শত্রুকে ভালোবাসা ---(শিরীন সুলতানা)---

শত্রুকে ভালোবেসে যাই, যদি তার মনের দেখা পাই। শত্রু আর বন্ধু বলতে কি পৃথিবীতে এ দু’টি শব্দ ব্যবহৃত হয়ে আসছে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও ভেদাভেদ প্রকাশের জন্য! শত্রু-মিত্র দু’টি শব্দ না ব্যবহার করে যদি করা হত -‘লড়াই-বড়াই’। অর্থাৎ কেউ কারো বিরুদ্ধে লড়াই করছে আর অন্যজন করছে বড়াই। মানে যে লড়াই করছে তার গুণগানে অপরজন পঞ্ছমুখর তখন কেমনটা হত? এ ক্ষেত্রে দুই ধরনের ব্যাখ্যা দেওয়া যায়। ব্যবহারে কেউ হয়ে যেত মুগ্ধ তখন আর লড়াইয়ের চিন্তা করত না, নিজে থেকে লজ্জিত হত তার দুষ্কর্মের জন্য। খুঁজে পেত ভালবাসার স্বাদ। ভাবতো কার বিরুদ্ধে আমি লড়াই করছি ,কেনই বা তার বিরুদ্ধে লড়বো, কেন তার ক্ষতি করছি? কেন তার প্রতি আমার অবহেলা? যে বন্ধু ভেবে আমায় মনে দিয়েছে ঠাই, আমি কেন তার বিরুদ্ধে দাঁড়াই? মহানবি হযরত মোহাম্মদ (সঃ) বলেছেন, শত্রুর সাথে ভাল ব্যবহার করলে সেও বন্ধুত্বে পরিণত হয়। ঠিক তেমনি তোমার বিরুদ্ধাচরণ যে করছে সেও দেখবে তোমার প্রতি সদয় ব্যবহার করছে। তোমার বন্ধুত্বে পরিণত হচ্ছে তোমার ভাল ব্যবহারে। বিপরীতটাও সত্য যা শিব খেয়া তুমিও জিতবে বইয়ে সর্বত্রই উল্লেখ করেছেন। যা হোক এর বিরোধিতা করারও একপক্ষ থাকবে যারা চিরকালই তাদের মনের ক্ষীণকায় ও দুর্বল মানসিকতার প্রকাশ করবে। তারা তাদের আত্মকেন্দ্রিকতার বিষয়টাকে বেশি প্রাধান্য দিবে। তাদের বিপরীত পার্টি যাদের ওরা মনে করে তাদের থেকে ফিডব্যাকটা না পেলেও এদের জ্বালা আরো বেড়ে যাবে। তাদের চিন্তাই স্বার্থের। তারা বলবে কোন স্বার্থে সে আমার সাথে ভাল ব্যবহার করছে? কী উদ্দেশ্য এতে নিহিত রয়েছে? স্বার্থপরতার বানী শুনতে পারবে, যেমনটা তারা বলে -সুযোগের সন্ধানে থেকে দিবে এককোপ, এক কোপে দু’টুকরা। স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্যই হয়তো পিছু নিয়েছে। ছদ্মবেশী শত্রু, এরাই জাত শত্রু! পুরো বিশ্বাস ভঙ্গ, তাই আগে থেকেই হুঁশিয়ার। যদিও তাদের ভাবনার সাথে সমন্বয়কারী কিছু চরিত্র পাওয়া যায় আমাদের চারপাশে। যার কারণে ভালোবাসার মৃত্যু ঘটে একসময়। আবার কারো মনে পল্লীকবির ভাবনা আসে- “আমার এ ঘর ভাঙ্গিয়াছে যে’বা, আমি বাঁধি তার ঘর, আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পর। যে মোরে করেছে পথের রাগিণী, পথে পথে আমি ফিরি তার লাগি.........।।“ পুরো কবিতাটা কবি মনের মাধুরী দিয়ে সাজিয়েছেন। কি অপূর্ব তার পঙক্তি ও সৃষ্টকর্ম। নিঃস্বার্থপর,মানব-প্রকৃতি প্রেমিক মানুষেরা কবির কবিতার প্রতিটি চরণে চরণেই লুকিয়ে আছে। আর সেই সাথে কি সমধুর কণ্ঠস্বর ও ভালবাসা জেগে উঠে। যাই হোক কেন আমি শত্রুকে ভালবাসবো?যদি শত্রু মনে করে কাউকে দূরে ঠেলে দেই তাহলে মানুষের প্রতি মানুষের দূরত্বই বাড়বে। পৃথিবী হয়ে উঠবে বসবাসের অযোগ্য, জরাজীর্ণ। সবাই সবাইকে ঘৃণার চোখে দেখবে। অবিশ্বাস,হতাশা বেড়ে যাবে। আর ঘৃণা থেকে কখনো ভালবাসার জন্ম হয় না, ঘৃণা শুধু ঘৃণাই বাড়ায়। ভালবাসায় মানুষ খুঁজে পায় আপন ঠিকানা। এর নিজস্ব ধর্ম আছে, আকর্ষণ আছে যা নিজ গতিতে চলে। যদি কোন ঘৃণিত মনোভাব মনে কাজও করে ভালবাসা ফিরে আসবেই নিজস্ব গতিতে। টেনে ধরবে তার আপনজনকে ভালবাসার সুবাসে ও বাহুডোরে, আটকাবে দূরে সরে যাওয়া থেকে। কখন এই শত্রুতা কাজ করে কারো মনে? এই প্রশ্নের উত্তরের কোন নির্দিষ্ট গতিপথ নেই। তা এমনটা হতে পারে যে কাউকে ভালো লাগে না, তার স্বভাব চরিত্র ভাল নয়,নিন্দনীয়। এমনকি ভালো লাগলেও বা প্রশংসনীয় সবার ভালবাসার উপযোগী হলেও। এই ঘৃণা-শত্রুতা মানুষের মধ্যে আসতে পারে অহমিকা,লোভ,হিংসাপরায়ণতা থেকে। কারো প্রশংসা সহ্য না হওয়া থেকে। কারো ভালো বিষয় কানে শুনতে বিরক্ত লাগা থেকে। আমার চেয়ে কে বেশি সুন্দর, কে বেশি বড়-ছোট, কার পিছনে কত প্রেমিক-প্রেমিকা ঘুরঘুর করে,কারো পছন্দের ব্যক্তিটি অন্যকে পছন্দ করলে কিংবা আরও কত কি? হয়’তোবা কারণ ছাড়াই কেউ কাউকে ঘৃণা করছে। সেটার কারণ সে নিজেও জানে না। উত্তর দিতে না পারলে বলতে পারে তার ভাল লাগার অতিষ্ঠতায় তাকে ঘৃণা করি। এমনটা ও কি স্বাভাবিক নয়?

      শিরীন সুলতানা
ব্যবস্থাপনা  শিক্ষা বিভাগ