বাদা' (আরবি: بَدَاء) হলো তাওহিদ, রিসালাত, নবুওয়াত, ইমামত এবং মাআদ্‌ এর মতো একটি মৌলিক শিয়া ইসলামী বিশ্বাস। এটি আল্লাহর ইচ্ছার একটি ধারণা যা মানুষের জ্ঞানের বাইরে। বাদা'র অর্থ হল আল্লাহ তার ইচ্ছার পরিবর্তন করতে পারেন, এমনকি যদি তিনি আগে অন্য কিছু ঘোষণা করে থাকেন।

বর্ণনা সম্পাদনা

শিয়ারা বিশ্বাস করে যে আল্লাহ মহান এবং সর্বজ্ঞানী, এবং তিনি সর্বদা তার ইচ্ছার সর্বোত্তম ফলাফলের জন্য কাজ করেন। যখন আল্লাহ তার ইচ্ছার পরিবর্তন করেন, তখন এটি কারণ তিনি ভবিষ্যতের সম্ভাব্য পরিণতিগুলির একটি নতুন উপলব্ধি অর্জন করেছেন।

বাদা' একটি জটিল এবং বিতর্কিত ধারণা যা শিয়াদের মধ্যেও বিভিন্ন ব্যাখ্যা রয়েছে। কিছু শিয়া বিশ্বাস করে যে বাদা' শুধুমাত্র বিশেষ ক্ষেত্রেই ঘটে, যখন অন্যরা বিশ্বাস করে যে এটি একটি সাধারণ নিয়ম।

বাদা'র প্রমাণ সম্পাদনা

শিয়ারা বাদা'র সমর্থনে কুরআন, হাদিস এবং ইতিহাসের বিভিন্ন প্রমাণ উপস্থাপন করে। কুরআনে, আল্লাহ বলেন:

"নিশ্চয়ই আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তা করেন।" (সুরা আল-বাকারা, আয়াত ১১৭)

হাদিসে, নবী মুহাম্মদ (সা) বলেন:

"আল্লাহর ইচ্ছা পরিবর্তনযোগ্য।" (ইমাম মুহাম্মদ আল-বাকির থেকে বর্ণিত)

ইতিহাসে, শিয়ারা বাদা'র উদাহরণ হিসাবে ইমাম আলী (আ) এর জীবদ্দশায় বিভিন্ন ঘটনা উল্লেখ করে। উদাহরণস্বরূপ, ইমাম আলী (আ) প্রথমে ইমাম হাসান (আ) কে তার উত্তরাধিকারী হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন। তবে, পরে তিনি ইমাম হাসান (আ) কে তার উত্তরাধিকার থেকে সরে যেতে রাজি করান। শিয়ারা বিশ্বাস করে যে এই ঘটনাটি বাদা'র একটি উদাহরণ, যেহেতু আল্লাহ ইমাম হাসান (আ) এর নেতৃত্বের মাধ্যমে একটি ভাল ফলাফল অর্জনের জন্য ইমাম আলী (আ) কে তার ইচ্ছা পরিবর্তন করতে বলেছিলেন।

বাদা'র সমালোচনা সম্পাদনা

বাদা'র ধারণাটি শিয়াদের মধ্যেও সমালোচিত হয়েছে। কিছু শিয়া বিশ্বাস করে যে বাদা' আল্লাহর জ্ঞান এবং কর্তৃত্বের সাথে সাংঘর্ষিক। তারা যুক্তি দেয় যে যদি আল্লাহ সবকিছু জানেন, তাহলে তিনি কেন তার ইচ্ছা পরিবর্তন করবেন?

অন্যান্য শিয়া বিশ্বাস করে যে বাদা' একটি অযৌক্তিক ধারণা। তারা যুক্তি দেয় যে যদি আল্লাহ তার ইচ্ছা পরিবর্তন করতে পারেন, তাহলে মানুষের জন্য তার ইচ্ছার উপর নির্ভর করা কঠিন।

উপসংহার সম্পাদনা

বাদা' একটি জটিল এবং বিতর্কিত ধারণা যা শিয়া ইসলামের একটি কেন্দ্রীয় অংশ। শিয়ারা বিশ্বাস করে যে বাদা' একটি প্রকৃত ঘটনা যা আল্লাহর মহানতা এবং সর্বজ্ঞানতার প্রমাণ। যাইহোক, বাদা'র ধারণাটি শিয়াদের মধ্যেও বিভিন্ন ব্যাখ্যা রয়েছে এবং এটি একটি বিষয় যা শিয়াদের মধ্যে দীর্ঘকাল ধরে আলোচনার বিষয় হয়ে আসছে।