মাধ্যম ও যোগাযোগের ভূগোল

মাধ্যম ও যোগাযোগের ভূগোল (যোগাযোগের ভূগোল, মাধ্যমের ভূগোল এবং গণমাধ্যমের ভূগোল নামেও পরিচিত) হ'ল মানবীয় ভূগোল মিডিয়া অধ্যয়ন এবং যোগাযোগ তত্ত্বকে একত্রিত করে একটি আন্তঃশাখা গবেষণা অঞ্চল। যোগাযোগের কাজগুলি এবং সেগুলি যে পদ্ধতির ওপর নির্ভর করে সেগুলি, কীভাবে, ভৌগোলিক নিদর্শন এবং প্রক্রিয়া দ্বারা আকার দেয় এবং আকৃতি পায়, তা নিয়ে মাধ্যম ও যোগাযোগের ভূগোল গবেষণা সন্ধান করে।

বিশ্ব মানচিত্রে আন্তর্জাতিক টেলিফোন সংযোগ, বেল টেলিফোন ম্যাগাজিন, ১৯২২।
বিশ্ব মানচিত্রে ২০১৩ সালে চলমান ফোন টাওয়ারগুলির অবস্থানিক ঘনত্ব।

সংক্ষিপ্ত বিবরণ সম্পাদনা

মাধ্যম এবং যোগাযোগের ভূগোল হল গবেষণার একটি ক্ষেত্র। এটি যোগাযোগের বিভিন্ন দিককে বিবেচনায় রাখে। ছোট শহর থেকে শুরু করে সমগ্র পৃথিবীতে যোগাযোগ পদ্ধতির বিন্যাস এবং সংগঠন এই গবেষণার একটি দিক। এর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত জায়গা থেকে জায়গায় যোগাযোগ ব্যবস্থায় সুগমতার বিভিন্ন স্তর। কীভাবে বিভিন্ন জায়গার মধ্যে যোগাযোগের সুগমতায় তফাৎ হয় সে দিকে মনোযোগ দেওয়া হয়। নতুন নতুন মাধ্যম সেই জায়গাগুলিতে ছড়িয়ে পড়লে সেই জায়গাগুলিতে কি পরিবর্তন ঘটে তার প্রতি নজর রাখা হয়। স্থানগুলি বিভিন্ন মাধ্যমে কীভাবে চিত্রিত হয় সেই দিকগুলি এই গবেষণায় আগ্রহের একটি দিক—উদাহরণস্বরূপ পর্যটন বিজ্ঞাপনে সরল শান্ত ও মনোরম সমুদ্র সৈকতগুলির ছবি অথবা সংবাদপত্রে যুদ্ধাঞ্চলগুলির লিখিত বিবরণ। যোগাযোগের ফলে মানুষ দূরবর্তী জায়গাগুলির সাথে খবর আদান প্রদান করার সুযোগ পায়, সুতরাং গবেষণার একটি চূড়ান্ত ক্ষেত্র হ'ল কীভাবে, বিভিন্ন ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে অন্যের সাথে আলাপচারিতা করে লোকেরা বিভিন্ন ধরনের "অপার্থিব" (ভার্চুয়াল) স্থানে অধিষ্ঠান করে।[১][২]

মাধ্যম / যোগাযোগ তাত্ত্বিকদের কাছে বিশেষ আগ্রহের বিষয় হ'ল মাধ্যমের সাথে সম্পর্কযুক্ত সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক গঠন, ভৌগোলিক অঞ্চলগুলির অন্তর্ভুক্তি এবং নাগরিকত্বের পরিবর্তনে কীভাবে মাধ্যম যুক্ত হয়ে পড়ে সে বিষয়ে গবেষণা। জনজীবন এবং ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে পার্থক্যের উপর নির্ভর করে সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক গঠন, যা ঐতিহ্যগতভাবে জনসমাগমস্থল এবং ব্যক্তিগত জায়গাগুলির মধ্যে স্থানিক সীমানার উপর নির্ভরশীল।[৩][৪][৫] আলোকচিত্র, চলচ্চিত্র এবং গ্রাফিতির মত চাক্ষুষ মাধ্যমে অঞ্চলের উপস্থাপনা, শ্রুতি মাধ্যমে উপস্থাপনা, এমনকি নাচ এবং ভিডিও গেমের মতো প্রতিমূর্ত যোগাযোগগুলিতেও কীভাবে অঞ্চলকে উপস্থাপিত করা হয়, সেগুলি হল ভূগোলবিদদের বিশেষ আগ্রহের বিষয়।[৬]

ইতিহাস সম্পাদনা

 
অস্ট্রোনীয় ভাষা পরিবারের সাথে সম্পর্কিত সংস্কৃতি অঞ্চলের মানচিত্র

যোগাযোগের পদ্ধতিগত অধ্যয়নের জন্য ভৌগোলিক আগ্রহের বিষয়টি ১৯৩০ এর দশকে রিচার্ড হার্টশোর্নের লেখায় পাওয়া যায়।[৭] হার্টশোর্ন সংস্কৃতি অঞ্চল গঠনের মূল উপাদান হিসাবে বিবেচনা করেছিলেন ভাষাকে। এর অর্থ হল একটি প্রভাবশালী ভাষা নির্দিষ্ট সংস্কৃতির অঞ্চলে একই রকম এবং একটি সংস্কৃতি অঞ্চল পার হলেই এটি পরিবর্তিত হয়ে যায়। ১৯৫০ এবং ১৯৬০ এর দশকের মধ্যে ভূগোলবিদরা যখন বিভিন্ন স্থানের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগের পরিমাপ ও নকশা করতে শুরু করেছিলেন, তখন যোগাযোগের একটি খুব আলাদা দিক কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিল। এই ক্ষেত্রে, পরিমাণগত বিপ্লবের সাথে জড়িত ভূগোলবিদেরা বিভিন্ন স্থানের মধ্যে তথ্যের গতি প্রবাহকে ব্যাখ্যা করেছেন "সময়-স্থানের একত্রীকরণ" এবং "মানবীয় প্রসারণের ক্ষমতা" দিয়ে[৮][৯] ১৯৭০ এর দশকের আগে পর্যন্ত, ভৌগোলিকরা,- প্রতীকীকরণের প্রশ্ন, উপস্থাপনা, রূপক, মূর্তিশিল্প এবং বক্তৃতা এই ক্ষেত্রগুলি বিবেচনা করে বিষয়বস্তুর ক্ষেত্রে যোগাযোগের দিকে মনোনিবেশ করা শুরু করেন নি। এই আগ্রহ প্রথম ভৌগোলিক গবেষণায় রূপ নিয়েছিল মূলত মানবতাবাদ, চেতনা অধ্যয়ন এবং হার্মেনিউটিক্স (জ্ঞানের একটি শাখা যা বিশেষত বাইবেল বা সাহিত্যের গ্রন্থগুলির ব্যাখ্যার সাথে সম্পর্কিত) এর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে।[১০] ১৯৯০ এর দশকের মধ্যে, এই দৃষ্টিভঙ্গি ভূদৃশ্যের বিভিন্ন অর্থের মোড়ক খুলে আরও জটিল সংবেদনশীলতার দিকে নিয়ে গেছে।[১১][১২][১৩] বিগত দুই দশক ধরে যোগাযোগ নিয়ে গবেষণা করা ভূগোলবিদরা এই গবেষণার ক্ষেত্রগুলি প্রসারিত করেছেন, অঞ্চল গঠনে যোগাযোগের প্রতি গুরুত্ব উপলব্ধি করে প্রাথমিক দৃষ্টিভঙ্গিকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। প্রাথমিক দৃষ্টিভঙ্গিগুলির মধ্যে আছে স্থানিক যোগাযোগের পরিমাপ হিসাবে তথ্যের প্রবাহের হার, ক্রিয়াকলাপের একটি ক্ষেত্রের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ও তার উপস্থাপন। অ-প্রতিনিধিত্বমূলক তত্ত্ব, কার্যক-নেটওয়ার্ক তত্ত্ব, এবং একত্রিত তত্ত্বর কাঠামোর অধীনে যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন পদ্ধতির উন্নতি করা হয়েছে।[১৪][১৫] ডিজিটাল কোডের মাধ্যমে চিন্তা করার প্রচেষ্টা এবং স্থানের সাথে এর সম্পর্কটিও সমান গুরুত্বপূর্ণ।[১৬]

অধ্যয়নের ক্ষেত্র সম্পাদনা

 
ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার আলোকচিত্র মন্তাজ; মাধ্যমের চিত্রগুলিতে দেখানো একটি জায়গা; 'স্থানে মাধ্যম' এর উদাহরণ

একটি বিভাগের মতে, মাধ্যম এবং যোগাযোগের ভূগোলের চারটি পরিপূরক দিক জড়িত: স্থানে মাধ্যম, স্থানগুলিতে মাধ্যম, প্রতিবেশে মাধ্যম এবং প্রতিবেশগুলিতে মাধ্যম।[১][১৭] স্থানগুলিতে মাধ্যম হ'ল স্থানের প্রতিনিধিত্ব যা সব ধরনের মাধ্যমে বিভিন্ন কারণে প্রচারিত হয়, উদাহরণস্বরূপ ভূদৃশ্য সংবলিত চিত্র যেগুলি স্বত্বাধিকারীর অবস্থা জানায়, এবং সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী এবং দরিদ্রদের সাথে অপরাধ ও বিশৃঙ্খলা সংযুক্ত করার জন্য নগরীয় জায়গাগুলির সংবাদ চিত্র।[১১] মানুষ তার বাড়ি, শ্রেণিকক্ষ, কর্মক্ষেত্র, বা শহরের রাস্তার মতো নির্দিষ্ট স্থানগুলিতে মাধ্যমকে কীভাবে ব্যবহার করে তার কার্যকরীভাবে এবং পরীক্ষামূলকভাবে রূপান্তর দ্বারা 'স্থানগুলিতে মাধ্যম' পরিবর্তিত হয় সেই জায়গাগুলিতে।[১৮] প্রতিবেশগুলিতে মাধ্যম হল যোগাযোগের অবকাঠামো। সেগুলি টেলিগ্রাফ কেবলগুলির মত ঐতিহাসিক অথবা অপটিক্যাল ফাইবার কেবলের মতো সমকালীন, যখন তাদের বাস্তব বিন্যাসের ক্ষেত্রে মানচিত্রভূক্ত এবং বিশ্লেষণ করা হয়। প্রতিবেশগুলিতে মাধ্যম হল টপোগণিত যেখানে বলা হয়েছে প্রতীক, চিত্র, তথ্য এবং ধারণাগুলি যখন ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তি বা গোষ্ঠি থেকে অন্য গোষ্ঠীতে বিস্তৃত হয় বা ছড়িয়ে পড়ে তখনই সেগুলি এগিয়ে যায়।

উল্লেখযোগ্য পণ্ডিতগণ সম্পাদনা

মাধ্যম এবং যোগাযোগের প্রতি আগ্রহী ভূগোলবিদরা সম্পাদনা

ভূগোলের প্রতি আগ্রহী মাধ্যম/ যোগাযোগের পণ্ডিতগণ সম্পাদনা

আরও দেখুন সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

টীকা সম্পাদনা

  1. Adams, Paul C.; Jansson, André (২০১২)। "Communication Geography: A Bridge between Disciplines"। Communication Theory22। পৃষ্ঠা 299–317.। 
  2. Crang, Mike; Crang, Phil; May, Jon (১৯৯৯)। Virtual Geographies: Bodies, Space and Relations। London: Routledge। 
  3. Couldry, Nick (২০১২)। Media, society, world: Social theory and digital media practice। Polity। 
  4. Georgiou, Myria (২০১৩)। Media and the city: Cosmopolitanism and Difference। Polity। 
  5. Sheller, Mimi; Urry, John (২০০৩)। "Mobile transformations of 'public' and 'private' life"। Theory, Culture & Society (3)। পৃষ্ঠা 107-125। 
  6. Adams, Paul C.; Craine, Jim; Dittmer, Jason (২০১৪)। The Ashgate Research Companion to Media Geography। Burlington, VT Press: Ashgate। আইএসবিএন 978-1409444015 
  7. Hartshorne, Richard (১৯৩৯)। The nature of geography: A critical survey of current thought in the light of the past। Annals of the Association of American Geographers। 
  8. Janelle, Donald G. (১৯৬৮)। "Central Place Development in a Time‐Space Framework"Professional Geographer20। পৃষ্ঠা 5–10। 
  9. Janelle, Donald G. (১৯৭৩)। "Measuring human extensibility in a shrinking world"Journal of Geography72 (2)। পৃষ্ঠা 8–15। 
  10. Tuan, Yi-Fu (১৯৭৭)। Space and Place: The Perspective of Experience । Minneapolis: University of Minnesota Press। 
  11. Burgess, Jacquelin; Gold, John R. (১৯৮৫)। Geography, the Media and Popular Culture। Croom Helm। 
  12. Duncan, James S.; Ley, David (১৯৯৩)। Place/Culture/Representation। London: Routledge। 
  13. Barnes, Trevor J.; Duncan, James S. (২০১৩)। Writing Worlds: Discourse, Text and Metaphor in the Representation of Landscape। London: Routledge। 
  14. Thrift, Nigel (২০০৮)। Non-representational Theory: Space, Politics, Affect। London and New York: Routledge। 
  15. Murdoch, Jonathan (১৯৯৮)। "The spaces of actor-network theory"Geoforum29 (4)। পৃষ্ঠা 357–374। 
  16. Kitchin, Rob; Dodge, Martin (২০১১)। Code/Space: Software and Everyday Life। Cambridge, Massachusetts: MIT Press। 
  17. Adams, Paul C. (২০১১)। "A taxonomy for communication geography"। Progress in Human Geography35 (1)। পৃষ্ঠা 37–57। 
  18. Morley, David (২০০৫)। Family Television: Cultural Power and Domestic Leisure। London: Routledge।