ব্যবহারকারী:Aishik Rehman/নলুয়া
ঈশ্বরগঞ্জের নলুয়াপাড়ার বাঁশ-বেতের শিল্প কেবল বাশ থেকে প্রয়ােজন মতাে নল কেটে, সেই নল থেকে বেত তুলে নিয়ে যারা নিত্যব্যবহার্য বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র যেমন—ডােলা বা ডুলি, ধারি, চাটাই চালুনি, হাতপাখা, ঘরের সিলিং, ঘরের বেড়া প্রভৃতি তৈরি করেন তাদেরকে নলুয়া বলা হয়। অবশ্য বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন নামেও অভিহিত করা হয়ে থাকে এই ঐতিহ্যবাহী পেশাজীবীর মানুষকে। যেমন—মানিকগঞ্জ অঞ্চলে এই পেশার মানুষ দফাদার নামে অভিহিত। ঈশ্বরগঞ্জের নলুয়ারা মুসলিম সম্প্রদায়ের। তবে বাংলাদেশের কোনাে কোনাে স্থানে এই পেশাজীবী হিন্দু সমাজের হয়ে থাকে। হিন্দু সমাজের অন্ত্যজ শ্রেণির ঋষি সম্প্রদায়ও বাঁশশিল্পের কাজ করে থাকেন । নলুয়ারা যেকোনাে গ্রামে, মহল্লা বা পাড়ায় গােষ্ঠীবদ্ধ জীবন-যাপন করেন। | নলুয়ারা সব ধরনের বাঁশ ব্যবহার করেন না। তাদের কাজের সাথে যে-সব বাঁশের চাহিদা রয়েছে সেসব বাঁশকে পােনামতি ও মরাল বাঁশ বলা হয় । যে-সব বাঁশের গিট খুবই শক্ত এবং আঁশ মােটা, সেসব বাশ তাদের জন্য অনুপযােগী।" নলুয়ারা কেবল কোমল গিট, মিহি ও চিকন আঁশযুক্ত বাঁশকে প্রয়ােজনমতাে কেটে নেন নল আকারে । তারপর বাঁশের নল দায়ের সাহায্যে মাঝখানে ফেড়ে নিয়ে দুই ভাগ করে নেন। বাঁশ কেটে নিয়ে নিপুণ হাতে ছন্দময় গতিতে সূক্ষ্ম ও নিখুঁতভাবে বেতি বা চটা তােলেন। একাজে পুরুষ ও মহিলা উভয়ই পারদর্শী। নলুয়ারা মূলত ধান, চাউল, কলাই, গম ও অন্যান্য ফসলজাত দ্রব্য রাখার জন্য ছােট-বড় বিভিন্ন ধরনের ভােলা বা ডুলি তৈরি করে থাকেন। একটি ডুলি তৈরিতে তিন/চারজন কারিগর একত্রে বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করেন। ডুলি তৈরিতে পুরুষ ও মহিলারা উভয়ে অংশ নেন। ডুলি তৈরির সময় আগে তলা গাঁথতে হয়। পরে বেতির পর বেতি দিয়ে চারটি কোণা তুলতে হয়। কোণা উঠার পর বিভিন্ন আকৃতির ডােলা খাড়া করে মাথা মারতে হয়। মাথা মারার পর বাঁশের খাপের সাহায্যে চাক বানিয়ে মুখ বাঁধা হয়। এভাবেই একটি ভুলি তৈরি করা হয়। ভুলি বা ভােলাগুলাে কেবলমাত্র ফসলজাত দ্রব্য রাখার জন্যে তৈরি হলেও এইসব ডুলির গায়ে শিল্পীর নিপুণ কারুকাজ এবং সৌন্দর্যবােধ নিখুঁত ও সূক্ষ্মভাবে ফুটে ওঠে।