ভারতের সাধারণ নির্বাচন, ১৯৮৯

ভারতের সাধারণ নির্বাচন, ১৯৮৯ নবম লোকসভার সদস্যদের নির্বাচিত করতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই নির্বাচনে রাজীব গান্ধীর জয় হয়েছিল, কারণ বিরোধী দলগুলি একজোট হয়ে জাতীয় মোর্চার অধীনে এক সংখ্যালঘু সরকার গঠন করেছিল। প্রধান মন্ত্রী হয়েছিলেন বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং। সরকারকে বাম মোর্চা ও ভারতীয় জনতা পার্টি বাইরে থেকে সমর্থন দিয়েছিল ও সরকারে অংশগ্রহণ করতে অসম্মতি প্রকাশ করেছিল।

ভারতের সাধারণ নির্বাচন, ১৯৮৯

← ১৯৮৪ ২২ ও ২৬ নভেম্বর, ১৯৮৯[১] ১৯৯১ →

লোকসভার ৫৪৩টি আসন
,সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ২৭৩টি আসন
  প্রথম দল দ্বিতীয় দল
 
নেতা/নেত্রী বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং রাজীব গান্ধী
দল জেডি কংগ্রেস
জোট রাষ্ট্রীয় মোর্চা (ভারত) কংগ্রেস মোর্চা
নেতার আসন নাই আমেথি
আসন লাভ ১৪৩ ১৯৭
শতকরা ৪০.৬৬% ৩৯.৫৩%

নির্বাচনের পূর্বে প্রধান মন্ত্রী

রাজীব গান্ধী
কংগ্রেস মোর্চা

নির্বাচিত প্রধান মন্ত্রী

বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং
রাষ্ট্রীয় মোর্চা (ভারত)

পটভূমি সম্পাদনা

১৯৮৪তে অনুষ্ঠিত হওয়া অষ্টম লোকসভার নির্বাচনে রাজীব গান্ধী বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে জয়লাভ করেছিলেন, যদিও পরবর্তী নির্বাচনে বফর্স কেলেংকারী, পাঞ্জাবএর সন্ত্রাসবাদ, শ্রীলঙ্কা সরকার ও এল.টি.টি.ইর মধ্যে চলতে থাকা যুদ্ধ ইত্যাদি সমস্যা রাজীব গান্ধী সরকারকে ভারাক্রান্ত করে রেখেছিল। গান্ধীর অন্যতম বড় সমালোচক ছিলেন বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং, যিনি গান্ধী সরকারে বিত্ত মন্ত্রী ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হয়ে থাকা অবস্থাতেই সিঙ বফর্স টোপ ক্রয়ে অবৈধ ধনের লেন-দেন হওয়ার অভিযোগ এনেছিলেন, যা রাজীব গান্ধীর ভাবমূর্তি ম্লান করেছিল। সিংকে মন্ত্রীসভার থেকে বহিস্কার করা হয়েছিল এবং তারপর তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসর সদস্য পদের সঙ্গে লোকসভার সদস্য পদও ত্যাগ করেছিলেন।[২] তিনি অরুণ নেহরু ও আরিফ মহম্মদের সাথে জনমোর্চা গঠন করেছিলেন ও এলাহাবাদ লোকসভা সমষ্টির থেকে উপ-নির্বাচনে জয়ী হয়ে পুনরায় সংসদে প্রবেশ করেছিলেন।[৩]

রাজীব গান্ধীর সরকারের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে লড়াই করতে ১১ অক্টোবর, ১৯৮৮র দিন জনতা দল গঠন করা হয়। ১১ অক্টোবর ছিল মূল জনতা পার্টির আধ্যাত্মিক নেতা জয়প্রকাশ নারায়ণর জন্মদিন। জনতা দলে জনমোর্চা, জনতা পার্টি, লোকদল, সমাজবাদী কংগ্রেস সামিল হয়। বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং এই রাজনৈতিক দলটির সভাপতি নির্বাচিত হন। জনতা দলের উদ্যোগে বিভিন্ন আঞ্চলিক দল, দ্রাবিড়া মুন্নেত্রা কাঝাগম, তেলুগু দেশম, অসম গণ পরিষদ ইত্যাদিকে নিয়ে জাতীয় মোর্চা গঠন করা হয়। এর আহ্বায়ক, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিল ক্রমে বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং, এন টিরামারাও ও পি উপেন্দ্র।[৪]

ফলাফল সম্পাদনা

১৯৮৯র ভারতের সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল ছিল এধরনের:[৫]

লোকসভা নির্বাচন
ভোটদানের হার: 61,95%
% জয়
(মোট 545)
ভারতীয় জনতা পার্টি BJP 11,36 85
ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি CPI 2,57 12
ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী) CPI(M) 6,55 33
ভারতীয় কংগ্রেস (সমাজবাদী) IC(S) 0,33 1
ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস INC 39,53 197
জনতা দল JD 17,79 143
অল ইণ্ডিয়া আন্না দ্রাবিড়া মুন্নেত্রা কাঝাগম AIADMK 1,5 11
অল ইণ্ডিয়া ফরওয়ার্ড ব্লক AIFB 0,42 3
ইণ্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগ MUL 0,32 2
জম্মু-কাশ্মীর ন্যাশনাল ফ্রণ্ট NC 0,2 3
মহারাষ্ট্রবাদী গোমন্টক পার্টি MGP 0,04 1
বিপ্লবী সমাজবাদী পার্টি RSP 0,62 4
সিকিম সংগ্রাম পরিষদ SSP 0,03 1
তেলুগু দেশম পার্টি TDP 3,29 2
অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভা ABHS 0,07 1
অল ইণ্ডিয়া মজলিশ-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমেন AIMIM 0,21 1
বহুজন সমাজ পার্টি BSP 2,07 3
গোর্খা ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রণ্ট GNLF 0,14 1
ইণ্ডিয়ান পিপলস ফ্রণ্ট IPF 0,25 1
ঝারখণ্ড মুক্তি মোর্চা JMM 0,34 3
কেরালা কংগ্রেস (মণি) KC(M) 0,12 1
মার্ক্সিস্ট কো-অর্ডিনেশন কমিটি MCO 0,08 1
শিরোমণি আকালি দল (সমরজিৎ সিং মান) SAD(M) 0,77 6
শিবসেনা SS 0,11 1
নির্দলীয় - 5,25 12
ইংগ-ভারতীয় মনোনীত প্রার্থী - - 2

প্রধানমন্ত্রিত্বর জন্য যুদ্ধ সম্পাদনা

বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং সম্পাদনা

নির্বাচনের আগে অন্য কংগ্রেস শক্তি স্পষ্টরূপে রাজীব গান্ধীর বিকল্প হিসেবে বিশ্বনাথ প্রতাপ সিংকে প্রধানমন্ত্রীর প্রার্থীরূপে প্রক্ষেপ করেছিল যদিও ১ ডিসেম্বরে সংসদ ভবনের কেন্দ্রীয় হলে হওয়া এক নাটকীয় সভায় বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং প্রধানমন্ত্রীর জন্য দেবীলালর নামটি প্রস্তাব করেন। হরিয়ানার একজন জাট নেতা দেবীলাল এই প্রস্তাব অস্বীকার করেন ও বলেন যে সরকারটিতে তিনি একজন বৃদ্ধ কাকার (elder uncle) ভূমিকায় থাকতে ভাল পারবেন ও তাই সিংই প্রধানমন্ত্রী হবেন।[৬] এই কথায় জনতা পার্টির পূর্বের মুখ্যনেতা ও ভি.পি. সিঙের বিরোধী চন্দ্র শেখর আশ্চর্য চকিত হন। শেখর দেবীলালের প্রধানমন্ত্রী হওয়াটি আশা করেছিলেন। তিনি সিঙের মন্ত্রীসভায় অংশগ্রহণ করতে অসম্মতি প্রকাশ করেন।[৭]

চন্দ্রশেখর সম্পাদনা

৬৪জন সাংসদের সাথে জনতা দল ভংগ করে চন্দ্রশেখর সমাজবাদী জনতা পার্টি গঠন করেন ও কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে ১০ নভেম্বর, ১৯৯০তে প্রধানমন্ত্রীর শপথ নেন। কিন্তু রাজীব গান্ধীর ওপরে চরগিরি করার অভিযোগে কংগ্রেস সমর্থন উঠিয়ে নেয় এবং ৬ মার্চ, ১৯৯১ত শেখর পদত্যাগ করেন। অবশ্য পরবর্তী নির্বাচন থেকে তিনি তদারকী প্রধানমন্ত্রী হয়ে থাকেন।

তথ্য উৎস সম্পাদনা

  1. http://www.ipu.org/parline-e/reports/arc/2145_89.htm
  2. Turmoil and a Scandal Take a Toll on Gandhi. New York Times. (24 August 1987). Retrieved 14 September 2011.
  3. Gandhi Is Finding Out Fast How Much He Had to Lose. New York Times. (3 July 1988). Retrieved 14 September 2011.
  4. New Opposition Front in India Stages Lively Rally. New York Times. (18 September 1988). Retrieved 14 September 2011.
  5. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি" (পিডিএফ)। ১৮ জুলাই ২০১৪ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ ডিসেম্বর ২০১৬ 
  6. Man in the News; V. P. Singh: Low-key Indian in high-anxiety job - New York Times report
  7. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৪ মে ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ ডিসেম্বর ২০১৬