ভুটানের পঞ্চ-বার্ষিকী পরিকল্পনা

ভুটানের পঞ্চ-বার্ষিকী পরিকল্পনা হলো ১৯৬১ সাল থেকে চলমান ধারাবাহিক প্রক্রিয়া যেটি জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনার জন্য ভুটান সরকার কর্তৃক প্রস্তুতকৃত।[১] ভুটান সরকার তার অর্থনীতি ও উন্নয়নের ক্ষেেত্রে ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে। ১৯৬১ সাল থেকে অর্থনীতি উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়ে পরিচালিত হচ্ছে, যা প্রথমে উন্নয়ন সচিবালয় এবং পরবর্তীতে পরিকল্পনা কমিশনের দ্বারা জাতীয় পরিষদের অনুমোদন সাপেক্ষে পরিচালিত হয়। এই বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ১৯৮৯ সালের মূল্যায়নে বলা হয়েছে, "উন্নয়ন স্রোতধারায় দেরীতে সংযুুক্ত হওয়া ভুটান অন্যত্র সংঘটিত ভুলগুলো থেকে দূরে থাকতে সচেষ্ট ছিল। যদিও বৈদেশিক সাহায্যের উপর দৃঢ়ভাবে নির্ভরশীল, তথাপি দেশটি তার নিজস্ব অগ্রাধিকার দেয়া বিষয়গুলি অনুসরণ করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিল - প্রতিটি সরকারি অর্থের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা, একটি উত্তম-প্রশিক্ষিত কিন্তু নমনীয় আমলাতন্ত্র গড়ে তোলা এবং অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে বনগুলির বা পর্যটনের অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধির কারণে পরিবেশগত ক্ষতি প্রতিরোধ করা।" অতীতে সংগঠিত ভুলগুলি এড়াতে সাহায্য করার জন্য সরকার চিরাচরিত সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে ব্যবহার করে এবং পরিকল্পনা প্রনয়ন ও বাস্তবায়নের জন্য এতে নিজ নিজ জেলা, উপজেলা বা গ্রামের স্থানীয় পর্যায়ের জনগণকে সংশ্লিষ্ট করে। "এই নিয়ামকগুলির কারণে," বিশ্বব্যাংকের মতে, "ভুটান অর্থনৈতিক, সামাজিক বা সাংস্কৃতিক সমস্যা হতে বিশেষভাবে মুক্ত থাকতে সক্ষম হয়েছে।"[২]

গৃহীত পরিকল্পনাসমূহ সম্পাদনা

১৯৬১ সাল থেকে বর্তমান সময়কাল (২০১৭) পর্যন্ত ভুটান সরকার মোট ১১টি পঞ্চ-বার্ষিকী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে; এগুলো হলোঃ

  • ১৯৬১ সাল হতে ১৯৬৬ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য প্রথম পঞ্চ-বার্ষিকী পরিকল্পনা;
  • ১৯৬৬ সাল হতে ১৯৭১ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য দ্বিতীয় পঞ্চ-বার্ষিকী পরিকল্পনা;
  • ১৯৭১ সাল হতে ১৯৭৬ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য তৃতীয় পঞ্চ-বার্ষিকী পরিকল্পনা;
  • ১৯৭৬ সাল হতে ১৯৮১ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য চতুর্থ পঞ্চ-বার্ষিকী পরিকল্পনা;
  • ১৯৮১ সাল হতে ১৯৮৬ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য পঞ্চম পঞ্চ-বার্ষিকী পরিকল্পনা;
  • ১৯৮৭ সাল হতে ১৯৯২ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য ষষ্ঠ পঞ্চ-বার্ষিকী পরিকল্পনা;
  • ১৯৯২ সাল হতে ১৯৯৭ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য সপ্তম পঞ্চ-বার্ষিকী পরিকল্পনা;
  • ১৯৯৭ সাল হতে ২০০২ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য অষ্টম পঞ্চ-বার্ষিকী পরিকল্পনা;
  • ২০০২ সাল হতে ২০০৭ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য নবম পঞ্চ-বার্ষিকী পরিকল্পনা;
  • ২০০৮ সাল হতে ২০১৩ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য দশম পঞ্চ-বার্ষিকী পরিকল্পনা;
  • ২০১৩ সাল হতে ২০১৮ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য একাদশ পঞ্চ-বার্ষিকী পরিকল্পনা।

পরিচালিত কার্যক্রম সম্পাদনা

১৯৬১ সাল থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত বাস্তবায়নাধীন প্রথম পঞ্চ-বার্ষিকী উন্নয়ন পরিকল্পনাটিতে অর্থায়ন করে ভারত। প্রথম পঞ্চ-বার্ষিকী উন্নয়ন পরিকল্পনা, যার জন্য ১০৭.২ মিলিয়ন নুলট্রুম বরাদ্দ দেওয়া হয় এবং ১৯৬৬ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বাস্তবায়নাধীন দ্বিতীয় পঞ্চ-বার্ষিকী উন্নয়ন পরিকল্পনা, যাতে বরাদ্দ ছিলো ২০২.২ মিলিয়ন নুলট্রুম, তাতে প্রাথমিকভাবে লক্ষ্য স্থির করা হয় আধুনিক বাজেট কৌশল উন্নয়নের উপর। কিছু বিদেশী পর্যবেক্ষকের মতে, প্রথম দুটি পরিকল্পনা অগ্রাধিকার নির্ধারণে এবং অর্থনৈতিক-ক্ষেত্রে বাস্তব উন্নয়ন পরিকল্পনা থেকে প্রত্যাশিত সমন্বিত অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছিলো। প্রধান অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় জোর দেয়া হয়েছিল জনসাধারণের কাজে; প্রধানত সড়ক, বন, স্বাস্থ্য সেবা এবং শিক্ষায়।[২]

পরিকল্পনাকে আরও কার্যকর করার জন্য ও ১৯৭১ সাল থেকে ১৯৭৬ সালের মধ্যে তৃতীয় পঞ্চ-বার্ষিকী উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্ততবায়ন করার জন্য পরিকল্পনা কমিশন প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং ১৯৯১ সাল পর্যন্ত ড্রুক গ্যালপ এর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তৃতীয় পরিকল্পনার অধীনে জনগুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসাবে এতেও প্রাথমিকভাবে সড়ক উন্নয়নের জন্য বাজেটের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ (৪৭৫.২ মিলিয়ন নুলট্রুম - মোট বাজেটের ১৭.৮ শতাংশ) বরাদ্দ রাখা হয়; তবে এটি প্রথম পরিকল্পনার চেয়ে ৫৮.৭ শতাংশ এবং দ্বিতীয় পরিকল্পনার চেয়ে ৩৪.৯ শতাংশ ভাগ হ্রাস পায়।[২]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "1961 – First Five-Year Plan launched"। Bhutan 2008। ২৫ আগস্ট ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ আগস্ট ২০১১ 
  2. Worden, Robert L.. "Role of the Government". Bhutan: A country study (Savada, Andrea Matles, ed.). Library of Congress Federal Research Division (1991).   এই উৎস থেকে এই নিবন্ধে লেখা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা পাবলিক ডোমেইনে রয়েছে।

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা