কথক।[৪]

কাহিনীরেখা সম্পাদনা

‘সাইদ ঘুরে দৌড় দিতে গেল। কিন্তু আমার বাবা ওর ডান কাঁধে ঘুষি দিয়ে একবারে মাটিতে পেড়ে ফেলল। এমন একটা শব্দ হলো যেন কুড়ালের কোপ পড়েছে মাংসে। হাঁটু বেঁকে গেল সাইদের, বাতাসের অভাবে তার মুখ হাঁ হয়ে গেল। বাবা তার প্রথম সন্তানের কাছে গিয়ে দাঁড়াল। তারপর ঝেড়ে লাথি কষল ওর পেট বরাবর। সাইদ উঠানে পড়ে গিয়ে উঠে দাঁড়াতে গেল। আবার লাথি ঝাড়ল বাবা। ওকে অনবরত ঘুষাতে লাগল। মাথা ঠুকে দিল। হাতের কবজির গিঁটে পেটাতে লাগল। মারের চোটে হেগে দিল সাইদ। মা এগিয়ে এল ছেলেকে বাঁচাতে। এবার সে স্ত্রীর দিকে ফিরে ক্রুদ্ধ পশুর মতো ফুঁসতে লাগল। ছেলেকে বাবা পেটাচ্ছিল আসুরিক ক্রোধ ও ঘৃণায়। তার হাত-পা দিয়ে দরদর করে ঘাম ঝরছিল। ছেলের দুপাশে দুই পা রেখে সে বলল, ঠিকমতো হয়েছে, নাকি আরও মার দিতে হবে?’”

— “মেমোরি অব ডিপার্চার”

সবে স্কুলের গণ্ডি পার হওয়া তরুণ হাসান ওমর এ উপন্যাসের মুখ্যচত্রিত। তার বাবা ওমর সরকারি দপ্তরের নিম্নস্তরের কর্মচারী। তিনি গুন্ডা প্রকৃতির মানুষ, লম্পট ও মদ্যপ। দিনের পর দিন হাসান দেখে তার নীতিবিবর্জিত বাবা রাতের ঘুটঘুটে অন্ধকারে ঘর ছেড়ে চলে যায় রাস্তায় সস্তা বেশ্যাদের সন্ধানে। আর মা সংসারের ঘানি টানতে টানতে, বিনা প্রতিবাদে তার বাবার নিগ্রহ সহ্য করতে করতে অকালে জ্বরাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। জনশ্রুতি আছে, তার বাবা ওমর যৌবনে ছেলেধরা ছিল। ছোট ছোট ছেলেদের ধরে নিয়ে বিক্রি করে দিত দাস ব্যবসায়ীদের কাছে। দোষের মধ্যে তার ছিল বালকপ্রীতি। একবার এহেন কুকর্ম করতে গিয়ে ধরা পড়ে এক বছর জেলের ঘানি টেনে এসেছে সে।

তাদের দারিদ্র্য-লাঞ্ছিত পরিবারে কোনো শুচিতা নেই, শান্তি বলে কিছু নেই। হাসান দেখে তার বড় ভাই সাইদও প্রায়ই ছোট বালকদের ধরে এনে বিছানায় তোলে। হাসানের বৃদ্ধা দিদিমা প্রস্রাব করে তা বালতিতে সঞ্চয় করেন। তার বোন জাকিয়া পারিবারিক অন্ধকার থেকে পরিত্রাণ খুঁজতে ভাবে দেহ বিলিয়ে তার জীবনে চরিতার্থতা আসবে। তাই রাস্তায় দাঁড়িয়ে নিতম্ব দুলিয়ে শোরগোল তুলে জাকিয়া বলে, যার টাকা আছে, সে আমাকে বিছানায় তুলুক। এই দ্রোহ কেবল বয়ে নিয়ে আসে সামাজিক দুর্নাম আর পারিবারিক অশান্তি। তরুণী জাকিয়ার জীবনে দ্রুত পচন ধরে।

সুযোগ পেলেই পরিবারের সবার সঙ্গে নির্মম ব্যবহার করত বাবা। একদিন দুই ভাই রাস্তার পাশে আবর্জনার স্তূপে কিছু টাকা কুড়িয়ে পায়। সেই টাকা দিয়ে তারা বল কেনে। বাবা সন্দেহ করে, অন্যায়ভাবে তারা হয়তো এ টাকা উপার্জন করেছে। সে বলে, যা ঘরে নেই, তা পাওয়ার লোভে যদি আবর্জনার স্তূপ ঘাঁটতে যায় ওরা, তবে একদিন একই কারণে হয়তো অন্য কারও ছিানায় উঠে পড়তে পারে। বড় ছেলে সাইদকে সে ‘বেজন্মা’ বলে গাল দেয়। তারপর উঠানে ফেলে প্রচণ্ড মার দেয় সাঈদকে। মারের চোটে সাঈদের প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে পড়ে। অসুস্থ সাইদ বিছানায় শুয়ে থাকে। সে নড়তেও পারে না। ওর মা ভুলে জ্বলন্ত মোমবাতি রেখে গিয়েছিলেন। তা থেকে সারা ঘরে আগুন ধরে গেল। বিছানা ছেড়ে নামার শক্তি নেই সাইদের। পুড়ে মারা গেল বড় ভাই সাইদ। হাসান কোনো সাহায্যই করতে পারল না। বাবা হাসানকে গাল দিলেন ‘আ ডার্টি মার্ডারার’ বলে।

পাড়ার ষন্ডা-পান্ডাদের খিস্তিখেউরে হাসানের কান দিবারাত্র ভারী হয়ে থাকে। এই মলমূত্র, খিস্তিখেউর, মদ্যপান, লাম্পট্য, অশুচিতা—সবকিছুর জন্য হাসানের বাবার লাগামহীন স্বেচ্ছাচারী প্রবৃত্তিই দায়ী বলে মনে হয়। এ রকম একটি অবস্থা থেকে হাসান পালাতে চায়—কিন্তু কোথায় পালাবে সে? কে দেবে তার পড়ার খরচ? লন্ডনে পড়তে চায় কিন্তু বৃত্তি কোথায় পাবে? কেনিয়ার নাইরোবিতে থাকে তার মামা আহমেদ বিন খলিফা। অবস্থাপন্ন মানুষ; হয়তো সাহায্য করবে। মা সেখানে যেতে বলে।

আহমদ মামা নাইরোবির সফল ব্যবসায়ী। তার ঝকঝকে প্রাসাদোপম বাসা, ঝলমলে পরিবেশ ও অফুরন্ত খাদ্যসম্ভার হাসানের কল্পনারও অতীত। মামার কাছে উচ্চশিক্ষার্থে অর্থসাহায্যের কথা বলে উঠতে পারে না হাসান। মামা তাকে একটা কাজ জুটিয়ে দেন। শেষ পর্যন্ত ওই মামার আশ্রয়ে বেশি দিন থাকা হয় না। তার মেয়ে সালমা ও হাসানের মধ্যে ঘেঁষাঘেঁষি লক্ষ করে বাড়ি থেকে বের করে দেয় হাসানকে। হাসানকে ফিরে আসতে হয় কেঙ্গেতে — পরিবারের কাছে;— খালি হাতে।

তার সব উচ্চাশা উবে যায়। আবার সে পরিকল্পনা করে উজ্জ্বল শান্তিময় জীবনের প্রত্যাশায় পালিয়ে যেতে। একদিন সে বন্দরে গিয়ে জাহাজে চাকরি জুটিয়ে ফেলে। তারপর চুপচাপ বাড়ি থেকে চলে যায়। বলে যায় ফিরে আসবে, কিন্তু আর কখনো ফেরে না হাসান। সালমার কাছে আর কখনো ফিরে যাওয়া হয় না।[৫][৬][৭]

সমালোচনা সম্পাদনা

গুরনাহ’র প্রথম উপন্যাস “মেমোরি অব ডিপারচার” বহুল আলোচিত।[৮]

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. সাহিত্যে নোবেল পাওয়া কে এই আব্দুলরাজাক গুরনাহ
  2. সুইডিশ কমিটি
  3. Third World Quarterly (TWQ)
  4. Memory of Departure
  5. Nation as Setback: Re-reading Abdulrazak Gurnah’s Memory of Departure
  6. অভিজ্ঞতার আলোকে বাস্তবের পুনর্গঠন
  7. Abdulrazak Gurnah’s ‘Memory of Departure’: A critique
  8. Abdulrazak Gurnah’s ‘Memory of Departure’: A critique