আরউইন শার্গাফ

জৈব-রসারনবিদ

আরউইন শার্গাফ (১১ আগস্ট ১৯০৫-২০ জুন ২০০২) একজন অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় জীবরসায়নবিদ ও লেখক ছিলেন। তিনি বুকোভীয় ইহুদি ধর্মের অনুসারী ছিলেন। নাজি যুগে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হন। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা স্কুলের প্রাণরসায়নের অধ্যাপক ছিলেন। [১] সযত্ন পরীক্ষার মাধ্যমে তিনি দুইটি সূত্র আবিষ্কার করেন। এগুলো শার্গাফের সূত্র নামে পরিচিত। ডিএনএর ডাবল হেলিক্স কাঠামো আবিষ্কারে এ সূত্রটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

এরউইন শার্গাফ
এরউইন শার্গাফ
জন্ম(১৯০৫-০৮-১১)১১ আগস্ট ১৯০৫
মৃত্যু২০ জুন ২০০২(2002-06-20) (বয়স ৯৬)
জাতীয়তাআমেরিকান (১৯৪০ সাল হতে)
শিক্ষাম্যাক্সিমিলিয়ানস জিমনেসিয়াম, ভিয়েনা
মাতৃশিক্ষায়তনভিয়েনা প্রযুক্তি কলেজ (১৯২৪-১৯২৮)
পরিচিতির কারণশার্গাফের সূত্র
দাম্পত্য সঙ্গীভেরা ব্রোইডো (বি. ১৯২৮; মৃ. ১৯৯৫)
সন্তানটমাস শার্গাফ
পুরস্কারপাস্তুর পদক (১৯৪৯), জাতীয় বিজ্ঞান পদক (১৯৭৪)
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন
কর্মক্ষেত্রপ্রাণরসায়ন
প্রতিষ্ঠানসমূহইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় (১৯২৫-১৯৩০), বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৩০-১৯৩৩), পাস্তুর ইনস্টিটিউট (১৯৩৩-১৯৩৪), কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৩৫-১৯৭৪), রুজভেল্ট হাসপাতাল (১৯৭৪-১৯৯২)
ডক্টরাল উপদেষ্টাফ্রিৎস ফ্রেইল
ডক্টরেট শিক্ষার্থীসিমোর এস কোহেন, বরিস মাগাসানিক
স্বাক্ষর
Erwin Chargaff signature.png

শার্গাফের প্রথম সূত্রটি হলো-ডিএনএ-তে গুয়ানিন একক ও সাইটোসিন এককের সংখ্যা সমান। আবার, অ্যাডেনিন এককের সংখ্যা থায়ামিন এককের সমান। ডিএনএ-র‍ ক্ষারক যুগলের গঠন সম্পর্কে অনুধাবনে এটি সাহায্য প্রদান করে।

দ্বিতীয় সমতা সূত্রটি ১৯৮৬ সালে প্রদান করা হয়। সেটি হলো- এককভাবে বিচ্ছিন্ন ডিএনএ-তে (সিঙ্গল স্ট্র্যান্ডেড ডিএনএ) অ্যাডেনিন ও থায়ামিন এককের সংখ্যা প্রায় সমান ও গুয়ানিন ও সাইটোসিন এককের সংখ্যা প্রায় সমান।

শার্গাফ বলেন, গুয়ানিন, সাইটোসিন, অ্যাডেনিন ও থায়ামিন ক্ষারকের আপেক্ষিক পরিমাণ এক প্রজাতি থেকে অন্য প্রজাতিতে ভিন্ন হয়ে থাকে। এ থেকে প্রমাণিত হয়, প্রোটিন নয়, প্রকৃতপক্ষে ডিএনএ-ই হলো বংশগতীয় বস্তু।

শার্গাফ একজন মহান লেখক ছিলেন। তার লেখায় মানবতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়েছে। শার্গাফের আত্মজীবনী "হেরাক্লিটিয়ান ফায়ার" বৈজ্ঞানিক-রচিত আত্মজীবনীগুলোর মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ [২]। বিজ্ঞান ও কলা বিষয়ে আগ্রহীদের জন্য এটি একটি সুখপাঠ্য বই হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা

শার্গাফ ১৯০৫ সালের ১১ আগস্ট অস্ট্রো হাঙ্গেরির জার্নোভিটজে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে এটি ইউক্রেনের শারভিটসি।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূচনালগ্নে তার পরিবার ভিয়েনায় চলে যায়। সেখানে ম্যাক্সিমিলিয়ানসজিমনেসিয়ামে (জিমনেসিয়াম ওয়াসাজাসে) তিনি লেখাপড়া করেন। তিনি অতঃপর ভিয়েনা প্রযুক্তি কলেজে (টেকনিশে হোশলুশে ভিয়েন) লেখাপড়া করেন। সেখানেই আরউইনের সঙ্গে ভবিষ্যৎ সহধর্মিণী ভেরা ব্রোইডোর দেখা হয়।

১৯২৪ থেকে ১৯২৮ সালে শার্গাফ ভিয়েনায় রসায়ন অধ্যয়ন করেন। ফ্রিৎস ফ্রেইগির তত্ত্বাবধানে তিনি পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।[৩]

তিনি ১৯২৮ সালে ভেরা ব্রইডোর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। শার্গাফের টমাস শার্গাফ নামে এক সন্তান ছিল।

১৯২৫ থেকে ১৯৩০ সালে তিনি ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন বিষয়ের মিল্টন ক্যাম্পবেল গবেষণা ফেলো হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তবে নিউ হ্যাভেন শহরের পরিবেশ তার পছন্দনীয় ছিল না। শার্গাফ ১৯৩০ থেকে ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত ইউরোপে বসবাস করেছেন। তিনি ১৯৩০ থেকে ১৯৩৩ সালে বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাকটেরিয়াবিদ্যা ও জনস্বাস্থ্য বিভাগে শিক্ষকতা করেছেন। কিন্তু নাজি পার্টির ইহুদিবিদ্বেষী নীতির মুখে পদত্যাগ করতে তিনি বাধ্য করতে হন। তারপর এক বছর তিনি ফ্রান্সের পাস্তুর ইনস্টিটিউটে কর্মরত ছিলেন।

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় সম্পাদনা

শার্গাফ ১৯৩৫ সালে নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনে অভিবাসী হন। তিনি ১৯৩৮ সালে সহকারী অধ্যাপক ও ১৯৫২ সালে অধ্যাপক নিযুক্ত হন। ১৯৭০ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পর তিনি ইমেরিটাস অধ্যাপক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৪০ সালে তিনি মার্কিন নাগরিকত্ব লাভ করেন।

শার্গাফের সূত্র সম্পাদনা

শার্গাফের সূত্রের মূল প্রতিপাদ্য হলো- ডিএনএ-তে অ্যাডেনিন ও থায়ামিন একক ও গুয়ানিন ও সাইটোসিন এককের সংখ্যা প্রায় সমান। যেমন - মানব ডিএনএ-তে অ্যাডেনিন ৩০.৯%, থায়ামিন ২৯.৪%, গুয়ানিন ১৯.৯% ও সাইটোসিন ১৯.৮%। পেপার ক্রোমাটোগ্রাফি ও অতিবেগুনি স্পেকট্রোমিটার ব্যবহার করে তিনি এটি নির্ণয় করেন। ফ্রান্সিস ক্রিকজেমস ওয়াটসন এর ফলে ডিএনএ ডাবল হেলিক্স কাঠামো বের করতে সক্ষম হন।

পরবর্তী জীবন সম্পাদনা

ফ্রান্সিস ক্রিক,মরিস উইলকিনসজেমস ওয়াটসন ১৯৬২ সালে ডিএনএ ডাবল হেলিক্স কাঠামো আবিষ্কারের জন্য পুরস্কৃত হন, কিন্তু শার্গাফ পুরস্কৃত হননি। ক্ষুব্ধ হয়ে শার্গাফ বিজ্ঞানীদের কাছে চিঠি লিখেন।[৪]

২০০২ সালের ২০ জুন তিনি নিউ ইয়র্ক সিটির ম্যানহাটনে মৃত্যুবরণ করেন। [৫]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Wright, Pearce (২ জুলাই ২০০২)। "Obituary: Erwin Chargaff"the Guardian 
  2. "Heraclitean Fire: Sketches from a Life before Nature. Erwin Chargaff"Isis70 (2): 276–277। ১ জুন ১৯৭৯। ডিওআই:10.1086/352204 – journals.uchicago.edu (Atypon)-এর মাধ্যমে। 
  3. "Erwin Chargaff Summary" – www.bookrags.com-এর মাধ্যমে। 
  4. Judson, Horace Freeland (২০ অক্টোবর ২০০৩)। "Opinion | No Nobel Prize for Whining (Published 2003)" – NYTimes.com-এর মাধ্যমে। 
  5. Wade, Nicholas (৩০ জুন ২০০২)। "Erwin Chargaff, 96, Pioneer In DNA Chemical Research (Published 2002)" – NYTimes.com-এর মাধ্যমে।