ব্যবহারকারী:মো. তামিম আহমদ/আখলাকুর রহমান

ডক্টর আখলাকুর রহমান (১৯২৫-১৯৯২) ছিলেন বাংলাদেশের একজন বরেণ্য অর্থনীতিবিদ,ভাষা সংগ্রামী, শিক্ষাবিদ, লেখক ও গবেষক। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি। অর্থনীতিতে বিশেষ অবদানের জন্য বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমিতি তাকে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত করে। জীবদ্দশায় এবং মৃত্যুর পর তিনি লাভ করেছেন আরো একাধিক সম্মাননা।[১]


আখলাকুর রহমান
জন্মডিসেম্বর ৬, ১৯২৫ ইং
মৃত্যু৪ঠা মে,১৯৯২ ইং
নাগরিকত্ব
শিক্ষা
পেশাঅধ্যাপনা
পরিচিতির কারণঅর্থনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ ও ভাষাসৈনিক।
উল্লেখযোগ্য কর্ম
একচেটিয়া পুঁজিবাদ, মার্কসীয় অর্থনীতি, Development and growth of economics ইত্যাদি।
আন্দোলনভাষা আন্দোলন
পিতা-মাতা
  • দারাস চৌধুরী (বাবা)
  • যুবাইদা খাতুন ( মা)

জন্ম ও শৈশব সম্পাদনা

ডক্টর আখলাকুর রহমান ১৯২৫ সালের ৬ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার তেঘরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা দারাস চৌধুরী ছিলেন একজন ভূমি মালিক এবং স্থানীয় স্কুলের শিক্ষক। মাতা যোবাইদা খাতুন। সাত ভাইবোনের মধ্যে ডক্টর আখলাক ছিলেন সবার বড়। [২][১]

শিক্ষাজীবন সম্পাদনা

বাবা দারাস চৌধুরী গ্রামের পাঠশালায় শিক্ষকতা করতেন। আর এ পাঠশালাতেই মাত্র তিন বছর বয়সে শুরু হয় শিশু আখলাকের প্রাথমিক শিক্ষা। এরপর হাইস্কুলে পড়ার জন্য প্রথমে বালাগঞ্জ ও পরে হবিগঞ্জে যান। সিলেটের মদনমোহন কলেজ থেকে তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। ১৯৪৭ সালে তিনি আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ সম্পন্ন করেন। ঢাকায় ফিরে অর্থনীতিতে এমএ-তে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে এমএ শেষ করেন।১৯৬২ সালে তিনি পিএইচডি সম্পন্ন করেন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) থেকে।[১][২][৩]

কর্মজীবন সম্পাদনা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এ শেষ করে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। দু’বছরের মাথায়ই রিসার্চ এসিস্টেন্ট হিসেবে চলে যান ইংল্যান্ডের ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টারে। এরপর যোগ দেন পাকিস্তানের পেশওয়ার ইউনিভার্সিটিতে। এসময় তিনি পাকিস্তান ইকনমিক জার্নালের সম্পাদকমণ্ডলীর একজন সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ড. আখলাকুর রহমান যোগ দেন করাচিতে অবস্থিত পাকিস্তান ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট ইকনমিক্সের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ হিসেবে।

এখানে থাকাকালেই ১৯৬২ সালে তিনি পিএইচডি সম্পন্ন করেন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) থেকে।

মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালে করাচিতে তিনি ছিলেন পাকিস্তানের একটি সুপরিচিত ব্যাংক ইউনাইটেড ব্যাংক লিমিটেডের প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা। যুদ্ধ শুরু হলে সেখানকার আটকে পড়া বাঙালীদের জন্যে অর্থ সংগ্রহের উদ্যোগ গ্রহণ করেন ড. আখলাক। দেশে ফিরে অর্থনীতি ও উন্নয়ন বিষয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বহু গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন ড. আখলাকুর রহমান। ১৯৮০ সালে তিনি জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দুইবার সিনেটের সর্বোচ্চ ভোট পেলেও কেবল রাজনৈতিক কারণে তাকে উপাচার্য করা হয়নি।[১][২][৩]

রাজনৈতিক জীবন সম্পাদনা

ড. আখলাকুর রহমানের রাজনৈতিক জীবনও উল্লেখযোগ্য। সিলেটের মদনমোহন কলেজে পড়ার সময় থেকেই তাঁর রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয়। পূর্ববঙ্গে সর্বভারতীয় ছাত্র ফেডারেশনের সক্রিয় কর্মীদের একজন ছিলেন তিনি। রাজনৈতিক তৎপরতার কারণে সেসময় পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমিন সরকারের রোষানলেও তিনি পড়েন।

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন ড. আখলাক। সেসময় তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের একজন তরুণ প্রভাষক। একটি দেশের সাহিত্য-সংস্কৃতি গঠনে মাতৃভাষার গুরুত্ব তুলে ধরে যেসব অভিমত তিনি রেখেছেন তা আজো প্রণিধানযোগ্য।স্বাধীনতার পর জাসদ রাজনীতির তিনি ছিলেন অন্যতম তাত্ত্বিক। ১৯৭৫ সালে কর্নেল আবু তাহেরের নেতৃত্বে তিনি জাসদের বিভিন্ন কর্মকান্ডে যুক্ত ছিলেন। তিনি ছিলেন এ সংগঠনের একজন উপদেষ্ঠা। এ কারণে তাঁকে কারাভোগও করতে হয়।[১][২]

সমাজসেবা সম্পাদনা

ড. আখলাক ছিলেন একজন নীতিবান মানুষ। সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদী রাজনীতির অনুসারী[৪] হওয়ার কারণে কর্মজীবনে অনেক বড় বড় সুযোগ হাতছাড়া হলেও নীতির প্রশ্নে কখনো আপস করেন নি। গভীর আত্মমর্যাদাবোধের কারণে তিনি নিজেকে গুটিয়ে রাখতেন। একজন সমাজবাদী হিসেবে নিজের আর্থিক সমৃদ্ধি সত্ত্বেও দরিদ্র্যক্লিষ্ট মানুষের কথা কখনো ভুলতেন না। দরিদ্রের সেবায়, অসহায়ের সমর্থনে যখন যেখানে পেরেছেন ছুটে গেছেন। জীবনের শেষের দিকে নিজের উপজেলা জগন্নাথপুরে তাঁর মায়ের নামে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন "যোবায়দা খাতুন শিক্ষা ট্রাস্ট। আধ্যাত্মিকতার প্রতিও তার ছিল এক দুর্নিবার আকর্ষণ। আর এ আকর্ষণের কারণেই ১৯৭৪ সাল থেকে গুরুজী শহীদ আল বোখারীর সাথে ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে। যোগধ্যানের অনুশীলনে একাত্ম হন। ধ্যানের শক্তিকে ব্যবহার করে বহু মানুষকে হিলিং করেন তিনি। ১৯৮৩ সালে যোগ মেডিটেশন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ড. আখলাকুর রহমান।[১][২][৩]

মৃত্যু সম্পাদনা

১৯৯২ সালের ৪ মে[৫] তিনি ৬৭ বছর বয়সে মারা যান।[২][৩]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Obituary | Quantum Method"obituary.quantummethod.org.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৪-২১ 
  2. Today 24, Sylhet; মুক্তা, মুক্তাদীর আহমদ। "শিক্ষাব্রতী অর্থনীতিবিদ ড. আখলাকুর রহমান"sylhettoday24.news (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৪-২১ 
  3. "শিক্ষাব্রতী অর্থনীতিবিদ ড.আখলাকুর রহমান - Odhikarbd || অধিকার বিডি|| Online News Paper"Odhikarbd || অধিকার বিডি|| Online News Paper - Online Base News Paper (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৪-২১ 
  4. "দেশজ ঘরানার প্রগতিশীলতাই বঙ্গবন্ধুর বাঙালি জাতীয়তাবাদ | মতামত"opinion.bdnews24.com (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২১-০৩-১৮। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৪-২১ 
  5. "৪ মে"উইকিপিডিয়া। ২০২১-০৮-১৮।