মাল্লু স্বরাজ্যম

ভারতীয় রাজনীতিবিদ

মাল্লু স্বরাজ্যম (১৯৩১ - ১৯ মার্চ ২০২২) ছিলেন একজন ভারতীয় রাজনীতিবিদ এবং স্বাধীনতা সংগ্রামী মহিলা। তিনি ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) -র সদস্য ছিলেন। তিনি একটি সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য ছিলেন যারা তেলেঙ্গানা সংগ্রামে অংশ নিয়েছিল।[১] তার আত্মজীবনী না মাতে থুপাকি টুটা (আমার কথা হল একটি বুলেট) ২০১৯ সালে হায়দ্রাবাদ বুক ট্রাস্ট দ্বারা প্রকাশিত হয়েছিল।[২]

মাল্লু স্বরাজ্যম
অন্ধ্র প্রদেশ বিধানসভার সদস্য
কাজের মেয়াদ
১৯৭৮ – ১৯৮৫
পূর্বসূরীগুরগন্তি ভেঙ্কট নরাসাইয়া
উত্তরসূরীরামরেডি দামোদর রেড্ডি
সংসদীয় এলাকাথুঙ্গাথুরথি
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম১৯৩১ (1931)
করভিরালা কোঠাগুডেম, দাক্ষিণাত্য
মৃত্যু১৯ মার্চ ২০২২(2022-03-19) (বয়স ৯০–৯১)
হায়দ্রাবাদ, তেলেঙ্গানা, ভারত
রাজনৈতিক দলভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)
দাম্পত্য সঙ্গীমাল্লু ভেঙ্কটা নরসিমহা রেড্ডি
সন্তান
বাসস্থাননালগোন্ডা, তেলেঙ্গানা, ভারত

প্রাথমিক জীবন সম্পাদনা

মাল্লু স্বরাজ্যম ১৯৩১ সালে কারভিরালা কোঠাগুডেমে একটি সামন্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ও মাতার নাম ছিল ভীমেরেড্ডি রামিরেড্ডি এবং চোক্কাম্মা।[৩]

কর্মজীবন সম্পাদনা

নালগোন্ডা জেলা নিজামের অধীনে হায়দ্রাবাদ রাজ্যের একটি অংশ ছিল। স্বরাজ্যম -এর বেশ কিছু আত্মীয় ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বরাজ (স্ব-শাসন, বা স্বাধীনতা) অর্জনের সংগ্রামের অংশ হিসাবে মহাত্মা গান্ধী কর্তৃক প্রদত্ত আহ্বানের প্রতিক্রিয়ায় সত্যাগ্রহে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং তাদের ইচ্ছার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়েই স্বরাজ্যম -এর নামকরন হয়।[৪]

১০ বছর বয়সে, তিনি নিজামের রাজাকারদের বিরুদ্ধে জনগণকে নিয়ে সমাবেশ করতে শুরু করেছিলেন। ১১ বছর বয়সে তিনি তার জনপ্রিয়তা লাভ করতে শুরু করেন যখন, চুক্তিবদ্ধ শ্রমিকদের (বণ্ডেড লেবার) শ্রম বন্ধ করার জন্য অন্ধ্র মহাসভার আহ্বানের প্রতিক্রিয়া হিসাবে তিনি পারিবারিক ঐতিহ্য লঙ্ঘন করেছিলেন এবং অনেক জাতি ও সম্প্রদায় থেকে বহিষ্কৃত শ্রমিকদের নিজহস্তে অন্ন প্রদান করেছিলেন।[৪] মাল্লু স্বরাজ্যম জমিদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত একটি সশস্ত্র বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং সেই সময়ে তার মাথার জন্য ১০,০০০ টাকা পুরস্কার ধার্য করা হয়েছিল।[৩]

সেইসময় ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি অন্ধ্র মহাসভার ধ্বজের অধীনে নিজামের নিষ্ঠুর শাসন ও রাজ্যের অমানবিক বন্ধন শ্রম প্রথার বিরুদ্ধে সশস্ত্র আন্দোলন শুরু করেছিলেন।

তার স্বামী, মাল্লু ভেঙ্কটা নরসিমহা রেড্ডি, এবং তার ভাই, ভীমরেডি নরসিমহা রেড্ডি, যিনি ২০০৮ সালে পরলোক যাত্রা করেন (উভয় রাজ্যের কমিউনিস্ট আন্দোলনের সদস্য), তারা উভয়েই তার জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছিলেন। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি তাদের সশস্ত্র সংগ্রামের পরিধিকে কেবল বন্ধন শ্রম মুক্ত করার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে তাকে প্রসারিত করতে শুরু করে। এমনকি তারা জমিদারদের কাছ থেকে জমি ছিনিয়ে নিয়ে গরীবদের মধ্যে বিতরণও করতেন।

মাল্লু স্বরাজ্যম তার পরবর্তী জীবনে স্থানীয় কৃষকদের কল্যাণে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান নেতাও ছিলেন। তিনি ১৯৭৮ এবং ১৯৮৩ সালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) -এর সদস্য হিসাবে থুঙ্গাথুরথি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হন।[৫]

ব্যক্তিগত জীবন এবং মৃত্যু সম্পাদনা

স্বরাজ্যমের দুই ছেলের নাম মাল্লু গৌতম রেড্ডি এবং মাল্লু নাগার্জুন রেড্ডি। তার কন্যা করুণা ২০০৯ সালের নির্বাচনে চিরঞ্জীবীর প্রজা রাজ্যম দলের অধীনে নালগোন্ডার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।[৬] তার পুত্রবধূ, মল্লু লক্ষ্মী তার পদাঙ্ক অনুসরণ করেছিলেন এবং তিনি অল ইন্ডিয়া ডেমোক্রেটিক উইমেনস অ্যাসোসিয়েশন -এর রাজ্য সম্পাদক এবং ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) এর কার্যকরি কমিটির সদস্য হন। এছাড়াও ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) -র হয়ে নালগোন্ডা থেকে ২০১৯ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। স্বরাজ্যম ৯১ বছর বয়সে, ২০২২সালের ১৯ মার্চ, হায়দ্রাবাদে একাধিক অঙ্গহানির কারণে মারা যান।[৩] তার দেহ চিকিৎসা গবেষণার জন্য নালগোন্ডার সরকারি মেডিকেল কলেজে দান করা হয়।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "The 'bullet lady' of Telangana"The Times of India (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৩-১৯ 
  2. Vimala, Katyayini (২০১৯-০৫-০১)। Na maate tupaki toota (তেলুগু ভাষায়)। Hyderabad Book Trust। 
  3. Staff Reporter (২০২২-০৩-১৯)। "Firebrand Communist leader Mallu Swarajyam no more"The Hindu (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0971-751X। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৩-১৯ 
  4. The Pioneers: Mallu Swarajyam Frontline
  5. "Fiery freedom fighter Mallu Swarajyam dead"The New Indian Express। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৩-২০ 
  6. Shanker, Deekonda Ravi (২০২২-০৩-২০)। "Mallu Swarajyam: Legend of Telangana Armed Struggle"The Hans India (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৩-২০