ব্রি ধান

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট(ব্রি) কর্তৃক উদ্ভাবিত উচ্চফলনশীল এবং হাইব্রিড জাতীয় ধান

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট(ব্রি) কর্তৃক উদ্ভাবিত উচ্চফলনশীল এবং হাইব্রিড জাতীয় ধানকে ব্রি ধান হিসাবে অভিহিত করা হয়। শুরুতে এগুলোকে বি আর ধান নামে আখ্যায়িত করা হতো। বিভিন্ন ব্রি ধানের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য রয়েছে। মার্চ ২০২৩ পর্যন্ত ব্রি উদ্ভাবিত সর্বমোট ধানের জাতের সংখ্যা ১১৩টি।[১]

ব্রি ধানের বৈশিষ্ট্য সম্পাদনা

ব্রি ধান ২৮ সম্পাদনা

এটি বোরো মৌসুমের আগাম জাত হিসেবে অনুমোদিত। এ ধানের ডিগপাতা হেলে যায় এবং শীষ উপরে থাকে। তদুপরি ফলনও ভাল। তাই কৃষকদের কাছে এটি জনপ্রিয়তা লাভ করেছে

ব্রি ধান ৩৫ সম্পাদনা

এটি বাদামি গাছফড়িং প্রতিরোধশীল জাত হিসেবে চাষাবাদের জন্য অনুমোদিত।

ব্রি ধান ৪১ সম্পাদনা

এটি রোপা আমন মৌসুমের উপযোগী একটি আলোক সংবেদনশীল ধান। এ ধান চারা ও থোড় অবস্থায় ৮ ডিএস/মিটার লবণাক্ততা প্রতিরোধ করতে পারে। দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের যে জমিতে রাজাশাইল, কাজলশাইল, পাটনাই, মরিচশাইল ইত্যাদি স্থানীয় জাতের চাষাবাদ হচ্ছে ঐ সব জমিতে এ জাতের প্রতি হেক্টরে ফলন ৪.০-৪.৫ টন। এ জাতের গাছ মজবুত। প্রচলিত জাতের মতো এর ডিগপাতা একটু চওড়া, কিন' গাছ উচ্চতায় অনেকটা ছোট। এর জীবনকাল ব্রি ধান ৪০-এর চেয়ে এক সপ্তাহ নাবী। জাতটির চারা প্রয়োজনে ৩০-৫০ দিনের হলে এক হাঁটু পরিমাণ পানিতে সহজেই রোপণ করা যায়। ধানে কোন শুঙ নেই। আবার দেখতে বিআর ২৩ এর অনুরূপ, কিন' জীবনকাল ৮-১০ দিন আগাম।

বঙ্গবন্ধু ধান ১০০ সম্পাদনা

বঙ্গবন্ধু ধান হেক্টরপ্রতি ৭.৮ টন (বিঘা প্রতি ১০৪৩ কেজি) উৎপাদন সম্ভব। উৎপাদন কাল ১৪৫ থেকে ১৪৮ দিন, যেখানে অন্যান্য ধানে প্রায় ১৬০ দিন লাগে। চাল মাঝারি চিকন ও সাদা। জিংকের পরিমাণ প্রতি কেজিতে ২৫.৭ মিলিগ্রাম, যা জিংকের অভাব পূরণে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। চালের অ্যামাইলোজ ২৬.৮ শতাংশ ও প্রোটিন ৭.৮ শতাংশ। চালের গুণগত মান ভাল এবং ভাত ঝরঝরে। এই ধান আবাদে ১০ থেকে ১৪ দিন সময় কম লাগে। সার ও কিটনাশকও কম দিতে হয়। ফলন বেশি। অন্য ধানের তুলনায় দু-এক সপ্তাহ আগে ধান কাটা যায়। ঝড়বৃষ্টিতে ফসল নষ্ট হয় কম। সময় ও খরচ বাঁচে। বেশি শীতে অন্যান্য জাতের ধানের বীজ বপনের পর ঘন কুয়াশায় অনেক চারা নষ্ট হয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধু জাতের বীজ বপনের পর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই রোপণ করতে পারায় চারা নষ্টের হার কম। এই ধানের ফ্লাগ লিড ভাল থাকায় ফলন ভাল হয়। অন্যান্য ধানে ফ্লাগ লিড কম থাকায় চিটা বেশি হয়।[২] এর ডিগ পাতা খাড়া, প্রশস্ত ও লম্বা এবং পাতার রং সবুজ; পূর্ণবয়স্ক গাছের উচ্চতা ১০১ সেন্টিমিটার; এক হাজার পুষ্ট ধানের ওজন ১৬ দশমিক ৭ গ্রাম।[৩]

বিভিন্ন ব্রি ধান সম্পাদনা

ব্রি ধান- ৭, ব্রি ধান-২৮, ব্রি ধান-২৯, ব্রি ধান-৩৫, ব্রি ধান-৪১, ব্রি ধান-৪৭, ব্রি ধান–৫০, ব্রি ধান–৬৩, ব্রি ধান–৭০, ব্রি ধান - ৭৪, ব্রি ধান–৭৫,ব্রি ধান-৭৬ (জোয়ার-ভাটাসহনশীল জাত) , ব্রি ধান–৭৭ (জোয়ার-ভাটাসহনশীল জাত) , ব্রি ধান–৮০, ব্রি ধান–৮১, ব্রি ধান- ৮২, ব্রি ধান-৮৩, ব্রি ধান–৮৪, ব্রি ধান-৮৫, ব্রি ধান–৮৬, ব্রি ধান- ৮৭, ব্রি ধান–৮৮, ব্রি ধান - ৮৯, ব্রি ধান–৯০, ব্রি ধান - ৯২, ব্রি ধান - ৯৩, ব্রি ধান - ৯৪, ব্রি ধান - ৯৫, ব্রি ধান - ৯৬, বঙ্গবন্ধু ধান–১০০ (জিংকসমৃদ্ধ জাত), ব্রি ধান - ১০১, ব্রি ধান - ১০২ [৪] [৫] ব্রি ধান - ১০৩, ব্রি ধান - ১০৪ (বাসমতীর গুণাবলি সম্পন্ন সুগন্ধি ধান)[৬] , ব্রি ধান-১০৫ (ডায়াবেটিক ধান), ব্রি ধান-১০৬ (অলবণাক্ততা জোয়ার-ভাটা অঞ্চলের উপযোগী)[৭]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "চাষের অনুমোদন পেলো ডায়াবেটিক চাল উৎপাদনের ধান, বাংলা ট্রিবিউন, ৩ মার্চ ২০২৩"। ৩ মার্চ ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০২৩ 
  2. কৃষকের মাঠজুড়ে জিংকসমৃদ্ধ বঙ্গবন্ধু ধান-১০০, কালের কণ্ঠ, ২২ এপ্রিল ২০২২
  3. বঙ্গবন্ধু ব্রি-১০০' ধানে বাড়তি জিংক, চাষে আগ্রহী কৃষক, বিডিনিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম, ১৫ মার্চ ২০২২[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  4. ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, নতুন জাত, জাগায় নতুন আশা, প্রথম আলো, ২ জানুয়ারি ২০২২
  5. ‘বঙ্গবন্ধু ধান১০০’ সর্বস্তরে চাষাবাদে উৎসাহিত করার সুপারিশ, জাগো নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম, ১ মার্চ ২০২২
  6. বাসমতীর মতো সুগন্ধি ধানের জাত অনুমোদন, কালের কণ্ঠ, ২৭ ডিসেম্বর ২০২২
  7. "চাষের অনুমোদন পেলো ডায়াবেটিক চাল উৎপাদনের ধান, বাংলা ট্রিবিউন, ৩ মার্চ ২০২৩"। ৩ মার্চ ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০২৩