মাত্রাবৃত্ত ছন্দ (কলাবৃত্ত বা ধ্বনিপ্রধান ছন্দ) বাংলা সাহিত্যে প্রচলিত প্রধান তিনটি ছন্দের একটি। অন্য দুটি হলো স্বরবৃত্ত ছন্দ এবং অক্ষরবৃত্ত ছন্দ। মাত্রাবৃত্ত ছন্দে লেখা কবিতাগুলোর মূলপর্ব ৪, ৫, ৬, ৭ মাত্রার হতে পারে। [১]

বৈশিষ্ট্য সম্পাদনা

• মূল পর্ব ৪,৫,৬ বা ৭ মাত্রার হয়।

• অক্ষরের শেষে স্বরধ্বনি থাকলে ১ মাত্রা গুনতে হয়; আর অক্ষরের শেষে ব্যঞ্জনধ্বনি থাকলে (য় থাকলেও) ২ মাত্রা গুনতে হয়; য় থাকলে, যেমন- হয়, কয়; য়-কে বলা যায় semi-vowel, পুরো স্বরধ্বনি নয়, তাই এটি অক্ষরের শেষে থাকলে মাত্রা ২ হয়।

• কবিতা আবৃত্তির গতি স্বরবৃত্ত ছন্দের চেয়ে ধীর, কিন্তু অক্ষরবৃত্তের চেয়ে দ্রুত। [২]

নামকরণ সম্পাদনা

প্রাচীনতম এ বাংলা ছন্দকে রবীন্দ্রনাথ নাম দিয়েছেন 'সংস্কৃতভাঙা'। মোহিতলাল মজুমদার ডেকেছেন 'সাধুভাষার পর্বভূমক' বলে'। প্রবোধচন্দ্র সেন দিয়েছেন অনেক নাম - 'কলাবৃত্ত', 'সরলকলামাত্রিক' ও 'মাত্রাবৃত্ত'। পরবর্তীতে 'মাত্রাবৃত্ত' নামটিই ব্যবহৃত হয় বেশি।

ছন্দ বিশ্লেষণ সম্পাদনা

এইখানে তোর / দাদির কবর / ডালিম-গাছের ∣ তলে ৬+৬+৬+২

তিরিশ বছর / ভিজায়ে রেখেছি / দুই নয়নের ∣ জলে ৬+৬+৬+২

(কবর; জসীমউদদীন)

কবিতাটির মূল পর্ব ৬ মাত্রার। প্রতি চরণে তিনটি ৬ মাত্রার পূর্ণ পর্ব এবং একটি ২ মাত্রার অপূর্ণ পর্ব আছে।

এখন মাত্রা গণনা করলে দেখা যাচ্ছে, প্রথম চরণের-

প্রথম পর্ব- এইখানে তোর; এ+ই+খা+নে = ৪ মাত্রা (প্রতিটি অক্ষরের শেষে স্বরধ্বনি থাকায় প্রতিটি ১ মাত্রা); তোর = ২ মাত্রা (অক্ষরের শেষে ব্যঞ্জনধ্বনি থাকায় ২ মাত্রা)।

দ্বিতীয় পর্ব- দাদির কবর; দা+দির = ১+২ = ৩ মাত্রা; ক+বর = ১+২ = ৩ মাত্রা।

তৃতীয় পর্ব- ডালিম-গাছের; ডা+লিম = ১+২ = ৩ মাত্রা; গা+ছের = ১+২ = ৩ মাত্রা।

চতুর্থ পর্ব- তলে; ত+লে = ১+১ = ২ মাত্রা।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. বাংলা ও সংস্কৃত ছন্দের বেসিক[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. আধুনিক বাংলা ছন্দ ও অলঙ্কার, কাজী মুহম্মদ অলিউল্লাহ