হেমন্ত মুখোপাধ্যায়: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
৫৬ নং লাইন:
১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের দশকে হিন্দি চলচ্চিত্রে হেমন্তর নামমাত্র অবদান ছিল। তিনি তার নিজের প্রডাকশন্সে নিজের মতো সংগীত রচনা করতেন, কিন্তু তার মধ্যে কোনো চলচ্চিত্র কিংবা তার সংগীত সফলতা পায়নি। যাইহোক, বাংলায় তিনি রবীন্দ্র সংগীত, চলচ্চিত্র এবং চলচ্চিত্রের বাইরের গানের বিশিষ্ট শিল্পী ছিলেন। তাঁর সংগীত দশক জুড়ে ধারাবাহিকভাবে জনপ্রিয় ছিল। তার মধ্যে কয়েকটা হলো: ''যদি জানতে চাও তুমি...'' (১৯৭২), ''একগোছা রজনীগন্ধা...'', আমায় প্রশ্ন করে নীল ধ্রুবতারা...'', ''সেদিন তোমায় দেখেছিলাম ...'' (১৯৭৪), ''খিড়কি থেকে সিংহ দুয়ার...'' (''স্ত্রী'', ১৯৭১), ''কে জানে ক-ঘণ্টা...'' (''সোনার খাঁচা'', ১৯৭৪), ''যেওনা দাঁড়াও বন্ধু...'' (''ফুলেশ্বরী'', ১৯৭৫) এবং চলচ্চিত্রের অবস্থা অনুযায়ী সুন্দরভাবে প্রযুক্ত জনপ্রিয় রবীন্দ্র সংগীতগুলো। একটা খুব জনপ্রিয় এবং উচ্চাঙ্গের উদাহরণ হলো ''দাদার কীর্তি'' (১৯৮০) চলচ্চিত্রে ''চরণ ধরিতে দিয়োগো আমারে...''। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে হেমন্ত তাঁর নিজের প্রযোজিত ''অনিন্দিতা'' চলচ্চিত্রে [[চলচ্চিত্র পরিচালক]] হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। এটা বক্স অফিসে খুব ভালো ফল দিতে পারেনি। যাইহোক, এর মূল উপজীব্য ছিল ''দিনের শেষে ঘুমের দেশে...'' তার এই শ্রেষ্ঠ ও জনপ্রিয় রবীন্দ্র সংগীত। ওই একই বছরে প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক কনরাড রুকসের ডাকে হেমন্ত হলিউডে গিয়েছিলেন। <nowiki>https://en.m.wikipedia.org</nowiki> › wiki
 
হেমন্ত [[কনরাড রুকস|কনরাড রুকসের]] [[সিদ্ধার্থ (১৯৭২ চলচ্চিত্র)|সিদ্ধার্থ]] চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালক। তিনি ওই চলচ্চিত্রে নেপথ্য গায়ক হিসেবে [[''ও নদীরে...'' (সংগীত এবং কণ্ঠ তাঁর ''নীল আকাশের নীচে'' থেকে)]] গেয়েছেন। হেমন্ত হলিউডে নেপথ্য গায়ক হিসেবে গান করা প্রথম ভারতীয়। যুক্তরাষ্ট্র সরকার হেমন্তকে মেরিল্যান্ড, বাল্টিমোরের নাগরিকত্ব দিয়ে সম্মানিত করেছিলেন; তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পাওয়া প্রথম ভারতীয় গায়ক। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের শুরু থেকে মাঝামাঝি পর্যন্ত বাংলার দুজন প্রধান সংগীতকার [[নচিকেতা ঘোষ]] এবং [[রবিন চট্টোপাধ্যায়]], যাঁরা ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের দশকের প্রথমদিক থেকে হেমন্তের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করতেন, তাঁদের জীবনাবসান হয়েছিল। একই সঙ্গে ''ফুলেশ্বরী'', ''রাগ অনুরাগ'', ''গণদেবতা'' এবং ''[[দাদার কীর্তি]]'' ইত্যাদি চলচ্চিত্রে হেমন্ত সংগীত পরিচালনা করায় তাঁকে বাংলার প্রধান সংগীত পরিচালকরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের দশক এবং ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের দশকে [[সলিল চৌধুরী|সলিল চৌধুরীর]] সঙ্গে হেমন্ত যেসব কাজ করেছিলেন ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে তার মধ্যে থেকে কিছু পুনরায় রেকর্ড করেছিলেন। এই অ্যালবামের নাম হলো ''লেজেন্ড অফ গ্লোরি, ভল্যুম ২'', হেমন্তের বয়সের ছাপ এবং শ্রান্ত কণ্ঠ সত্ত্বেও রেকর্ডটা ভালভালো বাণিজ্যিক সাফল্য পেয়েছিল।
 
১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে [[হৃদপেশীর আঘাতজনিত মৃত্যু|হৃদাঘাত]] হয়েছিল, যার ফলে তাঁর কণ্ঠস্বর ক্ষেপণের, বিশেষত তাঁর শ্বাস নিয়ন্ত্রণের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছিল। তিনি আটের দশকের গোড়ার দিকে ধারাবাহিকভাবে গান রেকর্ড করছিলেন, কিন্তু তাঁর [[পুরুষালি কণ্ঠ|পুরুষালি কণ্ঠে]] একটাএকটু স্বরের তফাত পড়ে। ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে হেমন্ত তাঁর সংগীত জীবনের ৫০ বর্ষপূর্তিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে সংবর্ধনা পেয়েছিলেন, এর মধ্যে খুব উল্লেখযোগ্য হলো গ্রামোফোন কোম্পানি অফ ইন্ডিয়া। ওই বছরই হেমন্ত গ্রামোফোন কোম্পানি অফ ইন্ডিয়া থেকে তাঁর শেষ অ্যালবাম প্রকাশ করেন - এটা ছিল চারটে চলচ্চিত্রের বাইরের গান সমৃদ্ধ একটা ৪৫ আরপিএম সমন্বিত সম্প্রসারিত রেকর্ড। পরবর্তী বছরগুলোতে হেমন্ত ছোটোখাটো কোম্পানিগুলো থেকে কিছু চলচ্চিত্রের বাইরের গান রেকর্ড করেছিলেন যারা উঠতি ক্যাসেট-ভিত্তিক সংগীত তৈরি শিল্পের সঙ্গে এঁটে উঠছিল। সেগুলোর মধ্যে অল্প কয়েকটা বাণিজ্যিকভাবে সফল হয়েছিল। তিনি তখন মুষ্টিমেয় কিছু চলচ্চিত্র, একট বাংলা এবং একটা হিন্দি দূরদর্শন ধারাবাহিকের জন্যে সংগীত পরিচালনা করেছিলেন। যাইহোক, এই সময়ের মধ্যে তিনি এক প্রতিষ্ঠান, প্রিয় এবং শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছিলেন, যিনি ছিলেন নম্র এবং বন্ধুত্বপূর্ণ ভদ্রলোক। তাঁর মানবধর্মী কার্যকলাপের মধ্যে অঙ্গীভূত ছিল পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলায় তাঁর নিজের গাঁ বহড়ুতে তাঁর প্রয়াত পিতার স্মরণে একটা হোমিয়োপ্যাথিক হাসপাতাল চালানো। তাঁর সময়কালে তিনি [[অল ইন্ডিয়া রেডিয়োরেডিও|আকাশবাণী]], [[দূরদর্শন]] (টিভি) এবং চলন্ত অনুষ্ঠান/কনসার্টে নিয়মিত বৈশিষ্ট্যে অবিরত ছিলেন।
 
১৯৯০ খ্রিস্টাব্দের দশকের প্রথমদিকে রেকর্ড করা বাচিক শিল্পী গৌরী ঘোষের সঙ্গে এক দূরদর্শন সাক্ষাৎকারে হেমন্তের স্ত্রী বেলা মুখোপাধ্যায় পুনরুল্লেখ করেন যে, তিনি জানতেননা জীবৎকালে হেমন্ত কত সংখ্যক ব্যক্তি এবং পরিবারকে আর্থিক ও অন্যান্যভাবে সাহায্য করেছেন; শুধুমাত্র তার চলে যাওয়ার পরেই সেসব ক্রমশ প্রকাশ পেয়েছিল।
 
১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে হেমন্ত ভারত সরকার কর্তৃক পদ্মভূষণ পুস্কারেরপুরস্কারের জন্যে মনোনীত হয়েছিলেন যেটা তিনি বিনীতভাবে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, ইতিমধ্যে ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে তিনি একইভাবে পদ্মশ্রী পুরস্কার নিতে অস্বীকার করেছিলেন। ওই বছরই কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে হেমন্তের সংগীত জীবনের ৫০ বর্ষপূর্তিতে তাঁকে এক রাজকীয় গণসংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল; তাঁর ভক্ত এবং গুণগ্রাহীদের তরফ থেকে আর এক কিংবদন্তি সংগীত শিল্পী লতা মঙ্গেশকর তাঁকে স্মারক দিয়ে সংবর্ধনা জানান। তাঁর বয়সের ছাপ পড়া গলাতেও তিনি ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে ''লালন ফকির'' চলচ্চিত্রে গান গেয়ে শ্রেষ্ঠ পুরুষ গায়কের সম্মান পেয়েছিলেন।
 
১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে [[মাইকেল মধুসূদন পুরস্কার]] গ্রহণের জন্যে তথা একটা কনসার্টে সংগীত পরিবেশনের জন্যেতাগিদে হেমন্ত [[বাংলাদেশ|বাংলাদেশের]] [[ঢাকা]] শহরে ভ্রমণ করেছিলেন। ওই সফরের অব্যবহিত পর ফিরেই ২৬ সেপ্টেম্বর তিনি আর একটা হৃদাঘাত পেয়েছিলেন এবং দক্ষিণ কলকাতার এক নার্সিং হোমে রাত ১১:১৫টায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
 
==উত্তরাধিকার==