বৈজ্ঞানিক বিতর্ক হচ্ছে বিজ্ঞানীদের মধ্যে গবেষণামুলক কাজ নিয়ে তীব্র অনৈক্য। বৈজ্ঞানিক বিতর্ক প্রমাণ দ্বারা সমর্থিত উপাত্তের ব্যাখ্যা নিয়ে কাজ করে এবং বিতর্কের মাধ্যমে অন্বেষনের চেষ্টা করে কোন ধারণা তুলনামুলকভাবে উপযোগী। উদাহরণস্বরুপ, ২০ শতকের গোড়ার দিকে বুদ্ধ্যাঙ্ক পরিমাপের যাত্রা শুরু হওয়ার পর থেকে জাতি এবং তার বুদ্ধিমত্তা নামক বিষয়টি পপুলার সায়েন্স এবং প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণার মধ্যকার বিতর্কের ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

যদিও স্বাভাবিক বিতর্কের ক্ষেত্র অনেক বড় তবে এই ধরনের বিতর্কের সাথে তুলনা করলে, বৈজ্ঞানিক বিতর্ক সুনির্দিষ্টভাবে বিজ্ঞান সংক্রান্ত বিতর্ক নিয়েই কাজ করে। সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে বৈজ্ঞানিক বিতর্ক প্রমাণ দ্বারা সমর্থিত উপাত্তের ব্যাখ্যা নিয়ে কাজ করে এবং বিতর্কের মাধ্যমে অন্বেষনের চেষ্টা করে কোন ধারণার সবচেয়ে বেশি উপযোগিতা আছে। বৈজ্ঞানিক বিতর্ক যারা করেন, তারা মুলত অপরপক্ষের (যদিও বিজ্ঞানে পক্ষ-বিপক্ষ বিবেচনা করা হয় না) তত্ত্ব বা প্রকল্প নিয়ে একমত হন না, অথবা তত্ত্বটিকে প্রমাণ করতে যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে, সে প্রক্রিয়াটিকে তারা প্রশ্নবিদ্ধ করেন। এই ধরনের বিতর্কের মাধ্যমে সবচেয়ে প্রায়োগিক, আর তুলনামুলক শ্রেয়তর উপাত্তের সৃজন হয়। এই ধরনের বিতর্ক বিজ্ঞানী এবং মানবজাতির জন্য উপকার বয়ে আনে। এর মাধ্যমে বিজ্ঞানের অগ্রগতি সাধন হয়। বৈজ্ঞানিক বিতর্ক মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করে, যার ফলে সাধারণ মানুষেরও এই ধরনের বিতর্কে পরোক্ষভাবে হলেও অংশগ্রহণের একটা সুযোগ তৈরী করে। কিন্তু এই ধরনের বিতর্কে যদি বৈজ্ঞানিক ও অবৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গীর মধ্যে একটা বিরোধ তৈরী হয়, তাহলে তা বৈজ্ঞানিক গবেষণার অগ্রগতিতে অন্তরায় সৃষ্টি করে।[১]

এই ধরনের বিতর্কের বিভিন্ন রকম শ্রেণিবিভাগ আছে। এর মধ্যে প্রধান দুই প্রকারের একটি হলো মুখ্য বৈজ্ঞানিক বিতর্ক এবং দ্বিতীয়টি হলো গৌন বৈজ্ঞানিক বিতর্ক। মুখ্য বৈজ্ঞানিক বিতর্ক কোনো তত্ত্ব বা প্রকল্পের (hypotheses) একেবারে প্রধান ধারণাকে কেন্দ্র করে উত্থাপন করা হয়। এর অর্থ হলো কোনো বিষয়ের কেন্দ্রীয় ধারণাকে ভিত্তি করে করা বিতর্কই হলো মুখ্য বৈজ্ঞানিক বিতর্ক। এই কেন্দ্রীয় ধারণাকে সত্য মেনে সেই ধারণার উপর যে বিতর্ক করা হয়, তাকে বলা হবে গৌণ বৈজ্ঞানিক বিতর্ক। উদাহরণস্বরুপ, বিবর্তন হচ্ছে এটা নিয়ে সাধারণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে কিছুটা ধোয়াশা থাকলেও মুলধারার বিজ্ঞানী, বা প্রধান বৈজ্ঞানিক সংস্থাগুলো একে মেনে নিয়েছে। এখন কোনো বিজ্ঞানী যদি সাধারণ জনগোষ্ঠীর সাথে তাল মিলিয়ে মুলধারার বিজ্ঞানীদের সাথে বিবর্তন হচ্ছে না;- এই মর্মে তর্ক করে, তবে তা হবে বিবর্তন প্রসঙ্গে মুখ্য বৈজ্ঞানিক বিতর্ক। কিন্তু এখন বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত বিবর্তন হচ্ছে, এটাকে সত্য মেনে নিয়ে বিভিন্ন প্রজাতিতে বিবর্তন কীভাবে হচ্ছে বা বিবর্তনের কলাকৌশলের উপর যে বিতর্ক তারা করেন, একে বলা হবে গৌন বৈজ্ঞানিক বিতর্ক।[১]

বৈজ্ঞানিক মতামত আর অবৈজ্ঞানিক মতামতের মধ্যে যে বিতর্ক তার স্থান বিজ্ঞানের জগতে নয় এবং এধরনের বিতর্ক প্রকৃত বৈজ্ঞানিক বিতর্ক হিসেবে স্বীকৃত নয়।[১]

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা


টেমপ্লেট:Sci-stub