ব্যবহারকারী:Nazmul.dubd/মাদারীপুর মিউজিয়াম

মাদারীপুর মিউজিয়াম ৩১ মার্চ, ২০২৩ খ্রি. প্রতিষ্ঠিত হয়। [১]<ref>

পটভূমি সম্পাদনা

মাদারীপুর জেলার বাংলাদেশের অন্যতম একটি প্রাচীন ও সমৃদ্ধ জনপদ। এ জেলার রয়েছে হাজার বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনসহ ১৯৭১ খ্রি. এর মহান মুক্তিযুদ্ধে এ জেলার রয়েছে অসামান্য গৌরোবজ্জ্বোল অবদান। অত্যন্ত প্রাচীন ও ইতিহাস সমৃদ্ধ অঞ্চল হলেও মাদারীপুর জেলা বা এর সন্নিকটবর্তি অঞ্চলে এই ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সংরক্ষণের জন্য কোন প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো নেই। ফলশ্রুতিতে সময়ের পরিক্রমায় অনেক ঐতিহাসিক নিদর্শন, ঘটনাবলী ও দৃষ্টান্ত বিস্মৃতির অতল গহ্বরে হারিয়ে গেছে। এবং সেই ইতিহাস প্রতিনিয়ত হারিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু অনাগত প্রজন্মকে ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে সচেতন করা ও সংরক্ষণের নিমিত্ত প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ গ্রহণ অতীব জরুরী। উদ্দেশ্য। সামগ্রিক ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সংরক্ষণের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন, মাদারীপুর ‘মাদারীপুর মিউজিয়াম’ নামে একটি জাদুঘর প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করে। এ উদ্দেশ্য সাধনকল্পে জেলা প্রশাসন, মাদারীপুর এর মালিকানাধীন ঐতিহাসিক পুরাতন ট্রেজারি ভবনকে জাদুঘরে রূপান্তর করা হয়েছে।

ইতিহাস সম্পাদনা

১৯৭১ এ মহান মুক্তিযুদ্ধে এ ভবনের রয়েছে অনন্য ঐতিহাসিক অবদান। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করলে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো মাদারীপুর জেলায় মুক্তিযুদ্ধের প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু হয়। যুদ্ধের সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণের উদ্দেশ্যে মাদারীপুর জেলায় সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটি ও ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। জনাব বেনজীর আহমেদ টিপু তার ‘মুক্তিযুদ্ধে মাদারীপুর’ বইয়ের ১৬২-১৬৩ পৃষ্ঠায় লেখেন, ২৭ মার্চ থেকেই মাদারীপুর শহরে ছাত্র-যুবকদের নিয়ে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধের সামরিক প্রশিক্ষণের প্রস্তুতি। প্রশিক্ষণের জন্য বিমান বাহিনীর সদস্য আলমগীর হোসাইন ও মতিয়ার রহমান হাওলাদার, সেনাবাহিনীর সুবেদার আব্দুল হক এর মতো বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ থাকলেও প্রশিক্ষণের জন্য কোন প্রয়োজনীয় অস্ত্র ছিল না। এমন পরিস্থিতিতে এগিয়ে আসেন তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক সৈয়দ রেজাউল হায়াত। তিনি নিজে দাড়িয়ে থেকে মাদারীপুর ট্রেজারীতে রক্ষিত থ্রিনটথ্রি রাইফেলগুলো মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে তুলে দেন। বীরমুক্তিযোদ্ধাগণ প্রতিদিন ট্রেজারী থেকে অস্ত্র নিয়ে যেতেন এবং প্রশিক্ষণ শেষে পুনরায় ট্রেজারীতে অস্ত্র জমা রেখে যেতেন। ফলে মাদারীপুর জেলায় মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ সুসংগঠিত হয় এবং জনসাধারণের মধ্যে প্রতিরোধ যুদ্ধের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধিপায়। অচিরেই মহকুমা প্রশাসক সৈয়দ রেজাউল হায়াত ও তৎকালীন মহকুমা ট্রেজারি ভবন মাদারীপুর জেলায় মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি ও সংগঠনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। মাদারীপুর জেলায় মহান মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করার অপরাধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মহকুমা প্রশাসক সৈয়দ রেজাউল আয়াতকে গ্রেফতার করে ঢাকায় নিয়ে যায় এবং প্রহসনের বিচারের মাধ্যমে তাঁকে কারাদন্ড প্রদান করে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ট্রেজারি ভবন দখল নিয়ে সেখানে ক্যাম্প স্থাপন করে। মাদারীপুর জেলায় মহান মুক্তিযুদ্ধে সংগঠিত হয়েছিল ট্রেজারি ভবনে রক্ষিত রাইফেল দিয়ে। মহান মুক্তিযুদ্ধে এই ভবনটির রয়েছে অসামান্য অবদান। কিন্তু পরবর্তীতে ১৯৯২ খ্রি. তারিখ মাদারীপুর জেলা কালেক্টরেট ভবন পূর্বের শকুনী লেকপাড় হতে স্থানান্তরিত হয়ে বর্তমান স্থানে প্রতিষ্ঠিত হয়। ফলশ্রুতিতে জেলা ট্রেজারি নতুন কালেক্টরেট ভবনে স্থানান্তরিত হয়। কালক্রমে পুরাতন ট্রেজারি ভবন ব্যবহার অনুপোযোগী ও পরিত্যক্ত ভবনে রূপান্তরিত হয়। এই ভবনটির অবস্থান মাদারীপুর শহরের কেন্দ্রে, দৃষ্টিনন্দন শকুনী লেকপাড়ে। ভবনটির অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয় স্থানে হওয়ায় এ ভবন ও জমির উপর স্থানীয় দুর্বৃত্তচক্রের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে। নাম সর্বস্ব সংগঠন পুরাতন ট্রেজারি ভবনেরও জমি দখল করে নেয়। যা জাদুঘর স্থাপনের প্রাক্কালে দখলমুক্ত করা সম্ভব হয়েছে।

জাদুঘর প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ সম্পাদনা

(ক) মাদারীপুরসহ সমগ্র বাংলাদেশের পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন, শিল্পকলা ও সাহিত্যের নিদর্শন, জাতিতাত্ত্বিক নিদর্শন, ঐতিহাসিক নিদর্শন, বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতা সংগ্রাম সংশ্লিষ্ট নিদর্শন, স্মৃতিচিহ্ন ও ঘটনা, উদ্ভিজ্জ ও

3 প্রাণিজ নমুনা, ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্প এবং মানবসৃষ্ট নিদর্শন, বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকাণ্ড, শ্রুতি-চিত্রণ (audio-visual) ভিত্তিক প্রামাণ্য দলিল এবং বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক ঐতিহ্য সংশ্লিষ্ট বস্তু ও নিদর্শন অনুসন্ধান, সংগ্রহ, সংরক্ষণ, গবেষণা ও প্রদর্শন; (খ) মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণ, বীরমুক্তিযোদ্ধাদের পরিচিতি ও সাহসিকতার ইতিহাস সংরক্ষণ। (গ) বিশ্বসভ্যতা সংশ্লিষ্ট বস্তুগত এবং অবস্তুগত বিভিন্ন নিদর্শন সংগ্রহ, সংরক্ষণ, গবেষণা ও প্রদর্শন; (ঘ) সাময়িকী, পত্রিকা, গ্রন্থ, সংকলন, ডিজিটাল প্রতিকৃতি, ভার্চুয়াল জাদুঘর, চলচ্চিত্রিক নিদর্শন, দেখনচিত্র (view card), পোস্টার এবং নিদর্শনের অনুকৃতি (replica) তৈরি প্রকাশ, প্রচার, দেশি-বিদেশি প্রদর্শনী ও মেলায় অংশগ্রহণ ও বিনিময়। (ঙ) বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক, সাহিত্যিক, ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক ঐতিহ্যভিত্তিক প্রদর্শনী সম্মেলন, বক্তৃতামালা, সেমিনার এবং সভার আয়োজন; (চ) সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক ঐতিহ্য বিষয়ক শিক্ষামূলক কর্মকাণ্ড সম্পৃক্ত কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কর্তৃপক্ষকে নিদর্শন রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার নিমিত্ত উৎসাহ প্রদান, জাদুঘরমনস্ক প্রচারণা এবং জাদুঘরবান্ধব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিতকরণ ও স্বীকৃতি প্রদান।

ব্যবস্থাপনা কমিটি সম্পাদনা

ট্রাস্টি সদস্য সম্পাদনা

রেফারেন্স সম্পাদনা

  1. https://www.jaijaidinbd.com/wholecountry/345564  |শিরোনাম= অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)