মধুপায়ী ধাইরা

Loranthaceae পরিবারের একটি পরগাছা

মধুপায়ী ধাইরা (ইংরেজি: Honey Suckled Mistletoe) (বৈজ্ঞানিক নাম: Dendrophthoe falcata) হচ্ছে Loranthaceae পরিবারের একটি পরগাছা।এদের আবাসের ভাল জায়াগা হচ্ছে বড় বা পুরোনো আম গাছ এবং জিকা গাছ। বাংলায় পরগাছা বলতে এটিই বেশি পরিচত। নভেম্বর ডিসেম্বর এর ফুলের ভরা মৌসুম। মগডালে সোনালী আলোয় লাল বা মেজেন্টা রঙের ফুল ফোটে। ভারত বাংলাদেশে বহুবিস্তৃত এর দুটি উপপ্রজাতি হচ্ছে মধুপায়ী ধাইরা (var. falcata) ও লাল মধুপায়ী ধাইরা (var. coccinea)।

মধুপায়ী ধাইরা
Dendrophthoe falcata
ভারতের হায়দ্রাবাদে মধুপায়ী ধাইরা
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: Plantae
শ্রেণীবিহীন: Angiosperms
শ্রেণীবিহীন: Eudicots
শ্রেণীবিহীন: Core eudicots
বর্গ: Santalales
পরিবার: Loranthaceae
গণ: Dendrophthoe
প্রজাতি: D. falcata
দ্বিপদী নাম
Dendrophthoe falcata
(L.f.) Ettingsh
ধাইরা ফুল
ধাইরা

ধাইরা/ বড় বান্দা

যে উদ্ভিদ অন্য উদ্ভিদের উপর জন্মে তা থেকে পুস্টি আহরণ করে বেঁচে থাকে কিন্তু সালোকসংশ্লেষন করতে সক্ষম তাকে আধা বা আংশিক পরজীবী উদ্ভিদ (Semi-parasitic plant) বলা হয়। এটি কোথাও বাজরাংগি, কোথাও ফরল্যা নামে পরিচিত। সারা পৃথিবীতে এই গণে প্রায় ৩১ প্রজাতির গাছ রয়েছে। সমগ্র ভারতবর্ষে পাওয়া যায় সাত প্রজাতির গাছ।উপমহাদেশে বহুবিস্তৃত ধাইরার দুটি উপপ্রজাতি হচ্ছে মধুপায়ী ধাইরা (var. falcata) ও লাল মধুপায়ী ধাইরা (var. coccinea)।

ধাইরার আবাসের ভাল জায়াগা হচ্ছে বড় বা পুরোনো আম,বকুল, মেহগনি এবং জিকা গাছ কোন কোন ক্ষেত্রে অনেক দিনের পুরানো ফুরুস গাছেও এদের দখলদারিত্ব দেখা যায়। বাংলায় পরগাছা বলতে এটিই বেশি পরিচিত। অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর এর ফুলের ভরা মৌসুম। ফুল না ফুটলে নজরে পড়ে না। মগডালে সোনালী আলোয় লাল বা মেজেন্টা রঙের ফুল ফোটে।

এরা প্রাণিপরাগী ফুল (zoophilous flower), বিশেষত পাখির মাধ্যমে পরাগায়ন ঘটে। এর ফুল দিয়ে চুড়ি, মালা এসব বানিয়ে পড়ত গ্রামের মেয়েরা।ধাইরা ফলের আঠা দিয়ে গ্রামে পাখি শিকার করা হয়।আদিবাসীরা এই উদ্ভিদের সব অংশই ঔষধি হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন।

ধাইরা হলো রোমশ ও শাখাপ্রশাখা যুক্ত বহুবর্ষজীবী গুল্ম। এদের কাণ্ড খাড়া,মোটা ও চেপ্টা, যখন কোন আশ্রয়ী উদ্ভিদকে আক্রমণ করে তখন এদের নোড (Node) দেখা যায়। ধাইরা আশ্রয়ী উদ্ভিদের উপর cluster form করে যার ঘন ও জঙ্গলময় বৃদ্ধি খুব সহজেই আশ্রয়ী উদ্ভিদকে গ্রাস করে নেয়।আশ্রয়ী উদ্ভিদের যে অংশে ধাইরা আক্রমণ করে সেখানে Haustorium (বহুবচনে Haustoria - পরজীবী উদ্ভিদের মূল যা আশ্রয়ী উদ্ভিদের টিস্যুতে প্রবেশ করিয়ে পুস্টি আহরণ করে) প্রবেশ করিয়ে দেয় ও সেই অংশটি টিউমারের মত স্ফীত হয়ে যায় যার আকার আকৃতি বয়সের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন রকমের হতে পারে। এহেন অবিচারের ফলে ২০-২৫ বছর বয়সের একটি আশ্রয়ী বৃক্ষকে এরা মেরে ফেলতে পারে।

কথায় আছে "সূঁচ হয়ে ঢুকে লাঙ্গলের ফাল হয়ে বের হয়" ধাইরা হলো সেই সূঁচ যখন আশ্রয়ীকে আক্রমণ করে, যখন আশ্রয়ীর সারা দেহ জুড়ে আধিপত্য বিস্তার করে তখন সেই ধাইরা অন্য রূপ ধারণ করে লাঙ্গলের ফাল হয়ে যায়। কিন্তু ধাইরাকেও আক্রমণ করে বসতে পারে আরেক শ্রেণীর পরজীবী উদ্ভিদ। এক পরজীবীকে যে আরেক পরজীবী আক্রমণ করে আশ্রয় ধারণ করে আর পুষ্টিলাভ করে তাকে অতি পরজীবী (Hyper-parasite) বলে। একই Loranthaceae পরিবারের Scurrula cordifolia এবং Santalaceae (Sandalwood) পরিবারের Viscum orientale এই আক্রমণ করে থাকে সাধারত।

চিত্রশালা সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

 
ধাইরা ফুল/ বড় বান্দা ফুল