জমিদার: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Bellayet (আলোচনা | অবদান)
{{unreferenced}}
JoyBot (আলোচনা | অবদান)
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, replaced: ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি → [[ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পা using AWB
২৪ নং লাইন:
আঞ্চলিক বৃহৎ জমিদারিগুলির জমিদারদের বিচার বিভাগীয় ক্ষমতা ছিল। বিচারক ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা তাদের জন্য এক রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের মর্যাদার অনুরূপ ও সেইসঙ্গে আনুষঙ্গিক ক্ষমতারও অধিকারী হওয়ায় স্বভাবতই এই জমিদারগণ কার্যত তাদের নিজ নিজ এখতিয়ারাধীন অঞ্চলের একচ্ছত্র প্রভু হয়ে ওঠেন। তারা নিয়মিত আদালতে বসতেন। একে বলা হতো জমিদারি আদালত। এই আদালতের সুবাদে জমিদারগণ কেবল ক্ষমতা ও মর্যাদাই পাননি, জরিমানা, নজরানা উপহার ও অন্যান্য মাধ্যমে তাদের কিছু আয়েরও ব্যবস্থা হয়ে যায়। ছোটখাটো জমিদাররা পর্যন্ত দেওয়ানি ও ফৌজদারি বিচার পরিচালনায় কিছু কিছু ভাগ পেতেন। চৌধুরীরা ছিলেন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এ রকমের ছোট জমিদার। দেনা দায়, চুরি ও ছোটখাটো কলহ-বিবাদ সম্পর্কিত অভিযোগের বিচার ও জরিমানা তারা করতে পারতেন। দণ্ডপ্রদান-সংক্রান্ত কোন স্থাপনা না থাকায় অপেক্ষাকৃত আরও ক্ষুদ্র জমিদারগণ জেল বা সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রদানের যোগ্য গুরুতর ও জটিল ধরনের মামলাগুলি নিকটবর্তী কাজীর আদালত বা থানাদারের কাছে পাঠিয়ে দিতেন। বিবাদ-বিসম্বাদের ক্ষেত্রে সুখ্যাতির অধিকারী অভিজাত ও অত্যন্ত কুলীন মর্যাদার জমিদারকেই সবচেয়ে বাঞ্ছিত সালিশদার হিসেবে গণ্য করা হতো। তবে কোন কোন প্রধান জমিদার আভিজাত্যের সোপানক্রমে অপেক্ষাকৃত নীচুস্তরের মর্যাদার অধিকারী হলেও দেখা যেত তারাও প্রয়োজনের তাগিদে কুলীনদের বিবাদেরও নিÓ·ত্তি দিচ্ছেন। বাস্তবিকপক্ষে, স্থানীয় পঞ্চায়েত (বর্ষীয়ান সভা) ক্ষতিগ্রস্ত তরফকে সন্তুষ্ট করতে ব্যর্থ হলে, জমিদারদের কাছে বিবাদের বিষয়ে আপিল পেশ করা হতো। জমিদারি বিচার সহজে হাতের নাগালে পাওয়া সম্ভব হলেও এবং বিচার-ব্যয় সুলভ ও দ্রুততর হলেও, নির্বাহী ও বিচার বিভাগীয় ক্ষমতা একই ব্যক্তিতে ন্যস্ত করার সহজাত কিছু দুর্বলতাও ছিল। স্থানীয় স্বশাসনের সুযোগ নিয়ে কোন কোন জমিদার প্রজাবর্গের জন্য অত্যাচারী হয়ে উঠতেন। এ ধরGনের আশঙ্কা এড়ানোর জন্য সরকার সর্বদা ব্যক্তি জমিদারদের কার্যকলাপের ওপর তীক্ষ্ম নজর রাখতেন।
 
জমিদারগণ, বিশেষ করে, প্রধান জমিদারগণকে ফৌজদারি সার্কেলে নিয়োজিত ফৌজদার বা সামরিক গভর্নরকে সামরিক সহায়তা যোগানোর শর্ত পালন করতে হতো। তারা কোন গুরুতর ধরনের বিদ্রোহ বা বহিরাক্রমণের ক্ষেত্রে ফৌজদারকে সীমিত সংখ্যক সেনা ও ভারবাহী পশু যোগান দিতেন। মুগলগণ বড় আকারের স্থায়ী সেনাবাহিনী রাখত না বলে তাদেরকে আঞ্চলিক সর্দার বা প্রধান, গোষ্ঠী বা গোত্র প্রধানের মধ্য থেকে পরোক্ষ পর্যায়ে বাছাইকৃত সেনা যোগানের ওপর খুব বেশি নির্ভর করতে হতো। এমনকি, কোন কোন জমিদার আবার ব্যক্তিগতভাবে মুগল সম্রাটের রাজকীয় বাহিনীর মনসবদারি (অভিজাত রাজপুরুষ, যার সামরিক খেতাব বা পদমর্যাদা থাকত) কর্মকর্তার তালিকারও অন্তর্ভুক্ত থাকতেন। তাদের এ সেবার জন্য (তাদের মর্যাদা অনুপাতে) জায়গির মঞ্জুরির মাধ্যমে বেতন প্রদানের ব্যবস্থা করা হতো। এছাড়াও সমভূমির ও নদীমাতৃক দেশ বাংলার প্রবল মৌসুমি বর্ষণজনিত কারণে এদেশে অশ্বারোহী বা গোলন্দাজ বাহিনী মোতায়েন কার্যত ছিল নিষ্ফল। তাই এসব বাহিনী যেটুকু কিছু কাজে লাগত তা শুধু গ্রীGষ্মই। এরকম পরিস্থিতিতে বিদ্রোহী সর্দার/প্রধান, মগ ও ফিরিঙ্গি জলদসু্যদের মোকাবেলা করার জন্য মুগলদেরকে জমিদারদের সামরিক সাহায্য-সহায়তার ওপর অনেকখানি নির্ভর করতে হতো। মগ ও ফিরিঙ্গি জলদসু্যরা তখন মাঝে মাঝেই বাংলার দক্ষিণ ও পূর্ব সীমান্তে হানাদারিতে নিয়োজিত ছিল। জমিদাররা সেনাবাহিনীর জন্য রসদ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর যোগান দিতে ও সরকারের দুশমনদের সরবরাহ বিচ্ছিন্ন করে দিতে দায়বদ্ধ ছিল। বিরাট অঞ্চলের বড় জমিদারগণ তাদের নিজ নিজ অঞ্চলে প্রতিরক্ষা, কৃষি ব্যবস্থা, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং রাজস্ব প্রেরণ ইত্যাদির নিরাপত্তা ও রায়ত বা প্রজাদের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সামরিক স্থাপনা রাখতে পারতেন। তবে কেন্দ্রীয় শক্তি তথা মুগল সম্রাটের কর্তৃত্ব হ্রাস পাওয়া ও পরবর্তীকালে বাংলা সুবার অস্থির পরিস্থিতির কারণে বাংলার জমিদার অভিজাতবর্গের ওপর নবাবের নিয়ন্ত্রণ দুর্বল হয়ে পড়ে। নবাব ও মারাঠা এবং নবাব ও [[ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি|ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিরকোম্পানি]]র সঙ্গে সংঘাতের জোয়ার-ভাটার সঙ্গে তাল রেখে জমিদাররা তাদের আনুগত্য পরিবর্তন করত।
 
==সামাজিক ভূমিকা==
৩২ নং লাইন:
মুগল শাসকদের অধীনে জমিদাররা যত না রাজস্ব সংগ্রাহক প্রতিনিধি ছিলেন তার চেয়েও বেশি ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা বা রাজপুরুষ। জমিদারি তখন উত্তরাধিকারসূত্রে বহাল রাখার অনুমতি দেওয়া হলেও জমিদারদের কিন্তু তাদের তালুকের স্বত্বাধিকারী বলে বিবেচনা করা হতো না। তখন জমিদারি তালুকগুলি কখনও জমিদারদের উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বিভাজনযোগ্য কিংবা কারও কাছে হস্তান্তরযোগ্য ছিল না। আর সে কারণে মুগল আমলে উত্তরাধিকারসূত্রে কেউ জমিদারি পেতো না। তবে মৃত জমিদারের উত্তরাধিকারী সরকারের কাছ থেকে নতুন সনদসূত্রে জমিদারি পেতে পারত। এ ধরনের সনদ অবশ্য সরকার বরাবরই বাতিল বা বাজেয়াপ্ত করার অধিকারী ছিলেন। সনদ ছিল জমিদারের জন্য অলঙ্ঘনীয় কিছু অধিকার ও দায়িত্বাবলির এক ঘোষণাপত্র। জমিদার তার স্ব-মর্যাদায় বহাল থাকতেন তার সু আচরণের সুবাদে, কোন অধিকারবলে নয়। ইচ্ছাকৃতভাবে বৈধ কর্তৃপক্ষের অবাধ্যতা কিংবা কোন চক্রান্তে কিছু না ঘটলে, নিয়মিতভাবে রাজস্ব পরিশোধে ব্যর্থতার কারণে রাষ্ট্রের কাছে জমিদারের অধিকার আপনা-আপনি লুপ্ত হতো না। প্রাকৃতিক দুর্বিপাক বা নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত অন্যকোন কারণে রায়তগণ রাজস্ব পরিশোধে ব্যর্থ হলে যেকোন জমিদার সরকারের কাছে ত্রাণ সহায়তা চাইতে পারতেন।
 
মুগল সরকারের স্বার্থে জমিদারগণ সহযোগিতা ও সেবা প্রদান করলেও, এই দুই পক্ষের মধ্যে সহজাত সংঘাত অমীমাংসিতই থেকে যায়। আওরঙ্গজেবের (১৭০৭) মৃত্যুর পর মুগল কেন্দ্রীয় শক্তির অবক্ষয় দেখা দিলে রাজপ্রতিনিধিত্বের তথা মসনদের উত্তরাাধিকার নিয়ে দ্বন্দ্ব-সংঘাত দেখা দেয়। একই সময়ে বাংলার রাজনৈতিক অঙ্গনে কোম্পানির অভু্যদয়ে নবাবের দরবারে বিভিন্ন পক্ষের কোন্দল-কলহের কারণে জমিদারদের ওপর নবাবের নির্ভরশীলতা আরও বেড়ে যায়। উদীয়মান অর্থলগ্নিকার তথা ব্যাংকিং শ্রেণী ও [[ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি|ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিরকোম্পানি]]র সঙ্গে যোগসাজশক্রমে বড় জমিদারগণ রাজনীতির মূলধারায় প্রবেশ করেন আর নবাবির জন্য বিভিন্ন প্রতিযোগীর পক্ষাবলম্বন করেন। এভাবে দেশের আর্থ-রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলায় জমিদারদের ভূমিকা গভীর প্রভাব ফেলে। সরকারের নিষ্ক্রিয়তা, কর্মকর্তাদের অদক্ষতা ও দুর্নীতির সম্মিলিত কারণে ১৭৬৫ সালে কোম্পানির কাছে দেওয়ানি (রাজস্ব কর্তৃপক্ষীয় ক্ষমতা) হস্তান্তর অবধি জমিদারদের ক্ষমতা বাড়তে থাকে।
 
===ঔপনিবেশিক আমল===
মুগল আমলের জমিদারি প্রথায় ঔপনিবেশিক শাসনামলে নানা বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটে। জমিদাররা তাদের পুরানো অনেক অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা হারান এবং একই সঙ্গে নতুন অনেক অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা লাভ করেন। পরিবর্তিত এই প্রথার রূপান্তর ১৯৫১ সালে জমিদারি ব্যবস্থার আনুষ্ঠানিক বিলোপের পূর্বপর্যন্ত অব্যাহত থাকে।
 
ইংরেজ [[[[ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি|ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি]]]] কর্তৃক বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানি লাভ ছিল জমিদারদের নতুন পদমর্যাদার প্রথম পদক্ষেপ। তবে ১৭৭২ সালে খাজনাদাতা জোতদাররা জমিদারদের স্থলাভিষিক্ত না হওয়া পর্যন্ত জমিদারি প্রথায় তেমন কোন কাঠামোগত পরিবর্তন ঘটে নি। নায়েব দেওয়ান সৈয়দ মোহাম্মদ রেজা খান কোম্পানির পক্ষে দেওয়ানি ব্যবস্থা পরিচালনা করতেন। তিনি ছিলেন মুগল রাজস্ব ব্যবস্থার প্রতি দৃঢভাবে আস্থাশীল। তাই তার কার্যকালে জমিদাররা কোন প্রকারে তাদের পদমযাÆদা রক্ষা করতে পেরেছিলেন, যদিও সেই সময়টিতে জমিদারি ক্ষমতার অবক্ষয় শুরু হয়ে গিয়েছিল। আনুষ্ঠানিক কোন ঘোষণা ছাড়াই জমিদাররা তাদের চিরাচরিত ক্ষমতা ও সুযোগ-সুবিধা হারিয়ে নিছক খাজনা আদায়কারীতে পরিণত হয়েছিলেন।
 
[[ওয়ারেন হেস্টিংস]] প্রথমে বাংলায় [[ফোর্ট উইলিয়ম|ফোর্ট উইলিয়মের]] এর [[গভর্নর]] (১৭৭২-১৭৭৪) ও পরে [[গভর্নর জেনারেল]] (১৭৭৪-১৭৮৫) নিযুক্ত হন। তিনি [[কোর্ট অব ডিরেক্টরস]]-এর নির্দেশে [[দেওয়ানি]] ব্যবস্থার দায়িত্ব নিজ হাতে গ্রহণ করেন এবং নায়েব দেওয়ান [[রেজা খান|রেজা খানকে]] অব্যাহতি দেন। ভূমি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় হেস্টিংস এক বৈপ্লবিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। শতাব্দী প্রাচীন কর ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে এসে তিনি প্রতিষ্ঠিত জমিদার ও তালুকদারদের স্থলে সেইসব ইজারাদার বা খাজনাদাতা জোতদারদের নিয়োগ করেন, যারা সবোÆচ্চ খাজনা প্রদানের অঙ্গীকার করেন। সনাতন জমিদারদের জন্য এই পদক্ষেপ ছিল নিঃসন্দেহে একটি বড় আঘাত। কিন্তু তবুও তারা এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে প্রতিবাদ করেন নি, কারণ তাদের জন্য সংগৃহীত রাজস্বের দশ শতাংশ হারে অনর্জিত মালিকানা ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ফলে তাদের ক্ষোভ অনেকটা প্রশমিত হয়। মালিকানা ভাতা বরাদ্দ করার ফলে তারা আর্থিক দিক থেকে আদৌ কোন ক্ষতির সম্মুখীন না হয়ে বরং লাভবান হন। কারণ খাজনা আদায়ের ঝামেলা ও অর্থ ব্যয় ছাড়াই তাদের উপার্জন রয়ে যায় কম-বেশি আগের মতোই।