মাদার্স ইউনিয়ন একটি আন্তর্জাতিক খ্রিস্টান দাতব্য সংস্থা যা বিশ্বব্যাপী পরিবারগুলিকে সমর্থন করার চেষ্টা করে। এর সদস্যরা সবাই মা বা নারী নয়, কারণ এ সংস্থা অনেক পিতামাতা, পুরুষ, বিধবা, অবিবাহিত এবং দাদা -দাদি জড়িত আছে। এর প্রধান লক্ষ্য একক বিবাহ ব্যবস্থা এবং পারিবারিক জীবনকে সমর্থন করা, বিশেষ করে প্রতিকূল অবস্থার সময়।

মাদার্স ইউনিয়ন
প্রতিষ্ঠাতামেরি সুমনার
ধরনচ্যারিটি
উদ্দেশ্যপারিবারিক জীবন সমর্থন করা
পদ্ধতিসমূহপ্রার্থনা, সামাজিক প্রচার, তদবির, ওকালতি

ইতিহাস সম্পাদনা

১৮৭৬ সালে মেরি সুমনার উইনচেস্টারের কাছে ওল্ড অ্যাল্রেসফোর্ডের চার্চ অফ ইংল্যান্ড প্যারিসে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যেখানে তার স্বামী ছিলেন রেক্টর । [১] [২] [৩] তিনি তার প্রথম নাতির জন্মের পর আন্দোলন শুরু করতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। তিনি যখন প্রথম মা ছিলেন তখন তার নিজের অসুবিধার কথা মনে রেখে, সুমনার সব সামাজিক শ্রেণীর মায়েদের একসাথে আনতে চেয়েছিলেন যাতে তারা একে অপরের সমর্থন জোগাতে পারে এবং মাতৃত্বের বিষয়ে প্রশিক্ষিত হতে পারে। এটাকে তিনি একটি পেশা হিসেবে দেখেছিলেন। [৪]

 
ব্যানার ১৯০৬ সালে সেন্ট মেরিস প্যারিশ চার্চ, ব্রুমফিল্ড, এসেক্সের মাদার্স ইউনিয়নের জন্য তৈরি করা হয়েছিল

১৮৮৫ সালে নিউক্যাসলের প্রথম বিশপ আর্নেস্ট রোল্যান্ড উইলবারফোর্স পোর্টসমাউথ চার্চ কংগ্রেসে গির্জা যাওয়া নারীদের সম্বোধন করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। গির্জার নারীদের বিষয়ে তার প্রাসঙ্গিক কিছু বলার ছিল না। তিনি মেরি সুমনারের সাথে যোগাযোগ করেন এবং তাকে তার পরিবর্তে সম্মেলনে কথা বলতে বলেন। যদিও তিনি অনিচ্ছুক এবং মানুসিকভাবে দুর্বল ছিলেন। তবুও তিনি নারীদেরকে আবেগের সাথে মায়েদের ক্ষমতা সম্পর্কে বলেন যাতে তারা জাতিকে উন্নত পরিবর্তন করতে পারে। উপস্থিত বেশ কয়েকজন নারীকে অনুরূপ সম্মেলন আয়োজনের জন্য প্যারিশে ফিরে আসতে উৎসাহিত করা হয়েছিল এবং কংগ্রেসের সভাপতিত্বকারী উইনচেস্টারের বিশপ ঘোষণা করেছিলেন যে মাদার্স ইউনিয়ন একটি ডায়োসেসান সংগঠনে পরিণত হয়েছে। উইনচেস্টারের ডায়োসিসের সীমানার বাইরে আন্দোলনের বৃদ্ধির কারণ ছিল ভিক্টোরিয়ান ব্রিটিশ সমাজে নৈতিকতার উপর জোর দেওয়া এবং ব্রিটিশ সাম্রাজ্য জুড়ে অ্যাঙ্গলিকান মিশনের বৃদ্ধির পাশাপাশি নৈতিকতা এবং সামাজিক অসুবিধার সাথে লড়াই করা। [৩]

মাদার্স ইউনিয়ন এলি, এক্সেটার, হেরফোর্ড, লিচফিল্ড এবং নিউক্যাসলের বিশপের এলাকায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং তারপর পুরো যুক্তরাজ্য জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। ১৮৯২ সালের মধ্যে, ২৮ টি বিশপের এলাকায় ৬০,০০০ সদস্য ছিল, যা শতাব্দীর শেষের দিকে ১৬৯০০০ সদস্য হয়ে ওঠে। ১৮৯৩ সালে, বার্ষিক সাধারণ সভার আয়োজন করা হয় এবং ১৮৯৬ সালে মাদার্স ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় পরিষদ গঠিত হয়। সর্বসম্মতিক্রমে মেরি সুমনার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এ পদটি তার নব্বইয়ের দশকে ছিল। [৪] ১৮৯৭ সালে, তার ডায়মন্ড জয়ন্তীর সময়, রানী ভিক্টোরিয়া মাদার্স ইউনিয়নের পৃষ্ঠপোষক হয়েছিলেন, এবং তিনি এটি অনুমোদনের একটি অভূতপূর্ব স্ট্যাম্প প্রদান করেন। এটি নিউজিল্যান্ড, তারপর কানাডা এবং ভারত থেকে শুরু করে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য জুড়ে শাখা স্থাপন করা হয়। [৪] তিনি ১৯২০ সালে বিদেশী শ্রমিকদের প্রথম মাদার্স ইউনিয়ন সম্মেলন দেখতে বেঁচে ছিলেন।

বর্তমান সম্পাদনা

 
মেরি সুমনার হাউস, মাদার্স ইউনিয়নের সদর দফতর, টফটন স্ট্রিট, লন্ডন

নারী ও পুরুষদের একটি বৈশ্বিক আন্দোলন হিসেবে, মাদার্স ইউনিয়ন স্থানীয় গীর্জাগুলিকে তার শাখা সদস্যদের, স্থানীয় সম্প্রদায়ের সামাজিক প্রচার প্রকল্পের মাধ্যমে প্রার্থনা ও কার্যক্রমের সাথে সমর্থন করে এবং এটি একটি আন্তর্জাতিক প্রচারমূলক দাতব্য প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠে। বিশেষ করে বিশ্বের নারীদের দুর্দশার ব্যাপারে উদ্বিগ্নতা। এর প্রকল্পগুলির মধ্যে রয়েছে নারীর সাক্ষরতা, উন্নয়ন, অভিভাবকত্ব, ক্ষুদ্র অর্থায়ন, নারীর প্রতি সহিংসতা এবং নারী পাচারের বিরুদ্ধে প্রচারণা করা। মাদার্স ইউনিয়ন হল জুবিলি ডেব্ট কোয়ালিশন এর অংশ। সংস্থাটি যুক্তরাজ্যে সকল পিতামাতার জন্য নমনীয় কাজের অনুরোধ করার অধিকার চালু করার জন্য সরকারকে সফলভাবে তদবির করছে এবং আন্তর্জাতিকভাবে এটি জাতিসংঘে তার প্রতিনিধি মর্যাদার মাধ্যমে লিঙ্গ সমতার বিষয়গুলি নিয়ে কথা বলে। যুক্তরাজ্যে প্রচারাভিযানের মধ্যে রয়েছে শিল্পের জন্য তদবির করা, শিশুদের বাণিজ্যিকীকরণ না করা এবং যৌনীকরণের বিষয়ে নীতি পরিবর্তন। এর ফলে তৎকালীন প্রধান নির্বাহী, রেগ বেইলি, ২০১০ সালে যুক্তরাজ্য সরকারের একটি স্বাধীন পর্যালোচনা, বেইলি রিভিউ -এর নেতৃত্বে নিযুক্ত হন।

এর চার মিলিয়ন সদস্যের মধ্যে, প্রায় ১.৯ মিলিয়ন ভারতীয় পূর্বের স্বাধীন গির্জা মহিলাদের সংগঠন চার্চ অফ নর্থ ইন্ডিয়া এবং চার্চ অফ সাউথ ইন্ডিয়া, ২০০১ এবং ২০০৩ সালে বিশপের এলাকায় মাদার্স ইউনিয়নের সাথে যুক্ত ছিল। আরও ১.৩ মিলিয়ন মাদার্স ইউনিয়নের সদস্য আফ্রিকান বিশপের এলাকায় রয়েছে, যার সবচেয়ে বড় সদস্য সংখ্যা তাঞ্জানিয়ায় ৮০০,০০০ জন, যুক্তরাজ্যে সদস্য সংখ্যা প্রায় ৯৩০০০। আর এ সংখ্যা ২০০৩ সালে ১,২২,০০০ জন এবং ১৯৯৩ সালে ২,২২,০০০ এর থেকে দ্রুত হ্রাস পায়। [৫]

লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য সম্পাদনা

মাদার্স ইউনিয়ন তার ওয়েবসাইটে তার দৃষ্টি বিবৃতি [৬]

 
বারমুডা ডায়োসিসের মাদার্স ইউনিয়নের ব্যানার

এর ভিশন হচ্ছে-বিশ্বের যেখানে ঈশ্বরের ভালবাসা রয়েছে সেখানে প্রেম, শ্রদ্ধা এবং পূর্ণ সম্পর্কের মাধ্যমে দেখানো হয়।

লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য: বিশ্বব্যাপী এ সম্প্রদায়ের কার্যক্রম চালুর মাধ্যমে খ্রিস্টান বিশ্বাসকে কর্মের মধ্যে প্রদর্শিত করা এবং পরিবারের লালনপালন করা।

এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য, মাদার্স ইউনিয়নের উদ্দেশ্যগুলি হল:

  • বিবাহের প্রকৃতি সম্পর্কে খ্রিস্টের শিক্ষা সমুন্নত রাখা এবং এর ব্যাপক বোঝাপড়াকে উন্নীত করা।
  • চার্চের বিশ্বাস ও জীবনে তাদের সন্তানদের লালনপালন করতে অভিভাবকদের উৎসাহিত করা।
  • প্রার্থনা, উপাসনা এবং সেবায় ঐক্যবদ্ধ খ্রিস্টানদের বিশ্বব্যাপী সহযোগিতা বজায় রাখা।
  • স্থিতিশীল পারিবারিক জীবন এবং শিশুদের সুরক্ষার অনুকূল সমাজের অবস্থার উন্নতি করা।
  • যাদের পারিবারিক জীবন প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েছে তাদের সাহায্য করা।

কাঠামো সম্পাদনা

মাদার্স ইউনিয়ন অ্যাঙ্গলিকান কমিউনিয়নের মধ্যে বিকশিত হয় এবং এর গঠনকে নিজস্ব হিসাবে ব্যবহার করে। পৃথক শাখাগুলি সাধারণত প্যারিশ বা প্যারিশের ছোট গোষ্ঠীর উপর ভিত্তি করে গঠিত। সেখানে সমন্বযয়ের আনুসঙ্গিক deaneries এবং archdeaconries স্তর আছে এবং বিশপের এলাকায় তার সঙ্গে শাখা সংগঠনের সংযোগ আছে। । অ্যাঙ্গলিকান প্রদেশের প্রত্যেকের নিজস্ব প্রশাসন রয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী প্রেসিডেন্টকে সমর্থন করে যেমন বর্তমানে গায়ানার শেরান হারপার। বিশ্বব্যাপী এ সংস্থার সদর দফতর হচ্ছে লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টারের মেরি সুমনার হাউসে।

প্রার্থনা সম্পাদনা

মাদার্স ইউনিয়ন তার কাজের ভিত্তিতে প্রার্থনার গুরুত্বের উপর জোর দেয়। প্রতি বছর এটি প্রার্থনার আয়োজন করে। প্রতিটি বিশপের এলাকাকে অন্যান্য বিশপের এলাকার জন্য প্রার্থনা করার জন্য একটি নির্দিষ্ট দিন দেওয়া হয় এবং প্রতিটি বিশপের এলাকার মধ্যে প্রতিটি শাখাকে প্রার্থনার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় দেওয়া হয়। এটি প্রার্থীদের একে অপরের জন্য প্রার্থনায় একতার অনুভূতি দেয় কারণ প্রার্থনার তরঙ্গ শাখা থেকে শাখা এবং বিশপের এলাকা থেকে বিশপের এলাকায় চলে।

আরও দেখুন সম্পাদনা

  • মহিলা ইনস্টিটিউট

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Our history | Mothers' Union"www.mothersunion.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-০৯ 
  2. Howarth, Janet (২০১০-১২-০১)। "A History of the Mothers' Union: Women, Anglicanism and Globalisation, 1876–2008": 1565–1566। আইএসএসএন 0013-8266ডিওআই:10.1093/ehr/ceq283 
  3. "History of Mothers' Union"Winchester Mothers' Union (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-০৯  উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; আলাদা বিষয়বস্তুর সঙ্গে ":1" নামটি একাধিক বার সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে
  4. "Mary Sumner: Founder of Mothers' Union"Winchester Cathedral (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২১-০৩-০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-০৯  উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; আলাদা বিষয়বস্তুর সঙ্গে ":0" নামটি একাধিক বার সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে
  5. Jonathan Petre (১৮ নভেম্বর ২০০৩)। "Mothers' Union tells newly-weds to take Aids test"The Telegraph। সংগ্রহের তারিখ ১৫ মার্চ ২০১৬ 
  6. "Our vision"Mothers' Union। সংগ্রহের তারিখ ১ অক্টোবর ২০২০