বেতারের ইতিহাস

ইতিহাসের বিভিন্ন দিক

বেতার প্রযুক্তি বলতে মূলত তড়িৎচুম্বক তরঙ্গের মাধ্যমে তথ্যের আদানপ্রদানকে বোঝায় যেখানে তথ্য আদান এবং প্রদানের দুই বা ততোধিক স্থান কোনো তড়িৎ পরিবাহী দ্বারা সংযুক্ত থাকবে না। এক্ষেত্রে সচরাচর বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বেতার তরঙ্গ এক ধরনের তড়িৎচুম্বক তরঙ্গ যার তরঙ্গদৈর্ঘ্য ১ মিলিমিটার থেকে ১০ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। আর এর কম্পাংক ৩০০ গিগাহার্টজ থেকে ৩০ হার্টজ পযন্ত হতে পারে।

আবিষ্কার

সম্পাদনা

বেতারের আবিষ্কারের শুরুটা ম্যাক্সওয়েলের থিওরি থেকেই।

ঊনবিংশ শতাব্দী

সম্পাদনা
 
তড়িৎ চৌম্বকীয় তত্ত্বের প্রতিষ্ঠাতা জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল (১৮৩১-১৮৭৯)

জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল ১৮৬৪ সালে তাত্তিক ও গাণিতিকভাবে দেখান যে, তড়িৎচুম্বক তরঙ্গ কোনো মাধ্যম ছাড়াই চলাচল করতে পারে। [][][][][] এই ক্ষেত্রেই তিনি ইচ্ছাকৃতভাবেই এক স্থান থেকে আরেক স্থানে তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ পাঠাতে পারেন। এই ধারনার পর থেকেই বেতার তরঙ্গের সাহায্যে তথ্য পাঠানোর ছোটখাট চেষ্টা করা হচ্ছিল। এক্ষেত্রে আহিত করার মাধ্যমে এবং সেই আহিতে তরঙ্গকে দূরে কোথাও সেন্সরের মাধ্যমে শনাক্ত করানোর চেষ্টা করা হচ্ছিল। অবশেষে ১৮৮৮ সালে হেনরিক রুডলফ হার্টজ এই কাজটি করতে সক্ষম হন এবং ম্যাক্সওয়েলের উল্লেখিত তরঙ্গকে বাস্তবেই সত্য প্রমাণ করেন। ফলে, তার নাম অনুসারে এই তরঙ্গগুলোকে হারটজিয়ান তরঙ্গ বলা হত। কিন্তু বিশ্ববাসীর কাছে এটিকে মেনে নেওয়ার জন্য অন্তত ২০ বছর পার হয়ে যায়। এরপর থেকে অনেক বিজ্ঞানী তাদের বিভিন্ন বই ,ডকুমেন্টস ,ডায়েরী ইত্যাদীতে এই বেপারে লেখালেখি করেন। কিন্তু নিকোলা টেসলা, যিনি বেতার পদ্ধতিতে শতি স্থানান্তরের চিন্তা করছিলেন, তার কাছে এই তথ্যটা আকর্ষণীয় মনে নি কেন যেন! তবে আবিষ্কারের গল্পটা এখানে থেমে থাকে না। ১৮৯৪ সালে ইটালিয়ান বিজ্ঞানী গুগলিয়েলমো বেতার নিয়ে কাজ শুরু করেন। এবং সমস্ত জার্নাল, ডায়েরী থেকে তথ্যগুলো নিয়ে নিজে চিন্তাভাবনা করে তিনি বেতার তরঙ্গকে দূরে পাঠানোর জন্য চেষ্টা করতে থাকেন। কিন্তু তখন তিনি অর্ধেক মাইলের বেশি পাঠাতে পারেন নি। পরবর্তীতে অ্যান্টেনা কে উঁচু করে দেন এবং ভূমি বরাবর ট্রান্সমিটার এবং রিসিভার রেখে দেন। এবার দেখা যায় তিনি অনেক দূরেও পাঠাতে পারছেন। প্রায় ২ মাইল অর্থাৎ প্রায় ৩.২ কিলোমিটার। এরপর থেকে তিনি সিদ্ধান্ত নেন এটিকে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করার।

বিংশ শতাব্দী

সম্পাদনা

বিংশ শতাব্দীর একদম শুরুতেই ১৯০০ সালে ব্রাজিলিয়ান ধর্মযাজক রবার্ট ল্যান্ডেন ডি মউরা মানব ইতিহাসে সর্বপ্রথম নিজের কন্ঠস্বরকে পাঠান স্থানান্তরির করেন বেতার পদ্ধতিতে। জুন ৩, ১৯০০ সালে সর্বপ্রথম তিনি এটি সাংবাদিকদের সামনে সফলভাবে করে দেখান। গ্রেট ব্রিটেনের জেনারেল কন্সালের সামনেও সফল্ভাবে তার এক্সপেরিমেন্ট কাজ করে। তার পাঠানো সংকেত এর স্থান্ত্রের স্থান দুইটির মধ্যে পার্থক্য ছিল প্রায় ৮ কিলোমিটার এর মত। তিনি ব্রাজিলের অ্যাল্টো ডি স্যান্টেনা থেকে পলিস্তা এভিনিউ পর্যন্ত পাঠিয়েছিলেন। এই কাজের প্রায় ১ বছরের মাথায় তার নামে পেটেন্ট বানানো হয়।

এই ঘটনার পরের যে অর্জন তা ছিল ভ্যাকুয়াম টিউব ডিটেক্টর এর আবিষ্কার যা ওয়েস্টিঙ্গহাউজের ইঞ্জিনিয়ারগণ আবিষ্কার করেন। ১৯০৬ সালে রেগিন্যাল্ড ফ্রেসেন্ডেন একটি "সিংক্রোনাস রোটারি-স্পার্ক ট্রান্সমিটার" ব্যবহার করেন। এরপরে স্যার জগদিশ চন্দ্র বসু, স্যার অলিভার লজ এবং আলেক্সান্ডার প্যাপোভ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে অবদান রাখেন রেডিওর উন্নয়ন ও বিকাশে।

এরূপ পরিমাণ উন্নতি সাধিত হওয়ার পরে ১৯১২ সালে মার্কনি একটি কারখানা দাড় করিয়ে দেন যেখানে বাণিজ্যিকভাবেই রেডিও উৎপাদন করা হত।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "James Clerk Maxwell (1831-1879)"(sparkmuseum.com) 
  2. Ralph Baierlein (১৯৯২)। Newton to Einstein: The Trail of Light। Cambridge University Press। আইএসবিএন 9780521423236। সংগ্রহের তারিখ ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ 
  3. G. R. M. Garratt, The Early History of Radio: From Faraday to Marconi, IET - 1994, page 27
  4. "Magnetic Fields and Maxwell Revisited"lumenlearning.com 
  5. "Electromagnetism (glossary)"uoregon.edu। ২২ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ নভেম্বর ২০২০ 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা