কবীন্দ্রবচনসমুচ্চয়: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
সম্পাদনা সারাংশ নেই
সম্পাদনা সারাংশ নেই
১ নং লাইন:
'''কবীন্দ্রবচনসমুচ্চয়''' বা '''সুভাষিত রত্নকোষ''' আনুমানিক খ্রিস্টীয় দ্বাদশ-ত্রয়োদশ শতকে সংকলিত একটি সংস্কৃত শ্লোক সংকলন। ডক্টর [[সুকুমার সেন|সুকুমার সেনের মতে]] গ্রন্থটির রচনাকাল দ্বাদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ।<ref>''বঙ্গভূমিকা'', সুকুমার সেন, পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি, কলকাতা, আকাদেমি সংস্করণ, [[১৯৯৯]], পৃ.১৬১</ref> এই শ্লোকগুলির রচয়িতাগণ [[বাঙালি]] বলে অনুমিত হয়। পরবর্তীকালে [[বঙ্গ|বাংলায়]] প্রচলিত সংস্কৃত ও বাংলা আদিরসাত্মক ভক্তিবাদের বিকাশে এই শ্লোকসংগ্রহটি বিশেষ প্রভাব বিস্তার করেছিল। ক্ষুদ্র অথচ সুলিখিত এই শ্লোকগুলি সমকালীন বাঙালি জীবন ও রুচির একটি চিত্র তুলে ধরে। সমকালীন বাংলায় এগুলি বিশেষ জনপ্রিয়তাও অর্জন করেছিল। ডক্টর [[অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়]] শ্লোকগুলি সম্পর্কে বলেছেন, “এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শ্লোকগুলিতেই বাঙালির লীরিক-প্রতিভা প্রকাশের পথ পেয়েছে। পরবর্তিকালে রচিত বৈষ্ণব পদের সঙ্গে এই সমস্ত শ্লোকের কিছুটা সাদৃশ্য আছে।” <ref>''বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত'', প্রথম খণ্ড, অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, মডার্ণ বুক এজেন্সী প্রাইভেট লিমিটেড, [[কলকাতা]], ষষ্ঠ সংস্করণ, [[২০০৬]], পৃ.৫২</ref> ডক্টর [[নীহাররঞ্জন রায়]] মন্তব্য করেছেন, “সংস্কৃত সাহিত্যে এই ধরনের কবিতা-সংগ্রহ বা কবিতা-চয়নিকার-ধারার উদ্ভব বোধ হয় এই পর্বের বাঙলা দেশেই, এবং কবীন্দ্রবচনসমুচ্চয়ই এই জাতীয় সর্বপ্রথম সংকলন-গ্রন্থ।”<ref>''বাঙ্গালীর ইতিহাস : আদি পর্ব'', নীহাররঞ্জন রায়, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, চতুর্থ সংস্করণ, অগ্রহায়ণ, ১৪১০ বঙ্গাব্দ, পৃ.৫৮৫</ref>
== আবিষ্কার ==
''কবীন্দ্রবচনসমুচ্চয়''-এর পুথি [[নেপাল]] থেকে আবিষ্কৃত হয়েছে। এটি দ্বাদশ শতকীয় নেওয়ারি অর্থাৎ [[নেপালি]] লিপিতে রচিত। তবে এর সঙ্গে পুরনো বাংলা লিপির কিছু সাদৃশ্য রয়েছে। পুথিটির প্রথমদিকে কিছু অংশ নষ্ট হয়ে যাওয়া এর প্রকৃত নাম বা পরিচয় জানা যায় না। টীকায় কথিত ‘কবীন্দ্রবচনসমুচ্চয়’ কথাটিই তাই সংকলক এফ ডবলিউ টমাস গ্রন্থনাম হিসাবে গ্রহণ করেছেন। ডক্টর সুরেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর সংস্কৃত সাহিত্যে বাংলার দান গ্রন্থে এই মত প্রকাশ করেছেন যে, গ্রন্থটি বিদ্যাকর সংগৃহীত ''সুভাষিত রত্নকোষ'' গ্রন্থের অংশবিশেষ। ডক্টর সুকুমার সেন মনে করেন, গ্রন্থটির নাম ''সুভাষিতরত্নকোশ'' এবং সংকলক বিদ্যাকর ছিলেন বাংলার কোনও বৌদ্ধবিহারের পণ্ডিত।<ref>''বঙ্গভূমিকা'', সুকুমার সেন, পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি, কলকাতা, আকাদেমি সংস্করণ, [[১৯৯৯]], পৃ.১৬১</ref> তবে ডক্টর অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করেন, এই গ্রন্থের নাম হওয়া উচিৎ ‘সুভাষিত রত্নকোষ’।<ref>''বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত'', প্রথম খণ্ড, অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, মডার্ণ বুক এজেন্সী প্রাইভেট লিমিটেড, [[কলকাতা]], ষষ্ঠ সংস্করণ, [[২০০৬]], পৃ.৫২</ref> ডক্টর [[নীহাররঞ্জন রায়]] মনে করেন, “সংকলয়িতার নাম জানিবার উপায় নাই, তবে তিনি বৌদ্ধ ছিলেন। বইখানি যে বাঙলাদেশেই সংকলিত হইয়া পরে অন্যান্য অনেক গ্রন্থের মতো নেপালে নীত হইয়াছিল, এই অনুমান অযৌক্তিক নয়।” <ref>''বাঙ্গালীর ইতিহাস : আদি পর্ব'', নীহাররঞ্জন রায়, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, চতুর্থ সংস্করণ, অগ্রহায়ণ, ১৪১০ বঙ্গাব্দ, পৃ.৫৮৪-৫</ref>
 
== কবি ==
৩৩ নং লাইন:
 
=== অভিনন্দ ===
''কবীন্দ্রবচনসমুচ্চয়''-এর অন্যতম বিশিষ্ট কবি অভিনন্দ বা গৌড় অভিনন্দ। তাঁর পাঁচটি শ্লোক এই গ্রন্থে সংকলিত। এগুলিতে অবশ্য কবির নামের সঙ্গে গৌড় অভিধাটি যুক্ত হয়নি। ডক্টর [[নীহাররঞ্জন রায়]] মনে করেন,
{{Cquote|কবীন্দ্রবচনসমুচ্চয়-গ্রন্থে (একাদশ শতক) যে কবি অভিনন্দর উল্লেখ আছে তিনি খুব সম্ভবত এই অভিধাবিহীন অভিনন্দ, কিন্তু ইনি এবং গৌড়-অভিনন্দ একই ব্যক্তি কিনা, নিঃসন্দেহে বলা কঠিন। গৌড়-অভিনন্দ বাঙালী ছিলেন, তাঁর অভিধাতেই প্রমাণ। অভিধাবিহীন কবি অভিনন্দের ২২টি শ্লোক বাঙালী শ্রীধরদাস কর্তৃক সংকলিত হইতে দেখিয়া মনে হয়, ইনিও বোধহয় বাঙালী ছিলেন এবং তাহা হইলে এই দুই অভিনন্দ এক হইতে কিছু বাধা নাই। <ref>''বাঙ্গালীর ইতিহাস : আদি পর্ব'', নীহাররঞ্জন রায়, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, চতুর্থ সংস্করণ, অগ্রহায়ণ, ১৪১০ বঙ্গাব্দ, পৃ.৫৮২</ref>}}