ফুলবিবি সাহেবানী মসজিদ সন্দ্বীপের কালাপানিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক মসজিদ ছিল। নদীগর্ভে এটি বিলীন হয়ে যায়।

ইতিহাস সম্পাদনা

সন্দ্বীপের রাজা ছিলেন দেলোয়ার খাঁ। সেই দেলোয়ার খাঁ এর জামাতা চাঁদ খাঁ এর বংশধর ছিলেন ফুলবিবি এবং জমিদার মুরাদ চৌধুরী। ফুলবিবি ছিলেন চাঁদ খাঁ - এর সবচেয়ে বড় ছেলে জুনুদ খাঁ - এর নাতনী। ফুলবিবির স্বামী ছিলেন জমিদার মুরাদ চৌধুরী। আবু তোরাপ চৌধুরী ছিলেন ফুলবিবির ভাই। লোক কাহীনি এবং বিভিন্ন বই-পুস্তক থেকে জানা যায় ফুলবিবি এবং মুরাদের একমাত্র সন্তান মোহাম্মদ হানিফ ৬/৭ বছরেই মারা যায়। এরপরে তাদের আর কোন সন্তান হচ্ছিল না। তাই ফুলবিবি ও জমিদার মুরাদ তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে কিছু পদক্ষেপ নেন। মুরাদ তার বাসগৃহের সামনে একটি বাজার গড়ে তোলেন যা চৌধুরী হাট নামে পরিচিত ছিল কিন্তু সেটাও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। আবার ফুলবিবি নিজের স্মৃতিরক্ষার্থে একটি মসজিদ নির্মাণের আর্জি জানান। জমিদার মুরাদ রাজি হন। ফলে শুরু হয় ফুলবিবি সাহেবানী মসজিদের নির্মাণ কাজ। সঠিক সময় বা নির্মানকাল জানা না গেলেও ১৭৫০ এর দিকে এই মসজিদটি তৈরি হয়েছিল বলে জানা যায়। এই মসজিদের প্রথম ইমাম ছিলেন তারেক খলিফা এবং মুয়াজ্জিন ছিলেন লাকু ফকির। সর্বশেষ ইমাম ছিলেন ক্বারী মাহবুব উল্লাহ।[১]

নির্মাণশৈলি সম্পাদনা

দিল্লী থেকে রাজমিস্ত্রি এনে জমিদার মুরাদ মসজিদের কাজ শুরু করেছিলেন। কথিত আছে মসজিদের পাশের পুকুরের মাটি দিয়েই মসজিদের ইট তৈরি হয়েছিল। মসজিদটির মূল অংশের দৈর্ঘ্য ৪৮ ফুট এবং প্রস্থ ২৪ ফুট। মূল মসজিদের ভিত্তি ৭ ফুট ৬ ইঞ্চি গভীর। মসজিদের রয়েছে ৩ টি গম্ভুজ, ৪ টি মিনার, ৩ টি দরজা এবং ২ টি জানালা। মসজিদের ভেতরে ছিল নানা ধরণের কারুকাজ এবং আজান দেওয়ার জন্য মসজিদের বাইরে নির্মাণ করা হয়েছিল মিনার। ওজু করার জন্য পুকুরের সাথে লাগোয়া পাকা করা ঘাটও ছিল। নির্মাণের সময় মসজিদের বাইরে ১৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১০ ফুট ৬ ইঞ্জি বিশিষ্ট একটি ভবন তৈরি করা হয়েছিল। এই ভবনের উপরে ছিল গম্ভুজ। দুটি কক্ষের মধ্যে একটিতে ইমামা থাকতো এবং অন্যটি মুসাফিরখানা হিসেবে ব্যবহৃ হত। ভবনটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এটিকে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছিল।[১]

নদীগর্ভে বিলীন হওয়া সম্পাদনা

১৯৮১ সালের ৫ জুন, বিকেল ৩ টা ৫ মিনিটে মসজিদের পশ্চিম পাশের বাইরের দেয়াল প্রথম নদীতে বিলীন হয়ে যায়। একই মাসের ২৯ জুন মসজিদের একাংশও পানিতে তলিয়ে যায়। অল্পকিছুদিনের মধ্যেই মসজিদের বেশ কিছু অংশ নদীগর্ভে চলে যায়।[১]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. মোহাম্মদ, হাসান (২০১৭)। সন্দ্বীপসমগ্রঃ সন্বীপপিডিয়া। চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা, বহদ্দারহাট, চট্টগ্রাম: ইউনিভার্সিটি পাবলিশার্স। পৃষ্ঠা ৫৪–৫৫। আইএসবিএন 9789849011621 |আইএসবিএন= এর মান পরীক্ষা করুন: checksum (সাহায্য)