মাতৃমৃত্যু

গর্ভধারণের সময় বা গর্ভধারণের 42 দিনের মধ্যে মায়ের মৃত্যু

মাতৃমৃত্যু বা মাতৃত্বকালীন মৃত্যুর সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) এর সংজ্ঞা হলো "গর্ভবতী অবস্থায় একজন মহিলার মৃত্যু বা মাতৃমৃত্যু হয়, গর্ভাবস্থার অবসানের জন্য ৪২ দিনের মধ্যে, নিরপেক্ষ গর্ভধারণের সময়কাল এবং স্থান, গর্ভধারণ বা তার ব্যবস্থাপনা বা পরিচালনা সম্পর্কিত কারণে, কিন্তু এটি কোনও কারণে আপত্তিকর বা দুর্ঘটনা জন্য মৃত্য হয় না"।"[১]

মাতৃমৃত্যু
A mother dies and is taken by angels as her new-born child is taken away, A grave from 1863 in Striesener Friedhof in Dresden
একটি মায়ের মৃত্যু হয় এবং ফেরেশতা দ্বারা তার নতুন জন্মগ্রহণ শিশু দূরে নিয়ে যাওয়া হয়, 1863 সাল থেকে ড্রেসডেনের স্ট্রাইনার ফ্রাইডহফের একটি কবর
বিশেষত্বধাত্রীবিদ্যা উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন

দুটি কর্মক্ষমতা সূচক আছে যে কখনও কখনও অদলবদল করে ব্যবহার: মাতৃমৃত্যু অনুপাত এবং মাতৃমৃত্যু হার, যা অনেক সময় বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে, উভয়ের সংক্ষিপ্ত রূপ "এমএমআর"।[২] ২০১৭ সাল নাগাদ, বিশ্বে মাতৃ মৃত্যুর হার ১৯৯০ সাল থেকে ৮৮% হ্রাস পেয়েছিল, কিন্তু এখনও প্রতিদিন ৮৩০ জন মহিলারা গর্ভাবস্থায় বা সন্তানের জন্মের কারণে মারা যান।[৩]

ইউনাইটেড নেশনস জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) ২০১৭-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, এটি প্রতি দুই মিনিটে এক মহিলার এবং যারা মারা যায় তাদের প্রত্যেকের ২০ বা ৩০ টি কারণ থাকে, যা গুরুতর বা দীর্ঘস্থায়ী সমস্যায় সম্মুখীন করে। এই মৃত্যুর অধিকাংশই এবং সম্পূর্ণরূপে প্রতিরোধযোগ্য।

বিবরণ সম্পাদনা

ব্রিটিশ মেডিক্যাল বুলেটিনের ২০০৩ সালের নিবন্ধ অনুসারে, মাতৃমৃত্যুর সাধারণত "গর্ভবতী অবস্থায় একজন মহিলার মৃত্যু, গর্ভাবস্থার অবসানের জন্য ৪২ দিনের মধ্যে, নিরপেক্ষ গর্ভধারণের সময়কাল এবং স্থান, গর্ভধারণ বা তার ব্যবস্থাপনা বা পরিচালনা সম্পর্কিত কারণে, কিন্তু এটি কোনও কারণে আপত্তিকর বা দুর্ঘটনা জন্য মৃত্য হয় না" ১৯৯২ সালে সম্পন্ন হওয়া আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান রোগ (আইসিডি -১০) দশম সংশোধনীতে।

কারণসমূহ সম্পাদনা

মাতৃ মৃত্যুর বৃদ্ধি যে কারণ সরাসরি বা পরোক্ষ হতে পারে তা ২০০৯ সালের মাতৃমৃত্যু সম্পর্কে একটি নিবন্ধ লেখক বলেছেন, সাধারণত, গর্ভধারণের পরে জটিলতা ও প্রসব সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনা এবং একটি পরোক্ষ মাতৃ মৃত্যুর, যেকোনো একটি যদি রোগীর গর্ভাবস্থা ঘটে তাহলে মৃত্যু হতে পারে।[৪]

ল্যানকেটে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৯০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত এই সময়ের মধ্যে এই সমস্যার সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো প্রসবকালীন রক্তপাত (১৫%), অনিরাপদ গর্ভপাত (১৫%), গর্ভাবস্থার উচ্চ রক্তচাপ ব্যাধি (১০%), প্রসবকালীন সংক্রমণ ( ৮%), এবং অনযনয কারণ (৬%)[৫]।অন্যান্য কারণগুলির মধ্যে রয়েছে রক্তের জমাট (৩%) এবং প্রাক বিদ্যমান অবস্থায় (২৮%)[৬]

এছাড়া, শিশুর জন্মের সময় দক্ষ চিকিৎসা যত্নের অভাব, যথাযথ যত্ন গ্রহণের জন্য নিকটবর্তী ক্লিনিকের ভ্রমণের দূরত্ব, সময়ের পূর্বের জন্ম, প্রসবকালীন চিকিৎসা সেবা এবং দুর্বল অবকাঠামো মাতৃ মৃত্যুর বৃদ্ধি করে।

প্রতিরোধ সম্পাদনা

জন্ম দেয়ার সময় মহিলাদের মৃত্যুর হার বিংশ শতাব্দীতে হ্রাস পেয়েছে। মাতৃ মৃত্যুর মাত্রা ১০০ জন্মের প্রায় ১ জন হয়েছে।[৭] ১৮০০ এর দশকে মাতৃমৃত্যুহারের পরিমান খুব বেশি মাত্রায় পৌঁছে ছিলও, কখনও কখনও সেটা ৪০ শতাংশ রোগীতে পৌঁছত। ১৯০০ এর দশকের প্রথম দিকে, জন্মের হারের তুলনায় মাতৃমৃত্যুর হার প্রায় ১০০ এর মধ্যে ছিল ১। জনস্বাস্থ্য, প্রযুক্তি ও নীতিমালা নিয়মগুলি বিশ্বব্যাপী মাতৃত্বের মৃত্যুর বোঝাকে হ্রাস করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করায় মৃত্যু হার কমেছে।

ইউএনএফপিএর মতে, মাতৃ মৃত্যুর প্রতিরোধের জন্য চারটি উপাদান অপরিহার্য। প্রথমত, জন্মপূর্ব যত্ন।কোনো মহিলা সন্তানসম্ভ্যভা হলে স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং নিরীক্ষণের জন্য মায়েদের কমপক্ষে চারটি প্রসবকালীন চেক করতে যেতে হবে। দ্বিতীয়ত, এই সময় ডাক্তার, সেবিকা এবং ধাত্রীদের জরুরি অবস্থা যেনো উপস্থিতি থাকে সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, স্বাভাবিক প্রসব পরিচালনা করার এবং অনযনয জটিলতার সনাক্ত করা। তৃতীয়, মাতৃ মৃত্যুর প্রধান কারণগুলি মোকাবেলার জন্য কিছু বিষয় খেয়াল রাখা ও যত্নশীল হতে হবে যেমন রক্তক্ষরণ, ক্ষত, অনিরাপদ গর্ভপাত, উচ্চ রক্তচাপ রোগ এইসব সমস্যা হলে যেনও দ্রুত্ব বাবস্থা নেওয়া যায়। অবশেষে, প্রসবের পর ছয় সপ্তাহ জন্মোত্তর যত্ন।

চিকিৎসা প্রযুক্তি সম্পাদনা

মাতৃ মৃত্যু হ্রাস করা জন্য দরকার উন্নত অপচনশীলতা, তরল বা পানি বা স্যালাইন সরবরাহের ভালো ব্যবস্থাপনা এবং রক্ত সঞ্চালন এবং ভাল জন্মগত যত্ন। প্রযুক্তিগত খারাপ ব্যবস্থাপনার কারণে মাতৃ মৃত্যুর হ্রাসে বাড়তে পারে।[৮]

জনস্বাস্থ্য সম্পাদনা

মাতৃমৃত্যু এড়াতে পারে যায় জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার মাধ্যমে। গর্ভাবস্থায় প্রসবকালীন যত্নের উন্নতি, শিশুর জন্মের সময় যত্ন, এবং সন্তানের জন্মের কয়েক সপ্তাহের মধ্যে যত্ন ও সহায়তা মাতৃ মৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পারে।[৯]

পৃথিবীর ম্যাপে সম্পাদনা

মাতৃত্বের মৃত্যু এবং অক্ষম নারীর ভারসাম্যের ক্ষেত্রে প্রধান ভুমিকা এবং শিশুর জন্ম এবং গর্ভাবস্থায় বিশ্বব্যাপী আনুমানিক ২৭৫,০০০ মহিলা প্রতি বছর মারা যায় এই সমস্যার কারণে।

Country Maternal mortality rate per 100,000 live births (2015)[১০][১১]
অস্ট্রেলিয়া 5.5
কানাডা 7.3
ফ্রান্স 7.8
জার্মানি 9.0
জাপান 6.4
সুইডেন 4.4
যুক্তরাজ্য 9.2
যুক্তরাষ্ট্র 26.4

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Health statistics and information systems: Maternal mortality ratio (per 100 000 live births)"। World Health Organization। সংগ্রহের তারিখ জুন ১৭, ২০১৬ 
  2. Maternal Mortality Ratio vs Maternal Mortality Rate ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখে on Population Research Institute website
  3. "Maternal health"। United Nations Population Fund। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০১-২৯ 
  4. Khlat, M. & Ronsmans, C. (২০০৯)। "Deaths Attributable to Childbearing in Matlab, Bangladesh: Indirect Causes of Maternal Mortality Questioned"American Journal of Epidemiology151 (3): 300–306। 
  5. GBD 2013 Mortality and Causes of Death (১৭ ডিসেম্বর ২০১৪)। "Global, regional, and national age-sex specific all-cause and cause-specific mortality for 240 causes of death, 1990-2013: a systematic analysis for the Global Burden of Disease Study 2013"Lancet385 (9963): 117–71। ডিওআই:10.1016/S0140-6736(14)61682-2পিএমআইডি 25530442পিএমসি 4340604  
  6. "Maternal mortality: Fact sheet N°348"World Health Organization। WHO। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুন ২০১৪ 
  7. See, for instance, mortality rates at the Dublin Maternity Hospital 1784–1849.
  8. S. Miller; J. M. Turan; K. Dau; M. Fathalla; M. Mourad; T. Sutherland; S. Hamza; F. Lester; E. B. Gibson; R. Gipson; ও অন্যান্য (২০০৭)। "Use of the non-pneumatic anti-shock garment (NASG) to reduce blood loss and time to recovery from shock for women with obstetric haemorrhage in Egypt"। Glob Public Health2 (2): 110–124। ডিওআই:10.1080/17441690601012536পিএমআইডি 19280394  (NASG)
  9. "Reducing Maternal Mortality" (পিডিএফ)। UNFPA। সংগ্রহের তারিখ সেপ্টেম্বর ১, ২০১৬ 
  10. Global, regional, and national levels of maternal mortality, 1990–2015: a systematic analysis for the Global Burden of Disease Study 2015. October 8, 2016. The Lancet. Volume 388. 1775–1812. See table of countries on page 1784 of the PDF.
  11. What’s killing America’s new mothers? By Annalisa Merelli. October 29, 2017. Quartz. "The dire state of US data collection on maternal health and mortality is also distressing. Until the early 1990s, death certificates did not note if a woman was pregnant or had recently given birth when she died. It took until 2017 for all US states to add that check box to their death certificates."