ব্যবহারকারী:স্থপতি খালিদ মাহমুদ/জেনি মসজিদ

গ্রেট জেনী মসজিদ একটি ভিন্ন দর্শন মাটির ভবন যা কিনা পৃথিবীব্যাপী সুদানো-সাহেলিয়ান স্থাপত্যের শেষ্ঠ্রতম নিদর্শন হিসেবে চিহ্নিত। মসজিদটি বানী নদীর বন্যা প্রবন সমতল এলাকায় অবস্থিত। বর্তমানে দৃশ্যমান কাঠামো আসলে ১৯০৭ সালে পুননির্মিত। তবে এর সূচনা বেশ অনেক আগে যার নির্ভরযোগ্য তারিখ পাওয়া যায়না।

[[চিত্র::Djenné.jpg|thumb|left|জেনি মসজিদ]]

ইতিহাস সম্পাদনা

ইতিহাস গ্রন্থ তারিখ আল সুদানে মসজিদের যে প্রেক্ষাপট পাওয়া যায় তাতে বোঝা যায় সময়কাল ১২শ শতাব্দীতে হবে। যখন আব্বাসীয় এবং তৎপরবর্তী উসমানিয়া খেলাফতের ব্যাপক বিস্তার ঘটে। আফ্রিকাতেও এর ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে। ব্যবসা বানিজ্যের জন্য আগত আরব বনিকদের সংস্পর্শে স্থানীয় অধিবাসীরা ইসলামের ছোয়ায় আলোকিত হন। এরই ধারাবাহিকতায় ১২শ সালের প্রথমদিকে তৎকালীন শাসনকর্তা কানবুরু ইসলাম গ্রহন করেন। তিনি নিজের রাজকীয় প্রাসাদ ছেড়ে দেন মসজিদ হিসেবে ব্যবহারের জন্য এবং এটাই আসলে মসজিদের সূচনা। কিছু পরিবর্তন আনা হয় মসজিদ হিসেবে ব্যবহারের জন্য। পরবর্তী শাসকরা বিভিন্ন সময় এতে মিনার এবং সীমানা প্রাচীর যোগ করেন। ফরাসী পর্টক রেনে ক্যালি ১৮২৮ সালে যখন জেনি ভ্রমনে আসেন ততদিনে মসজিদ অনেক পুরাতন এবং ভগ্নদশায় উপনীত হয়েছে। তার বর্ননায় পাওয়া যায় জেনিতে দুটো বড় তবে অনুচ্চ টাওয়ারের সমন্বয়ে একটি মসজিদ আছে যা সমসাময়িক স্থাপত্যের বিচারে একটু ভিন্নতর।এটি যদিও অনেক বড় তবে একেবারেই সাধারন হাতে নির্মিত হয়েছে। হাজারো চড়ুই পাখি আস্তানা বানিয়েছে একে ঘিরে ফলে অসহ্য দূর্গন্ধ এড়াতে সাধারন মানুষ মসজিদের সামনের ছোট উঠোনেই বেশিরভাগ সময় নামাজ আদায় করে। ১৮৯৩ সালে ফরাসী বাহিনীর জেনি দখলের পরপরই সাংবাদিক ফেলিক্স ডুবোই শহরটি ভ্রমন করেন এবং আসল মসজিদের ধ্বংসস্তুপ সম্পর্কে মোটামোটি একটি বর্ননা দেন। ঐ সময়কার একটি প্লানও আঁকেন যার মাধ্যমে তিনি আদতে মসজিদের অবয়ব কেমন ছিলো তার একটি প্রচ্ছন্ন ধারনা দেয়ার চেস্টা করেন।

বিবরন সম্পাদনা

১৯০৭ সালে মতান্বরে ১৯০৯ সালে এ কাজ শেষ হয়। ২৪৫ ফিট মাপের বর্গাকৃতির একটি ভিত্তির উপরে মসজিদটি নির্মান করা হয়েছে। এই ভিত্তি সাধারন ভূমি লেভেল থেকে প্রায় নয়ফুট উচু। বানী নদীর বন্যা থেকে বাঁচার জন্য এই ব্যবস্থা। চতুর্দিকে ছয়টি আলাদা সিড়ি দিয়ে এই উচু ভিত্তির উপরে উঠা যায়। সিড়িগুলো পিনাকলস দ্বারা অলংকৃত। ভবনের উত্তর দেয়ালে প্রধান প্রবেশ পথ। নির্মান ত্রুটির জন্যই হোক আর যায়গায় সহজলভ্যতার অভাবে হোক মসজিদের নকশা একদম সমকোনে করা যায়নি । চতুর্দিকের আউটলাইন একটু ট্যাপিজিয়াম ধাচের হয়ে পড়েছে।

স্থাপত্য ধারা সম্পাদনা

স্থপতি ডিজাইনার ইসমাইলা ত্রাওরির স্থাপত্য নকশায় এবং ফরাসী উপনিবেশিক কতৃপক্ষের তত্বাবধানে এর সর্বশেষ নির্মান কাজ সম্পন্ন হয়। গ্রেট জেনি মসজিদ আফ্রিকার স্থাপত্য চরিত্রে একটি ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। নির্মান সময়কালে মালি ফরাসী শাসনামলের আওতায় ছিলো বিধায় এতে ফরাসী স্থাপত্যের একটা ছাপ পাওয়া যায়। বিশেষ করে মসজিদের কিবলা দেয়ালের সাথে যে তিনটি উচ্চ টাওয়ার তৈরী করা হয় সেটা নিয়ে বেশ বিতর্ক তৈরী হয়। মসজিদের কোনাকৃতির পিনাকলসগুলো বারুক টেম্পলকেই ওখানে প্রতিস্থাপিত করেছে। কেউ কেউ একে আফ্রিকান স্থাপত্য বলে মেনে নেয়ার চেস্টা করলেও বাস্তবতা হচ্ছে মসজিদের বাহ্যিক দর্শনে ফরাসী স্থাপত্যের ছাপ যতটা স্পস্ট মুসলিম স্থাপত্য ততটাই উপেক্ষিত হয়। ১৯০৭ সালের পরে আর কোন পরিবর্তন হয়নি শুধুমাত্র ১৯৯০ সালে দুটো আলাদা তোরন সংযোজন ছাড়া। দেয়াল নির্মানের সময় চেস্টা করা হয় পুরনো হারিয়ে যাওয়া মসজিদের ভগ্নাবশেষ অনুসরণ করে যতটা সম্ভব বহি:সীমানা ঠিক রাখা।


সাংস্কৃকিত ঐতিহ্য সম্পাদনা

মাটির মসজিদ মালির মুসলিম সমাজের দিনযাপনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। ফরাসী উপনিবেশিকরা যখন প্রথম মাটির এই স্থাপনা দেখে তখন তারা অর্থ সহায়তা দেয়ার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু স্থানীয় অধিবাসীরা সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। বস্তত ফরাসী বিপ্লব ও ঐপনিবেশিক জৌলুসের বিপরীতে এই মাটির স্থাপনা তাদের গর্ব ও ঐতিহ্যের প্রতীকে পরিনত হয়েছে। প্রতিবছর এর মেরামত উৎসবে অংশ নিতে পারাটা বরং তাদের জন্য উত্তম ও সম্মানজনক কাজ হিসেবে বিবেচিত হয়। দলমত নির্বিশেষে সবাই একটি আনন্দময় ধর্মীয় উৎসবে মেতে ওঠে। প্রতিবছর বর্ষাকালের শেষে স্থানীয় অধিবাসীরা একটি উৎসবের আয়োজন করে যার মুল উদ্ধেশ্য হচ্ছে মসজিদের মেরামত করা। ছোট ছোট ছেলেমেয়েদেরকেও এ কাজে যুক্ত করা হয়। মুরব্বীরা মসজিদের সামনের চত্বরে বসে দেখভাল করেন। যুবক বয়সীরা বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয়ে কাজে নেমে পড়েন। প্রথমে প্লাস্টার প্রস্তত করা হয়। প্লাস্টার একসাথে শুকানো যায়না বরং ধাপে ধাপে করা হয় এবং শুকাতে হয়। উপরের অংশে কাজের জন্য একটি গ্রুপ ভবনের গায়ে চড়ে এবং নিচে থেকে মসলা তুলে দেবার জন্য আরেক গ্রুপ কাজ করে। জনপদের মহিলারাও বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহন করে। কে কার আগে প্লাষ্টার পৌছাতে পারে তা নিয়ে প্রতিযোগীতার আয়োজন করা হয়।