পূর্ব রণাঙ্গন (দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ): সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
ShahranMahmood (আলোচনা | অবদান)
→‎যুদ্ধ পরিচালনার পর্যায়সমূহ: সংশোধন, সম্প্রসারণ
ShahranMahmood (আলোচনা | অবদান)
→‎যুদ্ধ পরিচালনার পর্যায়সমূহ: সংশোধন, সম্প্রসারণ
৪৮৩ নং লাইন:
 
কোনিগ্‌সবার্গের পতনের পর সোভিয়েত সামরিক কর্তৃপক্ষ স্টাভ্‌কা জেনারেল কনস্টান্টিন রোকোসোভস্কির নেতৃত্বাধীন ২য় বেলারুশীয় সৈন্যবিভাগকে (২-বি.এফ.) স্থানান্তর করে ওডার নদীর তীরে নিয়ে আসে। এপ্রিলের প্রথম দুই সপ্তাহে লাল ফৌজ তাদের যুদ্ধকালীন সবচেয়ে দ্রুত সৈন্য স্থানান্তর প্রক্রিয়া সম্পাদন করে। জেনারেল জর্জি জুকভ তাঁর নেতৃত্বাধীন ১ম বেলারুশীয় সেন্যবিভাগকে (১-বি.এফ.) বাল্টিক সাগরের দক্ষিণে সিলো হাইট্‌স অঞ্চলে স্থাপন করেন, যারা এর পূর্বে ওডার নদীর ধারে ফ্রাঙ্কফুর্ট নগরীতে অবস্থান করছিল। এই সৈন্য স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় সম্মুখ সারিতে ফাঁক সৃষ্টি হয়, যার সুযোগ নিয়ে জার্মান ২য় সেনাবাহিনীর অবশিষ্টাংশ, যারা দানজিগে আটকা পড়েছিল, তারা ওডার নদী পার হয়ে পালাতে সক্ষম হয়। দক্ষিণে জেনারেল ইভান কোনেভ তাঁর নেতৃত্বাধীন ১ম ইউক্রেনীয় সৈন্যবিভাগ (১-ইউ.এফ.)-কে উচ্চতর সাইলেসিয়া অঞ্চল থেকে উত্তর-পশ্চিমে সরিয়ে নাইস নদীর নিকটে নিয়ে আসেন।<ref name=Ziemke71>Ziemke, ''Berlin'', see [[#References|References]] page 71</ref> এই তিন সোভিয়েত সৈন্যবিভাগে মোট ২৫ লক্ষ সৈন্য ছিল (যার মধ্যে ১ম পোলিশ সেনাবাহিনীর ৭৮,৫৫৬ জন সেনা ছিল); এছাড়া তাদের সাথে ৬,২৫০টি ট্যাংক, ৭,৫০০টি বিমান, ৪১,৬০০টি কামান ও মর্টার নিক্ষেপক, ৩,২৫৫টি ট্রাক-বাহিত কাটিয়ুশা রকেট লঞ্চার ছিল; এছাড়া ছিল ৯৫,৩৮৩টি মোটর যান (যার অধিকাংশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নির্মিত)।<ref name=Ziemke71 />
 
==যুদ্ধের সমাপ্তি: এপ্রিল-মে, ১৯৪৫===
[[File:Za pobedu nad germaniej.jpg|thumb|left|upright=.6|১৯৪৫ সালের ৯ই মে থেকে শুরু করে মোট ১,৪৯,৩৩,০০০ জন সোভিয়েত ও তাদের মিত্র সেনাদেরকে "জার্মানি-বিজয় পদক" দেয়া হয়।]]
[[File:Soviet Znamya Pobedy.svg|thumb|জার্মান সংসদ রাইখস্টাগের ওপর ওড়ানো হয় "১৫০ তম সোভিয়েত রাইফেল ডিভিশন"-এর এই পতাকা (এটিই ছিল তাদের বিখ্যাত বিজয়-নিশান)।]]
সোভিয়েতদের আক্রমণের দু'টি উদ্দেশ্য ছিল। স্টালিন সন্দেহ করেছিলেন যে তাঁর পশ্চিমা মিত্ররা যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তাদের দখলকৃত ভূমি সোভিয়েত ইউনিয়নকে হস্তান্তর না করতে পারে। তাই তাঁর বাহিনীর ওপর নির্দেশ ছিল বিস্তৃত এলাকায় ছড়িয়ে পড়া এবং যতটা সম্ভব পশ্চিমে অগ্রসর হয়ে তাঁর মিত্রদের সাথে মিলিত হওয়া যায় ততটা পশ্চিমে অগ্রসর হওয়া। তবে এর থেকে গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য ছিল বার্লিন দখল করা। এ দুটি উদ্দেশ্য একে অপরের পরিপূরক ছিল, কেননা বার্লিন অধিকার না করলে উল্লিখিত অঞ্চলসমূহ তাড়াতাড়ি দখল করা যাবে না। আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল বার্লিনের কৌশলগত গুরুত্ব, এতে অ্যাডলফ হিটলার অবস্থান করছিলেন এবং জার্মানদের গোপনীয় পারমাণবিক বোমা সংক্রান্ত গবেষণাগারও ছিল এই বার্লিনে।<ref>Beevor, ''Berlin'', see [[#References|References]] Page 138</ref>
 
১৬ এপ্রিল ওডার ও নাইস নদীদ্বয়ে জার্মান সম্মুখ সারির ওপর হামলার মাধ্যমে আরম্ভ হয় জার্মানি ও বার্লিন দখলের অভিযান। কয়েকদিনব্যপী তুমুল যুদ্ধের পর সোভিয়েত ১-বি.এফ. ও ১-ইউ.এফ. বাহিনী জার্মান সম্মুখ সারির প্রতিরোধে ফাটল সৃষ্টি করতে সক্ষম হয় এবং এর মধ্য দিয়ে তারা জার্মানির কেন্দ্র অভিমুখে ছড়িয়ে পড়ে। ২৪ এপ্রিলের মধ্যে ১-বি.এফ. এবং ১-ইউ.এফ. বাহিনীর অংশবিশেষ জার্মান রাজধানী ঘেরাও করলে শুরু হয় বার্লিনের যুদ্ধের শেষ পর্যায়। ২৫ এপ্রিল সোভিয়েত ২-বি.এফ. বাহিনী স্টেটিন নগরীর দক্ষিণে জার্মান ৩য় প্যানজার বাহিনীর সম্মুখ সারি ভেদ করতে সক্ষম হয়। এর ফলে তারা পশ্চিমে তাদের মিত্র ব্রিটিশ ২১তম যুগ্ম বাহিনীর দিকে এবং উত্তরে বাল্টিক সাগরের বন্দরনগরী স্ট্রালসুন্ড অভিমুখে অগ্রসর হওয়ার সুযোগ পায়। জার্মানির টোর্গাউ নগরীর নিকটে এলবে নদীর তীরে সোভিয়েত ৫ম রক্ষীবাহিনীর অন্তর্গত ৫৮তম রাইফেল ডিভিশনের সাথে , মার্কিন ১ম সেনাবাহিনীর ৬৯তম পদাতিক ডিভিশনের সাক্ষাৎ হয়।<ref name="Beevor217-233">Beevor, ''Berlin'', see [[#References|References]] pp. 217–233</ref><ref name=Ziemke81>Ziemke, ''Berlin'', see [[#References|References]] pp. 81–111</ref>
[[File:Bundesarchiv Bild 183-E0406-0022-018, Berlin, Siegesfeier der Roten Armee.jpg|thumb|বার্লিনে জার্মান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণে সোভিয়েত সেনাদের উদযাপন, ২ মে, ১৯৪৫।]]
২৯ ও ৩০ এপ্রিল, সোভিয়েত সেনাবাহিনী আক্রমণ চালিয়ে বার্লিনের কেন্দ্রে পৌঁছে গেলে অ্যাডলফ হিটলার তাঁর সঙ্গিনী ইভা ব্রাউনকে বিবাহ করেন অতঃপর তিনি সায়নাইড বিষ গ্রহণ করে ও নিজের মাথায় গুলি চালিয়ে আত্মহত্যা করেন। বার্লিনের প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত রক্ষীবাহিনীর প্রধান হেলমাথ উইডলিং ২রা মে তারিখে সোভিয়েত বাহিনীর কাছে বার্লিন নগরী সমর্পণ করে দেন।<ref name="Beevor-259">Beevor, ''Berlin'', see [[#References|References]] pp. 259–357, 380–381</ref> সবমিলে বার্লিন অভিযানে (১৬ এপ্রিল - ২ মে) লাল ফৌজের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৩,৬১,৩৬৭ জন (নিহত, আহত, নিখোঁজ ও অসুস্থ), এছাড়া ১,৯৯৭টি ট্যাংক ও কামান ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। এ যুদ্ধে জার্মানদের ক্ষয়ক্ষতি নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি।<ref name="Khrivosheev-219-220">{{Harvnb|Krivosheev|1997|pp=219, 220}}.</ref>
 
১৯৪৫ সালের ৭ই মে, দিবাগত রাত ২টা ৪১ মিনিটে, ফ্রান্সের রেইম্‌সে, মিত্রবাহিনীর অভিযান পরিচালনার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সদর দপ্তরে জার্মান সেনা-প্রধান জেনারেল আলফ্রেড জোড্‌ল মিত্রবাহিনীর কাছে জার্মানির নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ দলিলে সাক্ষর করেন। এই দলিলে উল্লেখ করা থাকে, "৮মে, ১৯৪৫ তারিখে কেন্দ্রীয় ইউরোপীয় সময়ে ২৩০১ ঘটিকায় জার্মান নেতৃত্বাধীন সকল বাহিনির সকল কর্মকান্ড বন্ধ হবে"। মাঝরাতের ঠিক আগমুহূর্তে ফিল্ড মার্শাল উইলহেম কাইটেল, বার্লিনে সোভিয়েত জেনারের জুকভের সদর দপ্তরে এই দলিলের অনুরূপ আরেকটি দলিলে সাক্ষর করেন। এভাবেই ইউরোপে বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি হয়।<ref>Ziemke, ''occupation'', [[#References|References]] [http://www.globalsecurity.org/military/library/report/other/us-army_germany_1944-46_ch15.htm#b3 CHAPTER XV:The Victory Sealed] Page 258 last paragraph</ref>
 
সোভিয়েত ইউনিয়নে ৯ই মে তারিখকে যুদ্ধ সমাপ্তির তারিখ গণ্য করা হয়, কেননা মস্কো সময়ে আত্মসমর্পণের সময়টি ৯ই মে তারিখে পড়েছিল। বর্তমানে এ তারিখটি রাশিয়ার জাতীয় দিবস- "বিজয় দিবস" হিসেবে গণ্য হয়, যাতে দুই দিন ব্যপী (৮ ও ৯ মে) ছুটি উদযাপন করা হয়, এছাড়া প্রাক্তন সোভিয়েত সদস্য কতিপয় রাষ্ট্রেও এ ছুটি উদযাপিত হয়। মস্কো বিজয় কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয় ২৪ জুনে।
 
জার্মান কেন্দ্রীয় যুগ্ম বাহিনীটি প্রথমে আত্মসমর্পণে অসম্মতি জানায় এবং চেকোস্লোভাকিয়ায় তারা ১১ই মে পর্যন্ত প্রতিরোধ চালিয়ে যায়।<ref name="Ziemke-134">Ziemke, ''Berlin'', [[#References|References]] p. 134</ref>
 
ডেনমার্কের বর্নহোম দ্বীপে অবস্থানরত অপর একটি জার্মান সৈন্যদলও আত্মসমর্পণে অস্বীকৃতি জানায়, অতঃপর সোভিয়েত বাহিনী দ্বীপটিতে বোমাবর্ষণ করে এবং হামলা চালিয়ে দখল করে নেয়। এর চার মাস পর দ্বীপটি ড্যানিশ সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
 
===প্রাচ্যে সোভিয়েত বাহিনীর লড়াই: আগস্ট, ১৯৪৫===
১৯৪৫ সালের ৮ আগস্ট শুরু হয় সোভিয়েত বাহিনীর মাঞ্চুরিয়া আক্রমণ, যাতে তারা জাপান নিয়ন্ত্রিত পুতুল রাষ্ট্র মাঞ্চুকো এবং এর পার্শ্ববর্তী মেংজিগাং আক্রমণ করে; এই আক্রমণ বৃহত্তর পরিসরে কোরিয়ার উত্তরাঞ্চল, দক্ষিণ সাখালিন এবং কুরিল দ্বীপপুঞ্জও অন্তর্ভুক্ত হয়। খালখিন-গোলের যুদ্ধ বাদে এটিই ছিল জাপান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে সোভিয়েতদের একমাত্র সামরিক অভিযান। ইউরোপ যুদ্ধের তিন মাস পর, ইয়াল্টা সম্মেলনে মিত্রদের অনুরোধে, জাপান ও সোভিয়েতের মধ্যকার নিরপেক্ষতা চুক্তি ভঙ্গ করে সোভিয়েত ইউনিয়ন ২য় বিশ্বযুদ্ধের প্রশান্ত-মহাসাগরীয় রণাঙ্গনে প্রবেশ করে। যদিও এই যুদ্ধ পূর্ব রণাঙ্গনের অংশ হিসেবে গণ্য হয় না তবুও পূর্ব রণাঙ্গনে অংশগ্রহণ করা সোভিয়েত জেনারেলগণই এই আক্রমণ পরিচালনা করেন এবং পূর্ব রণাঙ্গনে তাঁদের অর্জিত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগান বলে এই যুদ্ধটি অনুচ্ছেদে যুক্ত হল। এই অভিযানটি অনেকাংশেই 'নিখুঁত' অভিযান বলা চলে, যাতে জার্মান "ওয়েরমাক্‌ট" ও "লুফ্‌টওয়াফ"-এর বিরুদ্ধে সুদীর্ঘ চারটি বছরব্যপী পরিচালিত যুদ্ধের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানো হয়।<ref>{{cite journal |first=Raymond L. |last=Garthoff |title=The Soviet Manchurian Campaign, August 1945 |work=Military Affairs |volume=33 |issue=2 |date=October 1969 |pp=312–336 |jstor=1983926 |doi=10.2307/1983926}}</ref>
 
==তথ্যসূত্র==