জয়নগর মজিলপুর: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
সম্পাদনা সারাংশ নেই
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
৬৮ নং লাইন:
[[শিয়ালদহ দক্ষিণ লাইন|শিয়ালদহ–নামখানা রেললাইনের]] পশ্চিমে জয়নগর শহর ও পূর্বে মজিলপুর শহর। কায়স্থ প্রধান জয়নগর হল প্রাচীন শহর, অপরদিকে ব্রাহ্মণ প্রধান মজিলপুর হল অপেক্ষাকৃত নবীন শহর। [[আদিগঙ্গা]]র প্রাচীন প্রবাহপথে অবস্থিত [[সুন্দরবন|সুন্দরবনের]] অন্তঃপাতী এই স্থান একসময় ঘন জঙ্গলাকীর্ণ ছিল। একসময় এখানকার [[আদিগঙ্গা]]র উপর দিয়ে [[পর্তুগিজ]] বণিকদের জাহাজ যাতায়াত করত এবং [[আন্দুল]] গ্রামের কাছে বর্তমান [[সাঁকরাইল]] খাল দিয়ে পাশে [[হুগলি জেলা]]র [[সপ্তগ্রাম|সপ্তগ্রামে]] পৌঁছাত। ষোড়শ-সপ্তদশ শতাব্দীর [[মঙ্গলকাব্য]]গুলিতে জয়নগর শহরের উল্লেখ থাকলেও মজিলপুর শহরের নেই।
 
জয়নগর নামটি এসেছে স্থানীয় [[চণ্ডী|দেবী জয়চণ্ডী]]র নাম থেকে। জনশ্রুতি আছে, এখানকার প্রথম বসতি স্থাপয়িতা [[কলকাতা]]র [[বাগবাজার|বাগবাজারের]] মতিলালবংশের পূর্বপুরুষ গুণানন্দ মতিলাল সপ্তদশ শতকে বাণিজ্যের কারণে নদীপথে যেতে যেতে [[গঙ্গা নদী|গঙ্গার]] কিছু দূরে এক বাদাম গাছের কাছে নোঙর করেন; রাতে [[গঙ্গা নদী|গঙ্গার]] কিছু দূরে জনশূন্য স্থানে আশ্চর্য আলো দেখতে
পান এবং [[চণ্ডী|দেবী জয়চণ্ডী]] তাঁকে স্বপ্নাদেশ দিয়ে মাটি খুঁড়ে প্রতিষ্ঠা করতে বলেন। পরদিন গুণানন্দ মাটি খুঁড়ে একটি প্রস্তরখণ্ড পেয়ে তা মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করেন। আজও দেবী এখানে পূজিতা এবং প্রতি জৈষ্ঠ্যপূর্ণিমায় দেবীর প্রতিষ্ঠা উপলক্ষে মেলা বসে। মতিলালবংশের পর এখানে কায়স্থ সেন এবং [[বড়িশা]]র মিত্রবংশ বসতি করেন। মিত্রপরিবারের প্রতিষ্ঠিত রাধাবল্লভ মন্দির ও দোলমঞ্চ বর্তমান। এছাড়া, মিত্র-গঙ্গা দীঘির পাশে পোড়ামাটির ভাস্কর্যের দ্বাদশ [[শিব]] মন্দির বর্তমান; এগুলির প্রতিষ্ঠাকাল ১৭৫৫ খ্রিঃ থেকে ১৭৯৯ খ্রিঃ। এরপাশেই দেবতা 'দক্ষিণের ক্ষেত্রপাল' বর্তমান; মূর্তি নেই, শুধু আছে পাথরের প্রাচীন মন্দিরের দরজার বা স্তম্ভের ভগ্নাংশ। মিত্র-গঙ্গা দীঘি খোঁড়ার সময়ই কতকগুলি ভাঙা প্রস্তরমূর্তি পাওয়া যায়, এগুলি কোন প্রাচীন মন্দিরের পাথরের ভগ্নাবশেষ বলে মনে করা হয়। জয়নগর শহরের রক্তাখাঁ পাড়ায় লোকদেবতা বৃষভবাহন [[পঞ্চানন]] ও [[বনবিবি]]র থান রয়েছে। রক্তাখাঁ [[পীর বড়খাঁ গাজী]]র নামান্তর বলে মনে করা হয়।
 
অষ্টাদশ শতকের রেনেলের [[গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ|গাঙ্গেয় বদ্বীপের]] মানচিত্রে দেখা যায়, বর্তমান মজিলপুর শহরের পশ্চিমাংশের বিস্তৃত ধানক্ষেত 'গঙ্গার বাদা'র উপর দিয়েই [[আদিগঙ্গা]]র প্রবাহ বইত। [[আদিগঙ্গা]]র মজাগর্ভে নতুন বসতির উৎপত্তি হয়েছিল বলেই এই শহরের নাম 'মজিলপুর' হয়েছে। সপ্তদশ শতকের গোড়ার দিকে ভাগ্যবিপর্যয়ের ফলে [[যশোর|যশোরের]] রাজা [[প্রতাপাদিত্য|প্রতাপাদিত্যের]] আমলা-অমাত্য, ব্রাহ্মণ-কায়স্থ, পণ্ডিত-পুরোহিতরা
[[সুন্দরবন|সুন্দরবনের]] এই জঙ্গলাকীর্ণ জনবিরল স্থানে বসবাস শুরু করেন। এখানকার দত্ত-ভট্টাচার্য ও পোণ্ডাবংশীয়রা আদি বাসিন্দা; ক্রমে চক্রবর্তী, দে, কান্বায়ণ ও অন্যান্য ব্রাহ্মণ-কায়স্থরা বসতি শুরু করেন। ছাত্র ও দেবালয়বহুল প্রাচীন মজিলপুর শহরে শিক্ষার জন্য অনেক চতুষ্পাঠী ছিল এবং সেগুলি জমিদার ও ধনী ব্যক্তিদের বৃত্তি বা নিষ্কর ভূমিস্বত্ব থেকে পরিচালিত হত। মজিলপুর শহরের [[ধন্বন্তরী কালীমন্দির, মজিলপুর|ধন্বন্তরি কালীবাড়ি]] একটি প্রাচীন শক্তিপীঠ। ষোড়শ-সপ্তদশ শতকে [[আদিগঙ্গা]]র তীরবর্তী স্থানগুলি শক্তিসাধনার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল; সপ্তদশ শতকে এক সিদ্ধতান্ত্রিক ভৈরবানন্দ [[আদিগঙ্গা]]র তীরে ধন্বন্তরী কালীবিগ্রহ খুঁজে পান ও কালীমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। মন্দিরের গর্ভগৃহে কাঠের তৈরী কারুকার্যময় রথসিংহাসনে পদ্মের ওপর শায়িত [[শিব]] বিগ্রহের বুকের ওপর দন্ডায়মানা সালঙ্কারা ত্রিনয়নী কালো কষ্টিপাথরে নির্মিত [[দক্ষিণাকালী]] বিগ্রহ অবস্থিত। মজিলপুর শহরের উল্লেখযোগ্য লোকদেবতা হলেন পণ্ডিতপাড়া ও কয়েলপাড়ার [[পঞ্চানন|পঞ্চানন ঠাকুর]]। কয়েলপাড়ার [[পঞ্চানন]] গভীর পাঁশুটে রঙের ভয়ঙ্কর মূর্তি, পাশে গর্দভবাহনা [[শীতলা|শীতলা দেবীর]] ও [[বারা ঠাকুর|বাবাঠাকুরের]] ([[দক্ষিণরায়]]) মূর্তি আছে। পণ্ডিতপাড়ার [[পঞ্চানন]] ও [[শীতলা]] সাধারণ ইটের ঘরে পাশাপাশি বিরাজিত; এদের সামনে [[বারা ঠাকুর|বাবাঠাকুর]], জরাসুর ও বসন্ত রায়ের ছোট ছোট মূর্তি বর্তমান। আগে মন্দিরটি চালাঘরের ছিল এবং মূর্তির বদলে ঘটে পূজা করা হত। উল্লেখ্য, [[রাঢ়|রাঢ়-বঙ্গের]] লোকদেবতা [[ধর্মঠাকুর]] ক্রমে [[ভাগীরথী নদী|ভাগীরথী]] প্রবাহের নিম্নধারায় জনসংস্কৃতিতে মজিলপুর শহরের [[পঞ্চানন]] রূপের ভিতর দিয়ে পরিপূর্ণ [[শিব]]মূর্তিতে রূপান্তরিত হয়েছেন।<ref>{{বই উদ্ধৃতি|title=অজানা সুন্দরবন|last=জয়দেব দাস|first=|publisher=|year=২০১৫|isbn=|location=কলকাতা|pages=৮৮}}</ref>
 
==ভূগোল==