বুশ্‌ হপার

হেসপেরিডি পরিবারের প্রজাপতি

বুশ্‌ হপার (বৈজ্ঞানিক নাম: Ampitta dioscorides(Fabricius)) ‘হেসপেরায়িডি’ গোত্র এবং 'হেসপেরায়িনি'[১] উপগোত্র এবং অ্যামপিটিয়া বর্গের অন্তর্ভুক্ত প্রজাতি।[২][৩][৪]

বুশ্‌ হপার
Common bush hopper
ডানা বন্ধ অবস্থায়
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: Animalia
পর্ব: Arthropoda
শ্রেণী: Insecta
বর্গ: Lepidoptera
পরিবার: Hesperiidae
গণ: Ampittia
প্রজাতি: A. dioscorides
দ্বিপদী নাম
Ampitta dioscorides
(Fabricius, 1793)

বুশ্‌ হপার এর প্রসারিত অবস্থায় ডানার আকার ৮৫-৯৫ মিলিমিটার দৈর্ঘ্যের হয়।[৫][৬]

উপপ্রজাতি

সম্পাদনা

ভারতে প্রাপ্ত বুশ্‌ হপার এর উপপ্রজাতি হল-[৭]

  • Ampittia dioscorides dioscorides (Fabricius, 1793) – Indian Bush Hopper

বিস্তার

সম্পাদনা

ভারত (ভারতীয় উপকূল, পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম, আসাম এবং উত্তরপূর্ব ভারত এর অন্যান্য রাজ্য সমূহ), নেপাল, বাংলাদেশ,[৮] শ্রীলঙ্কা, সুমাত্রা এবং মায়ানমার এর বিভিন্ন অঞ্চলে এদের দেখা যায়।[৯]

বর্ণনা

সম্পাদনা

প্রজাপতির দেহাংশের পরিচয় বিষদ জানার জন্য প্রজাপতির দেহ এবং ডানার অংশের নির্দেশিকা দেখুন:-

উপরিতল: পুরুষ প্রকারে ডানার উপরিতল কালচে বাদামী এবং আকর্ষনীয় উজ্জ্বল সোনালী হলুদ দাগ ছোপ পটি যুক্ত, যা অন্যান্য হলদে-কমলা স্কীপারদের থেকে এদের একদম আলাদা করে চিনরে সুবিধা হয়।[১] কোস্টাল প্রান্তরেখা কালো এবং টার্মেন চোড়াভাবে কালচে বাদামী। সামনের ডানায় অ্যাপেক্স অথবা শীর্যভাগ তীক্ষনভাবে কৌনিক, কিন্তু পিছনের ডানা গোলাকৃত, সামনের ডানায় ১খ শিরামধ্যে একটি লম্বাটে সরু ডিসকাল ছোপ; ২ ও ৩ নং শিরামধ্যে একটি করে দীর্ঘতর ডিসকাল পটি সংযুক্ত ভাবে বর্তমান। ৬ থেকে ৮ শিরামধ্য জুড়ে চওড়া সুদীর্ঘ পটি ডানার বেস অথবা গোড়া থেকে কোস্টা বরাবর অ্যাপেক্সের খানিক নিচ অবধি বিস্তৃত এবং সেল লম্বা এবং চওড়া পটিযুক্ত। ৪ এবং ৫ নং শিরামধ্যে দুটি সোনালী হলুদ সাবটার্মিনাল বিন্দু দেখা যায়। পিছনের ডানা অধিকাংশ জায়গাজুড়ে কালচে বাদামি এবং ১খ থেকে ৫ অথবা ৬ শিরামধ্যজুড়ে খুব চওড়া ডিসকাল বন্ধনী বিদ্যমান যা সুস্পষ্টভাবে কালো শিরা দ্বারা খন্ডিত। সিলিয়া বাদামী, মাঝেমধ্যে সোনালী হলুদের রোঁয়া দেখা যায়।

নিম্নতল: সামনের ডানার নিম্নতল উপরিতলের অনুরূপ, তবে এক্ষেত্রে টার্মেনও সোনালী-হলুদ বর্ণের। পিছনের ডানার নিম্নপৃষ্ঠ সোনালী হলুদ এবং অস্পষ্ট কালচে দাগ-ছোপযুক্ত এবং বাদামী সূক্ষ্ম আঁশে ছাওয়া। পিছনের ডানায়, সারা ডানা জুড়ে কোস্টা থেকে টর্নাস অবধি ফ্যাকাশে বাদামী সাব-টার্মিনাল ছোপের সারি চোখে পড়ে।[১০]

স্ত্রী

সম্পাদনা

উপরিতল: স্ত্রী প্রকারে ডানার উপরিতল পুরুষেরই ন্যায় কালচে বাদামী, তবে ফ্যাকাশে হলুদ দাগ-ছোপ অনেক কম সংখ্যায় এবং কম জায়গা জুড়ে অবস্থিত। সামনের ডানায় সেল এর শেষভাগে একটি হলুদ ছোপ এবং ১খ থেকে ৩ নং এবং ৬ থেকে ৮ নং শিরামধ্যস্থ কত গুলি ডিসকাল লম্বাটে ছোপের সারি বর্তমান। এদের মধ্যে ১খ শিরামধ্যস্থ ডিসকাল ছোপটি ক্ষুদ্রতম। ডানার উপরের দিকে অর্থাৎ অ্যাপেক্স থেকে ডানার মধ্যভাগ পর্যন্ত অস্পষ্ট সাবটার্মিনাল ছোপের সারি বর্তমান। স্ত্রী প্রকারে সামনের ডানায় পুরুষের ন্যায় সুস্পষ্ট ব্যান্ড থাকে না। পিছনের ডানায় ডিসকাল এবং সাব-টার্মিনাল কয়েকটি ছোপ অসংলগ্ন ভাবে দেখা যায়।[১]

নিম্নতল: ডানার নিম্নতল অপেক্ষাকৃত ফ্যাকাশে বর্নের, সামনের ডানার দাগ-ছোপ উপরিতলের অনুরূপ, তবে আকার অপেক্ষাকৃত বড়। ডানার গোড়া থেকে মধ্যভাগ পর্যন্ত একটি ফ্যাকাশে হলুদ সাব-কোস্টাল দাগ লক্ষ্য করা যায়। পিছনের জন্য প্রচুর সূক্ষ্ম হলদে আঁশে ছাওয়া এবং ফ্যাকাশে হলদে ছোপের একটি ডিসকাল এবং একটি সাব-টার্মিনাল সারি বর্তমান।[১০]

শুঙ্গ কালো এবং হলুদ বলয় দ্বারা ডোরাকাটা। শুঙ্গের শীর্ষভাগ এর ডগা এবং নিম্নতল হলুদ বর্ণের। পাল্পি, মাথা, বক্ষদেশ এবং উদর এর উপরিপৃষ্ঠ বাদামী এবং নিম্নপৃষ্ঠ হলুদ হয়। পাল্পি ও মাথা উপরিতল হলুদ দাগ যুক্ত।[৯]

সুলভদর্শন এই প্রজাতির উড়ান অন্যান্য স্কিপারদের তুলনায় কিছুটা দুর্বল। এরা ভূমির কাছাকাছি নিচু দিয়ে ওড়ে এবং অল্প দূরত্ব উড়েই ঝোপঝাড় অথবা লম্বা ঘাসের উপরে বসে।[২] মূলত ৮০০ মিটারের কম উচ্চতা বিশিষ্ট আর্দ্র বনভূমির ঘাসজমি এদের বিশেষ পছন্দের বাসস্থান।[৬] এই প্রজাতিকে প্রায়শই ঝোপঝাড়ের জল অথবা পাতায়, ঔষধী লতায় এবং লম্বা ঘাসের উপরে বসে রোদ পোহাতে দেখা যায়। এরা ফুলের মধুপান করে, বিশেষত ঝোপঝাড়ের বুনো ফুল। পাখির বিষ্ঠায় এদের অবস্থান করতে দেখা গেলেও, মাটি অথবা পাথরের ভিজে ছোপ এবং ভিজে মাটিতে মাড পাডল করতে সচরাচর ছোখে পড়ে না। হলদে-বাদামী এই ক্ষুদ্রকার স্কীপারকে মাঝেমধ্যেই ধানের ক্ষেতে ধানের শীষ্‌ অথবা শীষের উপর বসে থাকতে লক্ষ্য করা যায়।[১১] নিচু উচ্চতাযুক্ত পাহাড়ী জঙ্গলে (৮০০ মিটার এর কম উচ্চতা) ফাঁকা জায়গায় এদের সূর্যালোক উড়ে বেড়াতে এবং ঝোপঝাড় এবং লতানে গাছের ঝাড়ে বসে থাকতে দেখা যায়। বর্ষা পরবর্তী সময় বিশেষত আগস্ট এবং সেপ্টেম্বর মাসে এদের প্রচুর সংখ্যায় দর্শন মেলে।[৯]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Wynter-Blyth, M.A. (1957) Butterflies of the Indian Region, pg ৪৭৭.
  2. R.K., Varshney; Smetacek, Peter (২০১৫)। A Synoptic Catalogue of the Butterflies of India। New Delhi: Butterfly Research Centre, Bhimtal & Indinov Publishing, New Delhi। পৃষ্ঠা 41। আইএসবিএন 978-81-929826-4-9ডিওআই:10.13140/RG.2.1.3966.2164 
  3. http://animaldiversity.ummz.umich.edu/accounts/Ampittia_dioscorides/classification/
  4. "Archived copy"। ২০১৬-০৮-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৩-১৮ 
  5. "Archived copy"। ২০১৪-০৮-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৩-১৮ 
  6. A Pictorial Guide Butterflies of Gorumara National Park (2013 সংস্করণ)। Department of Forests Government of West Bengal। পৃষ্ঠা ৩২৩। 
  7. http://www.ifoundbutterflies.org/285-ampittia/ampittia-dioscorides
  8. W. H., Evans (১৯৪৯)। A Catalogue of the Hesperiidae from Europe, Asia, and Australia in the British Museum। London: British Museum (Natural History). Department of Entomology। পৃষ্ঠা 239। 
  9. Isaac, Kehimkar (২০০৮)। The book of Indian Butterflies (ইংরেজি ভাষায়) (1st সংস্করণ)। নতুন দিল্লি: অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। পৃষ্ঠা ৯৭। আইএসবিএন 978 019569620 2 
  10. Charles Swinhoe, Lepidoptera Indica, Vol. X.
  11. বসু রায়, অর্জন; বৈদ্য, সারিকা; রায়, লিপিকা। সুন্দরবনের কিছু পরিচিত প্রজাপতি (মার্চ ২০১৪ সংস্করণ)। সুন্দরবন জীবপরিমণ্ডল,Department of Forest Government of West Bengal। পৃষ্ঠা ১২৩। 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা