ব্যবহারকারী:Afifa Afrin/উইকিম্যানিয়া ২০১৯

ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে মেরাজ যখন ভিসা প্রত্যাখ্যান হয়েছে বলে মেরাজ জানালো, তখন ওর মেজাজের কথা চিন্তা করে বলে ফেললাম, আপীল করি চলো। এইটা কোন কথা, ভিসা দেবে না? বললাম তো বটে আপীলের বিষয়টা যে মেরাজ গুরুত্বসহকারে নিয়ে সত্যি সত্যি আপীল করে ফেলবে আর ঠিক শেষ মুহুর্তে ভিসা হয়ে যাবে সেটা আমার কল্পনাতীত ছিলো। সে যাই হোক, যখন উইকিম্যানিয়া ২০১৯ এ অংশগ্রহন করার জন্য টার্কিশ এয়ারের উড়োজাহাজে চড়ে বসলাম সেদিনটা ছিলো ঈদ-উল-আযহা, একদিকে ঈদ ঠিকঠাক আব্বু আম্মুর সাথে করতে না পারার খচ খচ, অন্যদিকে মেরাজ আর আমার একসাথে প্রথম ইউরোপ ভ্রমন, সেই উত্তেজনা।

যেহেতু এর আগে আমি স্টকহোম এসেছিলাম, সেই অভিজ্ঞতা পুজি করে মেরাজের সাথে খুব করে ভাব ধরলাম। নির্দেশনা দিয়ে দিয়ে মাথা খারাপ করে ফেলা অবস্থা। যাই হোক যথেষ্ঠ পরিমান ভ্রমন করে যখন আগে থেকে বুক করা হোটেলে গিয়ে পৌছালাম, তখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। চমৎকার আবহাওয়া ভ্রমনের ধকল আর জেটল্যাগ জনিত ক্লান্তি কাটিয়ে দিয়েছিলো। সম্মেলন শুরু হতে তখনো দুইদিন বাকী, পরেরদিন প্লান গুছিয়ে নিয়ে আমি ঘুমের রাজ্যে।

ঘুম ভেঙ্গে নাস্তা করেই উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশন থেকে ঠিক করা হোটেলে চেকইন করে ফেললাম। প্রিকনফারেন্স উপলক্ষ্যে ফাউন্ডেশন সম্মেলনে অংশগ্রহনকারীদের জন্য আগে থেকেই হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করেদিয়েছিলো। ব্যাগ রুমে ফেলে আমরা এবং আমাদের প্রিয় বন্ধু ক্রিস্টেল এবং তার বর আরমিন বেড়িয়ে গেলাম ড্রটিংহাম প্যালেসের উদ্দেশ্যে। যায়গাটা সুইডেন রাজপরিবারের সামার প্যালেস নামেও পরিচিত। স্টকহোম সিটি সেন্টার থেকে বেশ দূরে আর যাওয়ার দু-একদিন আগে টিকেট বুক করে ফেলতে হয়। বাস অথবা ছোট ছোট ফেরী করে যাওয়া যায়, আমরা ফেরী করে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কেননা তাতে রথ দেখা আর কলা বেচা দুটোই সম্পূর্ণ হয়!

ড্রটিং হাম প্যালেসে পুরোটা দিন কাটিয়ে সেদিনের মত ফিরে এলাম। রাতে ক্রিস্টেল আর আরমিন সহ অথেনটিক সুয়েডিও খাবারের স্বাদ নিতে গিয়েছিলাম স্থানীয় রেস্টুরেন্টে। সুয়েডিওরা অনেক বেশি র-ফুড যেটাকে বাংলায় আমরা কাঁচা খাবার বলে থাকি সেটা পছন্দ করে। পরিবেশনও করে বেশ পরিপাটীভাবে। তবে অন্যান্য ইউরোপীয় শহরের তুলনায় বেশ খরুচে, সেটা যাই হোক না কেন যাতায়াত, খবার অথবা থাকার ব্যবস্থা। পরদিন সকালে সম্মেলন শুরুর পালা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি এসে জড়ো হয়েছে। প্রি সম্মেলনের সময়টা উপভোগ্য করার জন্য উইকিমিডিয়া সুইডেনের পক্ষ থেকে কমতি ছিলোনা। অংশগ্রহনকারীদের জন্য বিভিন্ন লার্নিং সেশনের পাশাপাশি দর্শনীয় স্থান দেখার সুযোগ করে দেয়া হয়েছিলো। সকালে আপসালা ইউনিভার্সিটিতে নিবন্ধন করার পরে আমরা বিকেলে সুইডিশ পার্লামেন্ট ঘুরে দেখার সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইনি। পার্লামেন্ট ভবন ঘুরে দেখার পাশাপাশি কীভাবে এটা পরিচালনা করা হয় সেটার অদ্যোপান্তোও জানা হলো। পরদিন সকালেও ছোট্ট একটা সেশনে অংশগ্রহন করে আমরা ঘুরাঘুরির দলে নাম লেখালাম। দেখা হলো স্টকহোম প্যালেস এবং এর সংলগ্ন যায়গাগুলি। সেদিনই বিকেলে ছিলো ২০১৮ সালে জেন্ডার গ্যাপ নিয়ে কাজ করা প্রতিনিধিদের নিয়ে রিশপসন অনুষ্ঠান। সুয়েডিও বৈদেশিক মন্ত্রনালয়ের সম্মানিত মন্ত্রী বক্তব্য দিয়ে প্রতিনিধিদের শুভেচ্ছা জানালেন। উনার বক্তব্যে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে কিভাবে সুইডেন জেন্ডার অসমতা দূরকরনে ভুমিকা রাখছে সেসম্পর্কে জানার সুযোগ হলো। পরদিন ছিলো সম্মেলন শুরুর দিন। খুব সকালেই চেষ্টা করলাম সম্মেলনের স্থানে পৌছে যেতে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে উইকিম্যানিয়া ফাউন্ডেশনের ভিসন-২০৩০ নিয়ে আলোচনায় মেতে উঠলাম। সেদিন বিকেলে আরেকটি রিসেপশন ছিলো সিটি হলে।