বীরনাট্যম বা বীরের নৃত্য ( বীর মানে সাহসী; নাট্যম মানে নৃত্য) হল অন্ধ্র প্রদেশ রাজ্যের একটি প্রাচীন নৃত্য। এই নৃত্যকলার বিশিষ্ট ধর্মীয় তাৎপর্য রয়েছে।

একটি ধার্মিক আচার হিসাবে বীরনাট্যম নৃত্যশৈলীর সূচনা হয়েছিল। এই নৃত্য শিবমন্দিরে (শৈববাদের প্রমুখ দেবতা) ভগবান শিবের সম্মানে পরিবেশন করা হত। [১] বীরভদ্রের অনুগামীরা এই বিশেষ ধারার নৃত্য পরিবেশনের জন্য জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। বিশেষ করে ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যে বসবাসকারী বীরমুস্তি সম্প্রদায় এই নৃত্য শৈলীর জন্য সুপরিচিত।

বীরনাট্যম বা বীরভদ্র নাট্যম পূর্ব ও পশ্চিম গোদাবরী, কুরনুল, অনন্তপুর এবং খাম্মাম অঞ্চলের প্রসিদ্ধ নৃত্য। এই নৃত্য প্রধানত পুরুষ নর্তকদের দ্বারা পরিবেশিত হয়।

বীরনাট্যম পরিবেশনের প্রথম পর্যায় হল বীরভদ্র পাল্লেম। নৃত্য পরিবেশনার এই পর্যায়ে একটি বিশাল পাত্র যার মধ্যে একটি জ্বলন্ত কর্পূর থাকে, তাকে নিজহাতে ধারন করতে হয় ও নৃত্যের সূচনা করতে হয়। আগুন নিভে না যাওয়া পর্যন্ত নৃত্য চলতে থাকে। এই অনুষ্ঠানের একটি অংশের নাম খড়গালু আবৃত্তি , যেখানে একজন পূজারি বীরভদ্রের প্রতিনিধিত্বকারী একটি লম্বা তরবারি ধারণ করে।

এই নৃত্যের দ্বিতীয় পর্যায়টি হল একটি দীর্ঘ পবিত্র খুঁটি ধারণ করা যা বিভূতি (পবিত্র ছাই) দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। এই খুটিটি প্রভুর ধ্বজা স্তম্ভ-এর প্রতিনিধিত্ব করে। এর উপরে একটি ঘণ্টা বাঁধা থাকে।

এই নৃত্যের তৃতীয় পর্যায়ে অভিনয়শিল্পীরা বর্শা ও ত্রিশূল নিয়ে তাদের গোড়ালি, হাত এবং জিহ্বায় আঘাত করে এবং নৃত্য পরিবেশন করে। নৃত্যের এই পর্যায়কে নরসম বলা হয়। নর্তকরা রঙিন হাঁটু অবধি লম্বা ধুতি পরিধান করে। তাদের সমস্ত শরীরে বিভূতি মাখা থাকে। এই নৃত্যের প্রধান সহায়ক যন্ত্র হল বীরানম বা ওয়ার-ড্রাম যা আসলে যুদ্ধ উদঘোষনায় ব্যবহৃত দামামা জাতীয় বাদ্যযন্ত্র। এই নৃত্যের প্রধান বাদ্যযন্ত্র বীরনাম। এই বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে নর্তকরা বিভিন্ন পর্যায়ে বীরনাট্যম নৃত্য পরিবেশনা করে।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা