ভুটিয়া

সিকিমের অধিবাসী যাদের পূর্বপুরুষরা তিব্বতি

ভুটিয়া བོད་རིགས (সিক্কিমী: Drenjongpa / Drenjop ; তিব্বতি: འབྲས་ལྗོངས་པ་ওয়াইলি: 'Bras-ljongs-pa; "সিকিমের বাসিন্দা"; ভুটানে বলে: ডুকপা) হলো তিব্বতী বংশধারার একটি সম্প্রদায়, যারা লহোপো বা সিকিমী ভাষায় কথা বলে। ২০০১ সালে ভুটিয়াদের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৭০,৩০০। উল্লেখ্য, ভুটিয়া বলতে এখানে বোঝানো হচ্ছে তিব্বতী বংশধারার সিকিমীদেরকে; অন্যদিকে, ভোটিয়া হলো উত্তরপূর্ব নেপালের তিব্বতী জনগণের একটি বৃহত্তর গোষ্ঠী, ভুটিয়ারা তাদেরই সদস্যদল।

ভুটিয়া
সিকিম, দার্জিলিং, নেপাল এবং নিকটবর্তী অঞ্চলে ভুটিয়ারা বসবাস করে।
উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যার অঞ্চল
ভাষা
সিকিমিজ, নেপালী, Dzongkha, তিব্বতী
ধর্ম
বৌদ্ধধর্ম, Bön
সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠী
ভোটিয়া, Sherpa people

সিকিমে ভুটিয়ারা সিকিমী ভাষায় কথা বলে যা কিনা ভুটানের জংখা ও তিব্বতী ভাষাতেই ৮৫% বোধগম্য হয়। অধিকাংশ ভুটিয়া র্ন্যিং-মা সম্প্রদায় অনুসরণ করে, যা তিব্বতী বৌদ্ধধর্মের কাগয়ু সম্প্রদায়ের অনুসারী। ভুটিয়ারা ছড়িয়ে আছে নেপাল, ভুটান এবং উত্তর পশ্চিমবঙ্গে, বিশেষত কালিম্পং এবং দার্জিলিংয়ে

ভুটিয়াদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক হলো বাখু (তিব্বতী চুবা-র মতোই, তবে হাতাকাটা), ঢিলা ক্লোকজাতীয় পোশাক যা কাঁধের একপাশে এবং কোমরে রেশমী/সুতি ফিতা দিয়ে বাঁধতে হয়। পুরুষেরা বাখুর সাথে ঢোলা পায়জামা পরে; নারীরা বাখুর সথে পরে লম্বা হাতার রেশমী ব্লাউজ হোনজু; কোমরে বেল্ট বেঁধে পরার গাউন-জাতীয় পোশাক। বিবাহিত মহিলারা তাদের বাখুর সামনের অংশে লম্বা একফালি রঙিন নকশাকাটা কাপড় জড়িয়ে রাখে, তাকে বলে প্যাংডেন। এছাড়া নারী-পুরুষ উভয়েই বাখুর সাথে নকশাদার চামড়ার বুটজুতো পরে।

অন্যান্য সমাজের নারীদের চেয়ে ভুটিয়া নারীরা বেশি মর্যাদা ভোগ করে থাকে। নারী-পুরুষ সবাই একদম খাঁটি সোনা খুব পছন্দ করে, আর ঐতিহ্যবাহী অলংকারগুলোর বেশিরভাগই ২৪ ক্যারেট সোনা দিয়ে তৈরি করা হয়।

সমাজব্যবস্থা

সম্পাদনা

সিকিমে, ভুটিয়ারা বেশিরভাগ কৃষিকাজ বা সরকারি চাকরি করে, ব্যবসাতেও অবশ্য তাদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। দার্জিলিংয়ের ভুটিয়ারা সরকারি চাকরি আর বাণিজ্য নিয়েই থাকে। ভুটিয়ারা নিজেদের ক্ল্যান তথা গোত্রের মধ্যেই বিয়ে করে এবং বর-কনে নির্বাচনে হায়ারারকিকাল পদ্ধতি অনুসরণ করে। ক্ল্যান বা গোত্র বৈষম্য অনেক বিস্তৃত এবং নিজ সম্প্রদায়ের বাইরে কেউ বিয়ে করলে সেটা ছোট চোখে দেখা হয়।

 
দার্জিলিংয়ে বৌদ্ধ মঠ, 1870

ভুটিয়ারা বজ্রায়ন বৌদ্ধধর্মের অবলম্বন করে, প্রধানত র্ন্যিং-মা ও কাগয়ু ধর্মগোষ্ঠীর অনুসারী।তাদের প্রধান উৎসবের মধ্যে আছে লোসার এবং লোসং। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সাধারণত লোসার উদ্‌যাপিত হয়ে থাকে, কারণ তখন তিব্বতী নতুন বছর শুরু হয়। লোসারের সময় সন্ধ্যাবেলায় আগুনের চারদিকে ঘিরে নাচ অনেক জনপ্রিয়। লোসং হয় তিব্বতী বছরের শেষে, দশম তিব্বতী চন্দ্র মাসের হিসাবে, সাধারণত ডিসেম্বরে। ভারতের ভুটিয়াদের কাছে এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসব, এসময় 'চান' নাচ এবং আনন্দফুর্তি করা হয়। সিকিমে লোসং উৎসবের সময় প্রায়ই নাচের মধ্যে গুরু উগয়েনের জীবনের কাহিনী ফুটিয়ে তোলা হয়।

ভুটিয়াদের মঠগুলো ভারতের বহু স্থানে ছড়িয়ে আছে, তন্মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সিকিমের রুমটেক বৌদ্ধমঠ এবং ভুটিয়া বাসটি মনাস্টেরি বা কর্ম দর্জি চোওলিং মনাস্টেরি, যা কিনা দার্জিলিংয়ের মঠগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পুরনো।

আরো দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Lewis, M. Paul, সম্পাদক (২০০৯)। "Sikkimese"Ethnologue: Languages of the World (16th সংস্করণ)। Dallas, Texas: SIL International। ১৪ মে ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৪-১৬ 

অতিরিক্ত অধ্যয়ন

সম্পাদনা

টেমপ্লেট:Scheduled tribes of India টেমপ্লেট:Scheduled tribes of West Bengal