বাংলার নবজাগরণ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
সম্পাদনা সারাংশ নেই
HUMAN Network INDIA (আলোচনা | অবদান)
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
৩৭ নং লাইন:
 
== যুক্তিবাদ ==
ফলত [[ব্রাহ্মসমাজ|ব্রাহ্ম সমাজ]] বলয় থেকে দত্তের বহিষ্পারেরবহিস্কারের মধ্য দিয়ে অত্যন্ত তাৎপর্যময় এ সংঘাতের অবসান ঘটে। [[অজ্ঞেয়বাদ|অজ্ঞেয়বাদী]] হয়ে ওঠার পর [[অক্ষয়কুমার দত্ত]] যুক্তিবাদ, বস্তুনিষ্ঠতা ও সমালোচনামূলক দৃষ্টিতে ভারতীয় ধর্ম ও দর্শনের ইতিহাস বিশ্লেষণের প্রয়াস পান। উনিশ শতকের বাংলায় নবজাগৃতির অধিকারী বহু সুধীব্যক্তির জীবন ও কর্মে এ লক্ষণসমূহ ফুটে ওঠে। তবে বিদ্যাসাগর অজ্ঞেয়তাবাদী (একধরনের [[নাস্তিক্যবাদ|নাস্তিকও]] বলা যায়) থেকে যান এবং তাঁর সফল হিন্দু বিধবা পুনর্বিবাহ আন্দোলনের (১৮৫৫-৫৬) ফলে ১৮৫৬ সালে প্রণীত আইনের (যা হিন্দু বিধবাদের পুনর্বিবাহকে বৈধ করে) পরে তিনি ষাটের দশকে কুলীন ব্রাহ্মণদের বহুবিবাহের বিরুদ্ধে আরও একটি আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। এ ক্ষেত্রে এবং স্ত্রীশিক্ষার প্রসারেও তাঁর প্রচেষ্টার সাফল্য শুধু উগ্র প্রতিক্রিয়াশীল মহল দ্বারাই বিঘ্নিত হয় নি, বরং এর পেছনে আরও কাজ করেছে ঔপনিবেশিক সরকারের সহযোগিতা না করার দৃষ্টিভঙ্গি। ডিরোজিও ও তাঁর অনুসারিগণ এবং অক্ষয় কুমার ও বিদ্যাসাগর সকলে মিলে যে সংশয়বাদী-অজ্ঞেয়তাবাদী-নাস্তিক্যবাদী ঐতিহ্য গড়ে তুলেছিলেন, তার পরিণত রূপ দেন প্রত্যক্ষবাদী নাস্তিক [[কৃষ্ণকমল ভট্টাচার্য]] (১৮৪০-১৯৩২)। ইতিহাসের পটভূমিকায় বিচার করলে এ ঘটনাপ্রবাহের তাৎপর্য অনেক। কারণ, খ্রীষ্টীয় সপ্তম শতকের নাস্তিক চিন্তাবিদ জয়রাশি ভট্টের সুদীর্ঘকাল পরে এই প্রতিবাদীরাই প্রথমবারের মতো ভারতীয় বস্তুবাদের ঐতিহ্যকে পুনরুজ্জীবিত করে তোলেন।
 
বিদ্যাসাগর ও অক্ষয়কুমার দুজনে মিলে ফোর্ট উইলিয়ম কলেজের পণ্ডিতবর্গ, শ্রীরামপুর ব্যাপটিস্ট চার্চের কোন কোন মিশনারি এবং রামমোহন রায় ও তাঁর বিরোধীদের গড়া ভিত্তির ওপর আধুনিক বাংলা গদ্যের সৌধ গড়ে তোলেন। তারপর সেই গদ্য প্যারীচাঁদ মিত্র , বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখের রচনার মধ্য দিয়ে নানা আকারে বিকশিত ও সমৃদ্ধ হয়। কাব্য ও নাটকে প্রতিমা-পূজা বিরোধী এবং ভাবের দিক থেকে ডিরোজিওপন্থী মাইকেল মধুসূদন দত্ত রীতি ভেঙে [[অমিত্রাক্ষর ছন্দ]], [[চতুর্দশপদী|চতুর্দশপদী বা সনেট]], ব্যক্তিবাদ, জড়পার্থিবতা, দেশপ্রেমিকতা, নারীচরিত্রের প্রাধান্য ও নাটকে তীক্ষ্ম, তীব্র সংঘাতের উপাদানের প্রবর্তন করেন। তাঁর রীতির অনুসরণে অচিরেই বহু নাট্যকার ও অপেক্ষাকৃত নিম্ন মানের কবির আবির্ভাব ঘটে। সাহিত্য পরিমণ্ডলের কথা ছেড়ে দিলেও বিজ্ঞান, ইতিহাস ও দর্শনের ক্ষেত্রে খ্যাতি অর্জন করেন মধুসূদন গুপ্ত,[[মহেন্দ্রলাল সরকার]] ,[[জগদীশ চন্দ্র বসু]] , [[প্রফুল্ল চন্দ্র রায়|প্রফুল্লচন্দ্র রায়]] , রাজেন্দ্রলাল মিত্র , [[রমেশচন্দ্র দত্ত]] , [[দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর]] ও কৃষ্ণকমল ভট্টাচার্য্য। মধুসূদন গুপ্ত ছিলেন প্রথম হিন্দু যিনি শবব্যবচ্ছেদ করেন। ভাই [[গিরিশ চন্দ্র সেন|গিরিশচন্দ্র সেন]] ইসলামি বিষয়ে জ্ঞানচর্চায় নিয়োজিত হন। তিনি ইসলামি ঐতিহ্যের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে বহু সংখ্যক গ্রন্থ ও জীবনী রচনা করেন। এ ক্ষেত্রে তাঁর সবচেয়ে গৌরবময় জীবনকর্ম হলো পবিত্র কুরআনের সটীক বাংলা অনুবাদ (১৮৮৬)। বাংলা ভাষায় এ ধরনের কাজ তিনিই প্রথম করেন। নবজাগরণর আরেক বৈশিষ্ট্যময় চরিত্র হলেন অক্ষয়কুমার দত্ত। ফরাসি বুদ্ধিবৃত্তিক নবজাগরণ যুগের দার্শনিকদের মতো বাংলার নবজাগরণয় তিনি ও অন্যান্য বিদ্বৎজন ছিলেন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শৌখিন অনুসন্ধানী, ঠিক জ্ঞানের কোন সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্রে একান্তভাবে নিবেদিত বিশারদ নন। তাঁরা বস্তুত জ্ঞানচর্চার নানা ক্ষেত্রে এভাবেই কাজ করেন। রাজেন্দ্রলাল মিত্রের বিবিধার্থসংগ্রহ (১৮৫০-এর দশক) ও রহস্যসন্দর্ভ (১৮৬০-এর দশক) এবং বঙ্কিমচন্দ্রের বঙ্গদর্শন (১৮৭০-এর দশক) আর সেই সাথে এ ধরনের আরও অনেক কাজ উল্লিখিত অভিমত বা পর্যবেক্ষণেরই সাক্ষ্য।