ইউনিকর্ন: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
১৪ নং লাইন:
চিলির উপকথায় ক্যামাহুয়েতো অনেকটা ইউনিকর্নের কাছাকাছি বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। একে বর্ণনা করা হয়েছে অনেকটা ষাঁড়ের মতো। ক্যামাহুয়েতোর শিং অজস্র রোগের প্রতিষেধক। এ কারণে তাদেরকে তন্ন তন্ন করে খুঁজে বের করতো মাচি বা চিকিৎসক শ্রেণি। ইউনিকর্নের মতো তারও একটা শিং। জন্তুটাকে প্রথমে ধরে এনে বন্দী করে রাখা হতো। তারপর খুব সতর্কতার সাথে শিং কেটে নেওয়া হতো। আলগোছে জায়গাটা বেঁধে ছেড়ে দেওয়া হতো বনে। নপুংষকতা দূরীকরণে কিংবা বৃদ্ধ বয়সেও সন্তান জন্মদানে সক্ষমতা অর্জনের জন্য এই শিং ভূমিকা রাখতো বলে প্রচলিত ছিল।
== ইউরোপীয় উপকথা ==
ইউনিকর্নের ধারণা নানাভাবে প্রভাবিত করেছে ইউরোপীয় জীবনকে। এমনকি পরবর্তী খ্রিষ্টধর্মেও একে গ্রহণ করা হয়। সাদা ঘোড়ার মতো বড় প্রাণী। মাথার ঠিক মাঝখান থেকে উঠে গেছে দীর্ঘ শিং। ভাবা হতো, ইউনিকর্ন অসাধারণ ক্ষমতার অধিকারী। যেকোনো ধরনের রোগ থেকে মুক্তি, অপবিত্র পানিকে পবিত্রকরণ কিংবা ভয়াবহ বিষের প্রতিষেধক হিসাবে শিংকে ভেবে নেওয়া হয়েছিল প্রধান সমাধান। শিং দ্বারা নির্মিত কাপে পানি পান ছিল সীমাহীন উপকারের। আর তাই তার চাহিদাও ছিল আকাশচুম্বী। যেহেতু ইউনিকর্ন খুব পবিত্র ও নিষ্পাপ। শুধুমাত্র কুমারীই তাকে আবদ্ধ করতে পারবে।
==ইতিহাস==
ইউনিকর্নের প্রথম প্রকাশ দেখা যায় গ্রীক চিকিৎসক ও ঐতিহাসিক টিসিয়াসের লেখায়। বিখ্যাত গ্রন্থ ‘ইন্ডিকা’য় তিনি তার অভিমত প্রকাশ করেন। ভারতের এই প্রাণী বুনো গাধার মতো। আলোর গতির মতো দ্রুত চলে। মাথার মাঝখান থেকে আটাশ ইঞ্চি লম্বা শিং তাকে অন্য জন্তু থেকে আলাদা করেছে। ‍শিংগুলো সাদা, লাল কিংবা কালো হতে পারে।
 
টিসিয়াস খুব সম্ভবত তথ্যগুলো তৎকালীন পারস্য থেকে পান। জীবনের বেশ কিছু সময় তিনি পারস্যে কাটিয়েছেন। প্রায় কাছাকাছি বর্ণনা দেন এরিস্টটল। তার মতে,
 
খুব অল্প প্রাণী আছে, যাদের সত্যিকার খুর এবং মাথায় একটা শিং বিদ্যমান। ভারতীয় গাধা এবং আফ্রিকান অরিক্স তাদের মধ্যে প্রধান।
এছাড়া স্ট্র্যাবো, প্লিনির মতো অন্য অনেকেই বর্ণনা করে গেছেন। প্রাচীন নগরী পার্সিপোলিসে ইউনিকর্নের ভাস্কর্য দেখেও তার প্রভাব অনুমেয়। কসমাস ইন্ডিকোপ্লেসটেস নামে আলেকজান্দ্রিয়ার এক ব্যবসায়ীর লেখা থেকেও বেশ তথ্য পাওয়া যায়। তিনি ভারত ও ইথিওপিয়া ভ্রমণ করেন। তার দাবি ছিল ইউনিকর্নের সমস্ত ক্ষমতা থাকে শিংয়ের মাঝে।
মার্কো পলোর বর্ণনা প্রশ্নবিদ্ধ হলেও উল্লেখ করার মতো। তিনি খুব কাছ থেকে দেখার দাবি করেন। আকারে হাতির মতো। চুলগুলো অনেকটা মহিষের সাথে তুলনীয়। মাথার মধ্যখানে কালো শিং আছে। প্রাণীটা বেশিরভাগ সময় কাদাতে থাকতে পছন্দ করে। অত্যন্ত দুঃখভারাক্রান্ত মনে তিনি বলেছেন, বহুদিন থেকে শুনে আসা ইউনিকর্নের সাথে চোখে দেখার কত পার্থক্য। তার বর্ণনা থেকে মনে হয়, তিনি যে প্রাণীকে দেখে বিহ্বল হয়েছেন, তা আসলে গণ্ডার ছিল।
 
===মধ্যযুগে বিশ্বাস ===
মধ্যযুগে বিশেষ করে খ্রিষ্টধর্মের প্রভাবে ব্যাপকভাবে পরিবর্তন ঘটলো ইউনিকর্নের ধারণায়। চার্চের নির্দেশনায় থাকা চিত্রকরেরা ফুটিয়ে তুললো ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্যের সাথে। ঠিক এই সময়েই কুমারী মেয়ের সংশ্লিষ্টতা আসে। প্রচলিত হতে থাকে নানা উপকথা। শিকারীরা যেহেতু কোনোভাবেই বন্দী করতে পারতো না। সুতরাং কোনো কুমারী মেয়েকে বুঝিয়ে গাছের নিচে বসিয়ে রাখা হতো। ইউনিকর্ন প্রশান্ত মনে কুমারীর কোলে মাথা রেখে বসতো। যখন ঘুমিয়ে পড়তো, তখন শিকারীরা চারপাশে ঘিরে ধরতো এবং আবদ্ধ করতো। ত্রয়োদশ ও চতু্র্দশ শতকে প্রচুর রোমান্টিক আখ্যান গড়ে উঠেছে ইউনিকর্নকে জড়িয়ে।
চার্চ আগ্রহের সাথেই গ্রহণ করেছিল ইউনিকর্নের ধারণা। যীশু খ্রিষ্টের সাথে রূপকার্থে সংশ্লিষ্টতা খুঁজে বের করা হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য যীশুর অবতার হিসেবে। ইউনিকর্নের কুমারী মেয়ের নিকটবর্তী হওয়া যীশু খ্রিষ্টের কুমারী মা মেরীর নিকটবর্তী হওয়াকেই রূপকভাবে উপস্থাপন করে। এবং একারণেই কুমারীর কোলে ইউনিকর্নের ঘুমিয়ে পড়ার পেছনে যীশু খ্রিষ্টের ঘুমিয়ে পড়ার তাৎপর্য নিহিত। এমনটাই দাবি করতেন সে সময়কার প্রচারকেরা।
চার্চ ইউনিকর্নকে গ্রহণ করেছে যীশুর রূপক হিসাবে। অন্য একটি রূপক যীশুর জীবনের শেষের দিনগুলো। ইউনিকর্ন চাইলে শিকারীদের উচিৎ শিক্ষা দিতে পারে। সে শক্তি ও সক্ষমতা তার আছে। কিন্তু তা না করে সে কুমারীর কোলে গিয়ে ঘুমায়। তারপর শিকারীরা এসে তাকে বধ করে। যেন নিষ্পাপ জন্তুটা নিজেকে এক পবিত্র পন্থায় উৎসর্গ করে দিলো। অনুরূপ যীশু খ্রিষ্ট চাইলেই পাপীদের উচিৎ শিক্ষা দিতে পারতেন। অথচ তিনি প্রথমে কুমারী মেরির কোলে আসলেন। তারপর করলেন আত্মোৎসর্গ। এ থেকে অন্তত এটা স্পষ্ট যে, শুধুমাত্র উপকথাতে সীমাবদ্ধ না থেকে ইউনিকর্ন ধর্মের মূলেও একটা জায়গা করে ফেলেছিল।
1) Mythical Monsters, Charles Gould, Arment Biological Press, 2000, Pages: 234-97
 
2) Unicorns and Other Magical Creatures, John Hamilton, Abdo Publishing Company, 1993, Pages: 4-20
 
3) https://mythology.net/mythical-creatures/unicorn/
 
4) https://www.ancient-origins.net/myths-legends/magic-unicorn-horn-0010750
 
5) https://www.britannica.com/topic/unicorn/media/1/614490/149403