২০২০ দিল্লি দাঙ্গা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Ponirul Panda (আলোচনা | অবদান)
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
Ponirul Panda (আলোচনা | অবদান)
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
১৮০ নং লাইন:
 
সেদিন পুলিশ নিয়ন্ত্রণ কক্ষে এক হাজার, পাঁচশত জরুরি কল করা হয়।<ref name="PCR Calls" /> বেশ কয়েকটি হাসপাতাল থেকে বিলম্বিত ময়না তদন্তের অভিযোগ ওঠে এবং নাগরিক বলে দাবি করা প্রত্যক্ষদর্শী ও ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিরা বিবৃতি দিয়েছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ দাঙ্গার জন্য কপিল মিশ্রকে দোষারোপ করেন, একজন ব্যক্তি বলেন যে একটি ভিড় পাথর ও তরোয়াল দিয়ে তাদের আক্রমণ করে তাকবীরের জপ করার সময়।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://thewire.in/communalism/delhi-riots-gtb-hospital-deaths|শিরোনাম=At GTB Hospital, Families of Delhi Riot Victims Wait for Bodies to Be Released|ওয়েবসাইট=The Wire|সংগ্রহের-তারিখ=2020-03-01}}</ref>
জনৈক ৫১ বছর বয়সী বিনোদ কুমার উত্তরপূর্ব দিল্লির ব্রহ্মপুরী এলাকায় ২৪ ফেব্রুয়ারি রাতে নিহত হলেন। তাঁর ২৫ বছর বয়সী ছেলে নীতিন কুমার দারুণ আহত অবস্থায় বাড়ীতে শয্যাশায়ী হয়ে আছেন।
 
দুজনে ২৪ ফেব্রুয়ারি রাতে বাইকে করে ওষুধের দোকানে যাচ্ছিলেন, এমন সময়ে তাঁরা একদল লোকের হাতে পড়ে যান। তারা দুজনকে লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকেন। এতেই শেষ নয়, সাথে বাইকে আগুনও ধরিয়ে দেয়।
 
বিছানায় শুয়ে সাক্ষাৎকারে নীতিন বলেন, তাঁদের এভাবে আক্রমণের শিকার হওয়ার কোনও কারণ দেখতে পাচ্ছেন না – কেবল বাইকের হেডলাইটের ওপরে জয় শ্রীরাম স্টিকার লাগানো ছাড়া।
 
সারা ভারতে ইতোমধ্যেই ভাইরাল হয়ে গেছে দুটো মোবাইল ভিডিও, দুটোই ব্রহ্মপুরীর ঘটনার ওপর।
 
প্রথম ভিডিওতে দেখা যাছে তিনজন টুপিধারী বিনোদ কুমারের ডেডবডি নিয়ে রাস্তার ধারে ফেলে দিচ্ছে, অন্যদিকে তার বাইকে আগুন জ্বলে উঠছে।
 
THIS VIDEO WAS SHOT ON NIGHT OF 24 FEB. THE MAN LYING ON ROAD IS VINOD KUMAR. THE INJURED IS HIS SON NITIN. VINOD DIED A COUPLE OF HOURS LATER.
NITIN TELLS ME HE SEES NO REASON FOR UNPROVOKED ATTACK OTHER THAN THE JAI SHRI RAM STICKER ON HIS BIKE. IT'S HIS BIKE THAT'S BURNING PIC.TWITTER.COM/CIBH6FXYVB
 
— SWATI GOEL SHARMA (@SWATI_GS) FEBRUARY 26, 2020
 
 
দ্বিতীয় ভিডিওতে পুড়ে যাওয়া বাইকের সামনে একদল লোককে “আল্লাহু আকবর, নারায়ে তকবির” স্লোগান দিতে দেখা যাচ্ছে।
 
যিনি ভিডিও তুলেছেন, তাকে দেখা না দেখা গেলেও তার কণ্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে – “দেখুন, মুসলিমরা হিন্দুদের কি হাল করে ছেড়েছে। মুসলিমরা আমাদের একজন হিন্দু ভাইয়ের লাশ পাঠিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে তাদের কি অসীম ক্ষমতা। ব্রহ্মপুরীর এক নম্বর গলির ভিডিও এটা। এই ভিডিও একটা বার্তা পাঠাচ্ছে – লাশ তুলতে গেলে আরও লাশের পাহাড় তৈরি হবে।”
 
 
দাঙ্গা পীড়িত এলাকায় অপরিসীম নৈঃশব্দ্য বিরাজ করছে
ব্রহ্মপুরীর ভীত বাসিন্দারা জানাচ্ছেন সামনের গলিতে পড়ে থাকা ধ্বংসস্তুপ দেখেই বোঝা যাচ্ছে ২৪ ফেব্রুয়ারি রাতে কি পরিমাণ অগ্নিকাণ্ড ও হিংসা হয়েছে উক্ত এলাকায়।
 
২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল এগারো নাগাদ দেখা গেল, পুরো এলাকা জুড়ে একটা অদ্ভুত অস্বস্তিকর নৈঃশব্দ্য বিরাজ করছে।
 
এলাকায় সব জায়গায় শুধুই পোড়া জিনিসে ভর্তি। সব দোকান মোটামুটি বন্ধ। রাস্তায় কোনও স্থানীয় মানুষকে দেখা যাচ্ছে না। কেবল খাকি ইউনিফর্ম পড়া পুলিসকেই দেখা যাচ্ছে।
 
দুপুরবেলায় দেখা গেলে এলাকায় কিছুটা স্বাভাবিকতা ফিরে এসেছে। গলিতে দেখা গেল একটা জটলা দেখা যাচ্ছে, সেখানে ফিসফিস করে কথা বলছে। কিছু টোটো রিকশা চলছে বটে, কিন্তু ছয় নম্বর গলি পর্যন্ত তাদের যাতায়াত।
 
এক নম্বর গলির একেবারে সামনেই পুড়ে যাওয়া বাইকের ধ্বংসাবশেষ দেখা যাচ্ছে।
 
স্থানীয় বাসিন্দা সনু বললেন, “আপনারা এখানে এসেছেন, এটাই বড় কথা। এখানে অদ্যাবধি কেউ আসেনি। আমাদের লোককে মারা হয়েছে।”
 
সনুই আমাদের ‘খজুর গলিতে’ অবস্থিত বিনোদের বাড়ীতে নিয়ে গেলেন।
 
সেখানে দাঁড়ানো দুই মহিলা আমাদের এলাকা ত্যাগ করতে বললেন। তারা বললেন, আমাদের উপস্থিতি তাদের কাছে অস্বস্তিকর। কিন্তু নীতিন বললেন, “আসুন আসুন।”
 
বিছানায় শুয়ে শুয়ে মাথাভরতি ব্যান্ডেজ বাঁধা নীতিন বললেন, কাল রাতে কি হয়েছিল, “এই ধরুন রাত দশ বাজে। আমার বাবা কল্যাণ মেডিক্যাল স্টোরে যাবেন বলে তৈরি হচ্ছিলেন। আমি বললাম, বাবা আমিও তোমার সাথে যাব। কল্যাণ মেডিক্যাল স্টোর বেশী দূরে নয় – গলি বেরোলেই। তা আমরা বাইকে করে ওষুধ কিনলাম। তারপর যখন ফিরব, তখন দেখি একটা বড় পাথর আমার মাথায় লাগল, আমি ভারসাম্য হারালাম। সঙ্গে সঙ্গেই বাইক থেকে পড়ে গেলাম। তারপরই চৈতন্য হারালাম। কতক্ষণ চৈতন্য হারিয়েছিলাম বলতে পারব না।” তিনি থামলেন।
 
নীতিন বললেন, তিনি যখন চৈতন্য ফেরত পেলেন, তখন দেখলেন, সেখানে ৩০-৪০ জন দাঁড়িয়ে আছে। “তাদের দেখেই বুঝলাম এরা সব মোহমেদান (মুসলিম)। এদের হাবভাব দেখে বুঝলাম আমাদের মারতেই এসেছে।”
 
“তারপর কোনও কথাবার্তা ছাড়াই আমাদের ওপর লাঠি চালাতে শুরু করল। পাশাপাশি আমাদের লক্ষ্য করে পাথর ছোঁড়াও হচ্ছিল। যন্ত্রণায় আমরা চোখ বুজে ফেললাম।”
 
নীতিন বললেন, তিনি কোনওরকমে পালাতে পেরেছিলেন। পালাতে পালাতেই দেখেন তার সাধের বাইকে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। নীতিন বললেন, তার চেনা কিছু লোক বিনোদের ডেডবডি রাস্তার ধারে ফেলতে দেখেছেন।
 
নীতিন বললেন, “আমি আশপাশের দরজায় নক করেছিলাম, কিন্তু কেউই দরজা খোলেনি। সম্ভবত তারা দরজা খুলতেও ভয় পাচ্ছিল। সব জায়গা থেকেই আমাকে লক্ষ্য করে পাথর ধেয়ে আসছিল।”
 
নীতিন বললেন, “সৌভাগ্যক্রমে একজন প্রতিবেশী আমাকে দেখতে পেয়ে স্কুটিতে চাপিয়ে শাস্ত্রী পার্কের জগ প্রবেশ চন্দ্র হাসপাতালে নিয়ে গেলেন।”
 
“আমি যখন বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলাম, ডাক্তার বললেন, এত কিছুক্ষণ আগেই মারা গেছেন। তখন মাঝরাত হয়ে গেছে। আমার মাথায় তখন বেশ কয়েকটা সেলাই পড়েছে।”
 
বিনোদ কুমারের আত্মীয় বলতে ছিল তার স্ত্রী মধু, এক পুত্র ও এক কন্যা। জনৈক মোহম্মদ হানিফ জানালেন, এলাকায় বিনোদ কুমারের কোনও আত্মীয় নেই বললেই চলে।
 
বিনোদের পরিবার আমাদের জানালেন তারা এখনও পোস্টমর্টেমের রিপোর্ট পাননি।
 
“আমি সর্বস্ব হারালাম, আমার কোনও অভিভাবক রইল না।” বলছিলেন নীতিন। তিনি এক বছর আগেই বিবাহ করেছেন, তার একটি ছেলেও আছে।
 
নীতিন জানালেন, কে বা কারা তাদের ভিডিও তুলেছেন, তা জানেন না। “আমি আজ বিকেলেই প্রথম ভিডিও দেখলাম। আমি জানি না কে ভিডিও তুলেছে। সম্ভবত আমাদের কোনও প্রতিবেশীই ভিডিওটা তুলেছে। কেন আমাদের সাহায্য না করে শুধু ভিডিও তুলল, বুঝতে পারছি না। কোনও উদ্দেশ্য আছে হয়তো।”
 
এক নং গলি থেকে মাত্র ৫০০ গজ দূরে নীতিনের বাড়ী দাঁড়িয়ে। তিনি বললেন, তিনি মোটেই জানতেন না, এলাকা এত অশান্ত হয়ে গেছে। “আমি যদি জানতাম এরকম হচ্ছে, আমি মোটেই বাইরে বেরুতাম, বাবাকেও বেরুতে দিতুম না। এরকম দাঙ্গার মত পরিস্থিতিতে কেউ বাইরে যায়?”
 
নীতিন পরিষ্কার বললেন, তাদের ওপর এই বিনা প্ররোচনায় আক্রমণের একমাত্র কারণ বাইকের হেডলাইটের ওপর থাকা জয় শ্রীরাম স্টিকার থাকা। আর আক্রমণকারীরা এক নং গলিতে ঢুকে হামলা করার কারণ একটাই – গলির ১০০% বাসিন্দা হিন্দু ধর্মাবলম্বী।
 
নীতিন বললেন, “আমি তাদের সবাইকেই ফেজ টুপি পড়ে থাকতে দেখেছি।” আমি জিজ্ঞাসা করলাম, “তারা কি স্থানীয় নাকি বহিরাগত?” তখন নীতিন বললেন, “এদের সাথে আখাড়ে ওয়ালে গলি বা কল্যাণ গলির কোনও সম্পর্ক আছে মনে হয়না। বহিরাগত হোক বা স্থানীয়, তাতে কিছু আসে যায় না। এরা হামলাকারী এটাই আসল কথা।”
 
আমরা আগেই লক্ষ্য করেছিলাম গোকুলপুরীর ডানদিক ও বাঁদিক জুড়ে যে ব্রহ্মপুরী এলাকা রয়েছে, তার বাসিন্দারা প্রত্যেকেই হিন্দু। আবার ব্রহ্মপুরীর বাঁদিকে যে এলাকা আছে চৌহান বাঙ্গর নামে, সেটা সম্পূর্ণ মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা।
 
নীতিন অভিযোগ করলেন, তারা আক্রান্ত হবার পর অন্তত ৩০-৪০ বার জাফরাবাদ থানায় ফোন করেছিলেন, কিন্তু কেউই একবারও ফোন তোলেনি।
 
নীতিন বলেন, “আমি আম্বুলেন্সকেও ফোন করেছিলাম, কিন্তু সেখান থেকেও সাড়া পাইনি। এখনও পর্যন্ত এফআইআর করার সুযোগ পাইনি।”
 
 
বাড়ী পুড়ছে, বাসিন্দারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যাচ্ছেন
এক নং গলির ঠিক ডানদিকে ৬৭ বছর বয়স্ক সুশীল শর্মা তার ৬০ বছর বয়স্কা স্ত্রী উমাকে নিয়ে বাড়ীতে থাকেন। এই পরিবার নাতিনাতনিদের নিয়ে বাড়ীর দ্বিতলে থাকেন। প্রথম তলা পারকিং লট হিসাবে ব্যবহার করেন।
 
২৪ ফেব্রুয়ারি রাতে একতলায় আগুন জ্বালানো হয়। সেখানে থাকা দুটি গাড়ী ও দুটি বাইক সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়ে যায়। সেখানে অবস্থিত ইলেকট্রিক মিটারও ভস্মীভূত হয়ে যায় এবং পুড়ে যাওয়া তার আমরা এখনও দেখতে পাচ্ছি।
 
“কাল মাঝরাতের পর বড় বড় ইট আর পাথর কোথা থেকে কে জানে, আমাদের বাড়ী লক্ষ করে পড়তে লাগল। আমরা দৌড়তে দৌড়তে একতলায় এসে দেখলাম আমাদের গাড়ী ও বাইক সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়ে গেছে।” সুশীল শর্মা বললেন।
 
“সব জায়গায় আগুন ধরে যাচ্ছিল। আমরা অসহায় ভাবে দেখছিলাম সেই অগ্নিকাণ্ড। পাশাপাশি পাথর পতনের শব্দ হচ্ছিল। আমরা আত্মরক্ষার জন্য বাধ্য হয়ে দোতলায় পালালাম। তারপর একটা মই নিয়ে প্রতিবেশীর বাড়ীতে পালিয়ে গেলাম।” সুশীল থামলেন।
 
“দেখুন! দেওয়াল আমার উচ্চতার প্রায় দ্বিগুণ উঁচু! তাও আমাকে এই বয়সে মই দিয়ে বেয়ে উঠে অন্য জায়গায় চলে যেতে হয়েছে।” উমা বলে উঠলেন।
 
আমরা সর্বত্র বড় বড় পাথর দেখতে পাচ্ছিলাম। সাথে ইটও। ওয়াশ বেসিন ভেঙ্গে চুরমার। দেওয়ালে ফাটল ধরেছে।
 
শর্মা দম্পতি ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানালেন এভাবে প্রাণে বেঁচেছেন বলেন। সাথে এও জানালেন, তারা জানেন বিনোদ কুমার তাদের বাড়ীর সামনেই মারা গিয়েছেন।
 
“আমরা তার শোচনীয় মৃত্যুর সংবাদ শেষ রাতে পেয়েছিলাম। আমরা বিশ্বাসই করতে পারছি না। সত্যিই বিশ্বাস করতে পারছি না।” শর্মা দম্পতি বললেন।
 
তাদের বাড়ী এই মুহূর্তে বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছে। “আমি ইলেকট্রিক অফিসকে বেশ কয়েকবার ফোন করেছি। কিন্তু এউ সাড়া দেননি। দেখুন তারগুলো বিপজ্জনক ভাবে ঝুলছে।” সুশীল শর্মা বললেন।
 
“আমি নাতিনাতনিদের প্রতিবেশীদের বাড়ীতে পাঠিয়ে দিয়েছি। তাদের পরীক্ষা সামনেই। এই অবস্থায় পড়ায় মন বসানো যায় না, বুঝতেই পারছেন।”
 
সুশীল বললেন, তাদের বাড়ীর সামনে বাজারে অবস্থিত একটি অলঙ্কারের দোকানে ব্যাপক লুটপাট হয়েছে। বলা বাহুল্য দোকানদার ধর্মে হিন্দু।
 
“সাড়া রাত ধরে কোনও পুলিস দেখতে পাইনি। মুসলিমরা যা খুসি তাই করে গেছে।”
 
পরের দিন অর্থাৎ ২৫ ফেব্রুয়ারি সকালে তাদের বাড়ী থেকে কিছুটা দূরে ডানদিকে অবস্থিত একটি মুসলিম মালিকানাধীন দোকানে লুটপাটের পর আগুন লাগানো হল, তখন কোথা থেকে পুলিস চলে এলো। “এখন তারা কেমন ঘুরছে দেখতেই পাচ্ছেন। অথচ কাল সারারাত এদের টিকিটারও খোঁজ মেলেনি।” সুশীল বিরক্ত ভাবে বললেন।
 
শর্মা দম্পতির বাড়ী থেকে ডানদিকে ঘুরলেই দেখা যায় সেই কুখ্যাত অগ্নিদগ্ধ বাইক। এখানেই বিনোদ খুন হয়েছিলেন। এটাই কল্যাণ গলি।
 
কিছুদুর এগোতেই আমরা কয়েকটা বৃদ্ধ লোককে চেয়ারে বসে থাকতে দেখলাম। তাদের সাথে কয়েকটা কচি যুবকও ছিল। “এরা আমাদের এলাকা পাহারা দিচ্ছেন।” মোহম্মদ শফিক বলে উঠলেন। তিনি এখানেই থাকেন।
 
বিনোদের কথা উঠতেই দেখা গেল এরা কেউই বিনোদকে চেনেন না। এই বক্তব্যে কতখানি সত্যি, কতখান মিথ্যা আছে কে জানে? তারা বললেন, “আমরা কিছি জানি না। আমরা ওকে চিনিনা।”
 
তারা স্বীকার করলেন তারা কাল রাতে কিছু গণ্ডগোল হচ্ছিল টের পাচ্ছিলেন। কিন্তু মৃত্যুর সংবাদ আজ সকালের আগে পাননি। “এই দেখুন, আজ সকালেই আমাদের একটা দোকানও পুড়ে গেছে।” একজন আমাদের আঙ্গুল তুলে দেখালেন।
 
এদেরই একজন আফজল সিদ্দিকি বললেন, কিছুদিন আগেই তিনি বহুজন সমাজবাদী পার্টির টিকিটে মিউনিসিপাল কাউন্সিলের ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন, কিন্তু জিততে পারেন নি। তিনিই বললেন, “দেখুন পুরো ঘটনা বহিরাগত সমাজবিরোধীরা করেছেন। আমাদের কেউই এতে জড়িত নয়।”
 
সিদ্দিকি পুরো দাঙ্গার জন্য বিজেপিকে দায়ী করলেন, তিনি কপিল মিশ্রকেও ছাড়লেন না যিনি এবার কারওয়াল নগরে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির টিকিটে দাঁড়িয়েছিলেন। কপিল মিশ্রের ভাষণের পরেই এসব হচ্ছে তাঁর মতে।
 
“দেখুন, আমাদের মেয়েরা শান্তিপূর্ণ ভাবে শাহীনবাগে ও জাফরাবাদে প্রতিবাদ জানাচ্ছিল। কেনই বা কপিল মিশ্র কেন হিংসার হুমকি দিলেন? তিনিই এই হিংসার জন্য একমাত্র দায়ী।”
 
সিদ্দিকি এও জানালেন যে, “যারা দাঙ্গা করছিল, তারা জয় শ্রীরাম ধ্বনি দিচ্ছিল। অথচ পুলিস তাদের পাশেই দাঁড়িয়েছিল।” তিনি চিৎকার করে বললেন, “আমরা পুলিসকে বিশ্বাস করি না।” দেখলাম বাকিরাও তার কথায় মাথা নাড়ল সম্মতির সুরে।
 
আমরা যখন কল্যাণ গলি ছেড়ে আবার ব্রহ্মপুরী এলাকায় ফিরলাম, তখন একজন পুলিস আমাদের দিকে এগিয়ে বললেন, “দেখুন বিকেল পাঁচটা বেজে গেছে। আপনারা চলে যান। পরিবেশ কিন্তু ভাল না।”
 
আমরা লক্ষ্য করলাম, সেখানে কোনও টোটো রিকশা দেখা যাচ্ছে না। আমরা অগত্যা হেঁটেই গোকুলপুরীর দিকে পাড়ি দিলাম। সেখানে ৪৩ নং ওয়ার্ডের বিজেপির কাউন্সিলার কে কে আগরওয়ালের অফিসে ঢুকলাম।
 
এই ব্রহ্মপুরী এলাকাই দিল্লির সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা। দাঙ্গার আগুনে এই জায়গাই সবচেয়ে বেশী পুড়েছে। সেখানে আমরা কল্যাণ গলিতে সিদ্দিকির মুখে যা যা অভিযোগ করেছেন কপিল মিশ্রের বিরুদ্ধে তার সত্যতা জানতে চাইলাম। সেই ইন্টার্ভিউ এখানে দেওয়া হল –
 
MUNICIPAL COUNCILLOR OF BRAHMAPURI, DELHI – WORST AFFECTED IN YESTERDAY'S DIRECT ACTION NIGHT OF MURDERS & ARSON – TELLS ME THAT @KAPILMISHRA_IND IS BEING BLAMED IN A COORDINATED ATTACK TO ONCE AGAIN SHIELD THE REAL PERPETRATORS.
LISTEN TO HIM AND TELL ME IF HE IS AT ALL WRONG. PIC.TWITTER.COM/SULWRGHVUA
 
— SANJEEV NEWAR संजीव नेवर (@SANJEEVSANSKRIT) FEBRUARY 25, 2020
 
আগরওয়াল আমাদের অভিযোগ শুনেই উত্তেজিত হয়ে গেলেন। তিনি সব অভিযোগ খারিজ করে দিলেন।
 
“সব অভিযোগ সর্বৈব মিথ্যা। ভাল করে শুনুন, মিশ্রজি বলেছিলেন তিন দিনের মধ্যে শাহীনবাগ ও জাফরাবাদ ধরনা তুলে নিতে, নইলে দিল্লির লোক সে কাজ করে দেবে। মিশ্র হিংসাত্মক কিছুই বলেন নি। এই দাঙ্গার পেছনে কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি আছে। তারাই মুসলিমদের মিথ্যা বুঝিয়ে দাঙ্গায় প্ররোচনা দিয়েছেন।”
 
আমরা আগরওয়ালের অফিস থেকে বেরুতেই দেখলাম সেই পুলিস আমাদের দিকে আসছেন; যাকে একটু আগে কল্যাণ গলির কাছে দেখেছিলাম।
 
“আপনারা শীগগির চলে যান। এখানে আমরাই শুধু থাকব।”
 
===২৭ ফেব্রুয়ারি ===
[[চিত্র:Delhi Riot 2020.jpg|thumb|শিববিহারে পোড়া দোকান]]