মায়ং বা মায়াং, কালা জাদু ভূমি নামে পরিচিত[১] গুয়াহাটি শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার (২৫ মাইল) ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী ভারতবর্ষের অসমের মরিগাঁও জেলাতে অবস্থিত একটি গ্রাম। একদা ভারতে কালো জাদুর কাঠামোতে বিবেচিত, মায়ং তার ইতিহাসের কারণে একটি পর্যটক আকর্ষণ।[২][৩]

মায়ং
মায়ং
মায়াং
শহর
মায়ং আসাম-এ অবস্থিত
মায়ং
মায়ং
ভারতের, আসামে অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২৬°১৫′৩১.৮৭″ উত্তর ৯২°০২′২৬.৮৫″ পূর্ব / ২৬.২৫৮৮৫২৮° উত্তর ৯২.০৪০৭৯১৭° পূর্ব / 26.2588528; 92.0407917
রাষ্ট্র ভারত
প্রদেশআসাম
জেলামরিগাঁও
ভাষা
 • দাপ্তরিকঅসমীয়া
সময় অঞ্চলভাপ্রস (ইউটিসি+৫:৩০)
এসটিডি কোড৯১ ৩৬৭৮
মায়ং অঞ্চলের দৃশ্য

ব্যুৎপত্তি সম্পাদনা

মায়ং নামটি অনেক প্রবাদ ও কিংবদন্তি আছে। এইগুলোর উল্লেখযোগ্য হলোঃ-

১. অনেকের মতে মায়ং নামটি সংস্কৃত শব্দ মায়া থেকে এসেছে।কারণ একদা এই অঞ্চলটি যাদুবিদ্যার জন্য “মায়ার দেশ” বলে পরিগণিত হয়।[৪]

২. অন্য কিছু লোকের মতানুসারে সমগ্র উত্তর-পূব ভারত অসমের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সময়ে মাইবং গোষ্ঠীর ডিমাসারে এসে মায়ং-এ বসবাস করে৷ এই পাহাড়ী অঞ্চলটিতে সেইসময়ে হাতীর বসতিস্থল ছিল৷ ডিমাচা শব্দ 'মিয়ং'র অর্থ হাতী৷ সেজন্য 'মায়ং' নামটো এই শব্দ থেকে উদ্ভব হয়৷

৩. কিংবদন্তি অনুসারে মায়ঙ নামটির অর্থ 'শক্তি দেবীর অংশ' বোঝায়৷ 'মা' -এর অর্থ শক্তি দেবী এবং “অঙ্গ” শব্দের অর্থ অংশ৷

৪. কিছু লোকদের মতানুসারে মাইরাং জাতির মণিপুরীরা এখানে এসে বসবাস করে এবং সময়ের সাথে সাথে মৈরাং থেকে স্থানটির নাম মায়হং বা মায়ং হয়ে ওঠে।

পুরাণ সম্পাদনা

মায়ং প্রাগজ্যোতিষপুরের (আসামের প্রাচীন নাম) সহিত মহাভারত সহ অনেক পৌরাণিক মহাকাব্যে উল্লেখ পাওয়া যায়। কাছাড়ি রাজ্যের প্রধান ঘাটোটকচ তার ঐন্দ্রজালিক ক্ষমতার সঙ্গে মহাভারতের অসাধারণ যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলেন।এছাড়া মায়ং সম্পর্কে বলা হয় যে কালো যাদুর যাদুকররা এবং ডাইনিরা এখন পর্যন্ত ও মায়ং বনে আশ্রয় করেন।

সম্প্রতি প্রকাশিত নিবন্ধ “মায়ং - ল্যান্ড অফ ব্লাক ম্যাজিক এন্ড হুয়িচক্রাফ্ট” অনুযায়ী, পাতলা বায়ু মধ্য দিয়ে মানুষের অদৃশ্য হয়ে যাওয়া, মানুষ জন্তুতে রূপান্তরিত হওয়া, কিংবা জন্তু জাদুর নিয়ন্ত্রণে আনা ইত্যাদি অনেক কাহিনী মায়ং সম্বন্ধে জানা যায়। এখানকার লোকেরা মায়া ও যাদুবিদ্যার ঐতিহ্যগত চর্চা চালিয়ে থাকে এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম এগুলো চালিয়ে যায়।

ইতিহাস সম্পাদনা

ইতিহাস থেকে জানা যায় যে আধুনিক যুগের পূর্বপর্যন্ত শক্তি সাধনার ক্ষেত্রে নরবলি অর্থাৎ মানব- বলিদান প্রথা প্রচলিত ছিল। সম্প্রতি খননকার্যে তরবারি ও অন্যান্য ধারালো অস্ত্র সন্ধান পাওয়া গেছে এবং এইগুলের সাথে দেশের অন্যান্য প্রান্তে মানব- বলিদানে ব্যবহৃত অস্ত্রের সাদৃশ্য দেখা যায় এবং এই অস্ত্রগুলির  ব্যবহার মায়ং-এ অহোম যুগে ঘটে।

পর্যটন সম্পাদনা

মায়ং তার সমৃদ্ধ বন্যপ্রাণী, পুরাতত্ত্ব পর্যটন, ইকো-পর্যটন, দু:সাহসিক অভিযানজনিত পর্যটন, সাংস্কৃতিক পর্যটন ও নদী পর্যটন কারণে একটি ভ্রমণীয় এবং প্রত্নতাত্ত্বিক স্থল ।

মায়ং প্রত্নতাত্ত্বিক ধ্বংসাবশেষ, বহু আবিস্কৃত এবং অন্যান্য অনেক অনাবিস্কৃত শিল্পকৃতিতে সমৃদ্ধ। ২০০২ সালে খোলা মায়ং কেন্দ্রীয় জাদুঘর[৫] এবং এম্পোরিয়ামে কালো জাদু এবং আয়ুর্বেদ বই সহ অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনাদি ও শিল্পকর্ম ইত্যাদিতে সমৃদ্ধ।

মায়ং পবিতরা অভয়ারণ্যের খুব কাছাকাছি। এই অভয়ারণ্যে বিশ্বের এক খড়্গ গন্ডারের সর্বোচ্চ ঘনত্ব রয়েছে।

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "ভারতের যে জায়গাগুলিতে আজও কালো জাদু চর্চা হয়"এবেলা। ০২ জুন ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ০৪ জুন ২০১৬  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ=, |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  2. Rahman, Daulat (2009-05-14)। "New light on land of black magic - Huge swords unearthed at Mayong in Assam point to human sacrifice" (ইংরেজ ভাষায়)। ২০১৮-০৮-০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ০৪ জুন ২০১৬  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  3. ভাস্কর জযোতি দাস (০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫)। "মধ্য যুগর যাদু মন্ত্রর পীঠস্থান -"মায়ং"" (অসমীয়া ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ০৪ জুন ২০১৬  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ=, |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  4. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৬ অক্টোবর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ জুন ২০১৬ 
  5. "Good Morning" (ইংরাজি ভাষায়)। The Telegraph। 2002-11-01। ২০১৬-০৩-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ০৪ জুন ২০১৬  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা