শাব্দিক অর্থ সম্পাদনা

কৈবর্ত অর্থ ধীবর বা জেলে। নিষাদের ঔরসে অয়োগবীজাত জাতি বিশেষ।

নাম রহস্য সম্পাদনা

কিম্বর্ত দেশীয় রাজন্য বা কৃষিকার জাতিকে কৈবর্ত বলে।

প্রকারভেদ সম্পাদনা

কৈবর্ত দুই প্রকার। (১) ক্ষত্রবীর্যেণ বৈশ্যায়াং কৈবর্তঃ পরিকীর্তিতঃ। (ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ, ব্রহ্মখণ্ড ১০ অধ্যায়) অর্থাৎ, ক্ষত্রিয়ের পরিণীতা বৈশ্যা পত্নীর সন্তানের নাম কৈবর্ত বলে পরিগণিত হয়েছে। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের এই কৈবর্তগণই যাজ্ঞবল্ক্যাদি সংহিতায় মাহিষ্য নামে উল্লেখ করা আছে। মাতা-পিতা-বৃত্তি-সমতায় মাহিষ্য ও ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের ক্ষত্রবৈশ্যাজাত কৈবর্ত একই জাতি।

(২) নিষাদো মার্গবং সূতে দাশং নৌকর্মজীবিনম্। কৈবর্তমিতি যং প্রাহুরার্যাবর্ত-নিবাসিনঃ।। (মনু, ১০ অধ্যায়) নিষাদজাতীয় পুরুষ অয়োগবীজাতীয়া স্ত্রীর সাথে মিলিত হয়ে যে সন্তান উৎপাদন করে তাদেরকে মার্গব বা দাশ বলে। আর্যাবর্তবাসিগণ এ জাতিকে কৈবর্ত নামেও অভিহিত করে থাকে। তারা নৌ-কর্মজীবি অর্থাৎ নৌকাকে অবলম্বন করে মাছ শিকার করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। তারা সমাজে জেলে কৈবর্ত নামে অভিহিত হন।

বর্তমানকালে কৈবর্ত সমাজ সম্পাদনা

“মাছে-ভাতে বাঙালী” - এ চিরন্তন সত্যটি এখন আর নেই। নদীপথে পলিমাটি, অবৈধ দখল, পানি দূষণ, জনসংখ্যার আধিক্য ইত্যাদির ফলে নদীতে মাছের প্রাচুর্য্যতা আশঙ্কাজনকহারে কমে যাওয়ায় কৈবর্ত সমাজের জেলেরা অন্য পেশায় নেমে যেতে বাধ্য হয়েছে। তারা স্বর্ণকার, দর্জি ইত্যাদি পেশায় নিযুক্ত থেকে দিনযাপন করছেন। একান্তই বাধ্য হয়ে যারা পৈত্রৃক পেশা হিসেবে মাছ ধরায় নিয়োজিত আছেন, তারা কোন রকমে টিকে আছেন। জাল তৈরীতে সূতার দাম বৃদ্ধি, নৌকা তৈরীর মূল উপাদান কাঠসহ অন্যান্য সহায়ক উপকরণের দাম বৃদ্ধিও মাছ শিকারে প্রধান প্রতিবন্ধক হয়ে রয়েছে।

জীববৈচিত্রের ধ্বংসে ভূমিকা সম্পাদনা

কৈবর্ত সমাজে শিক্ষিতের হার অন্যান্যদের তুলনায় খুবই কম। অধিকাংশ জেলেই অশিক্ষিত বিধায় মাছ শিকার করতে গিয়ে কারেন্ট জাল ব্যবহার করছে। ফলে ঝাটকা, পোনা মাছ শিকারসহ অপ্রয়োজনীয় অনেক জলজ প্রাণী ধ্বংস হচ্ছে।