সাহাবি: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Md Kabul Sheikh (আলোচনা | অবদান)
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
৫ নং লাইন:
 
==সংজ্ঞা==
‘সাহাবী’ শব্দটি আরবী ভাষার ‘সুহবত’ শব্দের একটি রূপ। একবচনে ‘সাহেব’ ও ‘সাহাবী’ এবং বহুবচনে ‘সাহাব’ ব্যবহৃত হয়। আভিধানিক অর্থ সঙ্গী, সাথী, সহচর, এক সাথে জীবন যাপনকারী অথবা সাহচর্যে অবস্থানকারী। ইসলামি পরিভাষায় ‘সাহাবা’ শব্দটি দ্বারা মুহাম্মদেরেরমুহাম্মদ (সাঃ) এর সঙ্গী-সাথীদের বুঝায়। ‘সাহেব’ শব্দটির বহুবচনের আরো কয়েকটি রূপ আছে।আছে - তবে মুহাম্মদেরমুহাম্মদ (সাঃ) এর সঙ্গী-সাথীদের বুঝানোর জন্য ‘সাহেব’-এর বহুবচনে ‘সাহাবা’ ছাড়া ‘আসহাব’ ও ‘সাহব’ও ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
 
[[ইবনে হাজার]] ''‘আল–ইসাবা ফী তাময়ীযিস সাহাবা’'' গ্রন্থে সাহাবীর সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন: "সাহাবী সেই ব্যক্তি যিনি মুহাম্মদেরমুহাম্মদ (সাঃ) প্রতি ঈমান সহকারে তার সাক্ষাৎ লাভ করেছেন এবং ইসলামের ওপরই মৃত্যুবরণ করেছেন।"
 
সাহাবীর উল্লেখিত সংজ্ঞাটি [[ইমাম বুখারী]], ইমাম [[আহমদ বিন হাম্বল|ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল]]সহ অধিকাংশ পণ্ডিতের নিকট সর্বাধিক সঠিক বলে বিবেচিত।বিবেচিত, অবশ্য সাহাবীর সংজ্ঞার ক্ষেত্রে আরো কয়েকটি অপ্রসিদ্ধ মতামতও আছে। যেমন, কেউ কেউ সাক্ষাতের (আল-লিকা) স্থলে চোখে দেখার (রু’ইয়াত) শর্ত আরোপ করেছেন।করেছেন, কিন্তু তাতে এমন সব ব্যক্তি বাদ পড়ে যাবেন যারা মুমিন হওয়া সত্ত্বেও অন্ধত্বের কারণে মুহাম্মদেকেমুহাম্মদ (সাঃ) কে চোখে দেখার সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।হয়েছেন যেমন: আবদুল্লাহ ইবন উম্মে মাকতুম। অথচ তিনি অতি মর্যাদাবান সাহাবী ছিলেন।
 
সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব বলেন:
{{quote|সাহাবী হওয়ার জন্য শর্ত হচ্ছে, এক বা দু’বছর মুহাম্মদেরমুহাম্মদ (সাঃ) এর সাহচর্য অথবা তার সাথে দু’একটি গাযওয়া বা যুদ্ধে অংশগ্রহণ। কিছু সংখ্যক উলামায়ে উসূল ও উলামায়ে ইলমুল কালাম-এর মতে, সাহাবী হওয়ার জন্য শর্ত হচ্ছে, রাসূলুল্লাহর সা. দীর্ঘ সাহচর্য ও সুন্নাতে নববীর অনুসরণের ক্ষেত্রে তার পরিচিতি ও খ্যাতি। কেউ কেউ আবার বয়ঃপ্রাপ্ত হওয়ার শর্ত আরোপ করেছেন। একদল আলিমের মতে যে ব্যক্তি বয়ঃপ্রাপ্ত হওয়ার পর এক নজর মুহাম্মদকেমুহাম্মদ (সাঃ) কে দেখেছেন, তিনি সাহাবী। আর যিনি বয়ঃপ্রাপ্ত হওয়ার পূর্বে মুহাম্মদকে দেখেছেন, তিনিও সাহাবী।|sign=|source=}}
 
তবে এ হিসেবে যে, মুহাম্মদ (সাঃ) তাকে দেখেছেন।দেখেছেন, তিনি মুহাম্মদকেমুহাম্মদ (সাঃ) কে দেখেছেন সে হিসেবে নয়।নয়, কিন্তু হাদীস বর্ণনার দিক দিয়ে এমন ব্যক্তি সাহাবী নন, বরং তাবঈরতাবেঈর মর্যাদা লাভ করবেন। প্রশ্ন হতে পারে, যদি কেউ মুহাম্মদেরমুহাম্মদ (সাঃ) এর মৃত্যুর পর সৎকারের পূর্বে তাকে দেখে থাকেন, যেমনটি ঘটেছিল আরবী কবি আবু জুয়ারিব আল-হুজালীর ক্ষেত্রে- তার ব্যাপারে কি সিদ্ধান্ত হবে? আলিমদের মধ্যে এ ব্যাপারে মতবিরোধ আছে। তবে গ্রহণযোগ্য মত হলো, এমন ব্যক্তি সাহাবীদের দলভুক্ত হবেন না।
 
==সাহাবীদের মর্যাদা==
সাহাবীদের পরস্পরের মধ্যে মর্যাদা হিসেবে স্তরভেদ থাকতে পারে। ইবন আবদিল বার সাহাবীদের মর্যাদা বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন: মুহাম্মদেরমুহাম্মদ (সাঃ) এর সুহবত ও তার সুন্নাতের হিফাজত ও ইশায়াতের দুর্লভ মর্যাদা আল্লাহ এইসব মহান ব্যক্তির ভাগ্যে লিখে রেখেছিলেন।রেখেছিলেন, এ কারণেই তাঁরা ‘খায়রুল কুরুন’ ও খায়রু উম্মাতিন’-এর মর্যাদার অধিকারী হয়েছেন।হয়েছেন - হাফেজ আবু বকর ইবন খতীব আল-বাগদাদী বলেন, "উল্লেখিত ভাব ও বিষয়ের হাদীস ও আখবারের সংখ্যা অনেক এবং সবই ‘নাসসুল কুরআনের’ ভাবের সাথে সংগতিপূর্ণ। অর্থাৎ তাতে সাহাবীদের সুমহান মর্যাদা, আদালাত, পবিত্রতা ইত্যাদি ভাব ব্যক্ত হয়েছে। আল্লাহ ও রাসূল (সাঃ) কর্তৃক তাদের আদালাতের ঘোষণা দানের পর পৃথিবীর আর কোন মানুষের সনদের মুখোপেক্ষী তারা নন। আল্লাহ ও রাসূল তাদের সম্পর্কে কোন ঘোষণা না দিলেও তাদের হিজরাত, জিহাদ, সাহায্য, আল্লাহর রাহে ধন-সম্পদ ব্যয়, পিতা ও সন্তানদের হত্যা, দ্বীনের ব্যাপারে উপদেশ, ঈমান ও ইয়াকীনের দৃঢ়তা ইত্যাদি কর্মকাণ্ড এ কথা প্রমাণ করতো যে, আদালাত, বিশ্বাস, পবিত্রতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে কিয়ামত পর্যন্ত পৃথিবীতে যত ন্যায়পরায়ণ ও পবিত্র ব্যক্তিই জন্মগ্রহণ করুন না কেন, তারা ছিলেন সকলের থেকে উত্তম।"
 
আল্লাহ ও রাসূল তাদের সম্পর্কে কোন ঘোষণা না দিলেও তাদের হিজরাত, জিহাদ, সাহায্য, আল্লাহর রাহে ধন-সম্পদ ব্যয়, পিতা ও সন্তানদের হত্যা, দ্বীনের ব্যাপারে উপদেশ, ঈমান ও ইয়াকীনের দৃঢ়তা ইত্যাদি কর্মকাণ্ড এ কথা প্রমাণ করতো যে, আদালাত, বিশ্বাস, পবিত্রতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে কিয়ামত পর্যন্ত পৃথিবীতে যত ন্যায়পরায়ণ ও পবিত্র ব্যক্তিই জন্মগ্রহণ করুন না কেন, তারা ছিলেন সকলের থেকে উত্তম।"
কোন কোন সাহাবীর জীবদ্দশায় মুহাম্মদ তাদেরকে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। তবে মুসলিম পণ্ডিতদের অনেকে সাহাবীদের সকলেই জান্নাতী বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। ইবনে হাজার ''আল–ইসাবা'' গ্রন্থে স্পেনের ইমাম ইবন হাযামের মন্তব্য উদ্ধৃত করেছেন। তিনি বলেন, "সাহাবীদের সকলেই নিশ্চিতভাবে জান্নাতী।"
 
কোন কোন সাহাবীর জীবদ্দশায় মুহাম্মদ (সাঃ) তাদেরকে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। তবে মুসলিম পণ্ডিতদের অনেকে সাহাবীদের সকলেই জান্নাতী বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। ইবনে হাজার '''"আল–ইসাবা"''' গ্রন্থে স্পেনের ইমাম ইবন হাযামের মন্তব্য উদ্ধৃত করেছেন। তিনি বলেন, "সাহাবীদের সকলেই নিশ্চিতভাবে জান্নাতী।"
মুহাম্মদ তার সাহাবীদের গালি দেওয়া বা হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে সমালোচনা করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন, "আল্লাহ, আল্লাহ! আমার পরে তোমরা তাদেরকে সমালোচনার লক্ষ্যে পরিণত করো না। তাদেরকে যারা ভালোবাসে, আমার মুহাব্বতের খাতিরেই তারা ভালোবাসে, আর যারা তাদেরকে হিংসা করে, আমার প্রতি হিংসার কারণেই তারা তা করে।"
 
মুহাম্মদ (সাঃ) তার সাহাবীদের গালি দেওয়া বা হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে সমালোচনা করতে নিষেধ করেছেন।করেছেন, তিনি বলেছেন, "আল্লাহ, আল্লাহ! আমার পরে তোমরা তাদেরকে সমালোচনার লক্ষ্যে পরিণত করো না। তাদেরকে যারা ভালোবাসে, আমার মুহাব্বতের খাতিরেই তারা ভালোবাসে, আর যারা তাদেরকে হিংসা করে, আমার প্রতি হিংসার কারণেই তারা তা করে।"
 
কুরআনের একাধিক আয়াত ও অসংখ্য হাদিসে সাহাবীদের মর্যাদা ও ফজীলত বর্ণিত হয়েছে।
২৯ ⟶ ৩২ নং লাইন:
{{quote|"এ সম্পদ অভাবগ্রস্ত মুহাজিরদের জন্য যারা নিজেদের ঘরবাড়ী ও সম্পত্তি হতে উৎখাত হয়েছে। তারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনা করে এবং আল্লাহ ও তার রাসূলের সাহায্য করে। তারাই তো সত্যাশ্রয়ী। মুহাজিরদের আগমনের পূর্বে যারা এই নগরীতে (মদীনা) বসবাস করেছে ও ঈমান এনেছে তারা মুহাজিরদের ভালোবাসে এবং মুহাজিরদের যা দেওয়া হয়েছে তার জন্য তারা অন্তরে আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে না, আর তারা তাদেরকে নিজেদের ওপর প্রাধান্য দেয় নিজেরা অভাবগ্রস্ত হলেও।" সূরাআল–হাশর, ৮–৯}} এ আয়াতে প্রথম মুহাজির ও পরে আনসারদের প্রশংসা করা হয়েছে।
 
এমনিভাবে সূরা আল ফাত্‌হ-১৮, সূরা আল ওয়াকিয়া-১০, এবং সূরা আল আনফালের ৬৪ সংখ্যক আয়াতসহ বিভিন্ন আয়াতে কোথাও প্রত্যক্ষ আবার কোথাও পরোক্ষভাবে সাহাবায়ে কিরামের প্রশংসা এসেছে। অনুরূপভাবে মুহাম্মদ (সাঃ) নিজেও তার সাহাবীদের শানে বক্তব্য রেখেছেন। তাদের সম্মান, মর্যাদা ও স্থান নির্ধারণ করে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। যেমন আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ থেকে বর্ণিত। মুহাম্মদ বলেছেন:
 
{{quote|"আমার উম্মাতের মধ্যে সর্বোত্তম লোক হচ্ছে আমার যুগের লোকেরা।লোকেরা, তারপর তার পরের যুগের লোকেরা, তারপর তার পরের যুগের লোকেরা।লোকেরা্‌ তারপর এমন একদল লোকের আবির্ভাব হবে যাদের কসম হবে তাদের সাক্ষ্যের অগ্রগামী।অগ্রগামী তাদের কাছে সাক্ষী চাওয়ার আগেই তারা সাক্ষ্য দেবে।"|sign=|source=}}
 
{{quote|"তোমরা আমার সাহাবীদের গালি দেবেনা, কসম সেই সত্তার যার হাতে আমার জীবন, তোমাদের কেউ যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ সোনাও ব্যয় করো তবুও তাদের যে কোন একজনের ‘মূদ’ বা তার অর্ধেক পরিমাণ যবের সমতুল্য হবে না।"}}
 
মুহাম্মদ (সাঃ) থেকে ইবন আব্বাস বর্ণনা করেছেন:
{{quote|"তোমাদেরকে আল্লাহর কিতাবের যা কিছু দেওয়া হয়েছে, তার ওপর আমল করতে হবে। তা তরক করা সম্পর্কে তোমাদের কারো কোন ওজর-আপত্তি গ্রহণযোগ্য হবে না। যদি আল্লাহর কিতাবে কোন সিদ্ধান্ত না পাওয়া যায় তাহলে আমার সুন্নাতে খোঁজ করতে থাক। যদি তাতেও না পাওয়া যায় তাহলে আমার সাহাবীদের কথায় তালাশ করতে হবে। আমার সাহাবীরা আকাশের তারকা সদৃশ। তার কোন একটিকে তোমরা গ্রহণ করলে সঠিক পথ পাবে। আর আমার সাহাবীদের পারস্পরিক ইখতিলাফ বা মতপার্থক্য তোমাদের জন্য রহমত স্বরূপ।"}}
 
সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব উমার ইবনুল খাত্তাব থেকে বর্ণনা করেছেন।করেছেন মুহাম্মদরাসূলুল্লাহ (সাঃ)বলেছেন:
{{quote|"আমার পরে আমার সাহাবীদের পারস্পরিক মতপার্থক্য সম্পর্কে আমার ‘রব’- প্রভুকে জিজ্ঞেস করলাম। আল্লাহ আমার কাছে ওহী পাঠালেনঃ হে মুহাম্মাদ, তোমার সাহাবীরা আমার কাছে আকাশের তারকা সদৃশ। তারকার মত তারাও একটি থেকে অন্যটি উজ্জ্বলতর। তাদের বিতর্কিত বিষয়ের কোন একটিকে যে আঁকড়ে থাকবে, আমার কাছে সে হবে হিদায়াতের ওপরে।"}}
 
শাফঈ আনাস ইবন মালিকের সনদে একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন।করেছেন মুহাম্মদরাসূলুল্লাহ (সাঃ)বলেছেন,: আল্লাহ আমাকে ও আমার সাহাবীদেরকে মনোনীত করেছেন। তাদের সাথে আমার বৈবাহিক সম্পর্ক কায়েম করে দিয়েছেন এবং তাদেরকে আমার আনসার বানিয়ে দিয়েছেন। শেষ যামানায় এমন একদল লোকের আবির্ভাব হবে যারা তাদের অবমাননা করবে। সাবধান, তোমরা তাদের ছেলে-মেয়ে বিয়ে করবে না তাদের কাছে ছেলে-মেয়ে বিয়েও দেবে না। সাবধান, তাদের সাথে নামায পড়বে না, তাদের জানাযাও পড়বে না। তাদের ওপর আল্লাহর লা’নত।
 
মিশকাত শরীফে একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। মুহাম্মদরাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, আমার উম্মাতের মধ্যে একটি ফিরকাই নিশ্চিত জান্নাতী হবে।হবে, জিজ্ঞেস করা হলো, তারা কে? বললেনঃ যারা আমার ও আমার সাহাবীদের আদর্শের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। অন্য একটি হাদীসে তিনি বলেছেন, "আমার উম্মাতের মধ্যে সাহাবীদের স্থান তেমন, যেমন খাবারের মধ্যে লবণের স্থান।"
 
==সাহাবীদের সংখ্যা==