ব্যবহারকারীর নিজস্ব লিখিত নিবন্ধ।

।। আত্ম চরিত – ১ ।।

মহি আজাদ সম্পাদনা

আজ ২০২১ সালের ১ জানুয়ারী। আজ আমার জীবনের ৬৭ বৎসর পূর্ণ হল। আমি মনে করি প্রত্যেক মানুষের জীবনের কিছু ঘটনা সবাইকে জানিয়ে রাখা দরকার। তাই আজ থেকে শুরু করলাম আমার আত্ম জীবন চরিত লেখা। আমি কোন লেখক বা সাহিত্যিক নই, কোন বিখ্যাত লোকও নই, তাই আমার লেখা কোন গণমাধ্যমে প্রকাশ হবেনা। তাই আমার জীবন চরিত লেখার জন্য ফেসবুক মাধ্যমকেই বেছে নিলাম। বিভিন্ন পর্বে এই জীবন চরিত লেখা হবে। এই লেখার মধ্যে যদি কোন ভূলত্রুটি থেকে যায়, আর কেউ যদি কোন দুঃখ কষ্ট পান, তবে আমাকে ক্ষমা করে দিবেন আর ভূলত্রুটি গুলো সংশোধন করে দিবেন। সবার প্রতি রইল অফুরন্ত শুভকামনা। আমার নাম- মহিউদ্দিন আজাদ, পিতার নাম- আব্দুস সাত্তার, মাতার নাম- বেগম মহিতুন্নেসা, দাদার নাম- তছির উদ্দিন, দাদীর নাম- শরীফুন্নেসা, নানার নাম- আব্দুর রহিম, নানীর নাম- জসীতুন্নেসা, বোনের নাম- রওশন আরা বেগম, স্ত্রীর নাম- ফরিদা ইয়াসমিন স্নিগ্ধা, মেয়ের নাম- আজাদী ফারজানা ইয়াসমিন দিপা, ছেলের নাম- আজাদ মুহাম্মদ ফয়সাল মহি নিলয়। আমার জন্ম ১৯৫৪ সালের ১ জানুয়ারী, তৎকালীন রংপুর জেলার নীলফামারী মহকুমার অন্তর্গত কিশোরীগঞ্জ থানাধীন মাগুড়া ইউনিয়নের মাগুড়া গ্রামের খামাত পাড়ায়। আমার পড়ালেখার হাতে খড়ি, বাড়ীর পার্শের মুন্সিপাড়া এম, আলী প্রাইমারী স্কুলে ১৯৫৯ সালে। ঐ প্রাইমারী স্কুলের সকল শিক্ষকের নাম আমার মনে পড়ছেনা। যাদের নাম মনে পড়ছে, তারা হলেন- আছান স্যার, পনির স্যার, জবান স্যার, আবেদ স্যার, আজিজুল স্যার। ঐ স্কুলটি ছিল তখন ফ্রি প্রাইমারী স্কুল। মুন্সীপাড়া এম, আলী প্রাইমারী স্কুল থেকে পঞ্চম শ্রেণী পাস করার পর আমি আমাদের গ্রামেরই মাগুড়া হাই স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে ঐ স্কুল থেকেই রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এস, এস,সি পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হই ১৯৭০ সালে। এস,এস,সি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল নীলফামারী মহকুমা সদরে। মাগুড়া হাই স্কুল তখন ছিল একটি বেসরকারী স্কুল। মাগুড়া হাই স্কুলের সকল শিক্ষকের নাম আমার মনে নেই। যাদের নাম মনে আছে, তাঁরা হলেন- সর্ব জনাব আসাদুর রহমান (প্রধান শিক্ষক), প্রসন্ন কুমার রায় (সহকারী প্রধান শিক্ষক), মশিয়ার রহমান, আব্দুল আজিজ, আসহাব উদ্দিন, আব্দুল জলিল, মাহমুদ হোসেন, রোকন উদ্দিন, কছির উদ্দিন, জহুরুল হক, মাওলানা সাহানতুল্যা, আবু বকর সিদ্দিক। অফিস সহকারী ছিলেন- জনাব আব্দুস সামাদ। দপ্তরী ছিলেন- বাবুল্লা দা, পরে আতিয়ার রহমান। আমার প্রাথমিক শিক্ষার পিছনে সবচেয়ে বেশী অবদান ছিল আমার দাদার। তিনি বাড়ীতে আমাকে ও আমার চাচা জনাব শওকত আলীকে মদন মোহন তর্কালংকারের শিশু শিক্ষা বইটি পড়াতেন ও ছোট ছোট বিভিন্ন অংক করাতেন। তার অবদানের ফলেই আজ আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বচ্চ ডিগ্রী প্রাপ্ত একজন ব্যক্তি। ১৯৬৮ সালে নবম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় ঘটনাক্রমে আমি ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়ি। আমি স্কুলে একজন ভাল এবং হোমড়া চোমড়া ছাত্র হিসেবে পরিচিত ছিলাম। কারন আমার দাদা তখন ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে মেম্বার পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। আমাদের মাগুড়া হাই স্কুলের মৌলভী স্যার জনাব আবু বকর সিদ্দিক জামাতে ইসলামীর রাজনীতি করতেন। তিনি একদিন আমাকে ডেকে বললেন রংপুরে একটা বিরাট ছাত্র জনসভা ও মিছিল হবে, তোমরা সেখানে যেও। নির্দিষ্ট দিনে (তারিখ মনে নেই) আমি ও আমার এক সহপাঠি নাম সাবুল, দুজনে বাই সাইকেলে করে ২০ কিলোমিটার দূরে রংপুরে এসে জামাতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের মিছিলে যোগদান করি। পরে রংপুরে এক আত্মীয়ের বাসায় রাত কাটিয়ে পরদিন সকালে ইসলামী ছাত্র সংঘের রংপুর জেলা অফিসে নেতৃবৃন্দের সাথে দেখা করি। সেখানে তৎকালীন ছাত্রনেতা জামাতের এক সময়ের মহাসচীব ও মন্ত্রী মোজাহিদ সাহেবের সাথে দেখা হয়েছিল। তারা আমাদের সাথে খুব ভাল আচরন করেন এবং আমাদেরকে স্কুলে সংগঠন গড়ে তোলার দায়িত্ব দেন। এরপর আমরা আমাদের গ্রামে ফিরে আসি। তখন গ্রামের কিছু মুরুব্বী গোছের লোকের কাছে আওয়ামী লীগ, ছাত্র লীগ, শেখ মুজিবের নাম শুনেছিলাম যে, তারা পূর্ব পাকিস্তানের লোকের ভালোর জন্য কাজ করছেন। ঐ সময়ে আমাদের কিশোরীগঞ্জ থানায় দুই জন বড় রাজনৈতিক নেতা ছিলেন। একজন ছিলেন আমাদের মাগুড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জনাব মোশারফ হোসেন লেবু মিয়া, তিনি মুসলিম লীগ (দোউলতানা) করতেন। অন্যজন জনাব কাজী কাদের করতেন মুসলিম লীগ (কাইয়ুম খান), ইনি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের মন্ত্রী ছিলেন। সেই সময়ে ভাষা আন্দোলন বা ছয় দফা সম্পর্কে তেমন কিছুই জানতামনা। শুধু লোক মুখে আওয়ামী লীগ, ছাত্র লীগ, শেখ মুজিবের নাম শুনে এই দলের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে যাই। এরপর স্কুলে আমাদের একজন শিক্ষক জনাব আসহাব উদ্দিন স্যার একদিন আমাকে ডেকে বলেন যে, আজকে শেখ মুজিবের মুক্তির দাবীতে সারা দেশ ব্যাপী হরতাল হচ্ছে। তখন হরতাল অর্থ বুঝতামনা। তিনি বুঝিয়ে বললেন যে, আজকে শেখ মুজিবের মুক্তির দাবীতে দেশে সব কিছুই বন্ধ রেখে প্রতিবাদ করা হবে। তোমরাও স্কুল বন্ধ করে মিছিল কর। তার কাছ থেকে উৎসাহ পেয়ে আমি ক্লাশে গিয়ে ছাত্রদের সংগঠিত করে ছাত্র লীগ ও শেখ মুজিবের নামে মিছিল বের করি। স্কুলের শিক্ষকগণ এই মিছিল করতে কোন বাঁধা দেননি। তখন থেকেই আমি ছাত্র লীগের রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়ি। সেই সময় আমাদের ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ মুসলিম লীগের লেবু মিয়াকে সমর্থন করত। পরবর্তী কালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত আমাদের গ্রামের আমার চাচা জনাব মোস্তাফিজার রহমান মোকাম্মেলকে সভাপতি ও আমাকে সাধারন সম্পাদক করে ছাত্র লীগের মাগুড়া ইউনিয়ন শাখা কমিটি গঠন করা হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধে সহযোগীতার জন্য। এছাড়া স্কুলে পড়া অবস্থায় আমি গ্রামে বেশ কিছু নাটক মঞ্চস্থ ও অভিনয় করি। আমি উপন্যাসিক গোপাল বসাকের বিখ্যাত উপন্যাস রিক্তের বেদন এর নাট্যরূপ লিখেছিলাম। কিন্তু বিভিন্ন কারন বশতঃ তা’ আর মঞ্চস্থ করা সম্ভব হয়নি।

এই হল আমার স্কুল জীবনের সংক্ষিপ্ত জীবন চরিত।

০১-০১-২০২১ চলবে …

Atmo Chorit, Mahi Azad. Link. https://www.facebook.com/photo?fbid=4015958781767245&set=a.1304910762872074