ব্যবহারকারী:Milonadv/সুব্রত ভট্টাচার্য
সুব্রত ভট্টাচার্য (জন্ম- ২৪সেপ্টেম্বর১৯৪৩) একাধারে একজন শিক্ষক[১], সমাজ সংস্কারক[২][৩], মুক্তিযুদ্ধ সংগঠক[৪], বাংলাদেশ বেতার রংপুর শাখার নিয়মিত শিল্পী, কবি এবং নজরুল সঙ্গীত শিল্পী[৫]।
সুব্রত ভট্টাচার্য | |
---|---|
জন্ম | ২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৪৩ নাগেশ্বরী, কুড়িগ্রাম |
জাতীয়তা | বাংলাদেশ |
পেশা | শিক্ষকতা |
পরিচিতির কারণ | শিল্পী, বাংলাদেশ বেতার রংপুর ও শিক্ষক |
জন্ম ও শৈশবঃ সম্পাদনা
সুব্রত ভট্টাচার্য ১৯৪৩ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার চৌবাড়ি পায়রাডাঙ্গা গ্রামে এক শিক্ষানুরাগী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা চপল কৃষ্ণ ভট্টাচার্য ছিলেন বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সংস্পর্শধন্য একজন সঙ্গীতশিল্পী। তাই পারিবারিকভাবেই সুব্রত ভট্টাচার্য শিল্পসাধনা শুরু করতে পেরেছিলেন। বাংলাদেশে জন্ম হলেও তাঁর শৈশব কাটে কলকাতায়। ১৯৫৫ সালে তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসেন।
শিক্ষাজীবনঃ সম্পাদনা
১৯৫৭ সালে সুব্রত ভট্টাচার্য ভর্তি হন নাগেশ্বরী ডিএম একাডেমীতে। তখন তিনি সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র। ১৯৬০ সালে তিনি আরেক স্থানীয় উচ্চ বিদ্যালয় ভিতরবন্দ জেডি একাডেমী হতে মাধ্যমিক পাশ করেন। এরপর ১৯৬২ সালে তিনি রংপুরের বিখ্যাত কারমাইকেল কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। একই কলেজ থেকে সুব্রত ভট্টাচার্য ১৯৬৫ সালে বিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক সম্পন্ন করেন[৬]।
কর্মজীবনঃ সম্পাদনা
১৯৬৫ সালে সুব্রত ভট্টাচার্য শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন নাগেশ্বরী ডিএম একাডেমীতে। এই বিদ্যালয়ে তিনি বিজ্ঞান শাখায় শিক্ষকতা করেন। শিক্ষকতা জীবনে তিনি তাঁর ছাত্রদের কাছে ছিলেন অত্যন্ত জনপ্রিয়। দীর্ঘ ৪৩ বছর শিক্ষকতা করে সুব্রত ভট্টাচার্য ২০০৭ সালে অবসরগ্রহণ করেন নাগেশ্বরী ডিএম একাডেমী থেকে। এছাড়া ১৯৭৬ সাল থেকে তিনি বাংলাদেশ বেতার রংপুর শাখার একজন নিয়মিত নজরুল সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে কাজ করে আসছেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ বেতার রংপুর শাখার একজন নিয়মিত 'বিশেষ গ্রেড' সারির নজরুল সঙ্গীত শিল্পী[৭]। সুব্রত ভট্টাচার্যের কাছে দীক্ষা নিচ্ছেন অনেক প্রতিভাবান তরুণ শিল্পী[৮]। এর পাশাপাশি সুব্রত ভট্টাচার্য বিভিন্ন সময় থেকে কুড়িগ্রাম জেলার বহু শিল্প, সামাজিক ও সেচ্ছাসেবী সংগঠনদের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন[৯]।
শিল্প ও সাহিত্য চর্চাঃ সম্পাদনা
সুব্রত ভট্টাচার্যের শিল্প ও সাহিত্য চর্চা মূলত তাঁর পরিবার থেকেই শুরু হয়। পুরাতন ঢাকার বকসি বাজারে থাকাকালীন তাঁর বাবা চপল কৃষ্ণ ভট্টাচার্য বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এবং কাজী মোতাহার হোসেনের কাছে নিয়মিত দীক্ষা নিতেন[১০]। এছাড়াও চপল কৃষ্ণ ভট্টাচার্য নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন ওস্তাদ মোহাম্মদ হোসেন খসরুর সাথে। তিনি দীক্ষা নিয়েছিলেন ওস্তাদ গুল মোহাম্মদ খানের কাছেও। সুব্রত ভট্টাচার্যের পিসি এবং অন্যান্য ভাই বোনেরা বাংলাদেশ ও ভারতের নানান জায়গা থেকে বিভিন্ন ধরনের সঙ্গীতে সুদীক্ষিত হয়ে ওঠেন বিভিন্ন সময়ে। সুতরাং পারাবারিক সূত্রেই তাঁরা ছিলেন শিল্পানুরাগী। এছাড়াও সুব্রত ভট্টাচার্য সঙ্গীত শিক্ষা নিয়েছিলেন কারমাইকেল কলেজের তৎকালীন রসায়ন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আবুল হাসান খন্দকার এবং বাংলার অধ্যাপক নুরুল ইসলামের কাছে।
মুক্তিযুদ্ধে অবদানঃ সম্পাদনা
১৯৭১ সালে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সময় সুব্রত ভট্টাচার্য মুক্তিযুদ্ধ সংগ্রাম পরিষদের একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তিনি ২৭ মে পর্যন্ত নাগেশ্বরী থানার কন্ট্রোল রুম ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন[১০]। এবং এরপর চলে যান ভারতের কুচবিহারে। সেখানে তিনি চৌধুরীহাট ইয়ুথ ট্রানজিট ক্যাম্পে বিশেষ দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের খাবারের যোগান এবং সংগঠন গড়ার কাজে অতি নিবেদিত ছিলেন।
রাজনীতিঃ সম্পাদনা
ষাটের দশকে সুব্রত ভট্টাচার্য বাংলাদেশ ন্যাপ (ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি) এর ছাত্র ইউনিয়ন রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন[১০]। তবে সম্পূর্ণ ব্যাক্তিগত কারনে তিনি তাঁর রাজনৈতিক জীবনকে দীর্ঘায়িত করেন নি।
পারিবারিক জীবনঃ সম্পাদনা
সুব্রত ভট্টাচার্য ১৯৮২ সালে রাজশাহীর মেয়ে স্বাগতা বকশীর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের ঘরে বিপাশা ভট্টাচার্য নামে এক কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। মাত্র ১৩ বছর সংসারের পরই স্বাগতা বকশী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তবে এরপর সুব্রত ভট্টাচার্য দ্বিতীয় বিয়ে করেন নি। বর্তমানে তাঁর মেয়ে বিপাশা ভট্টাচার্য স্বামী ও দুই যমজ ছেলেকে নিয়ে চট্টগ্রামে বসবাস করছেন।
পুরষ্কার ও সম্মাননাঃ সম্পাদনা
সুব্রত ভট্টাচার্য তাঁর সুকর্মের জন্য এখন পর্যন্ত বহু পুরষ্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। সবগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-
- জাতীয় কবিতা পরিষদ, রংপুর বিভাগীয় শাখা সম্মাননা
- নজরুল সঙ্গীত শিল্পী পরিষদ সম্মাননা
- ইনোভেটিভ স্কুল এন্ড কলেজ সম্মাননা
- বাংলাদেশ রবিদাস ফোরাম সম্মাননা
- দূরবীন মাল্টিমিডিয়া মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা
- গীতিকার তৌহিদ-উল ইসলাম পাঠাগার গুণীজন সম্মাননা[১১]।
উক্তিঃ সম্পাদনা
"সুন্দর হয়ে এসো করি সুন্দর"
"Nothing ugly
everywhere beauty
when with love
I do my duty."
"করি কাজ যবে মোর
প্রেম ভরা অন্তর
নয় কিছু কুৎসিত
লাগে সব সুন্দর।"
- ↑ "কুড়িগ্রাম জনপদের আলোকিত জনেরা :: দৈনিক ইত্তেফাক"। archive.ittefaq.com.bd (Bengali ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৫-২২।
- ↑ "কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে গুণীজন সংবর্ধনা"। Channel 24 (Bangla ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৫-২২।
- ↑ "নাগেশ্বরীতে মাদকমুক্ত সমাজের মাদক বিরোধী মতবিনিময় সভা | একটি বাংলাদেশ" (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৫-২২।
- ↑ "নাগেশ্বরীতে গণহত্যা দিবসে যুদ্ধদলিল প্রকল্পের বই বিতরণ | কালের কণ্ঠ"। Kalerkantho। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৫-২২।
- ↑ "বাংলাদেশ বেতার, রংপুর বিভাগ"
|ইউআরএল=
এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য)। http (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৫-২২। - ↑ প্রতিবেদক, নিজস্ব। "শিক্ষকেরা নিঃস্বার্থ কারিগর"। Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৫-২২।
- ↑ "বাংলাদেশ বেতার রংপুরের তালিকাভুক্ত সঙ্গীত শিল্পী- পিডিএফ ফাইলের ৭ নম্বর পাতার ৪ নম্বর সিরিয়াল" (পিডিএফ)। বাংলাদেশ বেতার, রংপুর। সংগ্রহের তারিখ ২২ মে ২০২১।
- ↑ প্রতিবেদক, নিজস্ব। "স্বপ্নময় সঞ্জয়"। Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৫-২২।
- ↑ সংবাদদাতা, নাগেশ্বরী (কুুড়িগ্রাম) উপজেলা। "নাগেশ্বরীতে উচ্ছাসের পাঠ উন্মোচন"। DailyInqilabOnline। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৫-২২।
- ↑ ক খ গ "সাদা মনের মানুষ সুব্রত ভট্টাচার্য"। e-barta247.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৫-২২।
- ↑ দেশজামানা (২০২১-০৩-২১)। "কুড়িগ্রামে তৌহিদ-উল-ইসলাম পাঠাগারের গুণিজন সম্মাননা প্রদান"। দেশজামানা (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৫-২২।