ব্যবহারকারী:শাহিনুর রহমান সোহাগ/বাংলাহিলি পাইলট স্কুল এন্ড কলেজ


বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিহাস ও নামকরণঃ-১৯৪৭ ইং সালে দেশ বিভাগের পূর্বে দিনাজপুর জেলার একেবারেই দক্ষিণ অঞ্চলে হিলি এলাকার একমাত্র উচ্চ বিদ্যালয়টির নাম ছিল “রমানাথ হাইস্কুল”।

১৯৪৭ সালে ভারত পাকিস্তান বিভক্তির ফলে এ বিদ্যালয়টি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম দিনাজপুর তথা বালুরঘাট অংশে পড়ে যায়। এমতাবস্থায় হিলির বাংলাদেশ অংশে (তৎকালীন পাক হিলি) উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে মারাত্মক শূন্যতা দেখা দেয়। এ শূন্যতা কাটিয়ে উঠার লক্ষ্যে এবং অত্র এলাকার অবহেলিত ও শিক্ষা বঞ্চিত জনগনের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, শিক্ষানুরাগীসহ আপামর জনসাধারনের সাহায্য সহযোগিতায় এবং বিধুবালা সরকার নামে এক দানবীর মহিলার দানকৃত এক খন্ড জমিতে ১৯৪৯ইং সালে প্রতিষ্ঠিত হয় পাক হিলি হাইস্কুল।

প্রথম অবস্থায় এটি নিমার্ণ করা হয় কাঠ ও বাঁশ দিয়ে এবং স্থানীয় জনসাধারণের আর্থিক সাহায্য দিয়েই বিদ্যালয়টি পরিচালিত হতো। ০১/০১/১৯৫৬ইং সালে বিদ্যালয়টি তৎকালীন সরকারের অনুমোদন তথা স্বীকৃতি লাভ করে। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে এ বিদ্যালয়ের সুনাম এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন শিক্ষক (অবসর প্রাপ্ত সাবেক সহকারি প্রধান) জনাব মোঃ ছাদেক আলী মন্ডল সাহেবের সাথে আলাপচারিতায় জানা যায়, অত্র এলাকার ১৫ থেকে ২০ কিঃ মিঃ দূর থেকেও শিক্ষার্থীগণ এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষালাভের জন্য আসত। তাদের জন্য বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছিল বোডিং ব্যবস্থা।

১৯৭১ সালের স্বাধীনতা লাভের পূর্ব পর্যন্ত বিদ্যালয়টি পাক হিলি হাইস্কুল নামেই পরিচিত ছিল। স্বাধীনতা লাভের পর এটি বাংলাহিলি দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয় নামে অভিহিত হয়। ১৯৭৬ সালে তৎকালীন বাংলাদেশ সরকার মাধ্যমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় দেশের প্রতিটি উপজেলায়  ১টি বালক ও ১টি বালিকা বিদ্যালয়কে বেছে নিলে এটির নামকরণ করা হয় বাংলাহিলি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানটিতে বহুমুুখী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করণের লক্ষ্যে ১৯৯৬ সালে ম্যানেজিং কমিটির এক সাধারণ সভায় বাংলাদেশে কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ভোকেশনাল শিক্ষাক্রমে ট্রেড কোর্স চালুুর সর্ব সম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। প্রথম অবস্থায় প্রতিষ্ঠানটিতে বিল্ডিং মেইনটেনেন্স ও জেনারেল মেকানিক্স নামে ০২টি ট্রেড চালুর অনুমোদন প্রদান করে। ২০০৪ইং সালে বাংলাদেশ কারিগরি বোর্ড বিদ্যালয়ে ড্রেস মেকিং নামে আরও একটি ট্রেড চালুর অনুমতি প্রদান করে। বর্তমানে অত্র বিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি ভোকেশনাল শাখায় তিনটি ট্রেড সুনামের সাথে পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমান সরকারের সময়কালে শিক্ষা ক্ষেত্রে যে বৈপ্লবিক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে তার ছোঁয়াও লেগেছে এ বিদ্যাপীঠে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষার এ অগ্রগতির ধারায় ২০১৩ইং সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক অত্র প্রতিষ্ঠানটিকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে পাঠদানের অনুমোদন প্রদান করে। ফলে বিদ্যালয়টির নাম পুনরায় পরিবর্তিত হয়ে বর্তমানে “বাংলাহিলি পাইলট স্কুল এন্ড কলেজ” নামে অভিহিত হয়।

অবস্থান ও আয়তনঃ ঐতিহ্যবাহী বাংলাহিলি পাইলট স্কুল এন্ড কলেজটি দিনাজপুর জেলার হাকিমপুর উপজেলা সদরে অবস্থিত। বিদ্যালয়টির পশ্চিম দিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য, দক্ষিণে জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলা, পূর্বে দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলা এবং উত্তর পার্শ্বে বিরামপুর উপজেলা অবস্থিত। বিদ্যালযটির দক্ষিণ পার্শ্ব ঘেঁষে অবস্থিত বিখ্যাত হিলি স্থলবন্দরের সদর দপ্তর। ৩ একর সাড়ে ৬৮ শতাংশ জমির উপর অত্র এলাকার ঐতিহ্যবাহী বাংলাহিলি পাইলট স্কুল এন্ড কলেজটি অত্যন্ত মনোরম পরিবেশে অবস্থিত।

ছাত্র/ছাত্রীর সংখ্যাঃ অত্র প্রতিষ্ঠানে মাধ্যমিক শাখায় পাঁচটি মূল শ্রেণিসহ অতিরিক্ত আরও পাঁচটি শাখা শ্রেণি চালু রয়েছে। এছাড়াও ভোকেশনাল শাখায় তিনটি ট্রেড চালু আছে। কলেজ শাখায় মানবিক, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ছাত্র-ছাত্রী অধ্যায়নরত। উপরোক্ত শাখা ও বিভাগে বর্তমানে প্রতিষ্ঠানে মোট ৯২০ জন ছাত্র/ছাত্রী অধ্যয়নরত।

শিক্ষক/শিক্ষিকাঃ বর্তমানে অত্র প্রতিষ্ঠানে মাধ্যমিক শাখায় ১৪ জন শিক্ষক/শিক্ষিকা, ভোকেশনাল শাখায় ১০ জন এবং কলেজ শাখায় ৬ জন সহ ০৭ জন তৃত্বীয় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োজিত আছে।

প্রতিষ্ঠানের সাফল্যঃ প্রতিষ্ঠানকালীন সময় থেকেই অত্র বাংলাহিলি পাইলট স্কুল এন্ড কলেজটি অত্যন্ত সুনামের সাথে পরিচালিত হয়ে আসছে। পাবলিক পরীক্ষায় ফলাফল বরাবরই সন্তোষজনক। ২০১৪ইং সালে অত্র প্রতিষ্ঠানে এস,এস,সি ও এস,এস,সি ভোকেশনাল পরীক্ষায় পাশের হার ৯৩% ও ১০০%।

২০১২ সালে Performance Category শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি দিনাজপুর জেলার ৩য় স্থান অর্জন করে। চলতি ২০১৪ইং সালে অত্র প্রতিষ্ঠানটি হাকিমপুর উপজেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক ১ লক্ষ টাকার “উদ্দীপনা” পুরস্কার লাভ করে। প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধির পাশাপাশি নিয়মিত ভাবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানাধরনের খেলাধূলা, বির্তক ও রচনা প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় অনুষ্ঠানমালাও পালিত হয়। খেলাখূলায় বিশেষ করে ফুটবলে এ প্রতিষ্ঠানের সুনাম দেশব্যাপী। ১৯৯৩ সালে জাতীয় স্কুল ও মাদ্রাসা ক্রীড়া প্রতিযোগীতায় এ প্রতিষ্ঠানটি জাতীয় পর্যায়ে রানার্সআপ হবার গৌরব অর্জন করে। ২০০৫ সালে ৩৪ তম জাতীয় স্কুল ও মাদ্রাসা গ্রীষ্মকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগীতায় অত্র প্রতিষ্ঠানটি একই সাথে ছেলেদের ফুটবল ও মেয়েদের হ্যান্ডবলে জেলা চ্যাম্পিয়ন হওযার গৌরব অর্জন করে। উল্লেখ্য ২০০৬ইং সালে “বাংলালিংক টাইগার কাপ” জাতীয় স্কুল ফুটবল চ্যাম্পিয়ন-এ জেলার প্রথম ও একমাত্র দল হিসাবে এ প্রতিষ্ঠানটি অংশ গ্রহন করে সনদপত্র অর্জন করে।