মালকোষ

ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের একটি রাগ

মালকোষ হল ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের বিশিষ্ট একটি রাগ। এটি ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রবীণতম একটি রাগ। এই রাগটিকেই কর্ণাটক ঘরানায় 'হিন্দোলাম' বলা হয়, কিন্তু হিন্দোলাম এবং হিন্দুস্থানি হিন্দোল এক নয়।

মালকোষ রাগ 

ব্যুৎপত্তি সংক্রান্ত বিজ্ঞান অথবা ব্যাকরণ সম্পাদনা

'মালকোষ' শব্দটি 'মাল' ও 'কৌশিক' এই দুটি শব্দের সংযোগে সৃষ্টি হয়েছে, অর্থাৎ যিনি সর্পের মতো মালা পরিধান করেন - অর্থাৎ ভগবান শিব। 'মালব-কৌশিক' নামটি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে শোনা গেলেও বর্তমান কালে যে মালকোষ পরিবেশন করা হয় তার সাথে কোনও মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। মনে করা হয় ভগবান শিবের ক্রোধ নিবারণের জন্যে এই রাগটি সৃষ্টি করেছিলেন দেবী পার্বতী (ভগবান শিবের স্ত্রী হলেন দেবী পার্বতী), সতীর দেহত্যাগ দেখে যখন শিব রুদ্র মূর্তি ধারণ করেন এবং তাণ্ডব লীলা করেন, তখন তাকে শান্ত করার জন্যে এই রাগ সৃষ্টি করা হয় বলে ধারণা।

মালকোষ রাগটি সংসৃষ্ট করেন প্রধানত শৈবধর্ম পালনকারীরা; শুধু তাই নয় বিভিন্ন পঞ্চ স্বরের রাগ গুলির আধিকার ভুক্ত এই শৈবধর্ম পালনকারীরাই।

তাঁর দণ্ড হতে রক্ত ঝরছে,

গলে আসুরের খুলির মালিকা পরা,
নির্ভীকের চেয়েও নির্ভীক,
সর্বশ্রেষ্ঠ নির্ভীক মানুষের দ্বারা
মালকোষ রাগটি বেষ্টিত হয়ে থাকে। 

Shiv ttva ratnakara, 6, 8, 67[১]

আরোহণ এবং অবরোহণ সম্পাদনা

ভৈরবী ঠাটের উপরে মালকোষ রাগটি আধারিত। এর স্বর গুলি হল, সা, কোমল গা, শুদ্ধ মা, কোমল ধা, এবং কোমল নি। পাশ্চাত্য শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে এই স্বর গুলিকে বলা হয় টনিক, মাইনর থার্ড, পারফ্যাক্ট ফোর্থ, মাইনর সিক্সথ, মাইনর সেভেন্থ। রাগ মালকোষে, রিষভ (রে - দ্বিতীয়) এবং পঞ্চম (পা - পঞ্চম) ব্যবহৃত হয় না। ঔড়ব-ঔড়ব হল এর জাতি (পাঁচ-পাঁচ, যাকে পঞ্চস্বরের রাগ বলা হয়)।

.নি.  সা  .গা .  মা   .ধা. .নি.  *সা* 
অবরোহণ: *সা*  .নি. .ধা. মা  .গা. সা  অথবা, *সা* .নি. .ধা.  মা  .গা. সা

 [২]

বাদী ও সমবাদী সম্পাদনা

বাদী স্বর হল মধ্যম (মা) এবং সমবাদী স্বর ষডজ (সা)

। 

পাকড় বা চলন সম্পাদনা

পাকড়ঃ 'নি সা গা মা গা সা 'নি সা 'ধা 'নি 'ধা 'মা 'ধা 'নি সা

অন্যান্য বিশিষ্টাবলী সম্পাদনা

 
মালকোষ রাগের উপর রাগমালা শ্রেণীর ছবি, c. 1735

মালকোষ হল একটি গম্ভীর ও মনঃসংযোগ বর্ধনে সাহায্যকারী একটি রাগ, এটি সাধারণত মন্দ্রা-সপ্তকে ও বিলম্বিত লয়ে গাওয়া হয়। এই রাগের ক্ষেত্রে মীড়, গমক আর আন্দোলনের তুলনায় মুরকি ও খটকা কম ব্যবহার করা হয়। কোমল নি হল এই রাগের গ্রহস্বর।

মালকোষের কোমল নি, ভীমপলাশির কোমল নি-র মধ্যে একটি পার্থক্য আছে, যেটি খানিকটা পরিবেশনশৈলীর উপর নির্ভর করে। 

রাগটি সাধনা করার শ্রেষ্ঠ সময় হল নিশীথকাল। রাগটি অভ্যেস করার সময় একটি শান্তিদায়ক প্রভাব ফেলে। 

সংশ্লিষ্ট রাগগুলি  সম্পাদনা

কিছু সংশ্লিষ্ট রাগগুলি হল, চন্দ্রকোষ, নন্দকোষ, সম্পূর্ণ মালকোষ, পঞ্চম মালকোষ, কৌশিকানাডা, মধুকোষ এবং যোগকোষ। 

মালকোষ রাগে নিবদ্ধ রবীন্দ্রসংগীত সম্পাদনা

নিম্নলিখিত রবীন্দ্রসংগীতগুলি মালকোষ রাগে নিবদ্ধ:[৩]

মালকোষের প্রভাবযুক্ত  চলচ্চিত্রের গানগুলি সম্পাদনা

'মন তড়পাত হরি কি দর্শন কো আজ' (চলচ্চিত্র- বাইজু বাওরা, শিল্পী- মহম্মদ রফি), 'আধা হ্যায় চন্দ্রিমা' রাত আঁধি' (চলচ্চিত্র-নবরং, শিল্পী- মহেন্দ্র কাপুর, আশা ভোসলে), 'ছম ছম ঘুঙরু বোলে' (চলচ্চিত্র-কাজল, শিল্পী-আশা ভোসলে), 'আঁখিয়া সঙ্গ আঁখিয়া লাগি আজ' (চলচ্চিত্র-বড়া আদমি) 'বালমা মানে না' (চলচ্চিত্র-অপেরা হউজ) এবং 'রং রালিয়ান কারাত সতান সঙ্গ' (চলচ্চিত্র-বীরবল মাই ব্রাদার), 'গরি তেরা গাঁও বড়া প্যায়ারা' (চলচ্চিত্র-চিতচোর, শিল্পী-কে জে জেসুদাস), 'এক লেড়কী থি' (চলচ্চিত্র-লভ ইউ হামেশা, শিল্পী-কবিতা কৃষ্ণমূর্তি), 'চলো তুমকো লেকার চলে' (চলচ্চিত্র-জিসম, শিল্পী-শ্রেয়া ঘোষাল) ইত্যাদি। দক্ষিণ ভারতে তামিল,তেলুগুতে 'আনারকলি' ছায়াছবিতে 'রাজাশেখরা'-তে। 'গাঁদিবিদি গান্দা'-তে "নীনে নীনে" গানটি, কানাডা-র 'অপথামিত্র' ছায়াছবির "রা রা" ইত্যাদি। 

গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডিং সম্পাদনা

  • আমির খান, মালকোষ এবং হংসধ্বনি, HMV LP (লঙ প্লেইং রেকর্ড), EMI-EASD1357

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Daniélou, Alain (১৯৬৮)। The Rāgas of northern Indian music। Barrie and Rockliff, London। পৃষ্ঠা 324–324। আইএসবিএন 0-214-15689-3 
  2. Gosvami(1957) p. 236 f.
  3. রবীন্দ্রসঙ্গীতসুষমা, কিরণশশী দে, দে'জ পাবলিশিং, কলকাতা, মার্চ ২০১৪ সংস্করণ, জুন ২০১৪ মুদ্রণ

বহিঃসংযোগ  সম্পাদনা

সাহিত্য  সম্পাদনা

  • The Story Of Indian Music, ১৯৫৭