প্রাচ্যতত্ত্ব: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
AishikBot (আলোচনা | অবদান)
বানান ও অন্যান্য সংশোধন
Link suggestions: 6 accepted, 2 rejected, 1 skipped.
৫ নং লাইন:
===ব্যুৎপত্তি===
প্রাচ্যতত্ত্ব বলতে প্রাচ্য অর্থাৎ পাশ্চাত্যের বিপরীত সাংস্কৃতিক জগতকে বোঝায়। ইংরেজি ওরিয়েন্ট শব্দটি ফরাসি ভাষা থেকে ইংরেজি ভাষায় প্রবেশ করেছে। ফরাসি ওরিয়েন্স মূল শব্দটি আবার ল্যাটিন ওরিয়েন্স শব্দটির সমার্থক যা বিশ্বের পূর্ব অংশকে ইঙ্গিত করে যেখানে সূর্যের উদয় হয়। পরিভাষাটি অবশ্য সময়ের পরিক্রমায় ভৌগোলিক পরিভাষা রূপেও ব্যবহৃত হচ্ছে। "প্রাচ্য" শব্দটি দ্বারা মূলত ভূমধ্যসাগর এবং [[দক্ষিণ ইউরোপ|দক্ষিণ ইউরোপের]] পূর্বের দেশগুলিকে বোঝায়। ভূতুড়ে নগরী(১৯৫২)নামের বইয়ে আনিউরিন বেভেন প্রসারিত অর্থে প্রাচ্য বলতে পূর্ব এশিয়াকেও বুঝিয়েছেন যা "পশ্চিমা প্রভাবের অধীনে প্রাচ্যের জাগরণকে" ইঙ্গিত করে। এডওয়ার্ড সাঈদের মতে, প্রাচ্যতত্ত্ব "কেবল ঔপনিবেশিক সময়ে নয়, বর্তমান সময়েও পশ্চিমা বিশ্বের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক আধিপত্য বিস্তারে সহায়তা করছে।"<ref>Said, Edward. "Orientalism," New York: Vintage Books, 1979: 357</ref>
===শিল্প===
১২ নং লাইন:
 
===প্রাচ্য অধ্যয়ন===
আঠারো এবং উনিশ শতকে প্রাচ্যবিদ বলতে এমন এক পণ্ডিতকে বোঝানো হতো যিনি পূর্ব বিশ্বের ভাষা ও সাহিত্য বিশেষভাবে অধ্যয়ন করেছিলেন। এ ধরণের পণ্ডিতদের মধ্যে [[ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি|ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির]] ব্রিটিশ আধিকারিকরা ছিলেন যারা [[আরব বিশ্ব]] ও ভারতীয় সংস্কৃতি এবং ইসলামী সংস্কৃতিকে ইউরোপের সংস্কৃতির সমান হিসাবে অধ্যয়ন করা উচিত বলে মত দিয়েছিলেন।<ref>{{বই উদ্ধৃতি |শেষাংশ = Macfie |প্রথমাংশ = A. L.|বছর = 2002 |শিরোনাম = Orientalism |প্রকাশক = Longman| অবস্থান = London|ইউআরএল=https://books.google.com/books?id=0FrJAwAAQBAJ&printsec=frontcover#v=onepage&q&f=false |আইএসবিএন = 978-0582423862|সূত্র = none| পাতা = Ch One}}</ref> এমন মত দেওয়া পণ্ডিতদের মধ্যে ছিলেন ভাষাতাত্ত্বিক উইলিয়াম জোনস যার ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার উপর গবেষণা আধুনিক ভাষাতত্ত্বের জন্ম দিয়েছে। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীরা ১৮২০ সাল অবধি ভারতীয়দের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার কৌশল হিসাবে প্রাচ্যতত্ত্বের এই রূপটি সমর্থন করেছিল, যখন থমাস ব্যাবিংটন ম্যাকুলের এবং জন স্টুয়ার্ট মিলের মতো "ইংরেজরা" ইংরেজি মূল্যবোধসম্পন্ন শিক্ষার বিস্তারের দিকে মনোযোগ দেওয়া শুরু করে।<ref>Holloway (2006), pp. 1–2. "The Orientalism espoused by Warren Hastings, William Jones and the early East India Company sought to maintain British domination over the Indian subcontinent through patronage of Hindu and Muslim languages and institutions, rather than through their eclipse by English speech and aggressive European acculturation."</ref>
অধিকন্তু, ঊনিশ ও বিশ শতকে ব্রিটিশ এবং জার্মান পণ্ডিতদের মধ্যে ইহুদি ও ইহুদি ধর্মকেন্দ্রিক অধ্যয়ন জনপ্রিয়তা অর্জন করে।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://www.jewishvirtuallibrary.org/jsource/judaica/ejud_0002_0008_0_08624.html|শিরোনাম=Hebraists, Christian|ওয়েবসাইট=www.jewishvirtuallibrary.org|সংগ্রহের-তারিখ=22 October 2017}}</ref> একাডেমিক ক্ষেত্রে প্রাচ্যতাত্ত্বিক অধ্যয়ন যা নিকট ও দূর প্রাচ্যের সংস্কৃতিগুলিকে উপলব্ধি করেছিল পরবর্তীতে এশীয় গবেষণা এবং মধ্য প্রাচ্য অধ্যয়নের ক্ষেত্র হিসেবে গড়ে উঠেছে।
 
===সমালোচনামূলক অধ্যয়ন===
‘ওরিয়েন্টালিজম’ (১৯৭৮) নামক বইটিতে সংস্কৃতি সমালোচক এডওয়ার্ড সাঈদ পরিভাষাটিকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। তার মতে, প্রাচ্যতত্ত্ব হল প্রাচ্যকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা পশ্চিমা ঐতিহ্যের এমন এক কুসংস্কারযুক্ত একাডেমিক ও শৈল্পিক কিন্তু বহিরাগত-ব্যাখ্যা-যা আঠারো ও ঊনিশ শতকের ইউরোপীয় [[সাম্রাজ্যবাদ]] থেকে উদ্ভূত সাংস্কৃতিক মনোভাবের দ্বারা প্রভাবিত।<ref>Tromans, 24</ref> প্রাচ্যতত্ত্বের প্রতিপাদ্যটি আন্তোনিও গ্রামসির সাংস্কৃতিক আধিপত্যের তত্ত্ব এবং [[মিশেল ফুকো|মিশেল ফুকোর]] জ্ঞান/শক্তি সম্পর্কের তত্ত্বায়নকে পশ্চিমা জ্ঞানবাদী ঐতিহ্যের সমালোচনা করার জন্য এগিয়ে নিয়ে যায়। সাঈদ সেইসব সমকালীন পণ্ডিতদের সমালোচনা করেছেন যারা আরব-ইসলামী সংস্কৃতিকে বোঝার জন্য বাইরের লোকের ব্যাখ্যাকে স্থিরীকৃত করে ফেলেছেন। এর মধ্যে বার্নার্ড লুইস এবং ফুয়াদ আজামির মতো পণ্ডিতের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।<ref>''Orientalism'' (1978) Preface, 2003 ed. p. xv.</ref><ref name= Xypolia2011>{{সাময়িকী উদ্ধৃতি|শেষাংশ=Xypolia|প্রথমাংশ=Ilia|শিরোনাম=Orientations and Orientalism: The Governor Sir Ronald Storrs|সাময়িকী=Journal of IslamicJerusalem Studies|বছর=2011|খণ্ড=11|পাতাসমূহ=25–43|ইউআরএল=https://dergipark.org.tr/en/download/article-file/294256}}</ref>
তার বিশ্লেষণগুলি অবশ্য ইউরোপীয় সাহিত্যে বিশেষত ফরাসী সাহিত্যে প্রাচ্যতত্ত্ব সম্পর্কিত ধারনাগুলোর উপর আলোকপাত করে। দৃশ্যশিল্প কিংবা প্রাচ্যকেন্দ্রিক চিত্রকর্মগুলো তার সমালোচনার আওতাভুক্ত নয়। এই বিষয়ে শিল্প ইতিহাসবিদ লিন্ডা নোচলিন সাইদের সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ পদ্ধতিগুলি "অসম ফলাফল সহ" প্রয়োগ করেছিলেন। ২০১০ সালে ইবনে ওয়ারাক জিন-লিয়ন গারুমের ‘সাপুড়ে’ চিত্রকর্মটি নিয়ে নোচলিনের সমালোচনাকে খণ্ডন করার এবং সাধারণভাবে প্রাচ্যকেন্দ্রিক চিত্রকর্মের সাফাই গেয়ে ‘লিন্ডা নোচলিন এবং কাল্পনিক প্রাচ্য’ শিরোনামে একটি প্রবন্ধ রচনা করেন।
 
একাডেমিক জগতে ওরিয়েন্টালিজম (১৯৭৮) বইটি শীঘ্রই উত্তর-ঔপনিবেশিক সাংস্কৃতিক অধ্যয়নের ক্ষেত্রে একটা মূল পাঠ্য হিসেবে পরিগণিত হয়। তদুপরি, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নাগরিকত্ব ধারণাটির বিশ্লেষণে প্রাচ্যতত্ত্ব নাগরিকত্বের ধারণাটিকে [[জ্ঞানতত্ত্ব|জ্ঞানতত্ত্বের]] একটি সমস্যা হিসাবে উপস্থাপন করেছে। কারণ নাগরিকত্ব ধারণাটির উদ্ভব পশ্চিমা বিশ্বের একটা সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে। এ কারণে নাগরিকত্বকে সংজ্ঞায়িত করার সমস্যাটি সঙ্কটকালীন ইউরোপের ধারণাটিকে নতুন রূপ প্রদান করে।<ref>Mura, Andrea, (2015) "[https://www.academia.edu/21512966/Dis-orienting_Austerity_The_Indebted_Citizen_as_the_New_Soul_of_Europe Disorienting Austerity: The Indebted Citizen as the New Soul of Europe]" In Engin Isin (ed.), ''Citizenship After Orientalism: Transforming Political Theory''. Basingstoke: Palgrave Macmillan.</ref>
এ ছাড়াও, সাঈদের মতে, প্রাচ্যতত্ত্ব, ‘প্রতিনিধিত্বের ধারণা হিসাবে একটি তাত্ত্বিক ধারণা: যা প্রাচ্যের এমন একটি পর্যায়কে ইঙ্গিত করে যেখানে পুরো প্রাচ্য একটা ধারণার জগতে সীমাবদ্ধ। এই ধারণাটি পশ্চিমাদের কাছে প্রাচ্যকে ‘কম ভীতিকর’ হিসেবে উপস্থাপন করতে সহায়তা করে বলে সাঈদ মত দিয়েছেন। পশ্চিমা বিশ্বের এ ধরনের চিন্তাভাবনাই উপনিবেশবাদের মূল কারণ বলে তিনি মনে করতেন। অধিকন্তু, ‘সাম্রাজ্য: সংক্ষিপ্ত পরিচিতি’ (২০০০), নামক বইয়ে স্টিফেন হো বলেছেন যে পশ্চিমা দেশগুলি এবং তাদের সাম্রাজ্য অনুন্নত দেশগুলির শোষণ এবং এক দেশ থেকে অন্য দেশে অবৈধভাবে সম্পদ ও শ্রম আহরণের দ্বারা নির্মিত হয়েছিল।<ref>{{বই উদ্ধৃতি|শেষাংশ১=Howe|প্রথমাংশ১=Stephen|শিরোনাম=Empire:A Very Short Introduction|বছর=2011|ইউআরএল=https://archive.org/details/memoirintroducti00cous_403|প্রকাশক=Oxford University press|পাতাসমূহ=[https://archive.org/details/memoirintroducti00cous_403/page/n81 73]–77}}</ref>