বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Hasan.zamil (আলোচনা | অবদান) |
Hasan.zamil (আলোচনা | অবদান) |
||
৬ নং লাইন:
পার্বত্য ত্রিপুরা রাজ্য, চট্টগ্রাম, ঢাকা ও রাজশাহী (দার্জিলিং বাদে) বিভাগ এবং মালদা জেলা, আসাম প্রদেশের সঙ্গে একীভূত হয়ে এই নতুন প্রদেশ গঠন করবে। এর ফলে বঙ্গ শুধু তার বৃহৎ পূর্বাঞ্চলই হারাবে না, তাকে হিন্দীভাষী পাঁচটি রাজ্যও মধ্যপ্রদেশকে ছেড়ে দিতে হবে। অন্যদিকে পশ্চিমে সম্বলপুর এবং মধ্যপ্রদেশের পাঁচটি ওড়িয়া-ভাষী রাজ্যের সামান্য অংশ বঙ্গকে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। ফলে বঙ্গের আয়তন দাঁড়ায় ১,৪১,৫৮০ বর্গ মাইল এবং জনসংখ্যা ৫৪ মিলিয়ন যার মধ্যে ৪২ মিলিয়ন হিন্দু ও ৯ মিলিয়ন মুসলিম।
নতুন প্রদেশটির নামকরণ করা হয় “পূর্ব বঙ্গ ও আসাম” যার রাজধানী হবে ঢাকা এবং অনুষঙ্গী সদর দফতর হবে চট্টগ্রাম। এর আয়তন হবে ১,০৬,৫৪০ বর্গ মাইল এবং জনসংখ্যা হবে ৩১ মিলিয়ন যাদের মধ্যে ১৮ মিলিয়ন মুসলিম ও ১২ মিলিয়ন হিন্দু। এর প্রশাসন একটি আইন পরিষদ ও দুই সদস্যবিশিষ্ট একটি রাজস্ব বোর্ড নিয়ে গঠিত হবে এবং কলকাতা হাইকোর্টের এখতিয়ার বজায় থাকবে। সরকার নির্দেশ দেয় যে পূর্ব বঙ্গ ও আসামের পশ্চিম সীমানা স্পষ্টভাবে নির্দিষ্ট থাকবে সাথেসাথে এর ভৌগোলিক, জাতিক, ভাষিক ও সামাজিক বৈশিষ্টাবলিও নির্দিষ্ট থাকবে।
১৯০৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি লর্ড কার্জন পূর্ববঙ্গ থেকে অস্থায়ী ভারত সচিবকে লেখা এক পত্রে উল্লেখ করেছেন 'বাঙ্গালিরা নিজেদের এক মহাজাতি মনে করে এবং এক বাঙ্গালি বাবুকে লাট সাহেবের গদীতে বসাতে চায়..... বঙ্গভঙ্গের প্রস্তাব তাদের এই স্বপ্নের সফল রূপায়ণে বাঁধা দেবে। আমরা যদি তাদের আপত্তির কাছে নতিস্বীকার করি তবে ভবিষ্যতে কোনদিনই বাংলা ভাগ করতে পারব না এবং আপনারা ভারতের পূর্বপাশ্র্বে এমন এক শক্তিকে জোরদার করবেন যা এখনি প্রবল এবং ভবিষ্যতে বর্ধমান বিপদের উৎস হয়ে দাঁড়াবে।' কার্জন ইতিপূর্বে গৃহীত প্রস্তাবের সঙ্গে দার্জিলিং বাদে মালদাহসহ পুরো রাজশাহী বিভাগ এবং ঢাকা বিভাগের বাকি জেলাগুলো আসামের সঙ্গে জুড়ে দেয়ার পস্তাব করেন। এ প্রসঙ্গে বৃটিশ আমলা রিজলি মন্তব্য করেছেন, সংযুক্ত বাংলা শক্তিশালী, বিভক্ত বাংলা বিভিন্ন দিকে আকৃষ্ট হবে। কংগ্রেস নেতারা এ ভয় করছেন। তাঁদের আশঙ্কা নির্ভুল এবং সেটাই এই প্রস্তাবের সবচেয়ে বড় গুণ। আমাদের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য বৃটিশ রাজত্বের বিরোধী একটি সুসংহত দলকে টুকরো করে দুর্বল করে দেওয়া।' ঢাকায় লর্ড কার্জন এক ভাষণে ঘোষণা করেন মুসলিমদের হৃতগৌরব পুনরুদ্ধারের জন্য আলাদা প্রদেশ রচনাই তার লক্ষ্য। ছোটলাট এন্ড্রু ফ্রেজার ফরিদপুর ও বাখরগঞ্জ জেলায় ইতোমধ্যে তৎপর চরমপন্থীদের নতুন প্রদেশে দমন সহজ হবে বলে মন্তব্য করেন। সরকার তাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে ১৯শে জুলাই, ১৯০৫ সালে এবং বঙ্গভঙ্গ কার্যকর হয় একই বছরের ১৬ই অক্টোবর।
==আন্দোলনের সূত্রপাত==
এই ঘটনা এক প্রচণ্ড রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করে। পূর্ব বঙ্গের মুসলিমদের এই ধারণা হয় যে নতুন প্রদেশের ফলে শিক্ষা, কর্মসংস্থান ইত্যাদি ক্ষেত্রে তাদের সুযোগ বেড়ে যাবে। যদিও পশ্চিম বঙ্গের জনগণ এই বিভক্তি মেনে নিতে পারল না এবং প্রচুর পরিমাণে জাতীয়তাবাদী লেখা এই সময় প্রকাশিত হয়। ১৯০৬ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বঙ্গভঙ্গ রদ করার প্রস্তাবকদের জন্য এক মর্মস্পর্শী গান আমার সোনার বাংলা লেখেন, যা অনেক পরে, ১৯৭২ সালে, বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতে পরিণত হয়।এই আন্দোলনের প্রাথমিক পর্যায়ে বৃহৎ বঙ্গের অধিবাসী বাঙালি হিন্দু মুসলমানের চেতনার জগতে আলোড়ন সৃষ্টির জন্যই কবিগুরম্ন রবীন্দ্রনাথ অসংখ্য দেশাত্মবোধক সঙ্গীত রচনা, সুরারোপ ও চারণ কবিদের যত মিছিলে মিছিলে সেসব সঙ্গীত পরিবেশন করেন। ১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবর তারিখ থেকে ব্রিটিশ সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী ওই আইন কার্যকর হওয়ার কথা। সুতরাং ওই তারিখে রাজধানী কলকাতায় হরতাল আহ্বান করা হয়। সেদিন কোন বাড়িতে রান্নাবান্না হবে না। বাঙালি জনসাধারণ অরন্ধন পালন করে উপোষ থাকবে। ঔপনিবেশিক শাসকের ঘোষণায় মানচিত্র বদলালেও বাঙালির ঐক্য বজায় রাখার জন্য দেশজুড়ে হবে রাখিবন্ধন উৎসব।<ref>http://www.thedailysangbad.com/print_news.php?news_id=5092&pub_no=57</ref>
|