ব্যবহারকারী:রিজওয়ান আহমেদ/তাপীয় পরিবাহিতা

তাপীয় পরিবাহিতা হলো একটি পদার্থের তাপ পরিবহনের ক্ষমতার একটি পরিমাপ। এটি সাধারণত k, λ বা κ দ্বারা চিহ্নিত করা হয় এবং W/m⁻¹·K⁻¹ এ পরিমাপ করা হয়। তাপ স্থানান্তর উচ্চ তাপ পরিবাহিতা উপকরণের তুলনায় কম তাপ পরিবাহিতা উপকরণে কম হারে ঘটে।

সংজ্ঞা সম্পাদনা

তাপীয় পরিবাহিতাকে নিম্নরূপ সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে:

  • একটি নির্দিষ্ট সময়ে, একটি নির্দিষ্ট ক্রস-বিভাগীয় অঞ্চলের মধ্য দিয়ে তাপের প্রবাহের হার, যখন তাপমাত্রার গ্রেডিয়েন্টটি ক্রস-বিভাগীয় অঞ্চলের দিকের সমান্তরাল হয়।
  • একটি নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যের মধ্য দিয়ে তাপের প্রবাহের হার, যখন তাপমাত্রার গ্রেডিয়েন্টটি দৈর্ঘ্যের দিকের সমান্তরাল হয়।

সূত্র সম্পাদনা

তাপীয় পরিবাহিতার একটি সাধারণ সূত্র হল:

k = (QL)/(AΔT)

যেখানে:

  • k হলো তাপ পরিবাহিতা, W/m⁻¹·K⁻¹ এ পরিমাপ করা হয়।
  • Q হলো তাপের প্রবাহ, J এ পরিমাপ করা হয়।
  • L হলো দৈর্ঘ্য, m এ পরিমাপ করা হয়।
  • A হলো ক্রস-বিভাগীয় অঞ্চল, m² এ পরিমাপ করা হয়।
  • ΔT হলো তাপমাত্রার পার্থক্য, K এ পরিমাপ করা হয়।

একটি উদাহরণ

ধরুন একটি 1 মিটার দীর্ঘ এবং 1 বর্গমিটার ক্রস-বিভাগীয় অঞ্চলের একটি কাঠের তক্তার মধ্য দিয়ে 1000 জুল তাপ 10 সেকেন্ডের মধ্যে প্রবাহিত হয়। যদি তক্তার তাপমাত্রার পার্থক্য 20 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড হয়, তাহলে তক্তার তাপ পরিবাহিতা হবে:

k = (QL)/(AΔT) = (1000 J)/(1 m² * 20 K) = 5 W/m⁻¹·K⁻¹

প্রভাবকারী কারণসমূহ সম্পাদনা

তাপ পরিবাহিতা একটি পদার্থের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য দ্বারা প্রভাবিত হয়, যার মধ্যে রয়েছে:

  • পরমাণু এবং অণুর গঠন: ধাতুগুলিতে, পরমাণুগুলি একটি নিয়মিত কাঠামোতে সাজানো হয়, যা তাপের পরিবহনকে সহজ করে তোলে। অন্যদিকে, অধাতু এবং পলিমারগুলিতে, পরমাণু এবং অণুগুলি একটি অনিয়মিত কাঠামোতে সাজানো হয়, যা তাপের পরিবহনকে বাধা দেয়।
  • পরমাণু এবং অণুর আকার: ছোট পরমাণু এবং অণুগুলির মধ্যে তাপের পরিবহন বড় পরমাণু এবং অণুগুলির তুলনায় সহজ।
  • পরমাণু এবং অণুর মধ্যে বন্ধন: শক্তিশালী বন্ধনগুলি তাপের পরিবহনকে বাধা দেয়।
  • তাপমাত্রা: তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে তাপ পরিবাহিতা বৃদ্ধি পায়।

ব্যবহার সম্পাদনা

তাপ পরিবাহিতা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়, যার মধ্যে রয়েছে:

  • উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণ: তাপ পরিবাহিতা বেশি এমন উপকরণগুলি তাপকে ভালভাবে পরিচালনা করে, তাই এগুলি উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ, তাপ পরিবাহিতা বেশি এমন ধাতবগুলি হিট সিঙ্ক হিসাবে ব্যবহৃত হয়, যা কম্পিউটার চিপগুলি থেকে তাপ অপসারণ করে। এছাড়াও, তাপ পরিবাহিতা বেশি এমন পদার্থগুলি রান্নার পাত্র এবং বাসনপত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হয়, যাতে তাপটি দ্রুত এবং সমানভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
  • শক্তি সংরক্ষণ: তাপ পরিবাহিতা কম এমন উপকরণগুলি তাপকে ভালভাবে আটকে রাখে, তাই এগুলি শক্তি সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ, তাপ পরিবাহিতা কম এমন পলিমারগুলি ইন্সুলেশন হিসাবে ব্যবহৃত হয়, যা ভবনগুলিকে শীত এবং গরম থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও, তাপ পরিবাহিতা কম এমন গ্লাসগুলি দ্বি-কাচের জানালা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়, যা শীত থেকে বাড়িগুলিকে রক্ষা করে।
  • উত্পাদন: তাপ পরিবাহিতা বিভিন্ন উত্পাদন প্রক্রিয়াতে ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ, তাপ পরিবাহিতা বেশি এমন উপকরণগুলি গলিত পদার্থকে আকার দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও, তাপ পরিবাহিতা কম এমন উপকরণগুলি পণ্যগুলিকে শুকানো বা শীতল করার জন্য ব্যবহৃত হয়।

উদাহরণ সম্পাদনা

  • সবচেয়ে বেশি তাপ পরিবাহিতা সম্পন্ন পদার্থ হলো হীরা, যার তাপ পরিবাহিতা 2200 W/m⁻¹·K⁻¹।
  • সবচেয়ে কম তাপ পরিবাহিতা সম্পন্ন পদার্থ হলো অক্সিজেন, যার তাপ পরিবাহিতা 0.026 W/m⁻¹·K⁻¹।
  • সাধারণ তাপ পরিবাহিতা সম্পন্ন পদার্থগুলির মধ্যে রয়েছে তামা (401 W/m⁻¹·K⁻¹), অ্যালুমিনিয়াম (205 W/m⁻¹·K⁻¹), এবং তামাটে (38 W/m⁻¹·K⁻¹)।
  • সাধারণ তাপ অন্তরক পদার্থগুলির মধ্যে রয়েছে পলিস্টেরিন (0.038 W/m⁻¹·K⁻¹), কাঠের ফাইবার (0.05 W/m⁻¹·K⁻¹), এবং পলিইথিলিন (0.034 W/m⁻¹·K⁻¹)।

সংক্ষিপ্ত বিবরণ সম্পাদনা

তাপ পরিবাহিতা হলো একটি পদার্থের তাপ পরিবহনের ক্ষমতার একটি পরিমাপ। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য যা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়, যার মধ্যে রয়েছে উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণ, শক্তি সংরক্ষণ, এবং উৎপাদন।