ব্যবহারকারী:রিজওয়ান আহমেদ/নাসখ (তাফসীর)

নাসখ একটি আরবি শব্দ যা সাধারণত "রহিত" হিসাবে অনুবাদ করা হয়। তাফসিরে, বা ইসলামী আইনী ব্যাখ্যায়, নাসখ স্বীকার করে যে একটি নিয়ম সর্বদা প্রতিটি পরিস্থিতির জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে। কুরআনে নাসখের ধারণাটি সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, যেখানে আল্লাহ বলেছেন:

"আমি যে আয়াতকে নাসখ করি বা ভুলিয়ে দেই, আমি তার পরিবর্তে উত্তম বা তার চেয়ে ভালো একটি আয়াত আনয়ন করি। তুমি কি জানো না যে আল্লাহ সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান?" (সূরা বাকারা, আয়াত ১০৬)

নাসখের সংজ্ঞা সম্পাদনা

নাসখ হল একটি বিধান বা নিয়মকে অন্য বিধান বা নিয়মে পরিবর্তন বা রহিত করা। এই পরিবর্তন বা রহিতকরণের কারণ হতে পারে:

  • পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে বিদ্যমান বিধানের আর প্রাসঙ্গিকতা না থাকা
  • নতুন বিধানের মাধ্যমে একটি আরও উন্নত বা পূর্ণাঙ্গ বিধান প্রদান করা
  • একটি বিধানের সাথে অন্য বিধানের মধ্যে দ্বন্দ্ব দূর করা

নাসখের প্রকারভেদ সম্পাদনা

নাসখকে দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়:

  • পূর্ণ নাসখ: এই ক্ষেত্রে, একটি বিধান পুরোপুরি রহিত হয়ে যায় এবং তার জায়গায় নতুন বিধান কার্যকর হয়।
  • অংশীয় নাসখ: এই ক্ষেত্রে, একটি বিধানের কিছু অংশ রহিত হয়ে যায় এবং তার জায়গায় নতুন বিধান কার্যকর হয়।

নাসখের প্রমাণ সম্পাদনা

নাসখের প্রমাণ কুরআন, হাদিস এবং ইজমাতে পাওয়া যায়।

  • কুরআনে নাসখের প্রমাণ: কুরআনে বেশ কয়েকটি আয়াত রয়েছে যা নাসখের ধারণাটি সমর্থন করে। উদাহরণস্বরূপ, সূরা বাকারার ১০৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন যে তিনি যে আয়াতকে নাসখ করেন বা ভুলিয়ে দেন, তিনি তার পরিবর্তে উত্তম বা তার চেয়ে ভালো একটি আয়াত আনয়ন করেন।
  • হাদিসে নাসখের প্রমাণ: হাদিসেও নাসখের ধারণাটি বর্ণনা করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন:

"আল্লাহ তাআলা তাঁর কিতাবে (কুরআনে) কিছু আয়াত নাসখ করেছেন এবং তাঁর রাসূলের মুখ থেকে কিছু হাদিস নাসখ করেছেন।" (আবু দাউদ, হাদিস নং ৪০৯৯)

  • ইজমাতে নাসখের প্রমাণ: ইসলামী আইনশাস্ত্রের চারটি প্রধান মাযহাবের সকল ইমাম নাসখের ধারণাকে স্বীকৃতি দিয়েছেন।

নাসখের ক্ষেত্রে বিতর্ক সম্পাদনা

নাসখের ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিতর্ক রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম বিতর্ক হল কুরআনের আয়াত কি নাসখ হতে পারে কিনা। কিছু আলেম মনে করেন যে কুরআনের আয়াত কখনই নাসখ হতে পারে না, অন্যরা মনে করেন যে প্রয়োজনে কুরআনের আয়াতও নাসখ হতে পারে।

আরেকটি বিতর্ক হল নাসখের প্রমাণ কীভাবে নির্ধারণ করা যায়। কিছু আলেম মনে করেন যে নাসখের প্রমাণ শুধুমাত্র কুরআন এবং হাদিসের উপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা যেতে পারে, অন্যরা মনে করেন যে ইজমা এবং কিয়াসের মতো অন্যান্য উৎসও নাসখের প্রমাণ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।

নাসখের ব্যবহার সম্পাদনা

নাসখের ধারণাটি ইসলামী আইনশাস্ত্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে অন্যতম হল বিবাহ, তালাক, উত্তরাধিকার এবং ইবাদত সম্পর্কিত বিধানাবলী।

উপসংহার সম্পাদনা

নাসখ একটি জটিল বিষয় যা ইসলামী আইনশাস্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নাসখের ধারণাটি বোঝার জন্য কুরআন, হাদিস এবং ইসলামী আইনশাস্ত্রের অন্যান্য উৎসগুলির গবেষণা করা প্রয়োজন।